অভিশাপ দিলে কি হয়, অভিশাপ দেওয়া কি জায়েজ?


অভিশাপ দেয়া ও কাফের বলা

অভিশাপের বর্ণনাঃ সহীহ বুখারী ও মুসলিমের এক রেওয়ায়েতে, আল্লাহর নবী (সাঃ) ফরমায়েছেন- “মুসলমানকে অভিশাপ দেয়া তাকে হত্যা করার ন্যায়।

ফায়েদাঃ কবীরা গোনাহ সমূহের মধ্যে হত্যা একটি জঘন্যতম গোনাহ। অতএব রাসূল (সাঃ) কর্তৃক অভিশাপকে হত্যা তুল্য আখ্যায়িত করার দ্বারা এর জঘন্যতাও প্রমাণিত হলো ।

ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর হাবীব (সাঃ) ফরমায়েছেন- “কোন মুমিন অভিশাপকারী হতে পারে না।” অর্থাৎ অভিশাপ ঈমানের পরিপন্থী

ইমাম তিরমিযী ও আবু দাউদ (রঃ) অন্য এক হাদীসে বর্ণনা করেছেন। যে, বাতাসে এক ব্যক্তির চাদর উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। সে তখন বাতাসকে অভিশাপ করলো আল্লাহর হাবীব (সাঃ) ফরমালেন- “বাতাসকে অভিশাপ করোনা, উহা আল্লাহর নির্দেশে চলে থাকে। নিঃসন্দেহে অভিশাপযোগ্য নয় এমন বস্তুকে কেউ অভিশাপ করলে তা উল্টা তার উপর পতিত হয়।”

ইমাম আবু দাউদ (রঃ) বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর হাবীব (সাঃ) ফরমায়েছেন- মানুষ যখন কাউকে লা'নত করে তা আসমানের দিকে উঠতে থাকে । তখন আসমানের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। অতঃপর তা নিচে অবতরণ করে যাকে লা'নত করে তার দিকে যায়। যদি লা'নত যোগ্য হয় তাহলে তার উপর পতিত হয়। আর সে লা'নত উপযোগী না হলে উল্টা তার নিজের উপর পতিত হয়।

মাসআলা : যার মৃত্যু নিশ্চিতরূপে কুফরী অবস্থায় হওয়া প্রমাণিত তার উপর লা'নত করা জায়েয। যেমন ফেরাউন, আবু জাহল প্রভৃতি। জীবিত কাফের কেও লা'নত করা জায়েয নয়। কেননা মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণের সময় বাকী থাকে। যদি সে কখনো ইসলাম গ্রহণ করে তখন আর লা'নত যোগ্য থাকবে না। আর লা'নত তখন তার উপরেই পতিত হবে ।

মাসআলা : ব্যক্তির নাম উল্লেখ না করে কোন বিশেষণ বা গুণবাচক শব্দ উল্লেখ করে লা'নত করা জায়েয। যেমন কেউ বললো, কাফেরদের উপর লা'নত বর্ষিত হোক। বা ইয়াহুদীদের উপর বা চোরের উপর আল্লাহর লা'নত হোক ইত্যাদি। হাদীসের মধ্যে এ জাতীয় লা'নতের কথা উল্লেখ আছে ।

মোটকথা হলো নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম উল্লেখ না করে এ ধরনের অভিশাপ দেয়া জায়েয। আর নির্দিষ্ট কাফের বা ইয়াহুদী বা চোরকে অভিশাপ দেয়া নাজায়েয।

কাফের বলার বর্ণনাঃ
সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ফরমায়েছেন যদি কেউ কাউকে ফাসেক বা কাফের বলে। আর সে এমনটি না হয় তাহলে তা উল্টা তার উপরই বর্তায়। অন্য এক হাদীসে রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি কাউকে কাফের বা আল্লাহর দুশমন আখ্যায়িত করে আর সে তেমনটি না হয়। তাহলে তা তার নিজের উপর আরোপিত হয়। (বুখারী ও মুসলিম)

ফায়েদা : উল্টা তার নিজের উপর বর্তানোর অর্থ হলো যদি কোন নেককার কে ফাসেক বলে, তাহলে প্রকৃতপক্ষে সে-ই ফাসেক হয়ে যায়। এবং চরম গোনাহগার হয়। আর যদি কোন মুসলমানকে কাফের বলে অর্থাৎ তার কোন ইসলামী আকীদাকে সে কুফর জানে তাহলেও সে বাস্তব অর্থে কাফের হয়ে যায়। তবে যদি আকীদাগতভাবে কাফের না বলে। বরং
রাগবশতঃ বলে থাকে, তাহলে সে প্রকৃত কাফের হবে না। তবে চরম গোনাহগার হবে যা কুফরীর নিকটবর্তী।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url