বেগানা নারী পুরুষের ছতরের প্রতি দৃষ্টি করাও যিনা।

ছতর প্রসঙ্গ

যেহেতু বেগানা নারী পুরুষের ছতরের প্রতি দৃষ্টি করাও যিনার সংশ্লিষ্ট বিষয়। এজন্যে এ অধ্যায়ে ছতরের মাসায়েল আলোচনা করা হচ্ছে।

ইমাম তিরমিযী, আবু দাউদ ও ইবনে মাজা (রঃ) রেওয়ায়েত করেন আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ফরমায়েছেন

لعن الله الناظر والمنظور إليه


“আল্লাহর লা'নত তাদের প্রতি যারা অন্যের ছতরের প্রতি দৃষ্টি করে এবং যে অন্যকে ছতর প্রদর্শন করে।"

এ হাদীসের আলোকে সকলের জন্যে ছতর প্রসঙ্গীয় মাসআলাসমূহ উত্তম রূপে জেনে নেয়ার গুরুত্ব ও জরূরত অতিসহজে অনুধাবন করা যায়। যাতে আল্লাহপাকের লা'নত হতে মুক্তি লাভ সহজ হয়।

মাসআলা : পুরুষের জন্যে নাভী হতে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে রাখা ফরয। এ অঙ্গকে স্বীয় শরীঅত সম্মত ক্রীত দাসী ও স্ত্রী ব্যতিত অন্যান্য সবার দৃষ্টি থেকে গুপ্ত রাখা ফরয।

মাসআলা : মহিলাদের জন্যে বেগানা পুরুষ (যাদের সাথে বিবাহ জায়েয) এর মুখ মন্ডল, উভয় হাতের অগ্রভাগ এবং উভয় পায়ের গিরা পর্যন্ত ছাড়া বাকী সমস্ত অঙ্গ ঢেকে রাখা ফরয।

ফায়েদা : দুররে মুখতার এর ভাষ্য মতে যুবতি মহিলাদের জন্যে বেগানা পুরুষের সামনে মুখ খোলা ও নিষেধ। তবে এটা গোপনীয় অঙ্গ হিসেবে নয়। বরং ফেতনার আশংকায়।

মাসআলা : যে অঙ্গ ঢেকে রাখা ফরয উক্ত অঙ্গ যদি শরীর হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তথাপি তা দেখা নাজায়েয। সুতরাং মহিলাদের মাথা আচড়ানোর পর চিরুনীতে যে চুল থাকে তা এমন জায়গায় ফেলা উচিত নয় যেখানে পুরুষের দৃষ্টি পড়ে। তদরূপ পুরুষের জন্যে নাভীর নিচের পশমও এমন স্থানে ফেলা উচিত নয় যেখানে মানুষের নজর পড়ে।

মাসআলা : মহিলাদের জন্যে মাহরাম পুরুষ তথা যাদের সাথে বিবাহ হারাম যথা- পিতা, ভাই, পুত্র, জামাতা, শ্বশুর ইত্যাদির সামনে পেট, পিঠ এবং নাভী হতে হাঁটুর নিম্নভাগ পর্যন্ত ঢেকে রাখা ফরয। উদাহরণ স্বরূপ যদি পুত্রের সামনে মায়ের মাথা উন্মুক্ত হয়ে যায়, বা হাতের বাজু অথবা পায়ের গোছা খুলে যায়, তাহলে এতে কোন গোনাহ হবে না।

মাসআলা : বাংলাদেশও হিন্দুস্তানের মহিলারা সাধারণত এমন পোশাক পরে থাকে যাতে মাথা প্রায়শঃ খোলা থাকে ও খুলে যায়, সুতরাং এ জাতীয় পোশাক পরে মাহারেম ছাড়া অন্যদের সামনে যেমন- চাচাত ভাই, মামাত ভাই, দেবর, ভাসুর প্রভৃতির সামনে আসা নাজায়েয।

মাসআলা : শরীয়ত সম্মত বাদীর জন্যে সমস্ত পুরুষ হতে ঐ পরিমাণ শরীর ঢেকে রাখা ফরয নারীদের জন্যে যে পরিমাণ অঙ্গ স্বীয় মাহারেমদের সম্মুখে ঢেকে রাখা ফরয।

মাসআলা : মহিলাদের জন্যে অপর মহিলার সামনে নাভী হতে হাঁটু পর্যন্ত অঙ্গ ঢেকে রাখা ফরয।

জ্ঞাতব্য : অধিকাংশ মহিলাই ধারণা করে থাকে যে, মহিলাদের জন্যে পরস্পরে কোন পর্দা নেই, একে অন্যের সমস্ত অঙ্গই দেখতে পারে। এতে কোন গোনাহ হয় না। তদের এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। প্রায়ই গোসলের সময়, পেসাব বা অন্য কোন জরুরতে বিনা জরুরতে অন্যের সামনে নাভী হতে হাঁটু পর্যন্ত অঙ্গও খুলে ফেলে বা জরুরত বশতঃ কারো সামনে খোলার প্রয়োজন দেখা দিলে অন্যান্যরা ও অবলীলায় তা দেখতে থাকে। তদরূপ ধাত্রী বা চিকিৎসকের সামনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অঙ্গ ও খুলে ফেলে। এসব সম্পূর্ণ হারাম। এতে দর্শণকারীনি ও প্রদর্শন কারীনী উভয়-ই গোনাহগার হবে । এ ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক থাকা উচিত।

মাসআলা : জরুরত বশত : উক্ত পরিমাণ ছতর দেখানো জায়েয। যেমন চিকিৎসক বা ধাত্রীর নিকট প্রয়োজন মাফিক ছতর খোলা জায়েয। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খুললে ও দেখতে উভয়ই গোনাহগার হবে।

মাসআলা : মাহরাম পুরুষকে যে পরিমাণ অঙ্গ দেখানো জায়েয তার জন্যে তা স্পর্শ করাও জায়েয। তবে বেগানা মহিলাদের ক্ষেত্রে এটা প্রজোয্য নয়। অর্থাৎ-বেগানা মহিলাদের চেহারা, হাত ও পায়ের গিরার নিম্নাংশ কামভাব না থাকলে দেখা জায়েয। কিন্তু স্পর্শ করা জায়েয নয়। তবে এমন বৃদ্ধা মহিলা যাদের প্রতি কামভাব সৃষ্টির কোন সম্ভাবনাই নেই। তাকে স্পর্শ করা জায়েয। (দুররে মুখতার)

মাসআলা : ইমাম আবু হানীফা (রঃ) এর মতে মহিলা মনিবের জন্যে তার ক্রীতদাসের নিকট সে বেগানা নারীর পর্যায়ে। সুতরাং তার জন্য মহিলা মনিব বা মনিবের স্ত্রীর হাত, চেহারা ও পা ছাড়া বাকী অঙ্গ দেখা না জায়েয।

মাসআলা : হিজড়া ও খোজা (পুরুষত্বহীন) ব্যক্তি সাধারণ পুরুষের পর্যায়ে গণ্য। মহিলাদের জন্য তাদের থেকে ও পর্দা করা জরুরী।

মাসআলা : একেবারে ছোট্ট বালকদের জন্য কোন অঙ্গ ঢেকে রাখা ফরয নয়। তবে যখন কিছুটা বুঝ সম্পন্ন হবে অর্থাৎ যতক্ষণ কামস্পৃহার উপযোগী না হবে (দশ বৎসর বয়স পর্যন্ত) ততক্ষণ পর্যন্ত কেবল পেশাব পায়খানার অঙ্গদ্বয় ঢেকে রাখা ফরয। অতঃপর (দশ বৎসরের পর হতে) সে বালেগের পর্যায়ে গণ্য। (দুররে মুখতার)

ফায়েদা : হিজাব তথা পর্দা, আর ছতর আবৃত রাখা এক জিনিষ নয় পর্দার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মহিলাদের জন্য কোন বেগানা পুরুষের সামনে না যাওয়া। আর ছতর আবৃত করার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যতটুকু অঙ্গ অন্যের থেকে ঢেকে রাখা ফরয তা ঢেকে রাখা। যদিও তাদের সম্মুখে এসে হোক । নবী করীম সাল্লাল্লহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের রমণীগণের জন্য হিজাব ফরয ছিল। বাকী মহিলাদের জন্য মুস্তাহাব। আর ছতর আবৃত রাখা সকলের জন্যই ফরয। হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী (রঃ) এমনটিই লিখেছেন। বস্তুতঃ এটাই আলিমগণের অভিমত। উলামায়ে কেরাম উক্ত মুস্তাহাব তথা হিজাবের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন এবং মহিলাদের জন্যে পর্দা প্রথাকে আ'ম ভাবে সবার জন্যে চালু করেছেন।

পাক ভারত উপমহাদেশে তো অবস্থা এমন পরিবর্তন হয়ে গেছে যে, না হিজাব আছে না ছতর আবৃতের প্রচলন আছে। পর্দার ব্যাপারে মানুষ এতই উদাসীন সে, চাচাত ভাই, মামাত ভাই, বিয়াই ইত্যাদি না মাহরাম পুরুষের সামনে নির্দ্বিধায় আসা যাওয়া করে । এটা সরাসরি পর্দার পরিপন্থী। আর ছতর আবৃতের ব্যাপারে দেখা যায় যে, মহিলারা এমন পোশাক পরিচ্ছদ পরিধান করে যা পরে স্বামী ছাড়া অন্যান্যদের সামনে যাওয়ার উপযোগী নয়। প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে এ বিষয়ের সতর্ক থাকা উচিত । মহিলারা যাতে সচারাচার না মাহরাম পুরুষের সামনেই না আসে সে বিষয়ে অত্যন্ত সজাগ দৃষ্টি রাখা জরুরী। জরূরত বশতঃ কারো সামনে আসতে হলে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে চুল, মাথা, পেট, পিঠ ইত্যাদি অঙ্গসমূহ ভাল করে ঢেকে আসবে।

মাসআলা : যে সমস্ত কাপড় পরিধান করলে শরীরের অঙ্গ দেখা যায় তা পরিধান করা উলঙ্গ থাকার নামান্তর। আবু দাউদ শরীফে হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, একদা হযরত আবু বকর তনয়া আসমা (রাঃ) একটি পাতলা কাপড় পরিধান করে নবীজী (সাঃ) এর সম্মুখে আসলেন। তিনি তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন, এবং বললেন আসমা! মেয়েরা যখন যুবতী হয়ে যায় তখন তাদের জন্যে শরীরের কোন অঙ্গই অন্য কাউকে দেখানো জায়েয নয়। এর দ্বারা তিনি স্বীয় হাত ও মুখের প্রতি ইশারা করলেন।

শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী (রঃ) অত্র হাদীসের টীকায় লিখেন-যে কাপড়ের দ্বারা শরীরের অঙ্গ দেখা যায় তা পরিধান করা উলঙ্গ থাকার নামান্তর। সুতরাং মখমল বা আর্দী জাতীয় পাতলা কাপড় পরিধান করে পুরুষের সামনে আসবেনা। এধরণের পাতলা কাপড়, বা ওড়না পরে নামায পড়া যাদ্বারা নিচের থেকে চুল, ঘাড়, হাতের বাহু ইত্যাদি নজরে আসে তা পরে নামায পড়লে নামায হবেনা। পুরুষদের জন্য নিজ নিজ ঘরের মাহিলাদিগকে অত্র মাসআলাটি ভালভাবে জানিয়ে দেয়া উচিত ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url