এই পৃথিবীতে রয়েছে অসংখ্য জাতি, গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়। তাদের সকলেরই রয়েছে নিজস্ব ধর্ম, মতবাদ, দর্শন ও জীবন বিধান। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম ও মতাদর্শ হলো ইসলাম। একমাত্র মনোনীত জাতিই হলো মুসলমান। অন্য কোন ধর্ম বা অন্য কোন জাতি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তবে শুধুমাত্র নাম সর্বস্ব মুসলমান হলেই আল্লাহর প্রিয়ভাজন হওয়া যাবেনা। বরং সকল বিষয়ে ইসলাম নির্দেশিত ও অনুমোদিত সহীহ আকীদা পোষণ করতে হবে। সকল বাতিল ও প্রান্ত আকীদা বিশ্বাস থেকে বেঁচে থাকতে হবে। কেননা ইসলামে আকীদা বিশ্বাস সহীহ ও বিশুদ্ধ রাখার ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যাদের আকীদা বিশ্বাস সহীহ তারাই হকপন্থি। পক্ষান্তরে যাদের আকীদা বিশ্বাস সঠিক নয় তারা বাতিল বা ভ্রান্ত সম্প্রদায়। কুরআন হাদীসের ভাষ্য মতে একমাত্র হকপন্থিরাই জান্নাতী। এর বিপরীতে যারা বাতিলপন্থি তারা জাহান্নামী।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হকপন্থি ও বাতিলপন্থিদের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন ইয়াহুদীরা একাত্তর বা বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল। এমনিভাবে নাসারা তথা খৃষ্টানরাও । আর আমার উম্মত বিভক্ত হবে তিহাত্তর দলে । এই তিহাত্তর দলের মধ্যে মাত্র একটি দল ছাড়া অন্য সকল দল জাহান্নামে যাবে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন সেই দলটি কারা? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন “তারা হলো ঐ দল যারা আমার এবং আমার সাহাবাদের মত ও পথের অনুসারী হবে”।
এই হাদীসে হকপন্থি তথা নাজাতপ্রাপ্ত জান্নাতী দলের পরিচয় দেয়া হয়েছে যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাহাবীদের মত ও পথের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। পরিভাষায় এদেরকে বলা হয় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত, এরাই হলো হকপন্থি।
সুতরাং হকপন্থি ও জান্নাতী দলের অন্তর্ভুক্ত হওয়া এবং থাকার জন্য ইসলামের সহীহ আকীদা বিশ্বাস সম্পর্কে যেমন অবগতি লাভ করা এবং সে গুলোর অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরী ঠিক তেমনি বাতিল সম্প্রদায়ের বাতিল ও প্রান্ত আকীদা সম্পর্কে অবগতি লাভ করে তা থেকে বিরত থাকাও একান্ত জরুরী।
নিম্নে আমাদের দেশের বেশ কিছু ভ্রান্ত সম্প্রদায়ের বহুল প্রচলিত মারাত্মক ও জঘন্যতম কিছু বাতিল ও প্রান্ত আকীদা একত্রে তুলে ধরা হলোঃ
১. আল্লাহর ফেরেস্তাগন ঐসব মাখলুকের মতো যাদেরকে গ্রীক, ভারত ও অন্যান্য অঞ্চলের মুশরিকরা দেব-দেবী স্থির করেছে -এমন ধারনা পোষণ করা।
২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ নবী হিসেবে অস্বীকার করা। অর্থাৎ খতমে নবুয়াতকে অস্বীকার করা।
৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলিমুল গায়েব তথা তিনি অদৃশ্যের খবর জানেন, অদৃশ্যের জ্ঞান তাঁর আছে -এমন বিশ্বাস করা।
৪. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাজির-নাজির জানা। কথার আকীদা
৫. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূরের তৈরী -এমন রাখা।
৬. রাসূলের সাহাবাগণ সত্যের মাপকাঠি নন -এমন মত পোষণ করা।
৭. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণ মানুষের মতই একজন মানুষ। তিনি মানবীয় দুর্বলতা থেকে মুক্ত নন অর্থ্যাৎ তার থেকেও ভুল ভ্রাপ্তি প্রকাশ পেতে পারে। -এমন আকীদা রাখা।
৮. বর্তমানে জিহাদের হুকুম রহিত হয়েগেছে। এখন জিহাদ করা সম্পূর্ন হারাম -এমন কথা বিশ্বাস করা বা সমর্থন করা।
৯. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর যে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছিল সেই কুরআন বর্তমান কুরআন নয় বরং এতে যথেষ্ট পরিবর্তন পরিবর্ধন সাধিত হয়েছে -এমন মনে করা।
১০. তাকীয়াহ অর্থ্যাৎ ছোট বড় যে কোন সমস্যার মুকাবিলায় অথবা যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অন্তরে সত্য লুকিয়ে রেখে মুখে মিথ্যা কথা বলাকে জায়েয মনে করা।
১১. পরকালে নাজাত বা মুক্তি পাওয়ার জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা জরুরী নয় বরং যে কোন ধর্মের লোকই নিজ নিজ ধর্ম মতে সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের চেষ্টা করলেই যথেষ্ট হয়ে যাবে -এমন ধারনা করা।
১২. “সিজদায়ে তাহিয়্যাহ” তথা সম্মান প্রদর্শনের জন্য পীর বা অন্য কোন সম্মানিত ব্যক্তিকে সিজদা করা জায়েজ আছে- এমন কথা বিশ্বাস রাখা।
১৩. পীর ধরা বা পীরের অসীলা গ্রহন করা ফরজ মনে করা।
১৪. পীরের হাতে বাইআত না হলে কোন ইবাদত বন্দেগী কবুল হয়না এমন আকীদা রাখা।
১৫. কোন পীর তাওয়াজ্জুহ বা বিশেষ দৃষ্টির মাধ্যমে মুরীদের মধ্যে পরিবর্তন এনে দিতে পারেন-এমন ধারণা করা।
১৬, পীর সাহেব কারো প্রতি তাওয়াজ্জুহ দিয়ে দিলের ময়লা-আবর্জনা আগুনের মত জ্বালিয়ে পুড়িয়ে অন্তরকে পরিস্কার করে দিতে পারেন -এমন ধারণা পোষণ করা।
১৭. নিঃসন্তানকে সন্তান দেয়া, ব্যবসা বানিজ্যে উন্নতি, মনের আশা পুরণ এবং ভালো-মন্দের ক্ষমতা পীর সাহেবের আছে -এমন বিশ্বাস করা।
১৮. কোন ব্যাক্তি পীরকে পেয়েছে তো সে জান্নাতী হয়ে গেছে -এমন ধারণা করা।
১৯. কোন পীরের মতানুযায়ী সামা তথা নাচ-গান করা, বাদ্যযন্ত্র বাজানো, তালি বাজানো ইত্যাদি জায়েজ মনে করা।
২০. ওরস পালনকে শরয়ী কাজ মনে করা এবং এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা।
২১. প্রতি বছর ওরসের আয়োজন করা। কোন বছর পরিত্যাগ করলে পরবর্তী এক বছর চরম দূর্ভোগের শিকার হবে এবং আয় উন্নতির সকল পথ বন্ধ হয়ে যাবে -এমন ধারণা করা।
২২. মাজারে গিলাফ পরানো, ফুল দেয়া, আগরবাতি-মোমবাতী প্রজ্জ্বলন করা, গোলাপজল ছিটানো ইত্যাদি কাজকে জায়েজ মনে করা।
২৩. কবরের মাটি নরম, ভেজা স্যাতসেতে হয় বা কবরে পানি থাকলে বিছানা বা খাট বিছিয়ে দেয়াকে জায়েজ মনে করা।
২৪. পীর সাহেব বা নেককারদের কবরে খাট বিছানোকে দোষণীয় মনে না করা বা বৈধ মনে করা।
২৫. মরনের পর রুহ বা আত্মার নির্দিষ্ট দিনে এসে ঘোরা-ফেরা করা এবং সেই রুহকে ছওয়াব বখশে না দিলে সেই রুহ অভিশাপ দেয় -এমন মনে করা।
২৬. কোন পীর সাহেব পরকালে তার মুরীদদের মুক্তির ব্যবস্থা করে দিবে -এমন আকীদা রাখা।
২৭. পীর সাহেব মুরীদকে এমনকি মুরীদের আত্মীয়-স্বজনকেও দুনিয়ার যাবতীয় বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করবে -এমন বিশ্বাস রাখা।
২৮. কোন ব্যাক্তি যখন মাকামে ছুদুর বা নাশোর ইত্যাদি স্তর পেরিয়ে মাকামে নফসীতে গিয়ে পৌঁছে অথবা জযবার অবস্থায় কেউ ফানা ফিল্লাহর প্রান্তসীমায় পৌঁছে যায় তখন আর তার আর কোন ইবাদত করতে হয় না - এমন আকীদা রাখা।
২৯. পুনর্জন্ম বা জন্মান্তর্বাদে বিশ্বাসী হওয়া।
৩০. কোন পীরকে আল্লাহ তায়ালা নূরে মোহাম্মদীর ধারক বাহক বানিয়ে প্রেরণ করছেন এমন ধারনা রাখা।
৩১. বড় পীর আ. কাদের জিলানী রহ. এর অনুমতিক্রমে চন্দ্র, সূর্য উদিত হয় ও অস্ত যায়- এমন আকীদা পোষণ করা। ৩২. পীর সাহেব মৃত্যু যন্ত্রনা দূরীভূত করবে বা কবরে হাশরে শাফা'আতের ব্যবস্থা করবে -এমন বিশ্বাস করা।
৩৩. ইবাদতের বিশেষ পর্যায়ে পৌঁছলে শরীয়তের বিধান শিথিল হয়ে যায় এমন মনে করা।
৩৪. শরীয়ত এবং মারেফাত ভিন্ন ভিন্ন মনে করা অর্থ্যাৎ শরীয়ত হলো জাহেরী বিধি-বিধান এবং মারেফাত হলো বাহিনী বিধি বিধান। শরীয়তে যা নাজায়েজ তা মারেফাতে জায়েজ এমন মনে করা।
৩৫. কুরআনুল কারিম মোট ৪০ পারা। জাহেরী ৩০ পারা এবং বাতেনী ১০ পারা। যা বাতেনী পীর-ফকীরের সিনায় সিনায় সংরক্ষিত হয়ে আসছে -এমন কথার বিশ্বাস করা।
৩৬. অন্তর ঠিক তো সব কিছুই ঠিক, সুতরাং নামাজ ইত্যাদি ইবাদত না করলেও ক্ষতি নাই -এমন বিশ্বাস করা।
৩৭. জাহেরী নামাজ না পড়ে বাতেনী পড়লেও চলবে এমন ধারনা পোষণ করা।
৩৮. পীরের মধ্যে যখন আল্লাহর সত্ত্বার বহিঃ প্রকাশ ঘটে তখন পীর আল্লাহর প্রকাশ বা অবতার হয়ে যায় এমন বিশ্বাস করা।
৩৯. কোন কোন পীরের মতানুযায়ী জীবরাইল (আ.) এবং আল্লাহ তায়ালা-কে এক ও অভিন্ন সত্ত্বা মনে করা।
৪০. স্মৃতি সংরক্ষণের নামে অথবা ভাস্কর্য স্থাপনের নামে মুর্তি প্রতিস্থাপন করাকে জায়েজ মনে করা..ইত্যাদি।
উপরোক্ত বিষয়গুলোর কোন কোনটি এমন জঘন্য ও মারাত্মক ভ্রান্ত ও বাতিল। আকীদা যা কুফুরী পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। সুতরাং এ জাতীয় সকল ভ্রান্ত মতবাদ ও আকীদা থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য একান্ত জরুরী। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সকল প্রকার ভ্রান্ত মতবাদ ও বাতিল আকীদা থেকে রক্ষা করে সহীহ আকীদা পোষণ করার তৌফিক দান করুন। আমীন!
আকিদা,বাতিল