হযরত আলী রাঃ এর মৃত্যুর ঘটনা ও মহানুভবতা।


আশারাহ্ মুবাশশারাহ্


হযরত আলীর শাহাদত ও মহানুভবতা

১৯ রমযান, ৪০ হিজরী সন। সুবহে সাদিকের সময় খলীফা হযরত আলী (রা) কৃষ্ণার মসজিদে আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশে আগমন করেন। আবদুর রহমান ইবনে মুলজাম মসজিদে উপুড় হয়ে শায়িত ছিল। খলীফা তাঁকে জাগালেন এবং বললেন যে, উপুড় হয়ে শোয়া অস্বাস্থ্যকর। কারণ তাতে শ্বাস-প্রশ্বাসের বিঘ্ন ঘটে। অতঃপর খলীফা তাঁর জামার মধ্যে লুকানো তরবারিটির দিকে ইঙ্গিত করে জানতে চাইলেন যে, তার কোন অসৎ উদ্দেশ্য আছে কি-না যে জন্যে তরবারিটি লুকিয়ে রাখা হয়েছে।

যথাসময়ে নামায শুরু হল। খলীফা রুকুতে থাকাকালে আবদুর রহমান ইবনে মুলজামের সুতীক্ষ্ণ তরবারি খলীফার মস্তকে আপতিত হল। তিনি মারাত্মকভাবে আহত হলেন। লোকজন নামায ছেড়ে আবদুর রহমানের পিছু ছুটল। খলীফা রুধিরসিক্ত কলেবরে সালাত সমাধা করে মুনাজাত করলেন, “হে আল্লাহ্, আমাকে শাহাদত দানের জন্যে আমি তোমার শুকরগুজারী করছি। তুমি কত দয়ালু ! কত মহান!! তোমার করুণা যেন আমাকে তোমার মহিমা এবং শান্তির রাজ্যে নিয়ে যায়।

মুগিরাহ ইবনে নাওফেল আবদুর রহমান ইবনে মুলজামকে বন্দি করেন। তাঁকে খলীফার সামনে নিয়ে আসা হয়। তার দু'হাত পেছন দিকে শক্তভাবে রশির সাহায্যে বাঁধা ছিল। আহত খলীফা লক্ষ্য করেন রশিবন্ধনে আততায়ীর হাতের মাংস কেটে গেছে। নিজের শরীরের গভীর ব্যথা বিস্মৃত হয়ে তিনি আবদুর রহমানের ব্যথায় ব্যথিত হয়ে উঠলেন। তিনি ভুলে গেলেন যে, আবদুর রহমান তাঁর আততায়ী। তাকে তিনি দেখলেন ঘাতক হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে। উপস্থিত জনতাকে বললেন, “আবদুর রহমানের হাতের বন্ধন হালকা করে দাও। মানুষের সঙ্গে আরো কোমল ব্যবহার কর।

সেদিন মৃত্যুপথযাত্রী খলীফার মহানুভবতা, সহৃদয়তা এবং দুশমনের প্রতি দরদ, নিষ্ঠুর আবদুর রহমানেরও মর্ম স্পর্শ করে। অনুতপ্ত আততায়ী ব্যাকুলভাবে কাঁদতে থাকে। আবদুর রহমানের হৃদয়গ্রাহী করুণ বিলাপ এবং অনুতাপ লক্ষ্য করে আহত খলীফার মুখে স্মিত হাসির আভা ফুটে ওঠে। অনুতপ্ত আততায়ীকে স্নেনসিক্ত কণ্ঠে ভৎর্সনা করে খলীফা বলেন, “বড় বিলম্বে অনুতাপ করছ, ভাই! তুমি তোমার কাজ সমাধা করেছ। আমি কি অযোগ্য ইমাম বা কঠোর হৃদয় শাসক ছিলাম?

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url