ইমাম আবু হানিফা (রহ.) সম্পর্কে রাসূল (স.)-এর ভবিষ্যৎ বাণী।


রাসূল (স.)-এর ভবিষ্যৎ বাণী

ইমামে আযম ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-কে আল্লাহ তায়ালা দান করেছেন জ্ঞানের পূর্ণতা, ইজতেহাদের যোগ্যতা, কোরআন এবং হাদীসের সম্যক জ্ঞান আর তা যেন রাসূলুল্লাহ (স.) এর ভবিষৎবাণীকে বাস্তবরূপ দেয়ার জন্যই দান করেছেন। রাসূল (স.) ইরশাদ করেন,


عن ابي هريرة قال كنا جلوسا عند النبى صلى الله عليه وسلم اذ نزلت سورة الجمعة فلما نزلت واخـريـن منهم لما يلحقوا بهم قالوا من هؤلاء يا رسول الله وفـيـنـا سلمان الفارسي قال فـوضـع النبي صلى الله عـلـيـه وسـلـم يده على سـلـمـان ثـم قـال لو كان الايـمـان عـنـد الثريا لناله رجـال مـن هؤلاء-


অর্থ : হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমরা রাসূলুল্লাহ (স.)-এর খিদমতে উপস্থিত ছিলাম। সে সময়ে সূরায়ে জুমু'আ নাযিল হয়। যখন রাসূলুল্লাহ (স.) واخـريـن مـنـهـم لما يلحقوا بهم এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন, উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্য হতে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এ অপর লোকেরা কারা যারা আমাদের সাথে এখনও মিলিত হয়নি? রাসূলুল্লাহ (স.) উত্তর দেননি। তাঁকে একই প্রশ্ন দু'তিনবার করা হলে তিনি সালমান ফারসীর কাঁধে হাত রেখে বললেন, যদি ঈমান ছুরাইয়া'। তারকার নিকটও হত তবুও এদের মধ্য থেকে কেউ কেউ তা লাভ করত।


উপরোক্ত হাদীসটি বুখারী, মুসলিম এবং তিরমিযী শরীফে উল্লেখ রয়েছে। মুসনাদে আহমদের বর্ণনায় এরূপ রয়েছে


ইলম যদি ছুরাইয়া তারকার নিকটও হত পারস্যের কেউ কেউ অবশ্যই তা সেখান থকে নিয়ে আসত।


হাফেয জালালুদ্দীন সুয়ুতী (রহ.) বলেন যে, এ হাদীসে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। কারণ এ কথা স্পষ্ট যে, ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর সময়ে ফিকহশাস্ত্র এবং ইলমী মর্যাদায় কেউ তাঁর সমকক্ষ হতে পারেনি। এমনকি কেউ তাঁর শিষ্যদের সমপর্যায়ও পৌঁছতে পারেনি এবং পারবেও না।


ইলমে হাদীসের শিক্ষক এবং ছাত্র প্রত্যেকেই এ বিষয় জানেন যে, অধিকাংশ মুহাদ্দেছীনদের মতে রাসূল (স.)-এর এ ভবিষ্যৎবাণী ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর ক্ষেত্রেই সঠিকভাবে প্রযোজ্য।


হাফেয জালালুদ্দীন সুয়ুতী বলেন যে, 'সুসংবাদের বিষয়ে এ হাদীসটি গ্রহণযোগ্য।


শাহ ওলীউল্লাহ (রহ.) বলেন, এ হাদীস নিয়ে একদিন আমরা আলোচনা করলাম। আমি বললাম, ইমাম আবু হানিফা (রহ.) উপরোক্ত সুসংবাদের অন্তর্ভুক্ত। কারণ ইলমে পিকাহর প্রচারও প্রসার তাঁর মাধ্যমেই ঘটেছে। তাঁর থেকে অনেকেই জ্ঞান অর্জন করেছেন। বিশেষ করে এ সময়ে সারা মুসলিম বিশ্বে বাদশাহও হানাফী, কাযীও হানাফী এবং (মুদাররিস) শিক্ষাকগণও হানাফী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন।


নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান বলেন, ইমাম আবু হানিফাও এ হাদীসের অন্তর্ভুক্ত এবং পারস্যের (অনারব) সকল মুহাদ্দিছগণও।


উপরোল্লেখিত ভবিষ্যৎ বাণীর দৃষ্টিতে দেখা যায় যে, ইমাম আবু হানিফা (রহ.) রাসূলুল্লাহ্ (স.)-এর একটি স্পষ্ট মো'জেযা। ইবনে হজর হাইছামী (রহ.) 'আল খাইরাতুল হিসান' নামক গ্রন্থে লিখেন-


“এটা রাসূলুল্লাহ (স.)-এর স্পষ্ট মো'জেযা যে, তিনি ভবিষ্যতের ঘটনা সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন যা বাস্তবে ঘটেছে।”


সুতরাং ইমাম আযম আবু হানিফা (রহ.)-এর বাস্তবতা রাসূলুল্লাহ (স.)-এর নবুওয়াত সত্য হওয়ার প্রমাণ। কাজেই ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-কে অস্বীকার করার কোন পথ নেই । কারণ তাঁকে অস্বীকার করা মানে রাসূলুল্লাহ (স.)-এর হাদীস অস্বীকার করা । হাদীস শরীফে من ابناء فارس অনারব শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। অনারবদের মধ্যে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তিত্ব নেই, যাকে রাসূলুল্লাহ (স.)-এর হাদীসের সঠিক মেছদাক হিসাবে উল্লেখ করা যেতে পারে ।


তাই প্রত্যেক মুসলমানকে ইমাম আবু হানিফার ব্যক্তিত্ব ও মহত্ব স্বীকার করতে হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url