এক নজরে বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর মহান জীবন।


তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসুল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তাঁর পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমীনদের প্রতি স্নেহশীল ও করুনাপরায়ণ।

-সূরা তাওবা-১২৮


তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতের উপর বিশ্বাস রাখে এবং যারা আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।

-সূরা আহযাব-২১


নিশ্চয়ই ( হে মুহাম্মদ) আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।

-সূরা কলম-৪


বিশ্বনবী, শেষ নবী, নবীদের সর্দার, মাকামে মাহমুদ ওয়াসিলাহ ও ফযীলাহ এর অধিকারী এবং সর্বোত্তম মানব রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জানা প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর জন্য আবশ্যক। তাই বিভিন্ন সীরাত গ্রন্থ থেকে বাছাই করে সংক্ষেপে প্রিয় নবীর জীবনের কিছু বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হল।


জন্ম:

নবী কুলের সর্দার মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. আসহাবে ফীলের বছর অর্থাৎ ৫৭০ খৃষ্টাব্দের ১২ ই রবিউল আউয়াল (প্রসিদ্ধ বর্ণনা মতে) সোমবার সুবহে সাদিকের সময় জন্ম গ্রহণ করেন।


বংশ:

মক্কার সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে জন্ম গ্রহণ করেন।


পরিচয়:

রাসুল সা.-এর সম্মানিত পিতার নাম আব্দুল্লাহ। মাতার নাম আমিনা। এবং দাদার নাম আব্দুল মুত্তালিব বিন হাশেম এবং নানার নাম ওহাব বিন আবদে মানাফ।


প্রতিপালন:

জন্মের পূর্বেই মুহাম্মদ সা. পিতাকে হারিয়ে এতিম হন। ৬ বছর বয়সে মা আমেনা এবং ৮ বছর বয়সে দাদা আব্দুল মুত্তালেব এর মৃত্যুর পর এতিম মুহাম্মদ সা. এর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন চাচা আবু তালেব।


বক্ষবিদারণ:

রাসূল সা. -এর পবিত্র বক্ষ মোবারক মোট চার বার বিদীর্ণ করা হয়।। প্রথম বার তিন বছর বয়সে দুধভাই আব্দুল্লাহর সাথে চারণভূমিতে থাকাবস্থায়। দ্বিতীয় বার দশ বছর বয়সে মরুভূমিতে থাকাবস্থায়, তৃতীয় বার রমজান মাসে নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে হেরা গুহায় অবস্থান কালে এবং চতুর্থ বার মিরাজের রাতে হ্যাতিমে কাবায় তাশরীফ গ্রহণের পর।


ব্যবসায়িক সফর:

রাসূল সা. এর বয়স যখন নয় তখন তিনি তার চাচার সাথে। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ১ম বার সিরিয়া সফর করেন। ২য় বার ২৩ বা ২৪ বছর বয়সে খাদীজা রা. এর গোলাম মাইসারাহ এর সাথে সিরিয়া গমণ করেন।


বিবাহ:

হযরত মুহাম্মদ সা. পঁচিশ বছর বয়সে চল্লিশ বছর (প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী। | কোন কোন বর্ণনা মতে হযরত খাদীজার বয়স ছিল ২৮ বছর) বয়সী হযরত খাদিজা । বিনতে খুওয়াইলিদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। খাদিজা রা. এর সাথে মহানবী সা. নবুওয়াত পূর্ব দীর্ঘ পনেরো বছরসহ মোট পঁচিশ বছর দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করেন। তাঁর জীবদ্দশায় তিনি আর কোন বিবাহ করেননি। তাঁর ইন্তেকালের পর তিনি অন্যান্য | বিবাহ করেন।


স্ত্রীগণ:

রাসুলুল্লাহ সা. এর ১১ জন স্ত্রী ছিলেন। তাদের মধ্যে রাসুলুল্লাহ সা. এর জীবদ্দশায় দুইজন (হযরত খাদিজা রা. এবং যইনব বিনতে খুযাইমা রা.) ইন্তেকাল করেন। বাকী নয় জন রাসুলুল্লাহ সা. এর ওফাতের সময় জীবিত ছিলেন।

তারা হলেন-
(১) হযরত আয়েশা রা.
(২) হযরত হাফসা রা.
(৩) হযরত উম্মে সালামা রা.
(৪) হযরত যয়নব বিনতে জাহশ রা.
(৫) হযরত জুওয়াইরিয়া রা.
(৬) হযরত উম্মে হাবিবা রা.
(৭) হযরত সাওদা বিনতে যামা'আ রা.
(৮) হযরত সাফিয়া রা.
(৯) হযরত মাইমুনা রা.


নবুওয়াত লাভ:

রাসুলুল্লাহ সা. এর বয়স যখন ৪০ বছর পূর্ণ হয় তখন তাঁকে নবুওয়াত প্রদান করা হয় এবং গারে হেরায় অবস্থান কালে তাঁর প্রতি সর্বপ্রথম ওহী নাযিল করা হয়।


ইসলামের দাওয়াত:

নবুওয়াত প্রাপ্তির পর রাসূল সা. প্রথম তিন বছর গোপনে ইসলাম প্রচার করেন। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাঁকে প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের নির্দেশ দেন। তখন থেকে তিনি প্রকাশ্যভাবে ইসলামের দাওয়াত প্রদান করেন।


তায়িফ সফর:

নবুওয়াতের দশম বছর শাওয়ালের ২৬/২৭ তারিখে যায়েদ ইবনে হারিছা রা. কে সাথে নিয়ে রাসুল সা. দ্বীনের দাওয়াত দিতে তায়িফ গমণ করেন ।


মি'রাজ:

রাসুল সা. এর বয়স যখন ৫১ বছর নয় মাস তখন তাঁকে সশরীরে মর্যাদাপূর্ণ ইসরা ও মি'রাজ ভ্রমণের মাধ্যমে সম্মানিত করা হয়। মি'রাজে রাসুল সা. প্রথমে কা'বা থেকে বাইতুল মুকাদ্দাসে যান। অতঃপর সেখান থেকে এক এক করে সাত আসমান অতিক্রম করে মহান আল্লাহর নিকটে তাশরীফ গ্রহণ করেন। এ মি'রাজ সফরে রাসূল সা. পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের বিধান লাভ করেন। মি'রাজে গিয়ে রাসূল সা. জান্নাত এবং জাহান্নাম স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেন।


মদিনায় হিজরত:

৪ঠা রবিউল আউয়াল সোমবার রাসূল সা. হযরত আবু বকর রা. সহ মক্কা থেকে হিজরত শুরু করেন এবং লোকালয়ে পেরিয়ে ছাওর গুহায় অবস্থান গ্রহণ করেন। অতঃপর তাদের সাথে আমের ইবনে ফুহাইরা এবং আব্দুল্লাহ ইবনে উরাইকিতকে নিয়ে মদিনায় হিজরত করেন।


জিহাদে অংশগ্রহণ:

রাসূল সা. স্বীয় জীবনে সর্বমোট তেইশটি জিহাদে অংশগ্রহণ করেন । এ সকল জিহাদকে “গাযওয়া” বলা হয়। তন্মধ্যে মোট নয়টিতে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। যথা- (১) গাযওয়ায়ে বদর।

(২) গাযওয়ায়ে উহুদ।

(৩) গাযওয়ায়ে আহযাব।

(৪) গাযওয়ায়ে বনী কুরাইযা।

(৫) গাযওয়ায়ে বনী মুস্তালিক।

(৬) গাযওয়ায়ে খাইবার।

(৭) গাযওয়ায়ে আওতাস।

(৮) গাযওয়ায়ে হুনাইন।

(৯) গাযওয়ায়ে তায়িফ।

আর রাসূল সা. নিজে সশরীরে অংশগ্রহণ না করে অপর কাউকে সিপাহসালার নিযুক্ত করে সাহাবায়ে কেরামের জামাআতকে যে অভিযানে প্রেরণ করেছেন তাকে “সারিয়্যা” বলে। এ ধরণের জিহাদের সংখ্যা ৪৩ টি।


ওফাত:

রাসূল সা. ৬৩ বছর বয়সে ১১ হিজরীর ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার দুপুরের পর রফীকে আ'লা মহান আল্লাহ তায়ালার ডাকে সাড়া দিয়ে ইহধাম ত্যাগ করে পরপারে গমণ করেন। অতঃপর খলীফা নির্বাচনের কাজ সমাধা করে ১৪ই রবিউল আওয়াল রাতে হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা. এর গৃহে রাসূল সা. কে সমাহিত করা হয়।


সন্তানাদিঃ

পুত্র সন্তানগণ :

১. আল কাসিম রা. : তিনি খাদিজা রা. এর গর্ভে জন্ম লাভ করেন এবং বাল্যকালেই মৃত্যু বরণ করেন। তিনি ছিলেন সর্বপ্রথম সন্তান। এ কারণেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আবুল কাসেম বলে ডাকা হতো।
২. আব্দুল্লাহ (তাইয়্যিব ও তাহির রা.) তিনিও খাদিজা রা. এর গর্ভে জন্ম লাভ করেন এবং বাল্যকালেই মৃত্যু বরণ করেন ।
৩. ইব্রাহীম রা. : তিনি মারিয়া কিবতিয়া রা. এর গর্ভে জন্ম লাভ করেন এবং বাল্যকালে মৃত্যুবরণ করেন।


কন্যা সন্তানগণ :

৪. যয়নব রা. তিনি আবুল আছ রা. এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
৫. ব্রুকাইয়া রা. -তিনি উসমান রা. এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
৬. উম্মে কুলছুম রা. তিনিও উসমান রা. এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
৭. ফাতিমা রা. -তিনি আলী রা. এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।


নাতি-নাতনিগণ :

যয়নব রা. এর গর্ভে : ১. আলী রা. ২. উমামা রা.
রুকাইয়া রা. এর গর্ভে : ৩. আব্দুল্লাহ ইবনে উসমান রা.
উম্ম কুলছুম রা. এর গর্ভে কোন সন্তান নেই।
ফাতিমা রা. এর গর্তে ৪. হাসান রা. ৫. হুসাইন রা.

(মহানবী সা. এর পবিত্র জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আমাদেরকে সীরাত গ্রন্থাবলী অধ্যয়ন করতে হবে।)

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url