ফিকহবিদ তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীগণ।


ফিকহবিদ তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীগণ

সাহাবায়ে কেরামের পর বিজ্ঞ তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীগণ ফতোয়া প্রদান করতেন। এদের মধ্যে কারা কোথায় ফাতোয়া প্রদান করতেন সে সম্পর্কে আল্লামা ইবনে কাইয়্যুম আলোচনা করেছেন। উহার সার সংক্ষেপ নিম্নে আলোচিত হল


মদীনা মুনাওয়ারা

সাতজন তাবেয়ী মদীনা মুনাওয়ারায় ফতোয়া প্রদান ও ফিকহশাস্ত্রে বেশী প্রসিদ্ধ ছিলেন। এদের ফতোয়া অধিক গ্রহণযোগ্য ছিল।

এরা হচ্ছেন-
১. সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেব
২. ওরোয়া ইবনে যুবায়ের
৩. কাসেম ইবনে মুহাম্মদ
৪. খারেজা ইবনে যায়েদ
৫. আবু বকর ইবনে আব্দুর রহমান
৬. সুলায়মান ইবনে ইয়াসার
৭. উবায়দুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহ প্রমুখ ।
এঁদের সমকালীন আলেমদের মধ্যে আরো কিছু তাবেয়ী ফিকহশাস্ত্রে ও ফতোয়ার ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ ছিলেন তারা হচ্ছেন, আলী ইবনে হোসাইন আবান, আবু সালামা, উসমান, সালেম, নাফে ও যয়নুল আবেদীন। এদের পরে যারা মদীনায় ফতোয়ার ক্ষেত্রে পরিচিত ছিলেন তারা হচ্ছেন আব্দুর রহমান ইবনে কাসেম, আবু বকর ইবনে মুহাম্মদ, হোসাইন ইবনে মুহাম্মদ, মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদের, জাফর ইবনে মুহাম্মদ, আবু বকর, মুহাম্মদ ইবনে শিহাব যুহরী প্রমুখ।


মক্কা মুকাররামা

মক্কা মুকাররামার যারা মুহুর্তী হিসেবে প্রসিদ্ধ ও ফিকহ শাস্ত্রে নির্ভরযোগ্য ছিলেন তারা হচ্ছেন, আমর ইবনে দীনার, আতা ইবনে আবিৱাৰাহ, উবায়েদ ইবনে উমায়ের, মুজাহিদ, আব্দুল্লাহ ইবনে আবি মুলায়কা, আব্দুর রহমান ইবনে মুসাবেত ও ইকরামা।
এদের পরে আরো কিছু মুতী ফতোয়া প্রদান করতেন এরা হচ্ছেন আবু যুবায়ের মক্কী, আদুল্লাহ ইবনে খালেদ ও আব্দুল্লাহ ইবনে তাউস। এদের পর যারা ফতুয়া নিতেন তারা হচ্ছেন আব্দুল মালিক বিন আব্দুল আযীয ও সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা। এদের পরে ফতোয়া দিতেন মুসলিম ইবনে খালেদ যানজী, সাইদ ইবনে সালেম। তাদের পরে ইমাম শাফী, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের প্রমুখ ব্যক্তিবর্গও ফতোয়া প্রদান করতেন এবং তারা ফিকহর কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন।


বসরা নগরী

বসরায় যারা ফতোয়া ও ফিকহ শাস্ত্রের কেন্দ্র বিন্দু হিসেব প্রসিদ্ধ ছিলেন। তারা হচ্ছেন উমর ইবনে সালামা, আবু মরিয়ম হানাফী, কাব ইবনে আসওয়াদ, হাসান বসরী, আবুল আলিয়া, হোমায়েদ ইবনে আব্দুর রহমান, যুরারা ইবনে আবি আউফ ও আবু বুরদা। এদের মধ্যে হাসান বসরী পাচশত সাহাবী হতে হাদীস ও ফিকহ হাসিল করেছেন। আলেমগণ তার ফতোয়াসমূহ বিরাট বিরাট সাতটি কিতাবে লিপিবদ্ধ করেছেন।
উপরোক্ত মুফতীদের পর যারা বসরায় ফতোয়ার ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ ছিলেন তারা হচ্ছেন, আবু আইয়ুব সাখতিয়ানী, সুলায়মান তাইমী, হাফস, ইবনে সুলায়মান, আব্দুল্লাহ ইবনে আউফ, ইউনুস ইবনে উবায়েদ, কাসেম ইবনে রবীয়া, খালেদ ইবনে আবি ইমরান, আশ আছ ইবনে আব্দুল মালিক কাতাদা, কাযী ইয়াস প্রমুখ মুক্তীগণ ।


কুফা নগরী

কুফায় ফতোয়া ও ফিকহশাস্ত্রে যারা উল্লেখযোগ্য ছিলেন তারা হচ্ছেন আলকামা ইবনে কায়েস, আসওয়াদ ইবনে ইয়াযীদ নাথয়ী, আমর ইবনে শুরাহবীল হামদানী, মাসরুক, উবায়দা সালামানী, কাযী শুরাইহ ইবনে হারেছ, সোয়ায়েদ ইবনে গালাম, হারেছ ইবনে কায়েছ, আব্দুর রহমান ইবনে ইয়াযীদ, আব্দুল্লাহ ইবনে উতবা, খায়ছামা ইবনে আব্দুর রহমান, সালামা ইবনে সুহায়ের, মালেক ইবনে আমের, হাম্মাম ইবনে নেহারেছ, হারেছ ইবনে সোয়ায়েদ, আব্দুল্লাহ ইবনে শাখবারাহ, যিররিরনে হোবায়েশ, খাল্লাস ইবনে আমর, আমর ইবনে সায়মূন আউফী, ইয়াযীদ ইবনে মুয়াবিয়া, রবী ইবনে খায়ছাম, উতবা ইবনে ফারকাদ, সেলা ইবনে যুফার, আবু ওয়ায়েল উবায়েদ ইবনে নাদলা, শারীক ইবনে হাম্বল প্রমুখ আলেম ও ফকীহগণ ।


এসব মুফতী ও মুজতাহিদ তাবেয়ীগণের মধ্যে যারা গণ্য ছিলেন তারা হযরত আলী (রা.) এবং হযরত ইবনে মাসউদ (রা.)-এর বিশিষ্ট ছাত্র ছিলেন। সাহাবায়ে কেরামের যমানায় এরা ফতোয়া দিতেন। সাহাবায়ে কেরাম তাঁদের একাজের অনুমতি দিতেন ও তাদের ফতোয়া গৃহীতও হত।


এদের অধিকাংশই হযরত উমর (রা.) এবং হযরত আয়েশা (রা.)-এর নিকট থেকে ফিকহ্ শাস্ত্রের জ্ঞান অর্জন করেছেন। আমর ইবনে মায়মুন হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (রা.)-এর বিশেষ ছাত্র ছিলেন। হযরত মুয়ায (রা.)-এর মৃত্যুর পর তারই আদেশে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর নিকট গমন করেন ।


কুফার মুফতীগণের মধ্যে আরো উল্লেখযোগ্য কিছু ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন। তারা হচ্ছেন- হযরত ইবনে মাসউদ (রা.)-এর দুই পুত্র আবু উবায়দা ও আব্দুর রহমান, আব্দুর রহমান ইবনে আবি লায়লা, মায়সারা ও যাবান। এদের পরে যারা আবির্ভূত হন তারা হলেন ইব্রাহীম নাখয়ী, আমের মা'বী, সাঈদ ইবনে জুবায়ের, কাসেম ইবনে আব্দুর রহমান, হাকাম ইবনে উতবা, জাবালা ইবনে সুহায়েম আবু বকর ইনে আবি মুসা, মুহারিব ইবনে দীহার প্রমুখ আলেমগণ ।


এদের পরে ফতোয়ার ময়দানে যাদের আগমন ঘটেছে তারা হচ্ছেন হাম্মাদ ইবনে আবি সুলায়মান, মিসআর ইবনে কুদাম সুলায়মান ইবনে মু'তামির, সুলায়মান আমাশ প্রমুখ। এঁদের শিষ্য স্বরূপ যারা আগমন করেছেন তারা হচ্ছেন- মুহাম্মদ ইবনে আব্দুর রহমান, ইমাম আবু হানীফা, হাসান ইবনে সালেহ, আব্দুল্লাহ ইবনে শু রুমা; সাঈদ ইবনে আশওয়া, কাযী শরীক, কাসেম ইবনে মান, সুফিয়ান ছাওরী প্রমুখ।


এদের পর কুফায় আরো কিছু মুতীদের আগমন ঘটেছে তারা হচ্ছেন হাস ইবনে গিয়াছ, ওকী ইবনে জাররাহ। ইমাম আবু হানীফার শিষ্যবর্গ কাযী আবু ইউসুফ, হাসান ইবনে সিয়াদ, কাযী আফিয়া, মুহাম্মাদ ইবনে হাসান শায়বানী, যুফার ইবনে হুযায়েল, হাম্মাদ ইবনে আবি হানীফা, আসাদ কাযী নূহ ইবনে দারবাজ, ইমাম সুফিয়ান ছাওরীর শাগরেদবর্গ আশযারী ইবনে ইমরান, ইয়াহুয়া ইবনে আদাম প্রমুখ ফকীহগণ।


সিরিয়া

তাবেয়ীগণের মধ্যে যারা সিরিয়ায় মুতী হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন তারা হচ্ছেন- আৰু ইদ্রীস খাওলানী, শুরাহবীল ইবনে সামত, আব্দুল্লাহ ইবনে আবি যাকারিয়া ঘুযায়ী, কাবীসা ইবনে মুয়ায়েব খুযায়ী, হাব্বান ইবনে উমাইয়া, সুলায়মান ইবনে হাবীম মুহারেবী, হারেছ ইবনে উমাইয়া যুবাইদী, খালেদ ইবনে মাদান, আব্দুর রহমান ইবনে গানম, আশআরী, জুবায়ের ইবনে নুকায়ের, মাকহুল শামী, উমর ইবনে আব্দুল আযীয, রাজা ইবনে হায়ওয়া, হুদায়ের ইবনে কুরাইব। আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ানও তাদের মধ্যে শামিল ছিলেন।
এদের পরে মুফতী হিসেবে সিরিয়াতে যারা পরিচিত ছিলেন তারা হচ্ছেন কাযী ইয়াহুয়া ইবনে হামযা, আবু আমর আব্দুর রহমান আউযায়ী, সাইদ ইবনে আব্দুল আযীয, ইসমাঈল ইবনে আবি মুহাজির, সুলায়মান ইবনে মূসা উমাৰী ।
এদের পরে সিরিয়াতে ফতোয়া দানের কাজ করেছেন মাখলাদ ইবনে হোসাইন, আবু ইসহাক ফাযারী ওলীদ ইবনে মুসলিম, আব্বাস ইবনে ইয়াযীদ, শোয়েব ইবনে ইসহাক প্রমুখ।

মিশর

মিশরে ফিকহশাস্ত্রে যারা প্রসিদ্ধ ছিলেন তারা হচ্ছেন- ইয়াযীদ ইবনে আবি হাবীব, বুঝায়ের ইবনে আব্দুল্লাহ্, লায়েছ ইবনে সাদ, উবায়দুল্লাহ ইবনে আবি জাফর, আমর ইবনে হারেছ প্রমুখ।
উপরোক্ত মুফতীগণের পর মিশরে ফতোয়া প্রদানের কাজ করতেন ইমাম মালেকের শাগরেদবৃন্দ মুযানী, ইবনে আব্দুল হাকাম, বোয়াইতী প্রমুখ।
উল্লেখিত দেশসমূহ ছাড়াও ইয়ামেন, উন্দুলুস (স্পেন), বাগদাদ প্রভৃতি স্থানেও বহু মুজতাহিদ ও মুফতী ছিলেন। মুসলমানরা ফতোয়া এবং দ্বীনি বিভিন্ন মাসায়েলের ব্যাপারে তাঁদের খেদমতে উপস্থিত হতেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url