আহলে হাদীস ও সালাফীদের গলদ আকিদা এবং মাসআলাঃ তারাবীর নামায আট রাকাত এর বেশী পড়া বিদআত।
আহলে হাদীস সালাফী সম্প্রদায়ের কিছু গলদ আকায়েদ এবং মাসায়েল।
কুরআন-হাদীসের আলোকে তাদের ভুল মাসায়েল।
তারবীর নামায আট রাকাত এর বেশী পড়া বিদআত
রমযান মাসে তারাবীহ পড়ার অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু রাকাতের সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। সম্ভবত বেতেরসহ তাহাজ্জুদের নামায থেকে বেশি ছিল না। কিন্তু বিশ, ত্রিশ, চল্লিশ রাকাত পড়াও জায়েয আছে।
-তালিমুস সালাত, পৃ, ২০
উল্লিখিত বক্তব্য দ্বারা দু'টি কথা প্রমাণিত হয়- প্রথমত: রমযান মাসে তারাবীহ এর নামাযের রাকাত আহলে হাদীস সালাফীদের নিকট নির্দিষ্ট নয়, তাহলে সালাফী সম্প্রদায় যে, নির্দিষ্ট আট রাকাত পড়ে, তা ভিত্তিহীন মনগড়া । দ্বিতীয়ত: তারাবীর নামায পৃথক আর তাহাজ্জুদের নামায পৃথক, তাহলে আহলে হাদীস ও সালাফী সম্প্রদায়ের যে গ্রুপ তাহাজ্জুদের নামাযকেই রমযানের নামায বলে, তা উপরে উল্লিখিত তাদেরই ইবারত দ্বারা ভ্রান্ত প্রমাণিত হলো। তারাবীহ নামায ৮ রাকাত নয়, ২০ রাকাত- এটাই সাহাবায়ে কেরাম এবং ইমামগণের সর্বসম্মত মত। হাদীস শরীফেও ২০ রাকাতের কথা রয়েছে খোলাফায়ে রাশেদীনের আমল দ্বারা ২০ রাকাতই প্রমাণিত। মুহাজির, আনসার ও অন্যান্য সাহাবী (রাযি.)-এর ইজমার ( ঐক্যবদ্ধ মতের) আলোকেও তারাবীর নামায ২০ রাকাত বলে অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত।
ইসলামের পুণ্য যুগসমূহে তথা সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন ও তাবে-তাবেঈনের যুগে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে ২০ রাকাত তারাবীহ পড়া হতো। বর্তমানেও মক্কা ও মদীনা শরীফ এবং সমগ্র ইসলামী বিশ্বে সকল ইমামগণের অনুসারীগণ ২০ রাকাত তারাবীর নামায আদায় করেন। লা-মাযহাবী আহলে হাদীস সালাফীদের অনেকেই শরীয়তের প্রমাণাদির পরিপন্থী তারাবীর নামে আট রাকাতের প্রচলন ঘটানোর জন্য অনেক ভ্রান্ত চেষ্টা ও অমূলক কথার আশ্রয় নিয়ে থাকেন। তাদের দাবী, আট রাকাত তারাবীর হাদীস সহীহ বুখারীতে আছে। অথচ সহীহ বুখারীর হাদীসটি তাহাজ্জুদের ব্যাপারে, তারাবীর ব্যাপারে নয়।
হাদীসটি এই-
আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি হযরত উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দীকা (রাযি.)কে জিজ্ঞাসা করেন, রমযান মাসে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নামায কেমন হতো? হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাযি.) বলেন, তিনি রমযানে ও রমযানের বাইরে এগারো রাকাতের অধিক পড়তেন না। চার রাকাত পড়তেন এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতার কথা তোমাকে কী বলব! এরপর চার রাকাত পড়তেন, যার দীর্ঘতা ও সৌন্দর্য হতো অতুলনীয়। এরপর তিন রাকাত পড়তেন ।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন, আলোচ্য হাদীসে রমযান ও অন্যান্য মাসে প্রিয় নবী (সা.)-এর তাহাজ্জুদ নামাযের বিবরণ দেয়া হয়েছে। রমযানের সাথে সংশ্লিষ্ট তারাবীহর নামাযের কথা আদৌ আলোচ্য হাদীসে উল্লেখ করা হয়নি।
তারাবীর নামায বিশ রাকাতের পক্ষে আমাদের অসংখ্য দলীলের মধ্যে একটি হলো, যা ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমের উস্তাদ আবু বকর ইবনে আবী শায়বা (রহ.) সংকলিত হাদীস গ্রন্থ 'আল-মুসান্নাফ' হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি.)-এর সূত্রে সহীহ হাদীসের সাথে উল্লেখ করেছেন, হযরত ইবনে আব্বাস (রাযি.)-এর সূত্রে বলেন, রাসূল (সা.) রমযান মাসে বিশ রাকাত তারাবীহ এবং বেতের পড়তেন।
প্রিয় পাঠক! উপরে উল্লিখিত এই সম্ভাবনার শব্দটিই সামনে গিয়ে পরিবর্তন হয়ে ইলমে কতয়ী হয়ে যায় অর্থাৎ, এই আট রাকাত তারাবীর নামাযই আহলে হাদীস সালাফীদের নিকট সুন্নাতে সাবেতা হয়ে গেল। অথচ এর পূর্বে বিশ, ত্রিশ, চল্লিশ রাকাতও পড়ার অনুমোদন আছে বলে স্বীকার করে আসছিল। অথচ জমহুর উলামায়ে সলফ ও খলফ-এর নিকট তারাবীর নামায বিশ রাকাতই ছিল। হযরত উমর ফারূক (রাযি.) সাহাবীদের উপস্থিতিতে সমস্ত উম্মতকে তারাবীর নামায বিশ রাকাত হওয়ার ব্যাপারে ইজমা বা একমত করে দিয়েছেন। আর নবী কারীম (সা.) বলেছেন, আসহাবী কান-নূজম অর্থাৎ, আমার সাহাবীগণ নক্ষত্রের মত, এরা সবাই হেদায়াত প্রাপ্ত; তোমরা এদের যারই অনুসরণ-অনুকরণ করবে, হেদায়াত প্রাপ্ত হবে।
-মেশকাত শরীফ