রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন- চোখের যিনা হলো বেগানা নারীদের প্রতি কামদৃষ্টি করা। যবানের যিনা হলো তাদের সাথে আলাপ করা।

দৃষ্টি, স্পর্শ, চুম্বন ও নৃত্য

সহীহ্ বুখারী ও মুসলিমের এক হাদীসে রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন—চোখের যিনা হলো বেগানা নারীদের প্রতি কামদৃষ্টি করা। যবানের যিনা হলো তাদের সাথে আলাপ করা'।

মুসলিম শরীফের অপর এক হাদীসে রাসূল (সাঃ) ফরমায়েছেন চোখের যিনা হলো নজর করা। কানের যিনা হলো কথা শোনা। হাতের যিনা হলো স্পর্শ করা। আর পায়ের যিনা হলো পদচারণা করা। অর্থাৎ কোনো নারীর প্রতি কাম ভাবে দেখলে, তার সাথে কথা বললে বা কথা শুনলে, তাকে স্পর্শ করলে, পায়ের দ্বারা তার দিকে কু-উদ্দেশ্যে হেঁটে গেলে যিনার গোনাহ হয়।

বিখ্যাত ফিকহ গ্রন্থ আইনী ও কানুষের শরাহ গ্রন্থে আছে, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি কোন সুন্দরী রমণীর প্রতি কামভাবে দৃষ্টি করবে কিয়ামতের দিবসে তার চোখে বিগলিত শিশা ঢালা হবে। (নাউযুবিল্লাহ!) হেদায়া কিতাবে উল্লেখ আছে, রাসূলে করীম (সাঃ) ফরমায়েছেন- যে ব্যক্তি বেগানা নারীর হাত স্পর্শ করবে কিয়ামতের দিবসে হাতে জলন্ত কয়লা রাখা হবে। (নাউযুবিল্লাহ্!)

ফায়েদা : তাকানো ও স্পর্শেই যখন এ পরিমাণ শাস্তি তাহলে চুম্বনের ক্ষেত্রে কি পরিমাণ শাস্তি হতে পারে? চুম্বনতো সহবাসের অতি নিকটবর্তী ক্রিয়া। কেননা চুম্বনেরক্ষেত্রে আরো অধিক তৃপ্তিও স্বাদ লাভ হয় ; আর মানুষের চোখে যদি সামান্য কুটা পড়ে তাহলে কি অবস্থা সৃষ্টি হয়। কত কষ্ট ও অস্থিরতা শুরু হয়ে যায়। (আল্লাহ রক্ষা করুন) আর উত্তপ্ত, বিগলিত শিশা ঢাললে কি করুণ ও মর্মান্তিক অবস্থা শুরু হবে। একটু ভেবে দেখা দরকার। সামান্য বাতির আগুনের পার্শ্বে আঙ্গুল রাখলে কি কষ্ট শুরু হয়। তাহলে যখন হাতের উপর আগুনের কয়লা রাখবে তখন কি অবস্থা হবে? সুতরাং পরকালে বিশ্বাসী প্রত্যেক নর-নারীর জন্যে উচিত, দুনিয়ার সামান্যতম স্বাদ, কামনা-বাসনা ও ভোগ-বিলাসের পিছে পড়ে দোযখের আগুন ও বিভিন্ন ধরনের মর্মান্তুদ আজাব কে অনন্ত কালের জন্যে বরণ না করা। হঠাৎ যদি কোন বেগানা নারী বা পুরুষের প্রতি দৃষ্টি পড়ে সাথে সাথে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিবে। দ্বিতীয় বার আর তৎপ্রতি দৃষ্টিপাত করবে না ।

ইমাম আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিযী ও দারমী (রহঃ)-এর এক বর্ণনায় আছে- রাসূল (সাঃ) একবার হযরত আলী (রাঃ)-কে লক্ষ করে বলেছিলেন- হে আলী! (বেগানা নারীদের প্রতি) দৃষ্টি পড়লে দ্বিতীয়বার দৃষ্টি করবে না। অর্থাৎ হঠাৎ বেখেয়ালে একবার নজর পড়ে গেলে তৎক্ষণাত চক্ষু বন্ধ করে নিবে। দ্বিতীয় বার তার প্রতি নজর করবেনা। তাহলে এক্ষেত্রে কোন সাজা হবে না। বরং সে ছওয়াবের অধিকারী হবে। আর যদি চক্ষু বন্দ না করে বরং তার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা হয় তাহলে এর জন্য সাজা হবে।

ইমাম আহমদ (রঃ) রেওয়ায়েত করেন- যে ব্যক্তি সুন্দরী রমণীর প্রতি দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে স্বীয় নয়ন যুগল-বন্ধ করে নেয় আল্লাহ পাক তার জন্যে এমন এক নে'মত দান করবেন যে, সে তার ইবাদত-বন্দেগীর মধ্যে আনন্দ উপভোগ করবে।

মাসআলা : পুরুষের জন্যে বেগানা নারীর প্রতি কামভাবে তাকানো হারাম। তদরূপ নারীর জন্যেও বেগানা পুরুষের প্রতি কামভাবে তাকানো হারাম। যার প্রতি তাকানো হারাম তার সামনে যাওয়াও নিষেধ। এমনকি সে যদি অন্ধও হয় তথাপি তার থেকে পর্দা করা এবং তার প্রতি না থাকানো ফরয । এমর্মে ইমাম আহমদ, তিরমিযী ও আবু দাউদ (রঃ) বর্ণনা করেন- একদা আমি উম্মে সালমা ও মায়মূনা (রা.) আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। ইতিমধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম নামী জনৈক সাহাবী সেখানে আগমন করলেন, তিনি (সাঃ) আমাদিগকে তার থেকে পর্দা করার নির্দেশ দিলেন। উম্মে সালমা বললেন- হে আল্লাহর রাসূল! সে তো অন্ধ! আমাদিগকে দেখবে না, (তথাপি লুকাবো কেন?) তিনি (সাঃ) বললেন- তোমরাও কি অন্ধ? তোমরা তাকে দেখবেনা?

জ্ঞাতব্যঃ নাচ দেখাও গান শোনার মধ্যে কয়েক ধরনের গোনাহ রয়েছে। প্রথমতঃ চোখের গোনাহ। যার জন্যে হাদীস শরীফে চোখে উত্তপ্ত শিশা ঢেলে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত : শোনার গোনাহ্ হাদীসের ভাষ্য মতে এটা হলো কানের যিনা। এক্ষেত্রে হাত ও যবানের গোনাহ ও প্রায়ই সংঘটিত হয়ে থাকে। কেননা অনেকে নর্তকী মহিলাদের সাথে আলাপ করে আনন্দ ভোগ করে। তাদের শরীর স্পর্শ করে কাম বাসনা। চরিতার্থ করে। পায়ের দ্বারা নৃত্যানুষ্ঠানে যোগদান করে। এতে পায়ের যিনা ও সংঘটিত হয়। কানের দ্বারা নৃত্যকালে গান-বাজনা শ্রবণ করে। এতে কানের যিনা ও সংঘটিত হয়। কেননা গান-বাজনা নিঃসন্দেহে হারাম।

বহু হাদীস দ্বারা একথা প্রমাণিত যে, যে পাপ প্রকাশ্যে করা হয় তা গোপনে কৃত পাপ হতে মারাত্মক। কেননা প্রকাশ্যে পাপ করার দ্বারা এক দিকে তার নির্লজ্জতা ও আল্লাহর থেকে নির্ভীকতা প্রকাশ পায়, দূর-দূরান্ত হতে মানুষ আগমন করে উক্ত অনুষ্ঠানের কলেবর বৃদ্ধি করে। আর মানুষের সমবেত হওয়ার দ্বারা যে পাপকার্জ সংঘটিত হয় তা বাস্তবায়নের গোনাহ ও তাদের উপর পৃথকভাবে হয়। আর যারা উক্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা করে আল্লাহ জানেন কিয়ামতের দিবসে কি পরিমাণ শিশা গরম করে তাদের চোখে ঢালা হবে। বিভিন্ন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, যার মাধ্যমে মানুষ কোন গোনাহর কাজে লিপ্ত হয়, তাদের সকলের সম্মিলিত গোনাহের পরিমাণ সে একাই গোনাহগার হয়। আর নিজের ব্যক্তিগত গোনাহ তো পৃথক হবেই। সুতরাং নৃত্যানুষ্ঠানে যত মানুষ যোগদান করবে তাদের সকলের যে পরিমাণ গোনাহ হবে সে পরিমাণ গোনাহ নর্তকীর একার উপর হবে। তদরূপ যে এর আয়োজন করে সে নর্তকীর চেয়ে আরো অধিক গোনাহগার হবে। কারণ সেই উক্ত কর্মের মূল ব্যবস্থাপক। উদাহরণ স্বরূপ ধরে নিন-পাঁচশ মানুষ উক্ত অনুষ্ঠানে যোগদান করল, এদের প্রত্যেকের চোখে যদি একছটাক করে শিশা ঢালা হয় তাহলে এর আয়োজকের চোখে ঢালা হবে পাঁচশ ছটাক। তথা সোয়া একত্রিশ সের।

নাচের মধ্যে অপর একটি ক্ষতি এই যে, এর দ্বারা মানুষ ব্যভিচারের প্রতি আসক্ত ও উত্তেজিত হয়। নাচ দেখে, গান-বাদ্য শুনে গায়িকাও নর্তকীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে। সুতরাং তাদের উপরও উক্ত গোনাহ বর্তায়।

মোটকথা এর মধ্যে অনেক ধরনের গোনাহ রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা সমস্ত মুসলমান নর-নারীকে উক্ত গোনাহ হতে হেফাযত থাকার এবং রাসূলে মকবুল (সাঃ) এর পূর্ণ অনুকরণ ও অনুসরণের তাওফীক এনায়েত করুন। যা আল্লাহ পাকের মহব্বত ও সন্তুষ্টির উৎস।

জ্ঞাতব্য (২) : মহিলাদের নৃত্য দেখা, তাদের শরীরে হাত লাগান, চুম্বন করা ইত্যাদিতে যেরূপ পাপ তদরূপ বালকদের নৃত্য দেখা, তাদের প্রতি কামভাবে তাকান, শরীর স্পর্শ করা, চুম্বন করা প্রভৃতিতে ও শরীআতের দৃষ্টিতে তদরূপ পাপ। বরং মহিলাদের তুলনায় এতে আরো অধিক পাপ । অতিব পরিতাপের বিষয় এই যে, অনেক আলেম ও দ্বীনদার ব্যক্তিদিগকে বিবাহ শাদী ইত্যাদি অনুষ্ঠানে মহিলাদের নাচগান হতে বিরত থাকতে দেখা যায়। কিন্তু বালকদের ব্যাপারে তারা নমনীয়তা প্রদর্শন করেন ।
বস্তুতঃ এটাও ঠিক নয় । আল্লাহপাক সকল মুসলমানকে এহেন গর্হিত কাজ হতে হেফাযত করুন এবং নেক কাজের তাওফীক দান করুন । আমীন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url