প্লেনে ওযুর বিধান, প্লেনে নামাযের বিধান, আকাশ পথের সফরের বিধান, চলন্ত অবস্থায় বিমানে যেভাবে নামায আদায় করবেন।


আকাশ পথের সফর

আকাশ পথে সফরের দূরত্ব হল, যদি উড়োজাহাজ পৃথিবীর স্থল ভাগের উপর দিয়ে অতিক্রম করে, তাহলে স্থলপথে একজন মুসাফির যে পরিমাণ পথ অতিক্রম করার নিয়তে সফর করলে মুসাফির হয়, ঐ পরিমাণ দূরত্বে আকাশপথে ভ্রমণ করার নিয়তে সফর আরম্ভ করলে মুসাফির হিসেবে গণ্য হবে। আর যদি উড়োজাহাজ পৃথিবীর জলভাগের উপর দিয়ে উড্ডয়ন করে তাহলে জল পথের মুসাফির যে পরিমাণ দূরত্বের সফর করলে মুসাফির হিসেবে গণ্য হয়, উড়োজাহাজে করে সেই পরিমাণ সফরের নিয়তে ভ্রমণ আরম্ভ করলে মুসাফির বলে গণ্য হবে।

-ইমদাদুল ফাতাওয়া-১/৫৯২-৫৯৩



উড়োজাহাজে ওযুর বিধান

উড়োজাহাজে সাধারণত ওযুর পানির ব্যবস্থা থাকে, তাই পানি ব্যবহারের সামর্থ থাকলে ওযু করে নামায পড়তে হবে। যদি ওযু করার মত পানির কোন ব্যবস্থা না থাকে, আর দেখা যায় যে, গন্তব্যে পৌঁছে নামাযের ওয়াক্ত পাওয়া যাবে না, তাহলে তায়াম্মুম করে নামায আদায় করে নিবে।

-আহকামে সফর-৪৭

যারা উড়োজাহাজে দীর্ঘ সফরে বের হয়, তাদের জন্য উচিৎ হল মাটির পাত্র, বা মাটির চাকা ইত্যাদি সাথে রাখা। যেন প্রয়োজনে তায়াম্মুম করে নামায আদায় করা যায়।

- আহকামে সফর -৪৭



উড়োজাহাজে নামাযের বিধান

উড়োজাহাজ যখন ভূমিতে স্থির থাকে বা রানওয়েতে চলমান থাকে, এ অবস্থায় তার হুকুম রেলগাড়ীর ন্যায়। তাতে নামায আদায় করতে কোন অসুবিধা নেই। সকলের ঐক্যমতে নামায পড়া জায়েয। -আহকামে সফর-৪৬
উড়ন্ত অবস্থায় উড়োজাহাজে নামায আদায়ের ব্যাপারে কারো কারো মত হল, যেহেতু উড়ন্ত উড়োজাহাজের স্থীরতা নেই এবং তা কোথাও স্থীতিপ্রাপ্ত নয়, তাই বিনা ওজরে তাতে নামায শুদ্ধ হবে না। প্রখ্যাত ফিকহবিদ আল্লামা মুফতী শফী (রহ.) বলেন, উসূলে ফিকহ তথা ফিকহ শাস্ত্রের মূলনীতির আলোকে উক্ত মতটি সঠিক মনে হয়। তবে উড়োজাহাজের সফরের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যই এমন যে উড়ন্ত উড়োজাহাজে মানুষ নামায পড়তে বাধ্য। কারণ যত্র-তত্র উড়োজাহাজ অবতরণ করানো যায় না, যে কেউ চাইলেই তা অবতরণ করাতে পারে না, উড়ো জাহাজ ভূমিতে অবতরণ না করিয়ে কেউ তা থেকে নেমে নামায পড়ার কল্পনাও করতে পারে না। তাই এসব কারণে উড়ন্ত অবস্থায় উড়োজাহাজে নামায পড়া জায়েয হবে।
প্রসিদ্ধ ফিক্‌হগ্রন্থ 'কিতাবুল ফিকহি আলাল মাজাহিবিল আরবাআ' তে আল্লামা আব্দুর রহমান আল জাজিরি, উড়ন্ত উড়োজাহাজকে চলন্ত নৌযানের সাথে তুলনা করেছেন। নৌযানে নামাযের যে বিধান উড়োজাহাজে নামাযের বিধানও অনুরূপ তিনি বলেন,

ومثل السفينة القطر البخارية البرية والطائرات الجوية ونحوها - كتاب الفقه على المذاهب الأربعة - ۱۸۷/۱

যুগশ্রেষ্ঠ ফিকহবিদ, অধমের প্রাণাধিক প্রিয় উস্তাজ আল্লামা মুফতী সাঈদ আহমদ পালনপুরী দা: বা: শেষোক্ত মতটিকে প্রাধান্য দিয়ে বলেন, অধমের মতে এমতটিই (আব্দুর রহমান আল জাজিরির মত) সঠিক। সুতরাং উড়োজাহাজে কিয়াম, রুকু, সিজদার সাথে কিবলামুখী হয়ে নামায আদায় করলে নামায ছহীহ হবে। পুনরায় পড়ার প্রয়োজন নেই ।

-হাশিয়া ইমদাদুল ফাতাওয়া-১/৫৮৯

মাসআলা : উড়োজাহাজে দাঁড়িয়ে নামায পড়ার সামর্থ থাকলে দাঁড়িয়েই নামায পড়তে হবে। আর যদি সম্ভব না হয়, তাহলে বসে নামায আদায় করবে।

- আহকামে সফর ৪৬

মাসআলা : উড়োজাহাজে নামায আদায়ের বেলায়ও কিবলার দিক সঠিকভাবে জেনে নেয়া জরুরী। যদি কিবলার দিক জানা না যায়, আর কোন লোকও পাওয়া না যায় যে কিবলার দিক বাতলাবে, তাহলে আন্দাজ ও অনুমান কাজে লাগিয়ে যে দিকটির ব্যাপারে প্রবল ধারণা সৃষ্টি হবে সে দিককে কিবলার দিক মনে করে নামায আদায় করবে।

-আহকামে সফর-৪৭

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url