হযরত ওমর রাঃ এর জীবনী ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি


হযরত ওমর রাঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

  • হযরত ওমর রাঃ এর নাম ও পরিচয়
মূল নাম ওমর, উপনাম আবূ হাফস উপাধি : আল-ফারুক, পিতার নাম খাত্তাব, মাতার নাম : খানা, মতান্তরে হানতামা বিনতে হাশিম ইবনে মুগিরা।


  • হযরত ওমর রাঃ এর নসবনামা (বংশ পরিচয়)
হযরত ওমর (রা)-এর বংশ-লতিকা হলো : ওমর ইবনুল খাত্তাব ইবনে নুফাইল ইবনে আবদুল উযযা ইবনে বিবাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে কারাত ইবনে রাজাহ ইবনে আদী ইবনে কা'ব ইবনে লুয়াই ইবনে ফাহর ইবনে মালিক। তাঁর বংশ-লতিকার ৮ম পুরুষে রাসূলের বংশ-লতিকার সাথে মিলে যায়। তিনি কুরাইশ বংশোদ্ভূত।


  • হযরত ওমর রাঃ এর জন্ম
হযরত ওমর (রা) হিজরতের ৪০ বছর পূর্বে রাসূল (স)-এর জন্মের ১৩ বছর পর ৫৮৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্ম ও বাল্যকাল সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণ তেমন কিছু লেখেননি


  • হযরত ওমর রাঃ এর ইসলাম গ্রহণ
তিনি ৫ম/ ৬ষ্ঠ নববী সালে ইসলাম কবুল করেন। ইসলাম গ্রহণকালে তাঁর বয়স ছিল ছাব্বিশ বছর। তাঁর পূর্বে ৪০ জন পুরুষ এবং এগারো জন মহিলা ইসলাম গ্রহণ। করেন। কারো কারো মতে, তাঁকে দিয়েই ইসলাম গ্রহণকারী পুরুষের সংখ্যা ৪০ পূর্ণ হয়। তাঁর ইসলাম গ্রহণের পরই ইসলাম প্রকাশ্য ময়দানে আত্মপ্রকাশ করে। ফলে তিনি আল 'ফারক' উপাধিতে ভূষিত হন।


  • হযরত ওমর রাঃ এর রাসূল সঃ এর পরিবারের সাথে তাঁর সম্পর্ক
রাসূল (স)-এর সাথে দীনী সম্পর্কই একজন সাহাবীর মুখ্যতম সম্পর্ক ছিল। তা সত্ত্বেও হযরত ওমর (রা) রাসূল (স)-এর সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কেও ধন্য হয়েছিলেন। স্বীয় কন্যা হাফসা (রা)-কে রাসূল (স)-এর কাছে বিয়ে দেন। রাসূল (স)-এর দৌহিত্রী হযরত আলীর কন্যা উম্মে কুলসুম বিনতে ফাতিমাকে তিনি ৪০ হাজার দিরহাম নগদ মহর দিয়ে হিজরী ১৭ সালে বিয়ে করেন।


  • হযরত ওমর রাঃ এর শাহাদাত
হিজরী ২৩ সালের ২৪ শে বিলহাজ্জ বুধবার দিন মসজিদে নববীতে এশার নামায মতান্তরে ফজরের নামাযে ইমামতি করার জন্য দাঁড়ালে মুগিরা ইবনে শুরার দাস আবূ লু'লু বিষাক্ত তরবারি দ্বারা তাঁর মথা ও নাভিতে মারাত্মকভাবে আঘাত করে। আহত অবস্থায় তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পর ২৭ যিলহাজ্জ্ব শনিবার তিনি শাহাদাত লাভ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।


  • হযরত ওমর রাঃ এর দাফন ও জানাজা
হযরত ছোহাইব তাঁর জানাজার নামায পড়ান। রওযায়ে নববীর মধ্যে সিদ্দীকে আকবরের বাম পার্শ্বে হযরত আয়েশা (রা)-এর অনুমতিক্রমে তাঁকে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।

হযরত আবূ বকর (রা)-এর ইন্তিকালের পর হযরত ওমর (রা) খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। মৃত্যুর পূর্বেই হযরত আবূ বকর (রা) হযরত ওমর (রা) এর নাম খিলাফতের জন্য প্রস্তাব করেন। ব্যক্তিগতভাবে হযরত ওমর (রা) খলীফা হওয়ার প্রত্যাশী ছিলেন না। হযরত আবূ বকর (রা) জানতেন যে, হযরত ওমর (রা) স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে খলীফা পদপ্রার্থী হবেন না, বা সে জন্যে কোন চেষ্টাও করবেন না; কিন্তু হযরত আবূ বকর (রা)-এর মৃত্যুর পর তিনিই মুসলিম উম্মাহর গুরুদায়িত্ব বহন করার সর্বাধিক উপযুক্ত ছিলেন।

হযরত ওমর (রা) প্রথম থেকেই তাঁর 'একনিষ্ঠ সততা ও দুর্বার বীরত্বের' জন্য অনেকের কাছে ছিলেন ত্রাসস্বরূপ। ন্যায়, সত্য এবং খোদাভীতি ছিলো হযরত ওমর (রা)-এর জীবনের মূলমন্ত্র। লোকের সন্তোষ বা অসন্তোষের দিকে তাকিয়ে তিনি জীবনে কোন কাজ করেননি। একমাত্র আল্লাহকে ভয় করে তিনি সকল আ ও দ্বিধা থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। "অপ্রিয় হলেও সত্য বলৰে” রাসূল (স.)-এর এই বাণী ওমর (রা)-এর চরিত্রে বাস্তব রূপ পেয়েছিল। তাই হযরত ওমর (রা) সাহাবাগণের ভালোবাসার চেয়ে ভীতি এবং শ্রদ্ধাই বেশি পেয়েছিলেন। হযরত ওমর (রা)-কে সাহাবাগণ ভালোবাসতেন কম এবং ভয়ই করতেন বেশি। হযরত আবূ বকর (রা) বুঝতে পেরেছিলেন, হযরত ওমর (রা)-এর নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠতে পারে, সমালোচনাও হতে পারে। তিনি এও জানতেন, খলীফা হওয়ার জন্যে ওমর (রা) স্বয়ং তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনার কোন জবাবই দেবেন না। তাই হযরত আবু বকর (রা) নিজের জীবদ্দশাতেই হযরত ওমর (রা)-এর নির্বাচনের কাজটি সমাধা করে যেতে চেয়েছিলেন। হযরত ওমর (রা)-এর নির্বাচনের বিরুদ্ধে যেসব সমালোচনা হয়েছিল তার একটিরও জবাব হযরত ওমর (রা) দেননি। হযরত আবূ বকর (রা)-ই জীবদ্দশায় হযরত ওমর (রা)-এর বিরুদ্ধে সমালোচনা ও আপত্তির জবাব উপস্থাপন করেছিলেন।

  • হযরত ওমর রাঃ এর খিলাফতের পদে নির্বাচন
খলীফা নির্বাচনের ব্যাপারে হযরত ওমর (রা) ছিলেন সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়। মৃদু আপত্তি সত্ত্বেও সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনে “মজলিস-ই শূরায়" হযরত আবূ বকর (রা)-এর প্রস্তাব অনুমোদিত হয়ে যায়।

নির্বাচনের পর হযরত ওমর (রা) মুসলিম উম্মার আনুগত্য কামনা করেন এবং পূর্ণ সমর্থন পেয়ে তিনি খলীফা পদে অধিষ্ঠিত হন। রাষ্ট্রীয় শাসক-নির্বাচন পদ্ধতি সর্বযুগে এক হতে হবে, এমন কথা ইসলামে নেই। জনগণের প্রজ্ঞা, শিক্ষা, রাজনৈতিক সচেতনতা ইত্যাদি অনুসারে নির্বাচন পদ্ধতি এক এক যুগে এক এক রকম হতে পারে। যারা যে ভাবেই ক্ষমতায় আসুন না কেন, তাঁরা যদি গণসমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হন তবে তাদের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার কোনই অধিকার নেই। বল প্রয়োগ করে ক্ষমতা দখল করা সব ক্ষেত্রেই ইসলাম-বিরোধী। যারা গণসমর্থন ব্যতীত ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক যুলুমের রাজত্ব কায়েম করে বা আল্লাহর আইন এবং জীবনদর্শন অনুসারে শাসন পরিচালনা করে না, তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ করা বা রক্তপাত করা ইসলামে না-জায়েয নয়।

মুষ্টিমেয় জনতার সমর্থন পেয়ে যারা সমগ্র উম্মাহকে গোলামির জিঞ্জিরে আবদ্ধ রাখে, সম্পদ গুটিকয়েক সুবিধাবাদীর মধ্যে আবর্তিত হতে সহায়তা করে, তাদের ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য বলপ্রয়োগ করা শুধুমাত্র অনুমোদিত নয়; বরং ফরয। তাই বলে গণসমর্থন না পেয়ে জোর করে ক্ষমতা দখল করা এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকা ইসলামসম্মত নয় ।

হযরত ওমর (রা) ঘোষণা করেছিলেন, উম্মাহর সমর্থন না থাকা সত্ত্বেও যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে, তাদের এবং তাদের সমর্থকদের হত্যা করা উচিত।
-শেখ মুশির হোসেন কিদওয়াই লিখিত Islamism & Bolshevism পৃষ্ঠা ২১২-২১৩

  • হযরত ওমর রাঃ এর প্রাদেশিক গভর্নর এবং অন্যান্য কর্মচারী নিয়োগ
প্রাদেশিক গভর্নর এবং অন্যান্য কর্মচারী নিয়োগের ব্যাপারে হযরত ওমর (রা) মজলিস-ই শূরা আহ্বান করতেন। মজলিস-ই শূরায় উচ্চপদের জন্য প্রস্তাবিত ব্যক্তিগণের দোষ-গুণ প্রকাশ্যভাবে আলোচনার পর সুযোগ্য ব্যক্তি মনোনীত হতেন। এ সমস্ত আলোচনায় প্রায়ই দেখা যেত, কোন ব্যক্তির দোষ-গুণ সম্বন্ধে হযরত ওমর (রা)-এর সূক্ষ্ম অন্তর্দৃষ্টি ছিলো অতুলনীয় ।

কোন ব্যক্তির যোগ্যতা নির্ণয়ের ব্যাপারে হযরত ওমর (রা)-এর যেরূপ তীক্ষ্ণ অন্তর্দৃষ্টি ও পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা পরিলক্ষিত হত, তা ছিল বিস্ময়কর। হযরত ওমর (রা)-এর কোন ব্যক্তির যোগ্যতা যাচাই করার ক্ষমতা দেখে সাহাবীগণ স্তম্ভিত হতেন এবং কর্মচারী নির্বাচনের ভারও তাঁর উপরই ছেড়ে দিতেন।

তৎকালে আরব দেশে হযরত মুয়াবিয়া (রা), আমর বিন আস (রা), মুগিরা বিন শো'বা (রা) এবং যিয়াদ বিন সুমাইয়ার (রা) ন্যায় রাজনৈতিক প্রতিভাসম্পন্ন লোক আর ছিলেন কিনা সন্দেহ। প্রথম তিন জনকে তিনি গভর্নর পদে নিয়োগ করেন। বিষাদের বয়স ১৬ বছর ছিলো বলে তাঁকে স্বাধীন দায়িত্ব না দিয়ে কুফার গভর্নর আবু মুসা আশয়ারীর উপদেষ্টারূপে নিয়োগ করা হয়।

প্রাদেশিক গভর্নর এবং অন্যান্য কর্মচারীদের উচ্চাকাঙ্খা সম্বন্ধে হযরত ওমর (রা) অত্যধিক সচেতন ছিলেন। আমর বিন মাদিকারার, তুলাইহা বিন খালি (রা), খালিদ বিন ওলীদ (রা) প্রমুখ সাহাবী ছিলেন যুদ্ধবিদ্যায় অত্যন্ত পারদর্শী, কিন্তু রাজনৈতিক অন্তদৃষ্টি না থাকায় হযরত ওমর (রা) তাঁদের কাউকে কোনো শাসনতান্ত্রিক পদ দেননি। কুফা, বসরা ও সিরিয়া তখনকার ইসলামী খিলাফতের সর্বাধিক পরিমাণ রাজস্ব সরবরাহ করত। রাজস্ব সংগ্রহে যাতে কোনো যুলুম না হয়, তাই তিনি তথাকার জনসাধারণ থেকেই তাঁদের বিশ্বস্ত ও শ্রদ্ধাভাজন কর্মচারী নির্বাচনের নির্দেশ দেন। তথাকার প্রতিনিধি ও স্থানীয় লোকদের সর্বসম্মত মনোনয়নক্রমে ফারকাদ, হাজ্জাজ আল্লাত এবং মা'য বিন ইয়াযিদ তিনটি প্রদেশের সর্বোচ্চ কর্মচারী নিযুক্ত হন।

সরকারি কর্মচারীদের উচ্চপদে নিয়োগ প্রদানের সময়ই হযরত ওমর (রা) তাঁদের কার্যক্রম ও দায়িত্ব সম্বন্ধে নির্দেশ দিতেন। কর্মস্থলে পৌঁছে নব-নিযুক্ত কর্মচারীগণকে সে নির্দেশনামা জনসমক্ষে পড়ে শোনাতে হত। একবার হযরত ওমর (রা) সরকারি কর্মচারীগণকে সম্বোধন করে বলেছিলেন, “স্মরণ রেখো, তোমাদেরকে আমি জনগণের উপর উৎপীড়ক এবং প্রভু নিযুক্ত করিনি। আমি তোমাদেরকে নেতা হিসেবেই পাঠিয়েছি, যাতে জনসাধারণ তোমাদের উদাহরণ অনুসরণ করতে পারে। মুসলিমদেরকে তাদের অধিকার দাও। তাদেরকে অযথা মারধর করো না, যাতে তারা অপমানিত বোধ করে। তাদের অযথা প্রশংসা করো না, যাতে তারা অহমিকার ভ্রান্তিতে পতিত হতে পারে। তাদের সামনে খিলাফতের দরজা বন্ধ করে রেখো না, কারণ তাতে ধনীরা গরীবদের খেয়ে ফেলতে পারে। এমনভাবে ব্যবহার করো না যাতে প্রকাশ পায় যে তোমরা তাদের থেকে শ্রেষ্ঠ। কারণ তা হবে তাদের উপর নিপীড়ন।"

কিতাবুল খারাজে আছে, নিযুক্তির সময় হযরত ওমর (রা) কর্মচারীদের থেকে নিম্নোক্ত ওয়াদাগুলো আদায় করতেন- সে তুর্কী ঘোড়ায় আরোহণ করবে না, দামী কাপড় পরবে না, ভালো পরিষ্কার ময়দার রুটি খাবে না, দরজায় দারোয়ান রাখবে না এবং সর্বদাই যারা প্রয়োজন অনুভব করে তাদের জন্য তাদের দরজা খোলা রাখবে। এ সমস্ত ওয়াদা কর্মচারীগণকে প্রদত্ত নির্দেশমালায় লেখা থাকত এবং কর্মস্থলে গিয়ে এলাকার লোকজনদের তা পড়ে শোনাতে হত।

উপর্যুক্ত ওয়াদাগুলো হতে প্রমাণিত হয়, হযরত ওমর (রা) কর্মচারীগণের জীবনযাত্রার মান জনগণের জীবনযাত্রার মান থেকে উন্নত হওয়া সঙ্গত মনে করতেন না। সরকারি কর্মচারীগণের দুর্নীতিপরায়ণ হওয়ার অবকাশ প্রচুর। যদি তাদের জীবনযাত্রার মান অত্যধিক উন্নত হয়ে পড়ে, তবে তাদের পক্ষে দুর্নীতিপরায়ণ না হয়ে উপায় থাকে না।
একদিন খলীফা হযরত ওমর (রা) পথ চলাকালে জনৈক পথচারীকে বলতে শুনলেন, “ওমর! তুমি তোমার কর্মচারীদের জন্য কয়েকটি আইন প্রণয়ন করেই কি আল্লাহ্র শাস্তি হতে রেহাই পাবে মনে করেছ? তুমি কি খবর রেখেছো, মিসরের বর্তমান আমির আয়ায বিন গানাম মূল্যবান পোশাক পরিধান করেন এবং দরজায় প্রহরী মোতায়েন রাখেন?" খলীফা ওমর (রা) সঙ্গে সঙ্গেই মুহাম্মদ বিন মাসলামাকে মিসরে পাঠালেন এবং নির্দেশ দিলেন, তার পরিধানে যে কাপড় দেখা যাবে সে বস্ত্রেই যেন মদীনায় পাঠানো হয়। নির্দেশ মোতাবেক আমীর আয়াযকে মূল্যবান পরিচ্ছদ পরিহিত অবস্থায় মদীনায় পাঠানো হল। ইচ্ছা করলে আমীর আয়ায় ভিন্ন বস্ত্রে খলীফার সম্মুখে উপস্থিত হতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেননি। খলীফা আমীরকে বস্ত্র পরিবর্তনের নির্দেশ দিলেন এবং শাস্তিস্বরূপ তাঁকে বায়তুল মালের মেষ পালকের কাজে নিযুক্ত করলেন। আয়ায় বার বার দুঃখ করে বলেছিলেন, “এ শাস্তির চেয়ে আমার মৃত্যুদণ্ড অনেক ভালো ছিল।"
-কিতাবুল খারাজ।


সরকারি কর্মচারী নিয়োগের সময় অপর একটি বিষয়ে খলীফা ওমর (রা) অত্যধিক সচেতন থাকতেন। ফুতূহুল বালাযুরীতে আছে, নবনিযুক্ত সরকারি কর্মচারীগণকে নিযুক্তির সময়ে তাঁদের নিজস্ব সম্পদের তালিকা সরকারকে দিতে হত।

ব্যক্তিগত সম্পদের এ তালিকা সরকারি দফতরে রক্ষিত থাকত। যখনই কোন কর্মচারীর সম্পদে বৃদ্ধি দেখা যেত, তখনই তাঁকে অতিরিক্ত সম্পদের জন্যে জবাবদিহি করতে হত। খলীফা ওমর (রা)-এর সময় মুসলমানদের নৈতিক মান অত্যধিক উন্নত ছিলো। তবুও হযরত ওমর (রা) এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। বর্তমানে দুর্নীতিপূর্ণ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে খলীফা ওমর (রা) প্রবর্তিত নীতির অনুশীলন একান্ত অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

  • হযরত ওমর রাঃ এর দুর্নীতি দমন
সরকারি কর্মচারীদের নানা উপায়ে অর্থ সংগ্রহের সুযোগ থাকে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সুযোগে রাজকর্মচারীগণ সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার করে থাকেন। তবে সরকারের কড়া নযর থাকলে দুর্নীতির প্রকোপ কিছুটা কম হয়।

ব্রিটিশ আমলে উৎকোচ প্রথা রাজকর্মচারীদের মধ্যে কমবেশি প্রচলিত থাকলেও সরকারের নিজস্ব অর্থের পরিমাণ তখন কম ছিল। সরকারি কর্মচারীগণ সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করতে ভয় পেতেন। ২৫০ টাকা আত্মসাতের বিরুদ্ধে তদন্ত ও মামলায় পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ করতে সরকার তখন দ্বিধাবোধ করতেন না। ফলে রাজকর্মচারীগণ জনসাধারণের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করলেও সরকারি অর্থ অপচয়ে অত্যন্ত ভয় পেতেন।

দু'শ বছর ধরে সরকারি অর্থ অপচয়ের বিরুদ্ধে যে ভীতি সৃষ্টি করতে বৃটিশ সরকার সমর্থ হয়েছিল, তা নষ্ট করতে আযাদ দেশের আযাদ সরকারের অর্ধ যুগও দরকার হয়নি। শতাব্দীব্যাপী গড়ে ওঠা ঐতিহ্য যে কত তাড়াতাড়ি নষ্ট হতে পারে তা ভাবলে আশ্চর্য হতে হয়। জনগণের রক্ত পানি করা অর্থের প্রতি সরকারি কর্মচারীদের দরদ খুবই কম।

সরকারি সম্পদের জন্য হযরত ওমর (রা)-এর দরদ স্বীয় সম্পদের চেয়েও বেশি ছিলো। কারণ তিনি মনে করতেন...See more

  • হযরত ওমর রাঃ এর ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সাম্য
হযরত ওমর (রা)-এর খিলাফতকালে ব্যক্তিস্বাধীনতা পূর্ণমাত্রায় বিরাজিত ছিলো। একবার খলীফা ওমর (রা) নারীর মহরানা নির্দিষ্ট করে দেন, কিন্তু তা অনেকের মনঃপূত হয়নি। একদিন এক বৃদ্ধা মসজিদে দাঁড়িয়ে...See more

  • জনগণের জীবিকাঃ খিলাফতের দায়িত্বে হযরত ওমর রাঃ
বর্তমান যুগে কম্যুনিষ্ট রাষ্ট্রসমূহের বাইরে কোথাও সরকার জনগণের জীবিকার দায়িত্ব প্রত্যক্ষভাবে গ্রহণ করে না। অবশ্য সব ধরনের সরকারেরই ঘোষিত নীতি থাকে কোনো নাগরিককে অনাহারে মরতে না দেওয়া।
খলীফা ওমর (রা) নিজেকে তাঁর খিলাফতের অধীন সমস্ত লোকজনের জীবিকার জন্য দায়ী মনে করতেন। তিনি রাজ্যের...See more

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url