শী'আদের আকীদা, শীয়া মাযহাবের উৎপত্তি।

 


শী'আদের আকীদা

শী'আদের মৌল আকীদা এই যে, “ইমামত জনগণের মতামতের কোন বিষয় নয় যে, তা উম্মাতে মুসলিমার শী'আদের আকীদা হাতে সোপর্দ করা যেতে পারে এবং তা জনগণের রায়ে মনোনীত হতে পারে। বরং তা হলো দীনের একটি স্তম্ভ, ইসলামের বুনিয়াদী বিষয়। কোন নবীর জন্য এতে নির্লিপ্ততা ও উম্মতের উপর ছেড়ে দেয়া জায়িয নয়, বরং তাঁর উপর ওয়াজিব জনগণের জন্য ইমাম মনোনীত করা এবং এমন ইমামকে সাগীরা ও কাবীরা গুনাহ থেকে মুক্ত হওয়া অত্যাবশ্যক।"


শী'আদের মতে হযরত আলী (রা.) নবী করীম (স.)-এর পসন্দনীয় খলীফা এবং সাহাবা কিরামের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তিত্ব। জানা যায় যে, হযরত আলী (রা.)-এর সর্বোত্তম সাহাবী হওয়ার আকীদায় কোন শী'আর দ্বিমত নেই। এমন কি কতিপয় সাহাবীও এ মতের পক্ষে রয়েছেন। সুতরাং আম্মার ইবন ইয়াসির মিকদাদ ইবন আসওয়াদ, আবূ যার গিফারী, উবাই ইবন কা'ব, হুযায়ফা, বুরায়দা, আবূ আইউব, সাহল ইব্‌ন হুনায়ফ, উসমান ইব্‌ন হুনায়ফ, আবূ হায়সাম, খুযায়মা ইব্‌ন সাবিত, আবৃত্ তুফায়ল আমির ইব্‌ন ওয়াসিলা, আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব এবং তাঁর পুত্র সকল বনু হাশিম (রা.) সকলেই হযরত আলী (রা.)-এর সর্বোত্তমতার আকীদা পোষণ করতেন।


প্রথমদিকে হযরত যুবায়র (রা.)ও এ ধারণা পোষণ করতেন। পরবর্তীতে তিনি এ মত পরিহার করেন। বনু উমাইয়াদের কতিপয় ব্যক্তি হযরত আলী (রা.)-এর শ্রেষ্ঠত্বের পক্ষপাতী ছিলেন যেমনঃ খালিদ ইবনে সাঈদ' ইবনে আস এবং উম্ উনে আবদুল আযীয (রহ.)


শী'আরা ছিল বিভিন্ন পর্যায়ের। কতিপয় হযরত আলী মুরতাযা (রা.)-এর সম্মানে খুবই বাড়াবাড়ি করত। কতেক ছিল ইনসাফ-পসন্দ। শেষোক্ত আকীদায় বিশ্বাসী শী'আরা হযরত আলী (রহ.)-কে সকল সাহাবা কিরামের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মনে করত, তবে কাউকে কাফির বলত না। ইবনুল হাদীদ ইনসাফ-পছন্দ শী'আদের আকীদা বিকৃত করে লিখেছেন যে, তিনিও স্বয়ং তাঁদের অন্তর্ভুক্ত।



তিনি বলেছেনঃ
ইনসাফ-পছন্দ শী'আরাই হলো মুক্তিকামী। কেননা তারা সত্য পথের অনুগামী। তাদের ধারণা হলো, হযরত আলী পরকালে সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হবেন এবং জান্নাতে তাঁর মর্যাদা হবে সবার ঊর্ধ্বে। তিনি দুনিয়াতে সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি এবং অসংখ্য গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন। তাঁর দুশমনরা আল্লাহ্র দুশমন এবং কাফির ও মুনাফিক গোষ্ঠীর ন্যায় চিরস্থায়ী জাহান্নামী। তবে হ্যাঁ, যদি সে তাওবা করে, তার প্রতি মহব্বত ও ভালবাসা পোষণ করে মারা যায়।


মুহাজির ও আনসারগণের মধ্যে যাঁরা শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব এবং ধারা হযরত আলী (রা.)-এর পূর্বে ইসলামের আমানতের উত্তরাধিকারী হয়েছেন, যদি তাঁরা হযরত আলী (রা.)-এর খিলাফতের অস্বীকার করেন এবং তাঁর কার্যকলাপের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ ও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে থাকেন, অথবা তাঁর বিরুদ্ধে তলোয়ার উঠিয়ে থাকেন অথবা কমপক্ষে তার প্রতি আহ্বান জানিয়ে থাকেন, তবে আমরা নিশ্চিতভাবে তাদেরকে অভিশপ্ত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত মনে করছি এবং আমরা মনে করছি যে, তারা রসূলুল্লাহ্ (স.)-এর কোপানলে ও অভিশাপে পড়েছে। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (স.) হযরত আলী (রা.) সম্পর্কে বলেছেন :

حـربـك حربى وسلمك سلمى-

তোমার সাথে যুদ্ধ আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং তোমার দেয়া নিরাপত্তা আমারই নিরাপত্তা।

اللهم وال من والاه، وعاد من عاداه-

হে আল্লাহ্! আলীর বন্ধুকে বন্ধু এবং তার দুশমনকে দুশমন মনে কর।

কিন্তু আমরা নিশ্চিতভাবে অবগত যে, হযরত আলী (রা.) তাঁর পূর্বসূরী খলীফাগণকে পসন্দ করতেন, তাঁদের হাতে বায়'আত করেছেন, তাঁদের ইমামতে নামায পড়েছেন, তাঁদের কারো নিকট তাঁর কন্যাকে বিবাহ দিয়েছেন এবং তাঁদের প্রদত্ত যুদ্ধলব্ধ সম্পদ নিজের প্রয়োজনে ব্যয় করেছেন। সুতরাং আমাদের কোন অধিকার নেই যে, আমরা তাঁর অনুসৃত নীতির বরখেলাফ করি এবং তাঁর সর্বজনমান্য স্বীকৃত ও প্রসিদ্ধ কার্যাবলী অস্বীকার করি।


দেখুন! যখন তিনি আমীরে মু'আবিয়া (রা.)-এর ওপর অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন, আমরা এতে অসন্তুষ্ট হয়েছি। যখন তিনি তাঁর প্রতি অভিশাপ দেন, আমরা দিয়েছি। যখন তিনি সিরিয়াবাসী ওখানে অবস্থানকারী সাহারা যেমন আমর্ ইব্‌ন আ'স এবং তাঁর পুত্র আবদুল্লাহকে পথভ্রষ্ট সাব্যস্ত করলেন, তখন আমরাও তাঁর অনুসরণ করলাম।


সারকথা এই যে, আমরা হযরত আলী (রা.)-কে নবী করীম (স.)-এর সাথে নবুওয়াতের মর্যাদায় শরীক করতে চাইনা, তবে এ ছাড়া অপর গুণাবলী ও শ্রেষ্ঠত্বে শরীক করি যা তাঁর এবং হযরত আলী (রা.)-এর মধ্যে সমভাবে পাওয়া যায়। যে সব বড় বড় সাহাবার (রা.) ওপর তিনি কোন প্রকার সমালোচনা করেছেন বলে বর্ণিত হয় নাই, আমরাও তাঁদের সমালোচনা পরিহার করছি এবং সে ধরনের ব্যবহার করছি, যা তিনি বলেছেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url