আহলে হাদীস ও সালাফী সম্প্রদায়ের সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও ইতিহাস, আহলেহাদীছ ও সালাফী কারা?

আহলে হাদীস ও সালাফী সম্প্রদায়ের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

সালাফী সম্প্রদায় ইয়াহুদী-খৃস্টান ও আমেরিকার দালাল ও এজেন্ট হওয়ার প্রকাশ্য প্রমাণ।

আহলে হাদীস-সালাফীদের ইতিহাস

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ১৮৫৭ আযাদী আন্দোলনের যুদ্ধের পূর্বে আহলে হাদীস ও সালাফী ফেরকার অস্তিত্ব ছিল না। উপমহাদেশের বৃটিশ ইংরেজদের সময় তাদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। আর ইংরেজরা তাদের পুরনো পলিসি, “লড়াও আওর হুকুমত করো” অর্থাৎ, মুসলমানদের পরস্পরে মতানৈক্য ও লড়াই সৃষ্টি কর এবং এই সুযোগে রাষ্ট্র চালাও। এই দৃষ্টিতে মুসলমানদের ইংরেজ বিরোধী আজাদী আন্দোলন এবং জিহাদের স্পৃহাকে মানুষের অন্তর থেকে মুছে দেয়ার জন্য আহলে হাদীস এবং সালাফীদেরকে জায়গীর, অর্থ-সম্পদ, পদমর্যাদা, নওয়াবগীরি, স্যার ইত্যাদি উপাধি দিয়ে ইংরেজরা একটি নতুন মাযহাব এবং ফেরকা দাঁড় করালো, যাতে মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা যায়। এই লক্ষ্যে তাদের হাতে আজাদী মাযহাব এবং তাকলীদ না করার ঝাণ্ডা তুলে দিল এবং সাধারণ মুকাল্লিদ-এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকমের প্রোপাগাণ্ড ও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিল। ইংরেজ বেনিয়াদের ছত্রছায়ায় তাদের দ্বীনী এবং ইসলামী মাসায়েলসমূহ জমহুর মুসলমানদের থেকে পৃথক ছিল। তাদের আকীদা একেবারেই নতুন এবং মনগড়া ছিল। যা সম্পর্কে উপমহাদেশের মুসলমান তো দূরের কথা, ইসলামী বিশ্বের আরব-অনারবের কোন মানুষ ও জ্ঞাত ছিল না। বরং সেগুলো ছিল দাকইয়ানুসী স্টাইলের অপরিচিত ও মনগড়া। সর্বপ্রথম ইয়াহুদী-খৃস্টান আমেরিকার দালাল ও এজেন্ট সম্প্রদায় নিজেদেরকে মোয়াহহেদীন' নামে পরিচয় দিল অর্থাৎ একাই একত্ববাদ স্বীকারকারী অন্য সবাই মুশরিক; কিন্তু এই শব্দ এবং নাম প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেনি। তখন 'মুহাম্মদী' নামে প্রচার শুরু করল। কিন্তু এটাও তেমন প্রচার-প্রসার হলো না।

তারপর নিজেদেরকে 'গায়রে মুকাল্লিদ' নামে প্রচার করলো। মুকাল্লিদীন চার মাযহাবের বিরুদ্ধে এটা তাদের গর্বমূলক নাম ছিল। শেষ পর্যন্ত এই নামও তাদের পছন্দ হলো না। কেননা পুরো উপমহাদেশ মুকাল্লিদীনের মধ্যে শুধু তারাই গোটা কয়েক লোক গায়রে মুকাল্লিদ নামের গ্রুপ; এতে অন্যান্য মুসলমানদের মধ্যে তারা লজ্জাবোধ করতে লাগল, তাদের কিছু ভ্রান্ত আকীদা দেখে মুসলিম জনসাধারণ তাদেরকে 'ওহাবী' বলতে শুরু করলো। আর 'ওহাবী' শব্দ তাদের জন্য গালি থেকে বেশী খারাপ লাগত। তারপর তাদের চিন্তা হলো তাদের নিজেদের গ্রুপের স্বাধীনতার জন্য এমন একটি চমৎকার নাম খুঁজে বের করা যা ইসলামী ইতিহাসে আলোকিত হয়, তারা এর জন্য ইসলামী ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে 'আহলে হাদীস' শব্দটি পছন্দ করে নিল এবং 'আহলে হাদীস' নামেই তাদের পরিচয় ও প্রচার-প্রসার শুরু করলো, যেমনভাবে হাদীস অস্বীকারকারী সম্প্রদায় নামায তিন ওয়াক্ত বলে তাদে। নাম 'আহলে কুরআন' রাখল। কিন্তু সালাফীদের নাম মুসলিম জনসাধারণের মুখে ‘ওহাবীই থেকে যায়। এখন এরা অত্যন্ত পেরেশান এবং চিন্তিত হয়ে পড়লো । তখন তারা তাদের সাদা চামড়াওয়ালা ইংরেজ বেনিয়াদের শরণাপন্ন হলো, সালাফী সম্প্রদায় বহু দিন পূর্ব থেকে যাদের খেদমত করে আসছিল। সাহায্যের জন্য ইংরেজদের দরজায় গিয়ে দাঁড়াল এবং তাদের জুতা চুম্বন করতে লাগল, তাদের জন্য 'আহলে হাদীস' নামটি রেজিস্ট্রী করার জন্য তারা ইংরেজ সরকারের কাছে জোর আপিল করল।

এক সালাফী তো এই কাজের জন্য ইংরেজ ও ইয়াহুদী সরকারের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে জিহাদ বাতিল হওয়ার উপর 'আল-ইকতিছাদ' নামী একটি কিতাব লিখে ফেলে। যার মধ্যে প্রমাণ করলো যে, ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা সঠিক মুসলমানদের কাজ হতে পারে না। নওয়াব ভূপালী সালাফী 'তরজমানে ওয়াৰীয়া' নামে একটি বই লিখল, যার মধ্যে ইংরেজ ইয়াহুদী-খৃস্টান সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ করাকে হারাম বলে প্রমাণিত করল এবং আরও অন্য এক সালাফী আহলে হাদীস ইংরেজ-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা এবং জিহাদ বাতিল হওয়ার ব্যাপারে কিছু ফতওয়া গ্রন্থ প্রচার করে। মোটকথা ইংরেজদের খুশির জন্য আহলে হাদীস সালাফী সম্প্রদায় সব রকমের চেষ্টা চালিয়ে যায়। আর যখন ইংরেজ সরকার তাদের ও ফাদাবীর উপর আস্থা এবং বিশ্বাস হলো, তখন মাওলানা হুসাইন বাটালববী সালাফী আহলে হাদীস সম্প্রদায়ের বড় বড় লিডার নেতা উলামাদের দস্তখতের সাথে নিজেদের গ্রুপের স্বাধীনতার জন্য আহলে হাদীসের দরখাস্ত পেশ করল, যা ইংরেজ সরকার অত্যন্ত খুশির সাথে মঞ্জুর করল। দরখাস্তের ভাষা ছিল এরূপ- বৃটিশ সরকারের নিকট 'আহলে হাদীস' নাম রেজিষ্ট্রি করার জন্য দরখাস্ত। বরাবর, বৃটিশ গর্ভমেন্টের সেক্রেটারী সাহেব, আমি আপনার খেদমতে উল্লিখিত দরখাস্ত পেশ করার অনুমতি চাচ্ছি।

১৮৮৬ ইং সালে আমাদের প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা এশাআতুস সুন্নাহ' এর মধ্যে প্রকাশ করেছিলাম, যার মধ্যে এটা উল্লেখ ছিল যে, ওহাবী নামের সাধারণ অর্থ হচ্ছে, রাষ্ট্রদ্রোহী এবং নিমকহারাম। এই জন্য উপমহাদেশের মুসলমানদের ঐ ফেরকা, যা আহলে হাদীস' নামে পরিচিত তারা সর্বদাই ইংরেজ সরকারের খাহেরখাহ এবং অনুগত ছিল। আর এটা বার বার প্রমাণ হয়েছিল এবং সরকারী খাতা-চিঠিপত্রে সত্যায়ন করেছিল....... আমরা অত্যন্ত আদর এবং বিনয়ের সাথে বৃটিশ গর্ভমেন্ট এর নিকট দরখাস্ত করছি যে, সরকারীভাবে 'ওহাবী' নামটিকে বাদ দিয়ে 'আহলে হাদীস' নামটি ব্যবহারের ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারী করে দেয়া হোক। এবং আমাদেরকে 'আহলে হাদীস' নামে আখ্যায়িত করা হয়। এই দরখাস্তের উপর উপমহাদেশের সকল প্রদেশের আহলে হাদীস ও সালাফী সম্প্রদায়ের লিডার ও নেতা-উলামাদের দস্তখত ছিল।

(এশাআতুস সুন্নাহ, পৃ. ২৪, খণ্ড ১১, সংখ্যা ২)


তারপর এই আহলে হাদীস সম্প্রদায়ের নজরে সালাফী শব্দ ভাল লাগে, তখন নিজেদেরকে 'সালাফী' নামেও প্রচার করতে শুরু করে, বরং আজ ইসলামী বিশ্বে চাই আরব হোক চাই আজম হোক, আহলে হাদীস এবং সালাফী নামেই তাদের পরিচয় দিয়ে থাকে। বর্তমানে উপমহাদেশ থেকে অতিক্রম করে তারা তাদের হেড অফিস মক্কা-মদীনায় স্থাপন কারে।


(আহলেহাদীস সম্প্রদায়ের মুখোশ উন্মোচন. পৃ ২১)
-মুফতী মাযহারুল ইসলাম ওসমান কাসেমী
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url