হযরত ওসমান রাঃ এর জীবনী ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

হযরত আবু বকর রাঃ এর জীবনী


আশারাহ্ মুবাশশারাহ্


সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

নাম ও পরিচিতি

নামঃ ওসমান, উপনাম আবু আবদুল্লাহ, আব্বু আমর, আৰু লায়লা, উপাধিঃ যুন্নারাইন ও গনী, পিতার নাম : আফ্ফান ইবনে আবুল 'আস, মাতার নাম : আরওয়া বিনতে কুরাইয। রাসূল (স)-এর জামাতা ও তৃতীয় খলিফা। কুরাইশ বংশের উমাইয়া শাখার সন্তান।


নসবনামা (বংশ পরিচয়)

তাঁর ঊর্ধ্বতন পুরুষ আব্দে মানাফে গিয়ে রাসূল (স)-এর নসবের সাথে তাঁর নসব মিলিত হয়েছে। যেমন- ওসমান ইবনে আফফান ইবনে আবিল 'আস ইবনে উমাইয়া ইবনে আবদে শামস ইবনে আবদে মানাফ। প্রসিদ্ধ 'আসমাউর রিজাল' গ্রন্থের "কিতাবুল জারহে ওয়াততা দীল'-এ তাঁর নসবনামা এভাবে বর্ণিত


রাসূল (স)-এর সাথে সম্পর্ক

একাধিকসূত্রে হযরত ওসমান (রা)-এর সাথে রাসূল (স)-এর সম্পর্ক রয়েছে। প্রথমত : হযরত ওসমান (রা)-এর ৫ম পূর্বপুরুষ আবদে মানাফ-এর সাথে রাসূল (স)-এর বংশ ধারা মিলে যায়।

দ্বিতীয়তঃ তাঁর নানী বায়দা বিনতে আব্দিল মুত্তালিব রাসূল (স)-এর ফুফু ছিলেন। তৃতীয়ত : রাসূল (স) তাঁর দু'কন্যা রুকাইয়া ও উম্মে কুলসুমকে তাঁর নিকট বিয়ে দেন । এ কারণেই তাঁকে (যুন্নূরাইন) বলা হয়। হুযূর (স)-এর নিম্নবর্ণিত বাণী থেকে ওসমান (রা)-এর সাথে রাসূল (স)-এর গভীরতম সম্পর্কের প্রমাণ মেলে। যেমন, তিনি বলেন “প্রত্যেক নবীরই বন্ধু রয়েছে। বেহেশতে আমার বন্ধু হবে ওসমান (রা)।"


জন্ম

তাঁর জন্য সন নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও সংখ্যাধিক্যের মতে, তিনি 'আমুল ফীল'-এর ৬ বছর পর ৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। এ হিসেবে তিনি রাসূল (স)-এর ৬ বছরের ছোট। কোন কোন বর্ণনা মতে, তাঁর জন্ম হয় তায়েফে।


ইসলাম গ্রহণ

প্রসিদ্ধ গ্রন্থ 'আল ইকমালু ফি আসমায়ির রিজাল'-এ বর্ণিত আছে, হযরত ওসমান (রা) ইসলামের প্রাথমিক কালে রাসূল (স) দারুল আরকামে আশ্রয় গ্রহণের পূর্বে হযরত আবূ বকর (রা)-এর প্রচেষ্টায় ইসলাম গ্রহণ করেন।" হযরত ওসমান (রা) নিজেই বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণকারী চার জনের মধ্যে চতুর্থ। এ সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ত্রিশের ঊর্ধ্বে ।


ইনতিকাল

হিজরী ৩৫ সালে ১৮ই যিলহাজ্জ 'আল-আওয়াত তুজিবী' নামক ঘাতকের হাতে আসর নামাযের পর ৮২-৯০ বছরের মাঝামাঝি বয়সে তিনি শাহাদাত বরণ করেন


কবর

'জান্নাতুল বাকী' কবরস্থানের 'হাশশে কাওকাব' নামক অংশে রক্তাক্ত পোশাক সজ্জিত এ মজলুমকে গোসলবিহীন অবস্থায় দাফন করা হয়। হযরত যুবাইর ইবনে মুমি তাঁর জানাযায় ইমামতি করেন ।


হযরত ওসমানের বদান্যতা

ইসলামের প্রাথমিক যুগে মহাসাধক হযরত ওসমান (রা)-এর বিত্ত সম্পদের প্রয়োজন ও গুরুত্ব হযরত আলী (রা)-এর বীরত্ব, আবুজর গিফারী (রা)-এর তাকওয়া ও হযরত আবূ বকর (রা)-এর নিষ্ঠার চেয়ে কম ছিল না। হযরত ওসমান (রা)-এর ধন-সম্পদ নিছক ধন-সম্পদ ছিল না। এগুলো ইসলামের ইতিহাসের এক যুগসন্ধিক্ষণে ইসলাম প্রচার, দাসমুক্তি, নিঃস্ব মুসলিমদের জঠরজ্বালা নিবৃত্তি এবং শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদ ও প্রতিরক্ষার কাজে অশেষ ভূমিকা পালন করেছে। ধনের প্রতি মানুষের মোহ এবং মায়া কল্পনাতীত। মানুষ জান দিয়ে দেয়, তবুও ধন ছাড়ে না। ধনরক্ষার জন্যে জান দেওয়া নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা, কিন্তু মুসলমানদের প্রয়োজনে বায়তুল মালের অর্থ এবং ওসমান (রা)-এর অর্থের মধ্যে কোন পার্থক্য ছিল না।

তাবুক যুদ্ধের প্রস্তুতির পর্বে রাসূল (স) সাহাবীদের ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কে কী দিতে পারো। হযরত ওসমান (রা) দাঁড়িয়ে বললেন, “আমি একশ’ উট দেবো। রাসূল (স) আবার জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে অন্যান্যরা কে কী দেবে? হযরত ওসমান (রা) দাড়িয়ে বললেন, “আমি পাঁচশ' উট দেব।” রাসূল (স) আবারও একই প্রশ্ন করলেন। এবার হযরত ওসমান (রা) বললেন, আমি এক হাজার উট দেব। রাসূল (স) আবার বললেন, “তোমরা আর কে কী দেবে।” হযরত ওসমান (রা) এবারও দাঁড়িয়ে বললেন “এ জিহাদের জন্যে যা দরকার সবই আমি দেব।” শুধু একটি জিহাদেই নয়, সব সময়ই ছিল তাঁর এ অবস্থা । ইসলামের জন্যে অর্থ ব্যয়ে কোনদিন হযরত ওসমান (রা) কার্পণ্য করেননি ।


যুন্নুরাইন পদবি প্রসঙ্গ

হযরত ওসমানকে (রা) যুন্নুরাইন বা দুই নূরের অধিকারী বলা হয়। কারণ, তিনিপর পর রাসূল (স)-এর দুই মেয়ে- হযরত রুকাইয়া এবং হযরত উম্মে কুলসুম (রা)-কে বিয়ে করেছিলেন। দ্বিতীয় কন্যার বিয়ের সময় রাসূল (স) বলেছিলেন যে, তাঁর যদি একশটি মেয়ে থাকত, তিনি প্রত্যেককে পরপর ওসমান (রা)-এর সঙ্গে বিয়ে দিতে আপত্তি করতেন না!

রাসূল (স) আরও বলেছিলে, বেহেশতে প্রত্যেক নবীরই একজন বন্ধু থাকবেন এবং তাঁর বন্ধু হবেন ওসমান (রা)।



হযরত ওসমান (রা.)-এর উদারতা

হযরত ওসমান (রা) এতো অধিক সম্পদশালী ছিলেন যে, তাঁকে গনী অর্থাৎ ধনবান- এ বিশেষ বিশেষণে ভূষিত করা হয়েছিল। গনী তাঁর নামের অংশ নয়। তিনি পরম বিত্তশালী ছিলেন বলেই তাঁকে গনী বলা হত ।

হযরত ওসমান (রা) কি তাঁর যা কিছু ধন-সম্পদ ছিল, নিজেকে সে সবের মালিক মনে করতেন? তিনি কি কখনও এক মুহূর্তের জন্য ভাবতেন, এসব সম্পদ আমার এবং আমি তা নিজের আরাম-আয়েশের জন্যে বা নিজের ইচ্ছামত ব্যয় করতে পারি?

এ সম্বন্ধে একটি সুন্দর ঘটনা আছে। একবার একজন অতি দরিদ্র ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (স)-এর কাছে এসে কিছু চাইলেন। রাসূল (স)-এর কাছে তখন দেওয়ার মত কিছুই ছিল না। তিনি তাঁকে পাঠালেন হযরত ওসমান (রা)-এর কাছে।

লোকটি হযরত ওসমান (রা)-এর বাড়িতে যখন পৌঁছল তখন সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। লোকটি শুনতে পেল যে..See more


হযরত ওসমানের অনাড়ম্বর জীবন ও মিতব্যয়

হযরত ওসমান (রা) গনী ছিলেন বটে, কিন্তু বিলাসী ছিলেন না। তাঁকে পিপাসার্ত কণ্ঠে শাহাদত বরণ করতে হয়েছিল। বিদ্রোহীরা তাঁর বাড়ি ঘিরে পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল।"

এক এক খলীফার এক একটি বিষয়ে অপেক্ষাকৃত অধিক মনোযোগ থাকে । হযরত ওসমান (রা)-এর মনোযোগ ছিল পানি কষ্ট নিবারণার্থ কূপ খনন । নিজের ব্যক্তিগত অর্থে এবং খিলাফতের অর্থে তিনি মুসলিম অধিকৃত অঞ্চলে বহু কূপ খনন করেছিলেন। তিনি ইচ্ছা করলে নিজের বাড়িতে একটি কেন, পঞ্চাশটি কূপ খনন করতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেননি। তাঁর পরিবারের লোকেরা পাড়ার অন্যান্য মেয়েদের মতই গাঁয়ের কূপ থেকে পানি নিয়ে আসতো।

আজকাল চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের কোয়ার্টারেও পানি সরবরাহের জন্য ট্যাপ থাকে। বাংলাদেশের ন্যায় পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশের সরকারের সর্বনিম্ন শ্রেণীর কর্মচারীরা যতটুকু আরাম ভোগ করেন, হযরত ওসমান (রা) ততটুকু আরাম আয়েশও ভোগ করতেন না। যদিও তিনি ছিলেন আরবের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি এবং মরক্কো থেকে আফগান পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল মুসলিম খিলাফতের রাষ্ট্রপ্রধান ।

রাসূল (স) তাঁর ২৩ বছরের নবুওয়তী জিন্দেগীতে বহু মানুষ তৈরি করে গেছেন। এঁদের শরীর রক্তে-মাংসে গড়া হলেও তাঁরা রিপুকে দমন করে তাদের দেহ-মনে রূহের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁদের অস্তিত্ব তৎকালীন অসভ্য, বর্বর আরব সমাজকে পরিণত করেছিল মানবের চির আকাঙ্খিতও চির-বাঞ্ছিত কল্যাণময় ও শান্তিময় সমাজে। এই মহান সাহাবীদের অন্যতম ছিলেন হযরত ওসমান (রা)। নিজ চরিত্র গুণেই তিনি ছিলেন বিশ্বমানবতার গৌরব রতন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url