হানাফী মাযহাবের উৎপত্তি
হানাফী মাযহাবের উৎপত্তি
চার মাযহাবের মধ্যে হানাফী মাযহাবই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং এটা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের সর্বপ্রথম ও প্রধান ফিকহী মাযহাব; যার উদ্ভাবক হলেন ইমাম আবু হানীফা নোমান ইবনে ছাবেত কুফী (রহ.)। সর্বপ্রথম কুফা নগরীতে এ মাযহাবের সূচনা হয়। অতঃপর ইরাকের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর আস্তে আস্তে পৃথিবীর বিভিন্ন দূর-দূরান্ত দেশেও ছড়িয়ে পড়ে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই মিশর, সিরিয়া, পারস্য, রোম, বলখ, বোখারা, ফরগানা, ভারত ইয়ামেন প্রভৃতি দেশে এমাযহাব বিস্তৃতি লাভ করে ।
ইমাম আযম আবু হানীফা (রহ.)-এর তত্ত্বাবধানেই তার চল্লিশজন শাগরেদ হানাফী মাযহাবকে সুবিন্যস্ত ও লিপিবদ্ধ করেন। তন্মধ্যে ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মদ ও ইমাম যুফারের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
হানাফী মাযহাবের বিস্তৃতির ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা (রহ.)-এর শাগরেদ ইমাম আসাদ ইবনে উমরের বিশেষ শ্রম ও মেধা রয়েছে। ইমাম আবু ইউসুফ খলীফা হারুনুর রশীদের শাসনামলে কাযীউল কুখ্যাত বা প্রধান বিচারপতির পদে নিয়োজিত ছিলেন। বিধায় তাঁর মাধ্যমেও এ মাযহাব দেশের সর্বত্র বিস্তার লাভ করে। আর ইমাম আবু মুহাম্মদের মাধ্যমে হানাফী মাযহাব আফ্রিকায় পৌঁছে যায়। অতঃপর আসাদ ইবনে ফুরাত তথাকার কাযী বা বিচারপতি নিযুক্ত হওয়ার দরুন অত্যন্ত সহজভাবে প্রসার লাভ করে। চতুর্থ শতাব্দী পর্যন্ত সেখানে হানাফী মাযহাবেরই প্রাধান্য ছিল। ৪৫৩ হিজরীতে সেখানে মাআ'য ইবনে বাদীসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তার ছত্রছায়ায় সেখানে মালেকী মাযহাব চালু হয়।
চতুর্থ শতাব্দীর বিখ্যাত পর্যটক মুকাদ্দেসী বাশশারীর বর্ণনামতে সেসময় ইয়ামেন এবং সাআয়ও হানাফী মাযহাব প্রসার লাভ করে। এছাড়াও অধুনালুপ্ত রাশিয়ান ব্লকের বহু এলাকায় হানাফী মাযহাবের বিশিষ্ট বিশিষ্ট আলেম ছিলেন এবং তাঁদের মাধ্যমে সেসব এলাকায় হানাফী ফিকহ চালু ছিল। বর্তমানে পাক-ভারত এবং বাংলাদেশে বলতে গেলে সবচেয়ে বেশী এবং এক চেটিয়া হানাফী মাযহাবেরই রাজত্ব রয়েছে।
এসব দেশে বিপুল সংখ্যক দ্বীনি মাদ্রাসা ও বিজ্ঞ আলেম থাকায় এসব অঞ্চলে হানাফী মাযহাবের ভিত অত্যন্ত মজবুত এবং তা সর্বাধিক গৃহীত।