ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-র ক্রয়-বিক্রয়ে সততা এবং পরিচ্ছন্নতা।
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-র ক্রয়-বিক্রয়ে সততা এবং পরিচ্ছন্নতা
হাফস বিন আব্দির রহমান ও ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এক সাথে ব্যবসা করতেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এখানে মাল পাঠিয়ে দিতেন। তিনি বিক্রয় করতেন। একবার মাল পাঠিয়ে নিয়ে তাঁকে জানিয়ে দিলেন, এখানে খুঁত রয়েছে। তাই গ্রাহককে জানিয়ে দিবেন। কিন্তু হাফসের এ কথাটি স্মরণ ছিল না, সেহেতু তিনি এ থানটিও আগের দামেই বিক্রয় করলেন। ক্রেতার ঠিকানা জানা যায়নি। 1 তাই ইমাম আবু হানিফা (রহ.) তার সম্পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিলেন।
এক ব্যক্তি নির্দিষ্ট একটি রং-এর কাপড় তালাশ করছিল। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বললেন, অপেক্ষা কর, এ ধরনের কাপড় আসলে তোমার জন্য রেখে দিব। সপ্তাহ পুরা হওয়ার আগেই সে রং-এর কাপড় দোকানে এসেছে। ঐ ব্যক্তি দোকানের নিকট দিয়ে যাচ্ছিল। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) তাকে ডেকে বললেন, তোমার পছন্দের কাপড় এসে গেছে। সে মূল্য জিজ্ঞেস করলে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বললেন, এক দিরহাম। সে ভাবল ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ঠাট্টা করছেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বললেন, আমি দু'টো কাপড় বিশ দীনার ও এক দিরহাম দ্বারা ক্রয় করেছি। তন্মধ্যে একটি বিশ দীনারে বিক্রয় করেছি। আমার পুঁজির এক দিরহাম কম রয়েছে। তুমি অন্য কাপড়টি নিয়ে যাও এবং এক দিরহাম দিয়ে দাও। আমি আমার বন্ধুদের কাছে লাভে বিক্রি করিনা ।
এক ব্যক্তি দোকানে এসে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-কে বলল, আমার বিয়ের কথাবার্তা সূড়ান্ত হয়ে গেছে। আপনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করুন। দু'টি কাপড়ের দরকার। দুই সপ্তাহ পর ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ঐ ব্যক্তিকে ডাকলেন। সে ব্যক্তি আসলে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) তাকে বিশ্ব দীনারেরও অধিক মূল্যের দুটি কাপড় এবং নগন এক দীনার দিয়ে বললেন, 'তুমি এগুলো নিয়ে যাও।” তাকে আশ্চার্যনিত হতে দেখে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বললেন, তোমার নামে বাগদাদে কিছু সামান ও দীনার অবশিষ্ট রয়েছে। তুমি এগুলো নিয়ে যাও। নচেৎ আমি এগুলো বিক্রয় করে তার মূল্য এবং অতিরিক্ত এক দীনার দান করে দিব। লোকেরা এর কারণ জানতে চাইলে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বললেন, এক ব্যক্তি এসে বলল, আমার প্রতি দয়া করুন। আর আমার উস্তাদ আতা বিন আবি রাবাহ হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.)-এর এ কথা রেওয়ায়াত করেছেন যে, যদি কোন ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইয়ের নিকট বলে যে, আমার উপর দয়া কর তবে সে নিজের ভাইকে তার গোপন কথার আমীন (আমানতদার) বানিয়ে দিল। এ জন্য আমি ঐ ব্যক্তির সাথে যথাসম্ভব ভাল ব্যবহার এবং তার প্রতি ইহসান করতে চাই ।
মালীহ বিন ওকীর পিতা বর্ণনা করেন, আমি ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর দোকানে বসা ছিলাম । জনৈকা বৃদ্ধা রেশমী কাপড় বেচার জন্য এসেছিল। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) মূল্য জিজ্ঞেস করলে সে বলল, একশত দিরহাম। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বললেন, এ কাপড় এর চেয়েও মূল্যবান। সে বলল দুইশত দিরহাম। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বললেন, এর চেয়েও মূল্যবান । সে বলল তিনশত দিরহাম । ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বললেন, এর চেয়েও মূল্যবান ৷ সে বলল, চারশত দিরহাম। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বললেন, এখনও এর দাম কম। বৃদ্ধা বুঝল, ইমাম আবু হানিফা (রহ.) কৌতুক করছেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বললেন, তুমি এমন কাউকে ডেকে আন, যে এর সঠিক দাম বলবে, ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ঐ কাপড়টি পাঁচশত দিরহামে কিনে নিলেন।
এক ব্যক্তি দোকানে এসে কাপড় কিনতে চাইল। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) কর্মচারীকে বললেন, কাপড় বের করে দেখাও। সে থান বের করল এবং তার উপর হাত রেখে বলল-ছাল্লাল্লাহু আলা মুহাম্মাদ। এটা শুনে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বড়ই রাগান্বিত হলেন এবং কর্মচারীকে বললেন, তুমি আমার কাপড়ের প্রশংসা দরূদ শরীফ দ্বারা করছ? আজ বেচা-কেনা করব না। পরে তাই করলেন।