ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর জীবনী

ইমাম শাফেয়ীর জীবনী


  • ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর পুরা নাম
ইমাম মুহাম্মদ বিন ইদ্রীস শাফেয়ী (রহ.)

  • ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর জন্ম ও বংশ তালিকা
ইমাম শাফেয়ীর (রহ.) বংশধারা তাঁর শিষ্য রবী বিন সুলাইমান মুরারী তাঁর থেকে এরূপ বর্ণনা করেন

ইমাম আবু আব্দিল্লাহ মুহাম্মদ বিন ইদ্রীস বিন আব্বাস বিন উছমান বিন শাফে বিন সায়েব বিন উবাইদিল্লাহ বিন আবদ ইয়াযীদ বিন হাশেম বিন মুত্তালেব বিন আবদে মানাফ আলকুরাইশী, আলমুত্তালেবী আল হাশেমী (রহ.)।
সায়েব বিন উবাইদিল্লাহ (রা.) বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের হাতে বন্দী হবার পর ইসলাম কবুল করেন। বনী হাশেমের পতাকা তার হাতে ছিল। ফিদইয়া (রক্তপণ) আদায় করার পর মুসলমান হলে লোকেরা বিস্ময় প্রকাশ করে। তিনি বললেন, আমি মুসলমানদেরকে তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করতে চাইনি। এক বর্ণনা মতে তাঁর বাহ্যিক আকার-আকৃতি রাসূলুল্লাহ (স.)-এর সাথে সাদৃস্যপূর্ণ ছিল। একবার সায়েব বিন উবাইদিল্লাহ (রা.) অসুস্থ হলে হযরত উমর (রা.) তাকে দেখতে যান।

ছোট্ট বেলায় একবার শাফে বিন সায়েব তার পিতার সাথে রাসূলুল্লাহ (স.)-এর সাথে সাক্ষাতের সৌভাগ্য অর্জন করেন। তিনি তাকে দেখে বললেন

مـن سعادة المرء ان يشبه اباه-
অর্থাৎ, পিতার সাথে সাদৃস্যপূর্ণ হওয়াটা সৌভাগ্য ।

ইমাম সাহেবের মাতা রনাম ফাতেমা বিনতে আব্দিল্লাহ বিন হাসান বিন আলী বিন আবি তালিব। তবে খতীবে বাগদাদী এবং কাযী আয়ায লিখেন যে, তার মাতা ছিলেন বনু ইয়দ গোত্রের, যাদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ইদ হচ্ছে আরবের উপাদান।


  • ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর জন্ম এবং শৈশবকাল
ইমাম সাহেব বর্ণনা করেন, ১৫০ হিজরীতে সিরিয়ার গায়া শহরে আমি জন্মলাভ করেছি। দুই বছর বয়সে আমাকে মক্কায় নিয়ে আসা হয়। এ বর্ণনাটিই অধিক প্রসিদ্ধ । অন্য এক বর্ণনা মতে আমি 'আসকালানে জন্মলাভ করি। আমার দু'বৎসর বয়সে মা আমাকে নিয়ে মক্কায় আসেন। অন্য এক বর্ণনা মতে তিনি বলেন, ইয়ামানে আমার জন্ম হয়। আমার মায়ের আশঙ্কা হল যে, ইয়ামানে আমার নব (বংশ) নষ্ট হয়ে যাবে। এ কারণে তিনি দশ বছর বয়সে আমাকে নিয়ে মক্কায় চলে আসেন। তাঁর মাতা বর্ণনা করেন যে, যখন শাফেয়ী মাতৃগড়ে ছিল তখন আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম যে, মুশতারী (মঙ্গল) তারকাটি আমার শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মিশরে পতিত হচ্ছে। তার আলো প্রতিটি শহরে গিয়ে পৌঁছল। স্বপ্ন ব্যাখ্যাকারীগণ বললেন যে, গর্ভ থেকে এমন একজন আলেম জন্ম নিবে, যার ইলম মিশর থেকে প্রতিটি শহরে বিস্তার লাভ করবে।

ইমাম সাহেব পিতাকে দেখেননি। তাঁর জন্মের পূর্বেই অথবা তাঁর জন্মের পরপরই তাঁর পিতা মারা যান। তাঁর মাতা তাকে দু' বছর বয়সে মক্কায় নিয়ে আসেন।

ইমাম সাহেব বর্ণনা করেন, বাল্যকালে দুটি বস্তুর প্রতি আমার সমস্ত মনোযোগ ছিল, তীর নিক্ষেপ এবং ইলম অর্জন। তীর নিক্ষেপে আমি এমন পারদর্শী হয়েছিলাম যে, দশটার মধ্যে দশটাই সঠিক লক্ষ্যে গিয়ে পৌঁছত। ঐ সময়ে ঘোড়ায় আরোহণের আগ্রহও ছিল । তীর নিক্ষেপ এবং ঘোড়সওয়ারী সম্বন্ধে “কিতাবুসবক ওয়াররমী' রচনা করি। এ বিষয়ে এটাই ছিল সর্বপ্রথম কিতাব। সাথে সাথে পড়ালেখায় পুরো মনোযোগ ছিল। পিতৃহীনতা এবং দরিদ্রতা সত্ত্বেও রাত দিন পড়াশুনায় ব্যয় করতেন।

  • ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর সন্তান-সন্ততি
ইমাম সাহেবের সন্তান-সন্ততি সম্পর্কে ইবনে হযম বলেন, তাঁর দুটি পুত্র ছিল। একজন আৰু হাসান মুহাম্মদ যিনি 'কুন্নাসরীন' এবং 'আওয়াছেম এর বিচারক ছিলেন। তার কোন সন্তান ছিল না। দ্বিতীয়জন উছমান ইনি ইমাম আহমদ বিন হাম্বল থেকে ইলম হাসিল করেন তিনিও সিঃসন্তান ছিলেন। সুবকী 'তবাকাতে শাফেয়ীয়া' কিতাবে লিখেন, ইমাম সাহেবের দু' পুত্র ছিল। একজন কাযী আবু উছমান মুহাম্মদ, অপরজন আবুল হাসান মুহাম্মদ। আবু উছমান সবার বড় ছিলেন। ইমাম সাহেবের মৃত্যুর সময় তিনি মক্কায় ছিলেন। তিনি তার পিতা, সুফিয়ান বিন উয়াইনা, আব্দুর রায্যাক এবং আমদ বিন হাম্বল থেকে হাদীস বর্ণনা করেন। জযীরা এবং অন্যান্য স্থানের কাযী ছিলেন। হলবেও তিনি কাযী ছিলেন । তার তিন সন্তান ছিল। আব্বাস, আবুল হাসান বাল্যকালেই মারা যায় এবং কন্যা ফাতেমা। তার কোন সন্তান নেই। আবু উছমান ২৪০ হিজরীতে জযীরায় ইন্তেকাল করেন। দ্বিতীয় ছাহেবজাদা আবুল হাসান মুহাম্মদ 'দাননীর' নামক দাসীর গর্ভে জন্মলাভ করেন। তিনি বাল্যকালেই তার পিতা অর্থাৎ ইমাম সাহেবের সাথে মিশর আগমন করেন। সেখানেই ২৩১ হিজরীর শা'বান মাসে ইন্তেকাল করেন । যয়নাব' নাম্নী ইমাম সাহেবের এক কন্যা ছিল। তার গর্ভে আবু মুহাম্মদ, আহমদ বিন মুহাম্মদ বিন আব্দিল্লাহ বিন আব্বাস উছমান বিন শাফে জন্ম লাভ করেন।
তিনি তার পিতার মাধ্যমে তার নানা ইমাম শাফেয়ী থেকে হাদীস রেওয়ায়াত করেন। বলা হয়, শাফে'র বংশে ইমাম সাহেবের পর তার মত অন্য আলেম জন্ম লাভ করেনি। তিনি তার নানার বরকত পেয়েছিলেন।

  • ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর ইন্তেকাল
ইমাম শাফেয়ী (রহ.) ১৫০ হিজরীতে জন্মলাভ করেন এবং ২০৪ হিজরীর রজবের শেষদিন বৃহস্পতিবার দিবাগত শুক্রবার রাত্রে) মিশরে ইন্তিকাল করেন। তখন তাঁর বয়স চুয়ান্ন বৎসর ছিল। ইমাম সাহেবের অছিয়ত অনুসারে অসুস্থতার সময় তাঁকে আব্দুল্লাহ বিন আব্দিল হাকামের বাড়ীতে রাখা হয় এবং সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর ছেলেরাই দাফন-কাফন করেন। এবং মিশরের আমীর তাঁর জানাযার নামায পড়ান। মুকাত্তাম পাহাড়ের নিকট 'কারাফায়ে ছোগরা' নামক স্থানে তাঁকে কবর দেয়া হয়েছে।
রবী বিন সুলাইমান মুরাদী বর্ণনা করেন, দাফন শেষে ফিরে আসার পথে আমি শা'বানের চাঁদ দেখেছি। রাত্রে ইমাম সাহেবকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহ তাআলা আপনার সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন। তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা আমাকে নুরের কুসীতে (চেয়ারে বসিয়েছেন।

ইমাম সাহেবের পুত্র উছমান বলেন, ইন্তেকালের সময় আমার পিতার বয়স ছিল আটান্ন বৎসর।

রবী বর্ণনা করেন, ইমাম সাহেবের ইন্তিকালের পর আমরা শিক্ষা মজলিসে বসা ছিলাম। এক গ্রামীন লোক এসে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করল, এ মজলিসের চন্দ্র-সূর্য কোথায়?

আমরা বললাম, তাঁর ইন্তেকাল হয়ে গেছে। এ কথা শুনে সে অঝোরে কাঁদল এবং এ কথা বলে চলে গেল-

আল্লাহ তাআলা তাঁকে দয়া করুক এবং ক্ষমা করুক। কত সুন্দরভাবে দলীলের সমস্যাগুলো তাঁর বয়ান দ্বারা বিশ্লেষণ করে দিতেন। তাঁর প্রতিপক্ষকে স্পষ্ট দলীল দ্বারা পথ দেখাত। (হোদায়েত করত) লজ্জিত মুখমন্ডল থেকে অপমান ধুয়ে ফেলতেন। ইজতেহাদের মাধ্যমে মাসয়ালার কাটাময় রাস্তা খুলে দিতেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url