মুয়াত্তা কিতাবের মর্যাদা ও মুয়াত্তার সর্বশ্রেষ্ঠ বৈশিষ্ট্য, মুয়াত্তা ইমাম মালেক।


মুয়াত্তা কিতাবের মর্যাদা

বোখারী, মুসলিম এবং মুয়াত্তার মধ্যে তুলনা করলে মুয়াত্তার স্থান কোথায়, উলামাদের মধ্যে এ ব্যাপারে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়। সাধারণতঃ এই কিতাবকে তিরমিযীর পরে স্থান দেওয়া হয়। আবার অনেকে সিহাহ সিত্তার পরে স্থান দেন। কিন্তু পূর্ববর্তী মুহাক্কেকীন বা হাদীসতাত্ত্বিকগণ এবং পরবর্তীতে শাহ ওলীউল্লাহ, শাহ আব্দুল আযীয প্রমুখ মুয়াত্তাকে বোখারীরও উপরে স্থান দিয়েছেন।


মুয়াত্তার সর্বশ্রেষ্ঠ বৈশিষ্ট্য এই যে, এটি ইসলামের প্রথম হাদীসের কিতাব । কিতাবুল্লাহর পরেই হাদীসের স্থান। আর এই কিতাবটির মধ্যেই রাসূল (স.) এর হাদীস সংকলন করা হয়েছে সর্বপ্রথম। কাশফুযযুনূন কিতাবে বলা হয়েছে, মুয়াত্তা ইমাম মালেকই ইসলামের সর্বপ্রথম রচিত কিতাব।


এ কিতাবের ব্যাখ্যায় ইবনুল আরাবী উল্লেখ করেছেন যে, ইসলামী শরীয়ত সম্পর্কে লিখিত কিতাবের মধ্যে এটিই সর্বপ্রথম।


সুফিয়ান বলেছেন, বিশুদ্ধ কিতাব সর্বপ্রথম ইমাম মালেকই লিখেন।
ইমাম মালেক (রহ.)-এর মুয়াত্তা যে তার সমকালীন কিতাবগুলোর মধ্যেই শ্রেষ্ঠ তা নয়; পরবর্তীতে রচিত কিতাবগুলো হতেও শ্রেষ্ঠ। তাই ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন, কিতাবুল্লাহর পরে পৃথিবীর বুকে ইমাম মালেকের মুয়াত্তার চেয়ে বিশুদ্ধ কিতাব আর দ্বিতীয়টি নেই।


মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাকারী ইমাম নবুবী বলেন, আমি এমন একটি কিতাব পেয়েছি যা বোখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ ও নাসাঈ হতে শ্রেষ্ঠ । যদিও এ সমস্ত কিতাব উত্তম, কিন্তু মুয়াত্তা এমন এক কিতাব যার রচনাকারী সমস্ত মুহাদ্দেছ শায়খদেরও শায়খ ।


ইমাম মালেক (রহ.)-এর রেওয়ায়াত গ্রহণের মূলনীতি এবং ইমাম বোখারী ও মুসলিমের রেওয়ায়াতের মূলনীতি মর্যাদার মধ্যে অনেক তফাৎ রয়েছে। কাজেই মুয়াত্তার রেওয়ায়াত এবং অন্যান্য কিতাবের রেওয়ায়াতের মধ্যেও পার্থক্য থাকাই স্বাভাবিক।


মুজতাহিদদের মধ্যে ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) এবং ইমাম শাফেয়ী (রহ.) এবং মুহাদ্দেছগণের মধ্যে অনেকেই 'মুয়াত্তা' কিতাব হতে রেওয়ায়াত করেছেন। মুহাদ্দেছগণের মধ্যে আব্দুল্লাহ বিন মুবারক হাশেম জামীল, ইমাম মনসুর বিন সালমা, আব্দুল্লাহ বিন ওহ্হাব, ইয়াহয়া প্রমুখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।


সূফীকুল শিরমণি যুনুন মিসরীও মুয়াত্তা হতে রেওয়ায়াত করেছেন।
খলিফাদের মধ্য হতে হাদী, মাহদী, হারুনুর রশীদ, আল মামুন, আল আমীনও এ কিতাব হতে রেওয়ায়াত গ্রহণ করেছেন। সাধারণ আলেমদের মধ্য হতে এ কিতাবের রেওয়ায়াত গ্রহণকারীর সংখ্যা অগণিত।
তানবীরুল হাওয়ালেক নামক কিতাবে আল্লামা সুয়ূতী লিখেন, ইমাম মালেকের নিকট হতে যত সংখ্যক রেওয়ায়াতকারী রয়েছেন অন্যান্য ইমামদের বেলা তা দেখা যায় না।


রাসূলুল্লাহ (স.)এবং হাদীস বর্ণনাকারীর মধ্যে মাধ্যম সংখ্যা যত কম হবে হাদীসের গুরুত্ব এবং মর্যাদাও তত অধিক হবে। এ বিষয়েও ইমাম মালেক (রহ.)-এর মুয়াত্তা, বোখারী মুসলিম হতেও অনেক শ্রেষ্ঠ। কারণ মুয়াত্তার তিনের অধিক মাধ্যম নেই। পক্ষান্তরে বোখারী, মুসলিমের অধিকাংশ হাদীসেই পাঁচ ছয়জন মাধ্যমে রয়েছেন। বোখারী শরীফে মাত্র গুটি কয়েক হাদীস রয়েছে। যেগুলোর মাধ্যম তিনজন। অথচ মুয়াত্তায় তিনের অধিক মাধ্যম কোন রেওয়ায়াতেই নেই। বরং এমন কিছু রেওয়ায়াত রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে মাত্র দু'জন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url