হযরত আবু বকর রাঃ এর জীবনী ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

হযরত আবু বকর রাঃ এর জীবনী


হযরত আবু বকর রাঃ এর জীবনী

  • হযরত আবু বকর রাঃ এর নাম ও পরিচয়
ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবূ বকর (রা)-এর প্রকৃত নাম আবদুল্লাহ, উপনামঃ আবূ বকর, উপাধিঃ আতীক ও সিদ্দীক, পিতার নাম ওসমান, উপনাম : আবৃ কুহাফা, মাতার নাম : উম্মুল খায়র সালমা বিনতে সাখর।


  • হযরত আবু বকর রাঃ এর নসবনামা (বংশ-লতিকা)
আবূ বকর আবদুল্লাহ ইবনে ওসমান আবু কুহাফা ইবনে আমর ইবনে কা'ব ইবনে সা'দ ইবনে তাইম ইবনে মুররাহ ইবনে কা'ব ইবনে লুয়াই ইবনে গালিব আল-কারশী ।


  • হযরত আবু বকর রাঃ এর জন্ম
তিনি হিজরতের ৫০ বছর ৬ মাস পূর্বে 'আমুল ফীল'-এর ২ বছর চার মাস পরে ৫৭১ ৫৭২ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাসূল (স)-এর দু'বছর চার মাসের ছোট। তিনি রাসূল (স)-এর দূর সম্পর্কের চাচাতো ভাই ছিলেন। পরে হযরত আয়েশা (রা)-কে রাসূল (স)-এর কাছে বিয়ে দিয়ে রাসূল (স)-এর গর্বিত শ্বশুর হন।


  • হযরত আবু বকর রাঃ এর ইসলাম গ্রহণ
ইসলাম গ্রহণের পূর্ব থেকেই রাসূল (স)-এর সাথে তাঁর সখ্যতা ছিল। ইসলাম গ্রহণকারী নারী-পুরুষের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় এবং বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে তিনিই প্রথম।


  • হযরত আবু বকর রাঃ এর চারিত্রিক গুণাবলি
তিনি কুরাইশ গোত্রের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের অন্যতম। গভীর জ্ঞান, প্রজ্ঞা, মেধা, বিচক্ষণতা, সিদ্ধান্তে স্থিরতা, কষ্টসহিষ্ণুতা, বদান্যতা, উদারতা ইত্যাদি মানবীয় গুণাবলিসমূহের এক অপূর্ব সমাহার ছিল তাঁর জীবনে ।


  • হযরত আবু বকর রাঃ রাসূলে পাকের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক
পূর্বপুরুষ মুরারাহ-এর সূত্রে তিনি রাসূল (স)-এর স্ব-বংশীয় ছিলেন। এছাড়াও তিনি রাসূল (স)-এর বাল্যবন্ধু ছিলেন। পরবর্তীতে স্বীয় কন্যা আয়েশা (রা)-কে বিয়ে দিয়ে রাসূল (স)-কে জামাতা বানিয়ে নেন। আত্মীয়তার বন্ধন অপেক্ষা দীনী সম্পর্কটাই তাঁকে রাসূল (স)-এর সার্বক্ষণিক সাহচার্যে আত্মোৎসর্গিত রাখে

  • হযরত আবু বকর রাঃ এর ইন্তিকাল
হযরত আবূ বকর (রা) ১৩ হিজরী, ৭ জমাদিউল উখরা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১৫ দিন জ্বরে ভোগার পর ২১ জমাদিউল উখরা মোতাবেক ২৩ আগস্ট ৬৩৪ খৃস্টাব্দে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ৬৩ বছর বয়সে ইনতিকাল করেন।

  • হযরত আবু বকর রাঃ এর সমাধি
তাঁর অছিয়ত মুতাবিক তদীয় স্ত্রী হযরত আসমা বিনতে উমাইস তাঁকে অন্তিম গোসল দেন । হযরত ওমর (রা) তাঁর জানাযার নামাযে ইমামতি করেন। হযরত ওসমান (রা), হযরত তালহা (রা), হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবূ বকর (রা) এবং হযরত ওমর ফারূক (রা) তাঁর লাশ কবরে রাখেন। তাঁকে হযরত আয়েশা (রা)-এর হুজরায় রাসূল (স)-এর পাশে দাফন করা হয়। তিনি 'আশারায়ে মুবাশশারা'-এর প্রথম ব্যক্তিও বটে।

“আপনারাই আমাকে এ দায়িত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত করেছেন। আল্লাহর কসম, এর জন্যে আমার কোনো সাধ বা স্বার্থ নেই। অন্য কেউ যদি খলীফা নির্বাচিত হতেন, আমি অবশ্যই তাতে বেশি আনন্দিত হতাম।” “আমি একজন মানুষ। আপনাদের কারো চেয়ে আমি শ্রেষ্ঠ নই। অতএব আমার উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন।"

“যতক্ষণ আপনারা দেখবেন আমি সত্য এবং ন্যায় পথে আছি ততক্ষণ আপনারা আমাকে মানবেন। যদি সত্য পথ থেকে সরে যাই তবে আমাকে সৎপথে টেনে আনবেন।"


“আল্লাহর কসম, আপনাদের কাছে যে সবচেয়ে দুর্বল, সেই হবে আমার কাছে সবচেয়ে শক্তিশালী। কারণ, অপরের কাছে তার যা প্রাপ্য, আমি তা কড়ায় গণ্ডায় আদায় করে দেবো। আপনাদের কাছে যে শক্তিশালী, আমার কাছে সে হবে সবচেয়ে দুর্বল । কারণ তার যা দেয়, আমি তা পূর্ণমাত্রায় আদায় করে নেবো।” কথাগুলো বলেছিলেন ইসলামের ইতিহাসের প্রথম খলীফা হযরত আবু বকর (রা) তাঁর সর্বপ্রথম ভাষণে। নিষ্ঠাবান খলীফাদের যুগে যারা ছিল দুর্বল এবং নির্যাতিত, তারাই ছিলো অনুগৃহীত এবং সরকারি সুযোগপ্রাপ্ত শ্রেণী। তারা ভোগ করত শাসকদের অনুগ্রহ, সাহায্য এবং আশ্রয় ।

ইসলামের প্রথম খলীফা তাঁর প্রথম ভাষণেই দ্বিধাহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন যে, দুর্বল এবং উৎপীড়িতরাই হবে খিলাফতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি। তাদের অধিকার এবং দাবিই পাবে লীফার কাছে অগ্রাধিকার।


  • হযরত আবু বকর রাঃ এর জনগণের অধিকার ও দায়িত্ব
সপ্তম শতাব্দীর ইসলামী রাষ্ট্র দরিদ্র এবং বঞ্চিতদের সর্বপ্রকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলো। আল্লাহু তাঁর পবিত্র গ্রন্থ আল-কুরআনে ঘোষণা করেছেন যে, তিনি পৃথিবীর সকল প্রাণীর জীবিকা সৃষ্টি করেছেন। তিনি সকল প্রাণীকে জীবিকার ওয়াদা দিয়েছেন। আল্লাহর ওয়াদার অর্থ এই নয় যে, তিনি এই পৃথিবীতে নেমে আসবেন এবং সকলের আহারের ব্যবস্থা করে যাবেন। তিনি খাদ্য উৎপাদন করবেন না, বা তা বিতরণও করবেন না। তিনি আকাশ হতে মান্না সালওয়াও প্রেরণ করবেন না। আল্লাহর ওয়াদার অর্থ এই যে আল্লাহ সকল প্রাণীর জীবিকার প্রয়োজনীয় উপাদান সৃষ্টি করে রেখেছেন। শ্রমের মাধ্যমে তা অর্জন এবং ভোগ করতে হবে।

যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তাদের প্রয়োজনের অধিক গ্রহণ করে তবে সমাজের অপর অংশকে অর্ধভুক্ত বা অভুক্ত থাকতে হবে- এটা অতি সাধারণ বুদ্ধির কথা।

খলীফা বা সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন পেয়ে যদি একদল শক্তিশালী হয়ে ওঠে বা সুবিধা গ্রহণের সুযোগ পায়, সমাজের অপর অংশকে তা চরম দারিদ্র্য ও অনটনের মুখে ঠেলে দেবেই। সরকারি সমর্থন বা নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে একদিকে গড়ে উঠবে বিলাসের পাহাড় - অপরদিকে তুষের আগুনের মত নীরবে জ্বলবে দুর্বল ও সর্বহারাদের ক্ষুধার অনল, আর প্রবাহিত হবে দুঃখ-বেদনার করুণ অশ্রুধারা। সমাজে অভাব-অনটন এবং অন্নাভাবের অপর কারণ, আল্লাহ্ প্রদত্ত সম্পদের অপব্যবহার বা অপর্যাপ্ত ব্যবহার। আল্লাহ্ আল-কুরআনে বলেছেন, “তিনি কিছুই বৃথা সৃষ্টি করেননি। আল্লাহর সৃষ্ট সম্পন্ন যদি কায়েমী স্বার্থান্ধগণ জবরদখল করে রাখে এবং খিলাফত যদি তার সুষ্ঠু ব্যবহারের ব্যবস্থা না করতে পারে, তবে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ লোক অনাহারে থাকবে, এতো স্বাভাবিক।

জনগণের খাদ্যদ্রব্যের সংস্থান করে দেওয়ার দায়িত্ব খিলাফতেরই। ইসলামের ইতিহাসে ন্যায়নিষ্ঠ খলীফাগণ এ দায়িত্ব সম্যকভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। তাই খলীফা ওমর (রা) বলেছেন, “যদি ফোরাত তীরে একটি কুকুরও না খেয়ে মারা যায়, বিচারের দিনে তার জন্যে ওমরকেই জবাবদিহি করতে হবে।

খলীফার এ বিরাট দায়িত্ব পালনের জন্য হযরত আবূ বাকর (রা), ওমর (রা) প্রমুখ খলীফাগণ রাতের অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে খুঁজে বেড়াতেন, কারা অভাব অনটনে আছে। তখনকার দিনে হাত বাড়িয়ে নেওয়ার অভ্যাস কম ছিলো। উপবাস থাকলেও কোন কোন ব্যক্তি তা অপর কাউকে জানতে দিতে চাইতো না। তাই খলীফাগণ ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াতেন লোকজনের অভাব অনটনের খবর নেওয়ার জন্যে।
তখনকার দিনের তুলনায় বিংশ শতাব্দীর এই সভ্য যুগে মানুষের উপর মানুষের যুলুম, অত্যাচার এবং শোষণ অনেক গুণ বেড়ে গেছে। জঠর জ্বালায় মানুষ অত্মহত্যা করছে, নারী তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ সতীত্ব বিসর্জন দিয়ে বিত্তশালীর অঙ্কশায়িনী হচ্ছে।

বর্তমান যুগের শাসকদের তখনকার দিনের খলীফাদের ন্যায় অভাবী মানুষের সন্ধানে রাতের অন্ধকারে ঘুরে বেড়ানোর প্রয়োজন নেই। স্ফটিক স্বচ্ছ দামি কাঠের ফার্নিচার সজ্জিত প্রকোষ্ঠে, নরম তুলতুলে মূল্যবান গালিচার উপর পাদুকা স্থাপন করেই অনুন্নত রাষ্ট্রসমূহের ভাগ্যবিধাতাগণ অনশনক্লিষ্ট মালুম জনগণের খবর পান ।


  • হযরত আবু বকর রাঃ এর মহান প্রতিদ্বন্দ্বী
একবার হযরত ওমর (রা) একজন বিপন্ন-দরিদ্র বৃদ্ধা মহিলার সন্ধান পান। তিনি বৃদ্ধাকে প্রতিদিন আহার্য সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তী রাতে তিনি প্রয়োজনীয় আহার্য নিয়ে বৃদ্ধার বাড়িতে গমন করেন এবং দেখতে পান যে, কোন মহান ব্যক্তি ইতোপূর্বেই বৃদ্ধার সেদিনকার প্রয়োজনীয় সব কিছু দিয়ে গেছেন। পরবর্তী দিন তিনি সেই মহান প্রতিদ্বন্দ্বীকে আবিষ্কার করার জন্যে খানিকটা আগে বৃদ্ধার বাড়িতে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। খানিকক্ষণ পর দেখা গেলো যে, খলীফা হযরত আবূ বকর (রা) আহার্য বহন করে বৃদ্ধার দ্বারে উপস্থিত। হযরত ওমর (রা) হাত তুলে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া প্রকাশ করলেন যে, একমাত্র মুসলিমদের খলীফার কাছেই তিনি হেরেছেন, আর কারও কাছে নয় ।


  • হযরত আবু বকর রাঃ এর নীতির প্রশ্নে আপস
কোমলপ্রাণ স্নেহপরায়ণ খলীফা হযরত আবূ বকর (রা)-ই প্রয়োজন হলে যে কোন ব্যক্তি অপেক্ষা ইস্পাততুল্য কঠোর হতে পারতেন। যেভাবে তিনি খিলাফতের প্রথম কয়েক মাসে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মুকাবিলা করেছিলেন, তা বিস্ময়কর। সে সময়ে কয়েকজন ভণ্ড পয়গম্বরের আবির্ভাব ঘটে। মিষ্টভাষী ও কোমলহৃদয় খলীফা দৃঢ়তার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন। ইসলামের ঐ যুগসন্ধিক্ষণে তাঁর ঈমানের দৃঢ়তা প্রকাশিত হয়। যে কয়জন ভক্ত পয়গম্বর কয়েক লক্ষ অনুসারী সংগ্রহ করে খিলাফতের শক্তি এবং ইসলামের বিধানের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করে, তাদের সকলের বিরুদ্ধেই তিনি অস্ত্র ধারণ করেন। যে সমস্ত গোত্র যাকাত দিতে অস্বীকার করে তাদের সকলের বিরুদ্ধে ঘোষিত হয় জেহাদ।


যাকাতের সঠিক অর্থ আজকাল আমরা অনুধাবন করতে চাই না। কারণ, তা আমাদের অনেকের স্বার্থের পরিপন্থী। সুবিধাবাদী শ্রেণীর স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য কোনো যুগেই পদলেহনকারী আলেমদের অভাব হয়নি। তারা ধনিকদের স্বার্থেই ফতোয়া দিয়ে ইসলামকে পরিত্যাজ্য আদর্শে পরিণত করেছেন। আব্বাসীয় এবং উমাইয়া খলীফাদের সকল প্রকার অপকর্মের উপর শরীয়তের প্রলেপ দেওয়ার জন্য প্রগাঢ় পাণ্ডিত্যের অধিকারী আলেম পাওয়া যেত। এই সুবিধাবাদী আলেমগোষ্ঠী যাকাতকে উদ্বৃত্ত সম্পদের উপর ট্যাক্স বলে ব্যাখ্যা করতেন। আসলে যাকাত ধার্য হয় ব্যক্তির সমস্ত সম্পত্তির উপরই। দু'ব্যক্তির কথা চিন্তা করুন। একজনের তিন একর জমি আছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিবারাত্র পরিশ্রম করে বছরে তিন ফসল উঠিয়ে সে ব্যক্তি গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থা করেন। খাওয়া-দাওয়া ও পরিধানে মিতব্যয় এবং সংযম অভ্যাস করেই এই ব্যক্তি তার প্রাণাধিক প্রিয় কন্যার বিয়ের জন্য চার শত টাকা সঞ্চয় করলেন। এ কন্যাদায়গ্রস্ত কৃষককেও তাঁর এই সঞ্চয়ের উপরে যাকাত দিতে হবে। অপর এক ব্যক্তির কথা চিন্তা করুন। তাঁর পঞ্চাশ লক্ষ টাকা আয়। তিনি তাঁর সম্পদ শিল্প-বাণিজ্যে খাটান, হোটেল কন্টিনেন্টালে থাকা খাওয়া-খাওয়া বাবদ তিনি দৈনিক পাঁচ হাজার টাকা এবং একরাতের প্রমোদে সুন্দরী বারবণিতাকে কন্ঠলগ্ন করার জন্য বিশ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় করেন। এভাবে ব্যক্তিগত আরাম-আয়েশ এবং বিলাস-প্রমোদে বছরে তাঁর লক্ষ লক্ষ টাকা অপব্যয় হয়। বছর শেষে তাঁর হাতে উদ্বৃত্ত কিছুই থাকে না। তাঁর সব টাকা ব্যবসায়ে খাটে। ব্যক্তিগত ব্যয়ের জন্য সেখান থেকেই তাকে টাকা নিতে হয়। পূর্বোক্ত সুবিধাবাদী আলেমদের ব্যাখ্যায় এমন ব্যক্তিকে কিছুই যাকাত দিতে হবে না। কেননা, তার কিছুই সঞ্চিত বা উদ্বৃত্ত থাকে না। এভাবে যুগে যুগে যাকাতের মাসয়ালাও এমন করে তৈরি করা হয়েছে, যাতে সুবিধাভোগী বিত্তশালীদেরই সুবিধা হয়, কিন্তু ইসলামে যাকাতের ব্যাখ্যা ও অর্থ এরূপ নয় ।


যাকাতের উদ্দেশ্য হল সম্পদ বিকেন্দ্রীকরণ এবং ধনী-দরিদ্রের সমতাবিধান। তাই আল্লাহ্ আল্- কুরআনে মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন, তারা যেন এমন সমাজব্যবস্থা কায়েম না করে, যেখানে সম্পদ শুধুমাত্র ধনীদের মধ্যে আবর্তিত হয়।
খলীফা হযরত আবূ বকর (রা)-এর খিলাফতের শুরুতে নবদীক্ষিত মুসলিম গোত্রগুলো যাকাত দিতে অস্বীকার করে বসে। তারা ইসলামের যে-কোন অনুশাসনই মানতে রাজী ছিলো- কেবল যাকাত ছাড়া। বনু আসাদ, বনু ফাযারা, বনু গাতফান, বনু আগলাবা প্রভৃতি বহু শক্তিশালী গোত্র যাকাতদানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে এবং খিলাফতের বিধান লঙ্ঘন করতে থাকে।


একই সঙ্গে এতগুলো শক্তিশালী গোত্রের বিদ্রোহ মুসলিমদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে। রাসুল (স)-এর অধিকাংশ সাহাবীই বিদ্রোহী গোত্রগুলোর সঙ্গে শান্তি স্থাপনের পক্ষে অভিমত প্রকাশ করেন। বিভিন্ন গোত্রের প্রতিনিধিবৃন্দ আলাপ আলোচনার জন্যে মদীনায় আগমন করে। তারা হযরত আব্বাস (রা) ব্যতীত প্রভাবশালী প্রত্যেক সাহাবীর সঙ্গেই আলাপ-আলোচনা চালায়। তাদের আলোচনায় শান্তির একমাত্র শর্ত ছিল যাকাত থেকে অব্যাহতিদান।

বিচক্ষণ লীফা মজলিস-ই শূরার অধিবেশন আহ্বান করেন। মজলিস-ই শূরার প্রত্যেক সদস্যই গোত্রগুলোকে যাকাত প্রদানে অব্যাহতি দানের সুপারিশ করেন। হযরত ওমর (রা)ও একই সুপারিশ করে খলীফাকে সম্বোধন করে বলেন, "হে আল্লাহর রাসূলের প্রতিনিধি! এই লোকগুলোর সঙ্গে শান্তি স্থাপন করুন এবং তাদের প্রতি সদয় হোন।” নীতিবিগর্হিত এ বিষয়ে হযরত ওমর (রা)-এর মত সাহাবীর এহেন আবেদনে হযরত আবূ বকর (রা) কোনো ভ্রূক্ষেপ করলেন না। তিনি হযরত ওমরের (রা) দাড়ি ধরে চিৎকার করে বললেন, “অজ্ঞতার যুগে তুমি ছিলে কঠিন হৃদয়, শক্তিমান। আর আজ ইসলাম গ্রহণের পর তোমাকে আমি দেখছি দুর্বল। আল্লাহর ওহী নাযিল বন্ধ হয়েছে। আমাদের জীবনদর্শন পূর্ণতাপ্রাপ্ত আমার জীবদ্দশাতেই কি তা বিকৃত হওয়া শুরু হবে? কখনই নয়। আল্লাহর নামে কসম করে আমি ঘোষণা করছি, যাকাত হিসাবে দেয় সম্পদ হতে যদি কোন ব্যক্তি বা গোত্র এক ক্ষুদ্র রশিও কম দেয়, আমি সেই বিচ্ছিন্নতাবাদীর বিরুদ্ধে জিহাদ করতে দ্বিধা করব না।”
-বিয়াদন নূদরত, ১ম খণ্ড, ৯৮ পৃষ্ঠা


খলীফার এ দৃঢ় ঘোষণার পর অপর কেউই ভিন্নমত পোষণ করার সাহস পাননি । অতঃপর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষিত হয়।

ইসলামী রাষ্ট্রে যাকাত আদায় করার দায়িত্ব সরকারের। ইসলামী রাষ্ট্রীয় শাসন শেষ হয়ে যাওয়ার পর পরাধীন দেশগুলোতে সরকার কর্তৃক যাকাত আদায় বন্ধ হয়ে যায়। ফলে যাকাত পরিণত হয় ব্যক্তিগত দক্ষিণার বিষয়বস্তুতে। যাকাত যে সরকারকেই সংগ্রহ করতে হবে, এ বিষয়ে ইসলামী ফিকহশাস্ত্রবিদদের মধ্যে দ্বিমত নেই। আল-কুরআনের যাকাত সম্বন্ধীয় নির্দেশ পালিত না হলে কোনো মুসলিম রাষ্ট্রকেই ইসলামী রাষ্ট্র বলা যাবে না।



  • হযরত আবু বকর রাঃ এর বেতন

হযরত আবূ বকর (রা) পেশায় ছিলেন বস্ত্র-ব্যবসায়ী। খলীফা নির্বাচিত হওয়ার পরদিন তিনি....see more
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url