ইমাম মালেক রহঃ এর জীবনী

ইমাম মালেক এর জীবনী


  • ইমাম মালেক রহঃ এর পুরা নাম
ইমাম মালেক বিন আনাস আসবাহী (রহঃ)
  • ইমাম মালেক রহঃ এর বাসস্থান

মদীনা মুনাওয়ারা হতে কয়েক মাইল দুরে আকীক নামক উপত্যকা। সেখানেই ছিল জুরুফ' নামক প্রসিদ্ধ নিম্নভূমি। ওখানে চাষোপযোগী জমি এবং বাগান ছিল। সেখানেই ছিল হযরত উমর (রা.)-এর জায়গীর। এ স্থানটি সবুজ-শ্যামল হওয়ার কারণে বড়ই আকর্ষণীয় ছিল। ঐ এলাকাতেই ছিল ইমাম সাহেবের পিতার সুন্দর প্রাসাদ, যা কছবুল মুআদ নামে পরিচিত ছিল। কাযী আয়ায লিখেন,


و كان ابو مالك بن انس مقعدا و كان له قـصـر بـالـعـرف يعرف بقصر المقعد

ইমাম মালেকের পিতা আনাস মুকআদ ছিলেন। জুরুফে তার একটি প্রাসাদ ছিল। যা কছরুল মুআদ নামে পরিচিত ছিল।

মুকআদুন্নসব এবং মুকআদুল হসব এমন ব্যক্তিকে বলা হয় যার বংশ ছোট অথবা যার বংশ নেই। এতে বোঝা যায় ইমাম সাহেবের পরিবার যখন ইয়ামান থেকে আগমন করে তখন তার সদস্য সংখ্যা কম এবং অপরিচিত ছিল।


লোকেরা একবার ইমাম মালেক (রহ.)-কে 'আকীক' এ থাকার কারণ জিজ্ঞেস করল এবং বলল যে, এতে ত আপনার মসজিদে নবুবীতে আসা-যাওয়ায় কষ্ট হয়। ইমাম সাহেব বললেন, রাসূলুল্লাহ (স.) আকীক উপত্যকাকে ভালবাসতেন এবং সেখানে তাশরীফ নিতেন। কোন কোন সাহাবা সেখান থেকে স্থানান্তরিত হয়ে মসজিদে নবুবীর নিকট আসতে চাইলে তিনি বললেন, তোমরা কি মসজিদ পর্যন্ত আসা-যাওয়ায় ছওয়াব মনে কর না? অবশ্য পরে ইমাম 'সাহেব মদীনায় চলে আসেন। ইবনে বুকাইর বর্ণনা করেন, ইমাম সাহেব প্রথমে ‘আকীক' এ থাকতেন পরে মদীনায় চলে আসেন। এখানে তিনি হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.)-এর বাড়ীতে অবস্থান করতেন, যা হযরত উমর (রা.)-এর বাড়ীর নিকট মসজিদে নবুবীর সাথে মিলিত ছিল। এতেকাফ করার সময় রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিছানা-পত্র ঐ বাড়ীতে রাখা হত।


  • ইমাম মালেক রহঃ এর জন্ম এবং বাল্যকাল

ইমাম মালেক (রহ.) ৯৩ হিজরীতে জুরুফ এলাকার যি-মেরওয়া নামক স্থানে জন্মলাভ করেন। কেউ কেউ তাঁর জন্ম সাল ৯০ হিজরী, ৯৪ হিজরী বা ৯৫ হিজরী উল্লেখ করেছেন।

জীবনী লেখকদের অনেকের মতে ইমাম সাহেব মাতৃগর্ভে তিন বছর ছিলেন। আবার কেউ কেউ দুই বছরের কথা বর্ণনা করেছেন ।

আবু হানিফা (রহ.) ইমাম মালেক (রহ.) হতে তের বছরের বড় ছিলেন। ইমাম মালেক বাল্যকালেই তাঁকে দেখেছিলেন। একবার ইমাম আবু হানিফাকে লোকেরা জিজ্ঞেস করল যে, মদীনার নবীন ছেলেদেরকে আপনি কেমন পেয়েছেন? তিনি বললেন, তাদের মধ্যে কেউ যদি উন্নতি লাভ করে তবে সে হবে মালেক বিন আনাস।

এক বর্ণনায় ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, আমি মদীনায় ইলম ছড়ানো ছিটানে দেখেছি। যদি কেউ তা সুবিন্যস্ত করে, তবে এ ছেলেটিই করবে। ইবনে গানেস বলেন, আবু হানিফার এ কথাটি পরে আমি ইমাম মালেকের নিকট বলেছি। তিনি বললেন, আবু হানিফা সত্য বলেছেন। আমি তাকে দেখেছি। তিনি খুবই বুদ্ধিমান জ্ঞানী ছিলেন। হায়! তিনি যদি ফিকহর ভিত্তি আছল অর্থাৎ মদীনাবাসীর ‘আছর' বা হাদীসের উপর রাখতেন ।


  • ইমাম মালেক রহঃ এর কাপড়ের ব্যবসা

নিয়মিতভাবে হাদীস শিক্ষার পূর্বে তিনি তাঁর ভাই নযরের সাথে সুতি কাপড়ের ব্যবসা করতেন। এ ব্যবসায় তিনি তার অংশীদার ছিলেন। পরে তিনি হাদীস শিক্ষা হাসিল করেন ।
এ কারণে প্রথমতঃ তাঁর ভাই নযরের সাথে সম্পর্কিত করে তাঁর পরিচয় দেয়া হত। বলা হত মালেক নযরের ভাই। হাদীস শিক্ষায় মেহনত করার কারণে তাঁর প্রসিদ্ধি ছড়িয়ে পড়লে বিপরীতভাবে পরিচয় হতে লাগল এবং মানুষ মালেকের ভাই নযর বলে তাঁর ভায়ের পরিচয় দিতে লাগল।


  • ইমাম মালেক রহঃ এর সন্তান-সন্ততি
ইবনে হযম লিখেন,ইমাম মালেকের দু'জন ছেলে ছিলেন। একজন ইয়াহুয়া অপরজন মুহাম্মদ । মুহাদ্দিছদের দৃষ্টিতে এ দুজনই যয়ীফ তথা দূর্বল। তাঁর এক পৌত্র আহমদ বিন ইয়াহয়া বিন মালেক ছিলেন। উওয়াইস, আৰু সহল নাফে এবং রবী- তিনজনই মালেক বিন আবি আমের নাফে-এর সন্তান ছিলেন।


  • ইমাম মালেক রহঃ এর ইন্তিকাল
ইমাম মালেক (র.) জীবনের শেষ দিগুলোতে নির্জনতা ও একাকী জীবন গহণ করে নেন। এমনকি জামাত বা জুমআর জন্যও বের হতেন না। তিনি বলেন, প্রত্যেকেই তার ওযর প্রকাশ করতে পারে না। এতদসত্ত্বেও তাঁর মর্যাদায় কোন পার্থক্য আসেনি।


এক বর্ণনায় পাওয়া যায় অবশেষে তিনি বলেছেন যে, আমি বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছি। এ অবস্থায় আমি মসজিদে নববীতে যেতে চাই না। কারণ এতে রাসূলুল্লাহ (স.)-এর তাযীম বজায় রাখতে পারব না। আর আমি আমার অসুস্থতার কথা জানিয়ে আল্লাহর নিকট অভিযোগ করতে চাই না। ইমাম সাহেব ২২ দিন অসুস্থ ছিলেন। ১৪ রবিউল আউয়াল, ১৭৯ হিজরী শনিবার দিন তিনি ইন্তেকাল করেন। ইবনে কেনান এবং ইবনে যুবাইর তাঁকে গোসল দেন। আর তাঁর পুত্র ইয়াহুয়া এবং কাতের হাবীব পানি ঢেলে সহযোগিতা করছিলেন। তাঁর অছিয়াত অনুসারে সাদা কাপড় দ্বারা কাফন দেয়া হয়। মদীনার আমির আব্দুল আযীয বিন মুহাম্মদ জানাযার নামায পড়ান। ইন্তেকালের পূর্বে তিনি (কলেমায়ে শাহাদাৎ) পড়েন এবং এ বাক্য বলেন “আল্লাহর জন্যই সমস্ত ক্ষমতা সবকিছুর আগেও পরেও" জান্নাতুল বাকীতে তাঁকে দাফন করা হয়।


মুসলিম বিশ্বের জন্য ইমাম সাহেবের ইন্তেকাল ছিল একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা।

উলামায়ে কিরাম সমবেদনা প্রকাশ করলেন, তাঁর উচ্চ মর্যাদার স্বপ্ন দেখেন। কবিগণ শোকগাঁথা পড়লেন। যেখানেই এ সংবাদ পৌঁছল, সেখানেই শোকের ছায়া নেমে পড়ল।

আসাদ বিন খাররাত বলেন, আমরা বাগদাদে ইমাম মুহাম্মদ বিন হাসান শাইবানীর শিক্ষা মজলিসে বসা ছিলাম। একব্যক্তি অনেক কষ্টে তার নিকট গেল।
এরপর ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) "ইন্নালিল্লাহী ওইন্না ইলাইহি রজিউন" পড়ে বললেন,

مصيبة ما أعظمها مات مالك بن انس مات ام المـؤمـنـيـن فـي الحديث *


কত বড় মুছিবত এসে পড়েছে! মালেক বিন আনাস ইন্তেকাল করেছেন। হাদীসের ইমাম ইন্তেকাল করেছেন।
মসজিদে যখন এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়ল তখন চারিদিকে শোকের এক অপূর্ব দৃশ্য নেমে এল ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url