হযরত আলী রাঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী ও পরিচিতি

হযরত আলী রাঃ এর জীবনী



হযরত আলী রাঃ এর জীবনী ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

  • হযরত আলী রাঃ এর নাম ও পরিচিতি

নাম : আলী, উপনাম : আবুল হাসান, আবু তুরাব, পিতার নাম : আবু তালিব, মাতার নাম : ফাতিমা বিনতে আসাদ, উপাধি : আসাদুল্লাহ, হায়দার, মুরতাজা। তিনি আবদুল্লাহ নামে প্রসিদ্ধ। রাসূল (স)-এর চাচাতো ভাই। হাশেমী বংশোদ্ভূত।


  • হযরত আলী রাঃ এর নসবনামা (বংশ পরিচয়)

আলী ইবনে আবি তালিব ইবনে আবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশিম ইবনে আবদে মানাফ ইবনে কুসাই ইবনে কিলাব ইবনে মুররাহ ইবনে কা'ব ইবনে লুয়াই আল-হাশেমী আল-কুরাইশী ।


  • হযরত আলী রাঃ এর জন্ম

রাসূল (স)-এর নবুওয়াত লাভের দশ বছর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন ।


  • হযরত আলী রাঃ এর ইসলাম গ্রহণ

একদা হযরত খাদীজা (রা) এবং রাসূল (স)-কে নামায পড়তে দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা কি করছেন? উত্তরে রাসূল (স) বললেন, এটা আল্লাহর দীন। হযরত খাদীজা (রা) বললেন, তোমাকেও আমরা সেই দায়িত্ব দিচ্ছি। তখনই তিনি ইসলামের প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়ে কালেমা পাঠ করেন।


  • হযরত আলী রাঃ এর সাথে রাসূল সঃ এর সাথে সম্পর্ক

একদিকে তিনি রাসূল (স) এর চাচাত ভাই। অপর দিকে রাসূলের আদরের দুলালী হযরত ফাতেমার স্বামী। রাসূল (স) তাঁকে অত্যন্ত ভালবাসতেন। যার প্রমাণ হুযুরের নিম্নোক্ত বাণীটি - “তুমি আমার জন্যে তেমন যেমন মূসার পক্ষে হারুন ছিলেন, তবে পার্থক্য হল আমার পরে আর কোন নবী আসবেন না।”


  • হযরত আলী রাঃ এর দৈহিক গঠন

হযরত আলী মোটা চামড়াবিশিষ্ট ছিলেন। চক্ষুদ্বয় বড় বড়, অপেক্ষাকৃত বেঁটে শরীর, ঘন চুল ও ঘন চাপ-দাড়িবিশিষ্ট, মাথার চুল এবং মাড়ি সাদা হয়ে গিয়েছিল।


  • হযরত আলী রাঃ এর শাহাদাত বরণ

হিজরী ৪০ সনের ১৮ই রমযান জুমাবার ফজর নামাযে মসজিদের দিকে যাওয়ার পথে আবদুর রহমান ইবনে মুলজিম নামক খারেজী ঘাতকের তলোয়ারের আঘাত প্রাপ্ত হয়ে তিন দিন পর শাহাদাত বরণ করেন


  • হযরত আলী রাঃ এর জানাজা ও দাফন

তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র হাসান (রা) তাঁর জানাজার নামায পড়ান। কুফার জামে মসজিদের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়। কারো মতে নাজফে আশরাফে তাঁকে সমাহিত করা হয়।


  • রাসুল (স)-এর প্রিয়জন হযরত আলী রাঃ

মহানবী হযরত মুহম্মদ (স)-এর যে ক'জন পুত্র ছিলেন, সব ক'জনই বাল্যকালে মারা গেছেন। তবু কোনটিকে তিনি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন? এ প্রশ্নটি করেন আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস তাঁর পিতা আব্বাসকে। হযরত আব্বাস (রা) জবাব দেন, “আলী ইবনে আবূ তালিবকে বেশি ভালোবাসতেন।"

আবদুল্লাহ্ আবার জিজ্ঞাসা করেন, “আব্বা! আমি তো তাঁর পুত্রদের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছি।”

হযরত আব্বাস (রা) বলেন, “নবী মুহাম্মদ (স) তাঁর পুত্রদের চেয়ে আলীকেই বেশি ভালোবাসতেন। তিনি বাইরে না গেলে আলীকে আমি আধ ঘন্টার জন্যেও তাঁর কাছছাড়া হতে দেখিনি। আলী মুহাম্মদ (স)-এর প্রতি যেরূপ অনুরক্ত ও শ্রদ্ধাশীল ছিলেন, কারো কোনো পুত্রকেও আমি পিতার প্রতি তত অনুগত, অনুরক্ত ও ভক্তিপরায়ণ দেখিনি।”

-ইবনে আবিল হাদিদ মুতাযালি

হযরত আব্বাস এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের উপরিউক্ত সংলাপের মধ্যে নবী মুহাম্মদ (স) এবং তদীয় জামাতা আলীর মধুর ও নিবিড় সম্বন্ধের স্বচ্ছ রূপ প্রতিফলিত হয়।


  • হযরত আলী রাঃ এর রাসূল প্রেম

হযরত আলী (রা) আপন সত্তাকে আল্লাহর নবী মুহম্মদ (স)-এর সত্তার মধ্যে বিলীন করে দিয়েছিলেন। তাঁর জীবন ছিল একটি দর্পণ স্বরূপ। এই দর্পণের মধ্যে রাসূলের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই প্রতিফলিত হত। আল্লাহ্র রাসূলের সমগ্র রূপটি যদি কোন মানুষের মধ্যে দেখার ইচ্ছা হয়, তবে হযরত আলীর চরিত্র এবং জীবনযাত্রার দিকে তাকাতে হবে। অপত্য স্নেহে রাসূল (স) আলীকে লালন পালন করেছেন। তাঁরই যত্নে, স্নেহে, শিক্ষায় হযরত আলীর চরিত্র মহামানবীয় গুণে মাধুর্যমণ্ডিত হয়ে


  • বহুগুণাধার হযরত আলী রাঃ

হযরত আলী (রা) খলীফা ছিলেন, রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন, সেনানায়ক ছিলেন, পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন । মানব গুণের চরম ও পরম উৎকর্ষ সাধিত হয় আলীর মধ্যে । নবী মুহাম্মদের জীবনের অপর এক সাফল্য হল হযরত আলীর মানসগঠন। তাঁরই যত্ন, পরিশ্রম এবং সাধনার ফসল আলী ছিলেন মানবতার গৌরব। সাধনার পথে, সিদ্ধির পথে অগ্রসর হতে হতে মানুষ এমন এক স্তরে উন্নীত হয় যখন হয়ত স্রষ্টা এবং সৃষ্টির মধ্যে অন্তরাল থাকে না, তখন স্রষ্টা আপন সৃষ্টিতে গর্ববোধ করেন।

নাহরাওয়ানের যুদ্ধক্ষেত্র। হযরত আলীর প্রচণ্ড আঘাতে প্রতিপক্ষ এক বীরের তরবারি ভেঙে হাত থেকে বিচ্যুত হয়ে যায় । প্রতি আঘাতের জন্যে আলীর তরবারি উত্তোলিত হয়, কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ত্রহীন। ভয়ে কম্পমান ।

হযরত আলী তরবারি নামিয়ে নিলেন এবং বললেন, “দ্রুত পলায়ন কর যুবক! তোমার বাহিনীতে ফিরে যাও। তুমি আত্মরক্ষায় অসমর্থ।”

আলীর অদ্ভুত ব্যবহারে যুবকটি বিস্ময়ে হতবাক, সে পালিয়ে গেলো না। বলল, “হে আলী, তুমি কেন আমায় হত্যা করছো না, তাতে তো তোমার একটি শত্রু অন্তত কমে যেত।

হযরত আলী বললেন, “আত্মরক্ষায় সমর্থ নয় এমন ব্যক্তিকে আমি আঘাত হানতে পারি না। তোমার কম্পিত দেহে, ভীত নয়নে আছে প্রাণভিক্ষার আকুতি, তাই তোমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”

সাহস সঞ্চয় করে যুবক বলল, “আলী!! আমি শুনেছি তুমি উদার। কোন প্রার্থীকে বিমুখ কর না। আমি তোমার তরবারিটি প্রার্থনা করছি। তুমি কি তাও আমাকে অর্পণ করতে পার ?”

হযরত আলী (রা) নিঃশঙ্ক, নির্বিকার। ধীর, শান্ত, গম্ভীর প্রত্যয়ের বাণী ধ্বনিত হল আলীর কণ্ঠে- রাব্বুল আলামীন আল্লাহ্ আমাকে রক্ষা করবেন, তিনি যদি ইচ্ছা করেন আমি রক্ষা পাবোই, মৃত্যুই আমার জীবনপ্রহরী, মালাকুল মউত না আসা পর্যন্ত কেউ আমার অমঙ্গল করতে পারবে না, আর মৃত্যু উপস্থিত হলে কেউ আমায় রক্ষাও করতে পারবে না। এই বলে তরবারিটি তিনি দিয়ে দিলেন।”

হযরত আলী (রা)-এর গভীর আত্মবিশ্বাস, নিঃশঙ্কচিত্ততায় লোকটি বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেল। তাঁর মহানুভবতা এবং গভীর প্রত্যয়ের স্বরে সে মুগ্ধ এবং খানিকক্ষণ বাকরুদ্ধ থেকে অকস্মাৎ হযরত আলীর (রা) ঘোড়ার লাগাম চুম্বন করতে লাগল এবং বলল, “হে মহান! আপনি কল্পনাতীত উদার ! আপনি শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর প্রাণ হরণেই বিরত থাকেন না; বরং আপনাকে বধ করতে পারে জেনেও আপনি আপনার তরবারি পর্যন্ত প্রাণের বৈরীকে অর্পণ করতে পারেন। আপনার জন্যে যুদ্ধ করার সুযোগ এবং আপনার দেহরক্ষী হওয়ার গৌরব কি আপনি আমায় দেবেন?”
হযরত আলী বললেন, “হে বন্ধু! ন্যায় ও সত্যের পথে আল্লাহ্র জন্যে সংগ্রাম কর, কোনো ব্যক্তির জন্যে নয়।”


  • অসম সাহসী বীর হযরত আলী রাঃ

উহুদের যুদ্ধ। কোরেশদলের পতাকাবাহী তালহা ছিলেন হযরত আলীর ঘোরতর পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত প্রতিদ্বন্দ্বী। তালহার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত আকাঙ্ক্ষা আলী (রা)-কে হত্যা করা। হযরত আলীর প্রতি ব্যক্তিগত বিদ্বেষ এবং তাকে হত্যা করার ইচ্ছা তালহার কোন গোপন অভিলাষ নয়; বরং প্রকাশ্য ঘোষণা।
তালহা হযরত আলীকে সম্মুখসমরে আহবান করলেন। তীব্র সংঘাতের পর... Read more


  • মানবতার দুয়ারে হযরত আলী রাঃ এর বীরত্ব
জামালের যুদ্ধ । হযরত আলী (রা) বীরবিক্রমে শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করে ক্লান্ত, শ্রান্ত । ভৃত্য কাম্বার খানিকটা মিষ্টি সিরাপ নিয়ে হযরত আলীর দিকে এগিয়ে এসে বললেন, "জনাব! প্রখর রৌদ্রে আপনি অবিরাম যুদ্ধ করে চলেছেন। আপনি তৃষ্ণার্ত এবং ক্লান্ত এ শরবত পান করে তৃষ্ণা নিবারণ করুন।"
সতৃষ্ণ নয়নে হযরত আলী (রা) শরবতের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলেন। কাম্বারকে বললেন... Read more


  • সাম্যের প্রতীক হযরত আলী রাঃ

হারিস ইবনে সোহাইল প্রাদেশিক শাসনকর্তা। সরকারি কাজে তিনি রাজধানী কুফায় আগমন করেছেন। এক অপরাহ্ণে তিনি অশ্বে আরোহণ করে রাজপথে চলেছেন। হঠাৎ খলীফার সঙ্গে পথিমধ্যে সাক্ষাৎ। তিনি আমীরুল মুমিমিনকে... Read more


  • মানবদরদী হযরত আলী রাঃ

হযরত আলী (রা)-এর পরিবারে এরূপ তিন জন যুদ্ধবন্দি আশ্রয় পেয়েছিলেন, তাঁরা হলেন সাঈদ (র), কামর (র) ও ফিজ্জা (র)। তাঁরা আলী (রা)-এর পরিবারে মানবপ্রেমের যে উৎসের সন্ধান পেয়েছিলেন, তা পরিত্যাগ করে আর কোথাও যাননি। হযরত আলী (রা)-এর সংস্পর্শে থেকে তাঁরাও ক্রমশ নানা মহৎ জ্ঞানে মহিমামণ্ডিত হয়ে উঠেন। তাঁদের প্রতি হযরত আলী (রা)-এর ব্যবহারের স্বরূপ হযরত সাঈদ (র) বর্ণিত একটি ঘটনা থেকে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। তিনি বলেন

ভীষণ গরমের দিন। হযরত আলী (রা) গৃহাভ্যন্তরে বসে পত্র লিখছিলেন। আমি বাইরে উপবিষ্ট। পত্র লেখাকালে তিনি কয়েকজন রাষ্ট্রীয় কর্মচারীর উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তাঁদের ডেকে আনার জন্যে আমাকে তিনি কয়েকবার ডাকলেন। আমি ইচ্ছাপূর্বক কোন সাড়া দিলাম না। অতঃপর তিনি... Read more



  • আইনের প্রতি হযরত আলী রাঃ এর শ্রদ্ধা

হযরত আলী (রা)-এর একটি মজবুত লৌহবর্ম ছিল। সিফফিনের যুদ্ধে বর্মটি হারিয়ে যায়। কিছুকাল পরে তিনি সেই লৌহ বর্মটি কুফায় এক ইহুদির পরিধানে লক্ষ্য করেন। তিনি তাকে বলেন, এ বর্মটি আমার। এটি আমি... Read more


  • সম্পদের সুষম বণ্টনে হযরত আলী রাঃ

বায়তুল মালের সম্পদ বিতরণ করা হচ্ছে। খলীফা হযরত আলী (রা) দাঁড়িয়ে তদারক করছেন । দূরে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করছে বালক সুবি। পরবর্তীকালে এই বালক... Read more


  • আড়ম্বরশূন্য জীবন যাপনে হযরত আলী রাঃ

ইবনে আবি রাফে' বর্ণনা করেছেন, “কোন এক ঈদের দিনে আমি আলীর কাছে যাই। আমি সেখানে উপবিষ্ট থাকাকালীন তাঁর কাছে একটি সীলমোহর করা থলে আনা হয়। খলীফা শীলমোহর করা থলেটি খুলে... Read more


  • হযরত আলী রাঃ এর শাহাদত ও মহানুভবতা

১৯ রমযান, ৪০ হিজরী সন। সুবহে সাদিকের সময় খলীফা হযরত আলী (রা) কৃষ্ণার মসজিদে আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশে আগমন করেন। আবদুর রহমান ইবনে মুলজাম মসজিদে উপুড় হয়ে শায়িত ছিল। খলীফা তাঁকে... Read more

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url