ফিকহ্ শাস্ত্রের সংকলন।


ফিকহ্ শাস্ত্রের সংকলন

হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয (রহ.) তাঁর শাসনামলে হাদীস সংকলনের প্রতি মনোযোগি হন এবং গুরুত্ব সহকারে একাজ শুরু করেন। ফলে হাদীসের ছোট ছোট কিতাবের স্কুলে বড় বড় কিতাবের প্রচলন হয়। পরবর্তীতে বনি উমাইয়্যার যুগেও এ সংকলন ও তাদবীন ধারা চলতে থাকে। বনি আব্বাসিয়ার প্রাথমিক যুগ হতেই অন্যান্য দ্বীনি ইলমের প্রতি অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। জনসাধারণের মধ্যেও ইলমী স্পৃহা বৃদ্ধি পায়। আরবী ভাষায় নতুন নতুন ইলম ও শাস্ত্রের অনুবাদ হয়। তখন তাবেয়ীন এবং তাঁদের শিষ্যগণ সমগ্র ইসলামী বিশ্বে ছড়িয়ে ছিলেন। সর্বত্র দ্বীনি ইলমের চর্চা হচ্ছিল। তাই ইলমে দ্বীন অগ্রগতি ও উন্নতি লাভের আস্তে আস্তে সুযোগ পেয়েছিল।

হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীর মধ্যভাগে তখনকার ইমামগণ ফিকহ শাস্ত্রের ধারা অনুযায়ী হাদীসের কিতাব রচনা করেন। যেমন, মদীনা মুনাওয়ারায় ইমাম মালেক (রহ.), মক্কা মুকাররমায় ইবনে জুরাইজ (রহ.) কুফায় সুফিয়ান হাওরী (রহ.), সিরিয়ায় আউযায়ী (রহ.) বসরায় রবী ইবনে সাবীহ (রহ.) ওয়াসতে এ হোশায়েম (রহ.), ইয়ামেনে মা'মার (রহ.), রাই শহরে জারীর ইবনে আব্দুল হামীদ (রহ.), খোরাসানে আব্দুল্লাহ্ ইবনে মোবারক (রহ.) প্রমুখ ইমামবর্ণ হাদীসের বিভিন্ন কিতাব লিখেন।

এটা ছিল মুহাদ্দিসগণের ফিকহ শাস্ত্রের ধারা অনুযায়ী হাদীস সংকলনের অবদান। এ যুগেই ফিকহ শাস্ত্রের ইমামগণ কুফায় ফিকহ শাস্ত্রের সংকলন শুরু করেন। ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এবং তাঁর শাগরেদবর্গ অর্থাৎ, ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মদ, ইমাম যুফার প্রমুখ ইসলামী বিশ্বে সর্বপ্রথম ফিকহে ইসলামীর সংকলন করেন। পরে ইহা একটি এক স্বতন্ত্র শাস্ত্রের রূপ ধারণ করে। তারা কোরআন হাদীস, কেয়াস এবং ইজমার সমন্বয়ে প্রায় পাঁচ লক্ষ মাসআলা লিপিবদ্ধ করেন। এজন্যই ইমাম শাফী (রহ.) বলেন, সমস্ত জাতি ফিকহ্ এর ব্যাপারে ইরাক বাসীদের কাছে ঋণী। আর সমস্ত ইরাকবাসী কুফাবাসীদের কাছে ঋণী। আর সমস্ত কুফাবাসী ইমামে আযম আবু হানীফার কাছে ঋণী । এখানেই শেষ নয় বরং ফিকহ্ শাস্ত্রের সাথে সাথে উসূলে ফিকহ বা ফিকহ মূলনীতি এবং ফিকহশাস্ত্রের সংকলণ সর্বপ্রথম ইমাম আবু হানীফা এবং তাঁর শাগরেদবর্গই করেছেন।

মুদ্দাকথা, হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীতে ফিকহশাস্ত্রবিদগণ এবং হাদীসশাস্ত্রবিদগণ নিজ নিজ প্রণীত উসূল ও মূলনীতির আলোকে মাসআলাসমূহ উদ্ঘাটন করেন এবং হাদীস সংকলন করেন। তাদের ছাত্ররাও তাদেরই মূলনীতির উপর হাদীস ও ফিকহ শাস্ত্রের ভিত্তি রাখেন ।

জ্ঞাতব্য যে, মুহাদ্দিছগণ ইজতেহাদ এবং কেয়াসের অস্বীকার করেন না। তবে হাদীসের শব্দের প্রতি তারা অধিক দৃষ্টি রাখতেন এবং যথা সম্ভব হাদীসের বাহ্যিক অর্থের উপর আমল করার চেষ্টা করতেন। এমনিভাবে ফকীহগণও হাদীসের অস্বীকার করতেন না বরং তাঁরা কোরআন এবং হাদীস থেকেই মাসআলা বের করতেন। কোরআন ও হাদীসের উদ্দেশ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে মাসআলা উদঘাটন করতেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url