মুয়াত্তা কিতাবের নামকরণ ও মুয়াত্তা সঙ্কলন, মুয়াত্তা ইমাম মালিক।
‘মুয়াত্তা' কিতাবের নামকরণ
‘মুয়াত্তা' শব্দটি তাওত্বীয়া শব্দের কর্মকারক। এ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো, কোন কিছুর উপর দিয়ে চলা। যে পথে ইমাম, আলেম এবং বুযুর্গগণ চলেছেন মুয়াত্তা শব্দ দ্বারা কেউ কেউ সে পথকে বুঝে থাকেন। এ কিতাবের নাম মুয়াত্তা রেখে এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, এ কিতাবের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সবাই একমত। এ কিতাবের রচনা শেষে হাদীসের শায়খদের নিকট পেশ করা হলে তারা সবাই এ কিতাবের বিষয়বস্তু সম্বন্ধে একমত হয়েছেন এবং একে সমর্থন করেছেন। এ কারণে কিতাবটি মুয়াত্তা নামে প্রসিদ্ধ।
আবার কেউ কেউ মুয়াত্তা শব্দের এই অর্থ গ্রহণ করেছেন, যে পথে অধিকাংশ লোক যাতায়াত করে তাকে মুয়াত্তা বলা যেতে পারে। এ অর্থেই কিতাবের নাম মুয়াত্তা রাখা হয়েছে। এটা সে পথ, যে পথে রাসূলুল্লাহ (স.) এবং তাঁর সাহাবাগণ চলেছেন।
মুয়াত্তা সঙ্কলন
ইমাম মালেক (রহ.) সব সময় মদিনায় অবস্থান করতেন। ফলে এ দাবী করা চলে যে, মদীনা মুনাওয়ারাতেই মুয়াত্তা রচিত হয়েছিল। তবে কোন সনে সঙ্কলণ হয়েছে তা সঠিকভাবে বলা মুশকিল। এতটুকু বলা যেতে পারে যে, হিজরী ১৩০ সন হতে ১৪০ সনের মধ্যে কিতাবটি রচিত হয়েছিল।
১৩০ হিজরীতে বনী উমাইয়াদের পতনের সূচনা ঘটে। এর পূর্বে কিতাব রচনায় খুব বেশী লোক হাত দেননি।
এক বর্ণনা মতে, খলীফা মনসুরের আদেশক্রমেই মুয়াত্তা কিতাব রচনা করেন।
ইমাম সাহেবের মুয়াত্তা রচনা কাজ আরম্ভ করার কথা মদিনায় রটে গেলে অন্যান্য আলেমগণও নিজ নিজ হাদীসসমূহ সঙ্কলন করতে আরম্ভ করলেন। ইমাম সাহেব এ কথা শুনে বললেন, শুধু নেক নিয়তই বাকী থাকবে।
ইমাম সাহেবের এ কথা অক্ষরে অক্ষরে প্রতিফলিত হল। এ কারণেই দেখতে পাই মুয়াত্তা কিতাব আজও সবার নিকট সমাদৃত। অথচ অন্যান্য কিতাবগুলির নাম পর্যন্ত অনেকে জানেনা।
ইমাম মালেক (রহ.) সঙ্কলনকার্য শেষ করে কিতাবটি হাদীসের শায়খদের খিদমতে পেশ করলেন। তাদের সকলেই কিতাবটিকে অত্যন্ত পছন্দ করলেন। মদিনাবাসী এতে আনন্দিত হল। মজলিসে যখন আলেমগণ ইমাম মালেকের মুয়াত্তার প্রশংসা করছিলেন, তখন সায়ীদ নামক জনৈক কবি একটি কবিতা পাঠ করলেন যার অর্থ নিম্নরূপ-
আমি তাদেরকে আহ্বান করছি যাঁরা হাদীস রেওয়ায়াত করেন এবং লিপিবদ্ধ করেন, ফিক্হর রাস্তায় বিচরণ করেন এবং এ সমস্ত জানতে আগ্রহী।
আপনি যদি চান যে, পৃথিবীর বুকে আপনি আলেম হিসাবে পরিচিত হবেন তবে শরীয়তের বাইরে কখনো পা বাড়াবেন না। আপনি কি সেই ঘর পরিত্যাগ করতে চান যে ঘরে আল্লাহর প্রিয় জিবরাঈল (আ.) আসা-যাওয়া করতেন এবং যে ঘরে আল্লাহর রাসূল ইন্তেকাল করেছেন। তাঁর ইন্তিকালের পর তাঁর সাহাবাগণ সেটাকে স্বযত্নে হিফাযত করেছেন। আপনারা লক্ষ্য রাখবেন, যেন ইমাম মালেকের মুয়াত্তা বিনষ্ট না হয়ে যায়। যদি বিনষ্ট হয় তবে সত্য নিরাশ্রয় হয়ে পড়বে। আপনি মুয়াত্তার খাতিরে অন্য সব কিছু পরিত্যাগ করতে পারেন। কারণ মুয়াত্তা সূর্যের এবং অন্যগুলো তারকার মত ।