হযরত ওমর (রা)-এর খিলাফতকালে বাকস্বাধীনতা কেমন ছিলো, ইসলামে বাক স্বাধীনতা।


আশারাহ্ মুবাশশারাহ্


ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সাম্য

হযরত ওমর (রা)-এর খিলাফতকালে ব্যক্তিস্বাধীনতা পূর্ণমাত্রায় বিরাজিত ছিলো। একবার খলীফা ওমর (রা) নারীর মহরানা নির্দিষ্ট করে দেন, কিন্তু তা অনেকের মনঃপূত হয়নি। একদিন এক বৃদ্ধা মসজিদে দাঁড়িয়ে খলীফার নির্দেশের তীব্র প্রতিবাদ করেন। তিনি কুরআনের আয়াত উল্লেখ করে বলেন, আল-কুরআন মহরানা নির্দিষ্ট করে দেয়নি। যা আল-কুরআন নির্দিষ্ট করে দেয়নি তা নির্দিষ্ট করা খলীফার উচিত নয়। খলীফা বিনা প্রতিবাদে মহিলার দাবি মেনে নিলেন এবং নির্দেশ প্রত্যাহার করলেন।


একদিন হযরত ওমর (রা) মসজিদে খুতবা দিতে যাচ্ছিলেন। এক বেদুঈন দাঁড়িয়ে বললেন, “আমি আপনার কথা শুনব না যে পর্যন্ত না আপনি আমার প্রশ্নের জবাব দেন।” খলীফা জানতে চাইলেন তার প্রশ্ন। বেদুঈন বললেন, “বায়তুল মাল থেকে আমরা এক প্রস্থ করে কাপড় পেয়েছি এবং সেই কাপড়ে কারও একটি পূর্ণ জামা হয়নি; কিন্তু আপনার পরিধানে সেই কাপড়ের পুরো জামা দেখা যাচ্ছে। আপনি নিশ্চয়ই এক প্রস্থ কাপড় অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করেছেন।”


মুসলিম বিশ্বের পরাক্রমশালী খলীফাকে এ ধরনের প্রশ্ন করায় অনেকেই অসন্তুষ্ট হলেন। খলীফা জবাব দেওয়ার পূর্বেই তাঁর পুত্র আবদুল্লাহ দাঁড়িয়ে বললেন, “আপনাদের সকলের ন্যায় আমিও এক খণ্ড কাপড় পেয়েছিলাম। আমার অংশটুকু আমার পিতাকে দিয়েছি। দু'খণ্ড একত্র করেই তিনি জামা তৈরি করে নিয়েছেন।" অতঃপর খলীফা শান্ত স্বরে প্রশ্নকারীকে বললেন, যদি আমি সত্যি একখণ্ড বস্ত্র আত্মসাৎ করতাম আপনি কি করতেন? তরবারি নিষ্কোষিত করে নিঃশঙ্কচিত্তে বেদুঈন জবাব দিলেন, “আমি এই তরবারি দিয়ে আপনার মস্তক দ্বিখণ্ডিত করতাম।”


চেহারায় গাম্ভীর্য এনে খলীফা গর্ব করে বললেন, “কার সামনে কথা বলছেন তা আপনি জানেন?” বেদুঈন জবাব দিলেন, “আমি অবশ্যই আমীরুল মুমেনীনের সঙ্গে কথা বলছি।" মসজিদে যেন বজ্রপাত হল। যে ওমরের ভয়ে পারস্য ও রোম সাম্রাজ্য কম্পমান, তাঁর সামনে এত বড় কথা। খলীফা ওমর বেদুইনের দিকে দৌড়ে গেলেন। স্তম্ভিত জনতা লক্ষ্য করল, খলীফা বেদুঈনকে আলিঙ্গন করে বলছেন, “যদি সমস্ত মসজিদে একটি মাত্র মুসলমান থাকে তাহলে সে এই-ই।”


অপর একদিন এক জনসমাবেশে খলীফা ওমর (রা) বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। জনৈক ব্যক্তি তাঁর বক্তৃতায় বাধা দিয়ে বললেন, “ওমর আল্লাহকে ভয় কর" - ইত্যাদি। কোনো কোনো লোক সে ব্যক্তিকে থামিয়ে দিতে চেষ্টা করল, কিন্তু খলীফা বললেন, “তাকে তার মত প্রকাশ করতে দাও। তোমরা কিভাবে স্বাধীনতা ও সাম্য ভোগ করবে যদি ব্যক্তি তার মত প্রকাশ করতে না পারে ? এ আমার কর্তব্য যে, আমি জনসাধারণের সমালোচনা শ্রবণ করবো ?"


মিসরের গভর্নর আমর বিন আল আসের পুত্র এক কিবতী তরুণকে চপেটাঘাত করেছিলো। খলীফা ওমরের নিকট অভিযোগ আনা হল। খলীফা হুকুম দিলেন কিবতী তরুণটি গভর্ণর-তনয়কে প্রকাশ্যে চপেটাঘাত করবে। অনেকেই এ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আপত্তি তুললেন। খলীফা বললেন, “মুন কাম আবাদভূমুন নাসা ওয়া কাদ ওয়ালাদাত উন্মুহুম আহরারান" অর্থাৎ “কতকাল তোমরা মানুষকে গোলাম করে রাখতে চাও? তাদের মায়েরা তো তাদেরকে স্বাধীন মানুষ হিসেবে জন্ম দিয়েছে ?


গভর্নর আমর বিন আল আস মসজিদের মধ্যে একটি উচ্চ মিম্বর তৈরি করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু খলীফা অনুমতি দেননি।


ইহুদি উবাই বিন কাব কাযী যায়েদ বিন সাবিতের দরবারে খলীফার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনয়ন করে। খলীফাকে সমন দেওয়া হল। খলীফা একজন সাধারণ নাগরিকের ন্যায় দরবারে হাযির হলেন।


হযরত ওমর (রা) তাঁর খিলাফতকালে সাম্য ও স্বাধীনতার যে মহৎ আদর্শ স্থাপন করে গেছেন তা বর্তমান বিশ্বে বিরল। শাসক ও শাসিতের মধ্যে যাবতীয় বিডেন তিনি লোপ করেছিলেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url