ট্রেনে সফরের আহকাম, ট্রেনে সফরের মাসআলা, চলন্ত ট্রেনে নামায পড়ার নিয়ম, ট্রেনে কিভাবে সালাত আদায় করবে।


রেলগাড়ীতে সফরের আহকাম

মাসআলা : রেলগাড়ী দাঁড়ানো অবস্থায় থাকুক বা চলতি অবস্থায় থাকুক, তাতে নামায পড়া যায়।

-জাওয়াহেরুল ফিক্‌হ-৪/২৮৪

মাসআলা : বিনা ওজরে রেলগাড়ীতে বসে বসে ফরজ নামায আদায় করলে ফরজ নামায আদায় হবে না।

-ইমদাদুল ফাতাওয়া-১/৫৬

মাসআলা : রেলে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করার শক্তি আছে, কিন্তু এতটুকু জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না যে, সেখানে দাঁড়িয়ে নামায পড়া যায়, তাহলে করণীয় হল, বসে হলেও ওয়াক্তের নামায আদায় করে নেয়া। পরবর্তীতে দাড়ানোর সুযোগ হলে এ নামাযের কাজা পড়ে নিবে। কেননা জায়গার সংকটের কারণে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করার মত ফরজ হুকুমটি বাতিল বা প্রত্যাহার করা হয় না।

-ইমদাদুল ফাতাওয়া-১/৩৭৯

মাসআলা : স্বাভাবিক অবস্থার ন্যায় রেলগাড়ীতেও কিবলামুখী হয়ে নামায আদায় করবে, অন্যথায় নামায হবে না। যদি কিবলার নির্দেশনা দানকারী মানুষ পাওয়া না যায়, অথবা কেউ সঠিক ভাবে কিবলার দিকে নির্দেশনা দিতে না পারে, তাহলে নিজে 'তাহাররী' তথা চিন্তাভাবনা করে প্রবল ধারণার ভিত্তিতে যে দিকে কিবলা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল মনে হবে, সেদিকে ফিরে নামায পড়বে।

-জাওয়াহেরুল ফিক্‌হ-৪/২৮৪

মাসআলা : কিবলা ঠিক করে নামায আরম্ভ করার পর যদি রেলগাড়ী অন্য দিকে মোড়নেয় যার ফলে নামাযীর চেহারা কিবলামুখী থাকে না, তাহলে তা জানা মাত্রই নামাযের মধ্যেই পুনরায় চেহারা কিবলামুখী করে নিবে।

-জাওয়াহেরুল ফিকহ্-৪/২৮৩

মাসআলা : রেলগাড়ীর সিট, গদি ইত্যাদিতে যদি পরিমাণ মত ধূলাবালি লেগে থাকে তাহলে এর দ্বারা তায়াম্মুম করা যাবে। গাড়ীর মেঝেতে মানুষের জুতা থেকে খসে পড়া মাটি দ্বারা তায়াম্মুম হবে না। কারণ এসব মাটি নাপাক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী।

-আওয়াহেরুল ফিকহ্-৪/২৮৩

মাসআলা : যখন রেলগাড়ী দাঁড়ানো থাকে, তখন পানি অনুসন্ধান না করেই তায়াম্মুম করা জায়েয নেই। পানির সন্ধান চালিয়ে এক মাইলের ভিতর পানির অস্তিত্ব নেই বলে নিশ্চিত হওয়ার পরই তায়াম্মুম করবে।

-জাওয়াহেরুল ফিকহ্-৪/২৮৩

মাসআলা : যখন রেলগাড়ী ষ্টেশনের অদূরে পৌঁছে যায়, যে আর এক মাইলের কম দূরত্বে গাড়ী থামবে এবং সেখানে পানি পাওয়া যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে, তাহলে এমতাবস্থায় তায়াম্মুম করে নামায আদায় করলে নামায হবে না।

-জাওয়াহেরুল ফিকহ্-৪/২৮২

মাসআলা: ষ্টেশনে পানি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকা অবস্থায় যদি কেউ আগেই তায়াম্মুম করে নামায শুরু করে দিয়ে থাকে, আর নামাযের ভিতরই গাড়ী ষ্টেশনের নিকটে এক মাইলের কম দূরত্বে পৌঁছে যায়, তাহলে ঐ ষ্টেশনে যদি রেলগাড়ী না থামে অথবা থামলেও পানি না পাওয়া যায়, তাহলে ঐ নামাযীর নামায ছহীহ বলে গণ্য হবে। আর যদি পানি পাওয়া যায় এবং ঐ ব্যক্তি ইচ্ছে করলে পানি সংগ্রহও করতে পারে, তাহলে ঐ অবস্থায় তার নামায ছহীহ হবে না। পুনরায় আদায় করে নিবে।

-জাওয়াহেরুল ফিকহ্-৪/২৮২

মাসআলা : যদি ষ্টেশনে পৌঁছতে একমাইলের চেয়েও কম দূরত্ব বাকী থাকে আর সেখানে পানি পাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে, তবে সেখানে পৌঁছতে যে সময়ের প্রয়োজন তাতে নামাযের সময় শেষ হয়ে যাবে, তাহলে ঐ অবস্থায় ও তায়াম্মুম করে নামায পড়া যাবে না। ষ্টেশনে পৌঁছার পর ওযু করে কাজা আদায় করে নিবে।

-জাওয়াহেরুল ফিকহ্-৪/২৮২-২৮৪

মাসআলা : যদি কোথাও বিনামূল্যে পানি পাওয়া না যায় আর সেখানে অস্বাভাবিক বেশী মূল্যে পানি বিক্রি হয়, তাহলে সেখানে পানি ক্রয় করে ওষু করা বাধ্যতামূলক নয়, বরং ঐ অবস্থায় তায়াম্মুম জায়েয আছে।

-মারাকিল ফালাহ-১২৫

মাসআলা : আর যদি পানি স্বাভাবিক মূল্যেই বিক্রি হয়, অথবা সামান্য কিছু দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে, তাহলে পানি ক্রয় করা জরুরী। পানি ক্রয় করে অযু করে নামায আদায় করবে। হ্যাঁ, মুসাফিরের কাছে যদি টাকা পয়সা এ পরিমাণ থাকে যে, যদ্দারা শুধুমাত্র ভাড়া ও ভ্রমণকালিন খাওয়া-দাওয়ার খরচ বহন করাই সম্ভব, তাহলে তার জন্য পানি ক্রয় করে অযু করা জরুরী নয়, বরং তায়াম্মুম করে নামায আদায় করবে।

-মারাকিল ফালাহ-১২৫

মাসআলা : রেলগাড়ীর টয়লেট ও বাথরুমে পাইপের মাধ্যমে যে পানি সরবরাহ করা হয়, তা পাক। তা দ্বারা অযু-গোসল জায়েয আছে। ঐ পানি বিদ্যমান থাকা অবস্থায় তায়াম্মুম করে নামায পড়া যাবে না। কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্দিষ্ট শ্রেণীর জন্য বরাদ্দকৃত পানি ঐ শ্রেণীর টিকেটধারী যাত্রীদের জন্য ব্যাবহার করা জায়েয। যেই শ্রেণীতে পানি ব্যবহারের সুবিধা অনুমোদিত নয়, ঐ শ্রেণীর যাত্রীরা উন্নত শ্রেণীর জন্য বরাদ্দকৃত পানি ব্যবহার করতে পারবে না।

-জাওয়াহেরুল ফিকহ-৪/২৮৩

মাসআলা : আসবাবপত্র রেলগাড়ীতে রেখে পানির সন্ধানে গেলে তা হারিয়ে যাওয়ার আশংকা প্রবল হলে কিংবা পারিশ্রমিকের বিনিময়েও যদি পানি সংগ্রহ করা না যায়, তাহলে তায়াম্মুম জায়েয।

-জাওয়াহেরুল ফিকহ্-৪/২৩


রেলে সফরের বিবিধ মাসআলা


মাসআলা : রেলের বগিতে অবস্থানের যথেষ্ট জায়গা থাকা সত্ত্বেও যাত্রীদের সাথে ধাক্কাধাক্কি করা বা ভিতরে প্রচুর জায়গা থাকাসত্ত্বেও কোন যাত্রীকে বগিতে প্রবেশে বাধা দেয়া নাজায়েয। হ্যাঁ, নির্ধারিত সংখ্যক যাত্রী আরোহণ করার পর অতিরিক্ত যাত্রী প্রবেশ করলে তাদেরকে নিয়মতান্ত্রিক ও ভদ্রোচিতভাবে বারণ করা যেতে পারে।

-রফিকে সফর-৩০

মাসআলা : সহযাত্রীদের সম্মতি না থাকলে গাড়ীতে প্রাপ্যের অধিক জায়গা দখল করা নাজায়েয।

-রফিকে সফর-৩১

মাসআলা : যাত্রী নিজ আসন ছেড়ে কোন প্রয়োজনে অন্যত্র গেলে তার মালপত্র গুটিয়ে তার জায়গা দখল করা বা সংকোচিত করা জায়েয নয়। হ্যাঁ, যদি সে অন্যায়ভাবে অধিক জায়গা দখল করে নিয়ে থাকে, তাহলে অতিরিক্ত জায়গার সংকোচন বৈধ।

-রফিকে সফর-৩১

মাসআলা : যাত্রীরা অনেক সময় যানবাহনে মালামাল ফেলে যায়। এরূপ বস্তু কুড়িয়ে নিয়ে ব্যবহার করা নাজায়েয। বরং তা হারানো প্রাপ্তির ন্যায় সম্ভাব্য সকল উপায়ে সন্ধান চালিয়ে মালিকের খোঁজ না পেলে ছদকা করে দেবে।

-রফিকে সফর-৩১

মাসআলা : ষ্টেশন, বা যেখানে গাড়ী থামে, সেখানে কারো কাছ থেকে কিছু কেনার পর মূল্য পরিশোধের পূর্বেই গাড়ী ছেড়ে দিল। ফলে মূল্য আদায় করা গেলনা, এমতাবস্থায় ক্রয়কৃত বস্তু ভোগ করা জায়েয আছে। তবে সম্ভাব্য সকল উপায়ে বিক্রেতার খোঁজ লাগিয়ে তাকে অবশ্যই মূল্য পরিশোধ করতে হবে। যদি সকল প্রচেষ্টা ব্যায়ের পরেও বিক্রেতাকে মূল্য আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে পণ্যের মূল্য ছদকা করে দিতে হবে। হ্যাঁ, পরবর্তীতে সন্ধান মিললে বিক্রেতা যদি মূল্য দাবী করে, তাহলে ক্রেতাকে তা অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। আর এতে ক্রেতা যে ছদকা করেছিল তার ছওয়াবের অধিকারী হবে।

-রফিকে সফর-৩১

মাসআলা : দোকানীকে পণ্যের মূল্য দিয়ে দেয়া হল, এদিকে পণ্য গ্রহণ করার আগেই গাড়ী ছেড়ে দিল যার ফলে পণ্য গ্রহণ করা গেলনা। এমতাবস্থায় দোকানীর কাঁধে এর দায়ভার বর্তে যাবে। যদি দোকানী ক্রেতাকে পণ্য পৌঁছানোর জন্য গাড়ীতে পণ্য ছুড়ে মারে, কিন্তু তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে রাস্তায় পড়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে যায়, তাহলেও ক্রেতার জন্য দোকানীর কাছ থেকে তা আদায় করার অধিকার থাকবে। আর দাবি ছেড়ে দিলে অনেক ছওয়াবের কাজ হবে।

-রফিকে সফর-৩২

মাসআলা : ষ্টেশনে কোন গরীব-দুঃস্থ মানুষের দৃষ্টিগোচরে কিছু খরীদ করলে বা পানাহার করলে ঐ সকল দুঃস্থ মানুষগুলোকে কিছু দিয়ে দেয়া চাই । যদি এমন সামর্থ বা সাহস না থাকে, তাহলে লোকালয় থেকে আড়ালে গিয়ে খেয়ে নিবে। বিশেষ করে ছোট শিশুরা সম্মুখে থাকলে, তাদের ব্যাপারে অধিক খেয়াল রাখা চাই। অসহায় দুঃখী মানুষের শিশু সন্তানের সামনে নিজ সন্তানদের কিছু শিশুতোষ সামগ্রী কিনে দিলে বা তাদের কিছু খাওয়ালে অবশ্যই দুঃস্থ শিশুদের সামান্য কিছু হলেও কিনে দিবে ও খাওয়াবে। যেন দুঃস্থ শিশুগুলোর মনে জ্বালা না হয়। এরূপ করলে ইনশাআল্লাহ অনেক ছাওয়াবের অধিকারী হবে।

-রফিকে সফর-৩৩

মাসআলা : যদি কোন কুলি বা মজদুর দ্বারা কাজ করানো হয়, আর পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা না হয়, তাহলে ঐ অঞ্চলে সে কাজের যে মূল্য আছে তাই পরিশোধ করতে হবে। কম দেয়া যাবে না। মূলত আগেই পরিশ্রমিক নির্ধারণ করা চাই, যাতে পরবর্তীতে মনোমালিন্য সৃষ্টি না হয়। পারিশ্রমিক নির্ধারণের পর কম দেয়া জায়েয নেই। অবশ্য কিছু বেশী দিতে চাইলে কোন অসুবিধা নেই।

-রফিকে সফর-৩৩

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url