নারীর অধঃপতনের কারণ ও উত্তরণের উপায়।


মহান রাব্বুল আলামীন পৃথিবীতে হাজার শ্রেণীর জাতি সৃষ্টি করেছেন । যার একটি মানব জাতি, আর এ মানব জাতির মাঝে আছে শ্রেণীগত ভিন্নতা তথা পুরুষ ও মহিলা।

প্রত্যেক বস্তু সৃষ্টির কোন না কোন উদ্দেশ্য আছে । আবার আছে ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য। তদ্রুপ নারী এবং পুরুষ এ দু' জাতিকেও তিনি দু' ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে সৃষ্টি করেছেন । এবং প্রত্যেকের জীবন নির্বাহের সীমা পরিসীমাও ভিন্নভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন । এর প্রেক্ষিতে বলা যায় নারী ভিন্ন সত্তা । ভিন্ন তার কর্ম ক্ষেত্র ভিন্ন তার জীবন ব্যবস্থা এমনকি তার কিছু অধিকার ও ভিন্ন।

অধিকার,দায়িত্ব কর্তব্য ও জীবন ব্যবস্থার ভিন্নতার গতিধারায় অদ্যাবধি কাল পর্যন্ত নারী তার জীবন নির্বাহে ভালই চলছিল।

তবে বর্তমানে আক্ষেপ করে বলতে হচ্ছে: দুঃখজনক হলেও সত্য যে নারীজাতি আজ অধঃপতনের চুড়ান্ত সীমায় এসে উপস্থিত। সর্বনাশী ধ্বংসের মুখে নিপতিত।

অত্যাচার নিপিড়ন ও অপমানের চরম আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত !

প্রশ্ন জাগে মনে! কী এর কারণ?


অধঃপতনের পিছনে মৌলিক কিছু কারণ

নারীর এই অধঃপতনের মূলে তার কিছু কারণ রয়েছে।


১. দ্বীনী জ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞতা

ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা, দ্বীনী শিক্ষা থেকে দূরে থাকা এবং রাসুল (স.) এর আদর্শপথ থেকে বিচ্যুত হওয়াই তাদের অধঃপতনের অন্যতম কারণ।
আমাদের দেশে মুসলমান সংখ্যায় অধিক হলেও ইংরেজী শিক্ষার প্রতি আমাদের পক্ষপাতিত্ব খুব বেশী। এর বিপরীতে ধর্মীয় শিক্ষাকে আমরা চরম অবহেলা করে চলছি!
এই জন্যে আমরা ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বহু দূরে । পিছিয়ে আছি দ্বীনী জ্ঞান থেকে । আমাদের সমাজে উচিত বাংলা ইংরেজীর পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া!


২. স্বাধীনচেতা মনোভাব

বর্তমানে সমাজে নারী জাতি স্বাধীনতার শ্লোগান নিয়ে পথে নেমে পড়েছে, তাদের দাবী- যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার অধিকার চাই। নারী ও পুরুষের সম অধিকার চাই!
অথচ তারা আদৌ জানেনা! কোন মুসলমান স্বাধীন নয়। জীবনের সর্বক্ষেত্রে রয়েছে ধর্মীয় কড়া অনুশাসন। তার হাত,পা,মন- মস্তিষ্ক সব ধর্মীয় বিধি বিধানের শিকলে বন্দী। রাসুল (সঃ) ইরশাদ করেন দুনিয়া কাফেরদের জন্য জান্নাত আর মুমীনদের জন্য কারাগার। ফলে তাদের এ স্বাধীনতা কামনা তাদের কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে, কোথায় হবে তাদের ঠিকানা? তারা তা জানেনা।


৩. বিজাতীয় অনুকরণ

নারীরা আজ খুব করে বিজাতীয়দের কৃষ্টি কালচার অনুসরণ করছে। অনুসরণ করছে তাদের চাল চলন । তাদের ফ্যাশন বিচিত্রা! তার পরিক্রমায় সমাজে ধ্বংসাত্মক নগ্নতা ও অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ছে । বেড়েই চলছে দুঃজনক ঘটনাবলী! এভাবেই পৃথীবি ক্রমশ: এগিয়ে চলছে এক ধ্বংসের ভয়াবহ পরিণতির দিকে!


৪. নির্লজ্জতা

আমাদের সমাজে এটিই সর্বাধিক লক্ষনীয় একটি ব্যাধি। লজ্জাশীলতার গুণ নারী থেকে বিদায় নিচ্ছে প্রতিনিয়ত। অথচ রাসুল (সা.) বলেছেন।


الحياء شعبة من الايمان . (البخاری)
অর্থাৎ লজ্জাশীলতা ঈমানের অঙ্গ।


রাসুল (সা.) আরও বলেছেন- লজ্জা ঈমান ও বিশ্বাসের অন্তর্গত । ঈমান বেহেশতে অবস্থিত এবং অশ্লীলতা মন্দের অনুগত আর মন্দ দোযখে অবস্থিত।
-তিরমিযী

রাসুল (সা.) আরও বলেছেন-
প্রত্যেক ধর্মের কতগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ইসলাম ধর্মের বৈশিষ্ট্য হলো লজ্জাশীলতা।
-ইবনে মাযাহ

রাসুল (সা.) এর বাণী থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, লজ্জাশীলতার গুণ অর্জন আবশ্যক! আর লজ্জাহীনতা অসৎ কাজের প্রতি ঠেলে নিয়ে যায় । বেহায়াপনার জীবনে অভ্যস্ত করে তুলে ।
বর্তমানে নির্লজ্জতা ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের জীবনে । তা সমাজকে অবনতির চরম পর্যায়ে পৌছে দিচ্ছে। যার কারণে নারী তার সবকিছুকে অশালীন কামনার কাছে বলি দিচ্ছে! নিঃশেষ করছে স্বকীয়তা!


৫. পর্দার ব্যাপারে উদাসীনতা

আল্লাহ তায়ালা বলেন-


وقرن في بيوتكن ولا تبرجن تبرج الجاهلية الأولى"
তোমরা ঘরের অভ্যন্তরে অবস্থান করবে এবং জাহেলী যুগের অনুরুপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবেনা।

-সূরা আহযাব: ৩৩


এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা সরাসরি নবী পত্মীগনকে আর পরোক্ষভাবে সম্মোধন করেছেন সমস্ত মুসলমান নারীকে । আয়াতের মর্মার্থ হলো: ঘরের ভিতর অবস্থান করা, জনসম্মুখে নিজেকে প্রদর্শন না করা। এতে বুঝা যায়, নারীদের ঘরে থাকা উচিৎ! সমাজে নারীদের এ পর্দাহীনতার কারণেই আজ তারা প্রতিনিয়ত হারাচ্ছে তাদের সতিত্ব। নিষ্পেষিত হচ্ছে তারা বখাটেদের উত্যক্তের কারণে । এর মুলে শুধুই যেন পর্দাহীনতা!


অধঃপতনের ক্ষতি ও উত্তরণের উপায়

প্রথমত: নারী যে স্বাধীনতা চাইছে সে হয়তো ভেবেও দেখছেনা যে এর পরিণতি কি?
আসলে স্বাধীনতা কেবল শয়তানের ধোঁকা মাত্র। যা কখনই নারীকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দিতে পারে না, পারবেও না। বরং এ স্বাধীনতা হলো নারীকে ঘর থেকে বের করার উদ্দেশ্য মূলক ষড়যন্ত্র।
নারীরা আজ সমানাধিকারের নামে যে শ্লোগান তুলছে, রাস্তার অলিগলিতে সমানাধিকারের যে জোরালো আন্দোলনের দাবী তুলছে, বাস্তবিকই কি তা সমানাধিকার না সতীত্ব বিলিয়ে দেওয়া?
কি প্রয়োজন এই সমানাধিকারের? ইসলাম তো নারীদেরকে তার প্রাপ্য ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার দিয়েছেই। ইসলাম নারীকে দিয়েছে তার যোগ্য মর্যাদা ও যোগ্য অধিকার নামা।
সর্ব প্রারম্ভে ইসলাম কন্যা হত্যার প্রচেষ্টা বাতিল করে তাদের নিজস্বতার মর্যাদা দিয়েছে।
নারীকে ইসলাম মীরাসের অধিকার দিয়েছে। পুরুষ যেভাবে বাহিরের জগৎ এর কর্মকার। নারীও সেভাবে ঘরের আঙ্গিনার অধিকারপ্রাপ্ত। এতে নারী নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী।
ইসলাম ধর্মে নারীকে যে অধিকার দেয়া হয়েছে অন্য কোন ধর্মে নারীকে এতোটা মর্যাদা মন্ডিত করে অধিকার দেয়া হয়নি। তথাপিও কেন তার স্বাধীনতা প্রয়োজন? তারা যে স্বাধীনতার দাবী করছে তা তাকে ভোগের মাধ্যম বানিয়েছে। তার লুকানো সৌন্দর্য বিলীন করার পথ দেখাচ্ছে। তার সতীত্ব বিসর্জনের অন্যতম কারণ।


দ্বিতীয়ত: নারী আজ লজ্জাশীলতার গুণ দুপায়ে দলে লজ্জাহীনতা গ্রহণ করছে । অথচ এর পরিণাম খুবই ভয়াবহ, মর্মন্তুদ ।

লজ্জাহীনতা নারীকে যে কোন ধরনের অন্যায় করতে উদ্বুদ্ধ করে, যার ফলশ্রুতিতে নিত্যনৈমিত্তিক নারী নির্যাতনের শিকার। অবাধ কার্যকলাপের নির্লজ্জতার পরিনামে নারী তার অস্তিত্ব, তার সম্মান সবই ধ্বংস করছে।

তৃতীয়ত: নারী পর্দাকে আবদ্ধতা ভেবে পর্দাহীনতার যে বিষয় গ্রহণ করে নিয়েছে এর পরিণতি সম্পর্কে প্রত্যেকেই সম্যক অবগত।
পর্দাহীন অবস্থায় অবাধ চলাফেরার কারণে, অবাধ মেলামেশার কারণে যে ক্ষতি সমাজ প্রত্যক্ষ করছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
তথাপিও যদি বলতে হয় তবে বলব সমাজের ধর্ষন, ইভটিজিং, আত্মহত্যা, পরকীয়া, বিবাহ বিচ্ছেদ সব বিষয়ে পর্দাহীনতাই দায়ী । পর্দাহীনতাই নারীকে ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে দিচ্ছে।

পূর্বোক্ত অধঃপতনের দিক ছেড়ে নারীকে রক্ষা করার উপায় হলো:
ক) তার স্বাধীনতার মনোভাব ত্যাগ করা, নিজস্ব অধিকারে সন্তুষ্ট থাকা । ইসলাম তাকে যে মর্যাদার অধিকারী করেছে যে সম্মান দিয়েছে তা মেনে তার যথাযথ মর্যাদা দেয়া।
খ) বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণ, অনুসরন বর্জন করা।


রাসুল (সা.) এর হাদীস
من ذشبه بقوم فهو منهم ، ابن ماجه


এ হাদীসের আলোকে বিধর্মীদের রীতি-নীতি অনুসরণ মন থেকে ঝেড়ে ফেলে ইসলামী নিয়ম পদ্ধতিতে জীবন পরিচালনার জন্য ইসলামী রেওয়াজ অনুকরণ করা ও অপসংস্কৃতি বর্জন করা আবশ্যক। কারণ অমুসলিমদের অনুসরণের কারণে মুসলমানও অমুসলিমদের মধ্যে গণ্য হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
গ) পর্দা প্রথাকে নিজের জন্য আবশ্যক করে নেয়া। এটি শালীনতা ও ভদ্রতার পরিমার্জিত রুপ, মহান আল্লাহর হুকুম । পর্দা মানবকে অসামাজিক কার্যকলাপে বাধা দেয়। বহিরাকৃতি আবৃত থাকায় তার ক্ষতির সম্ভাবনা থাকেনা। আর পর্দার কারণে অনৈতিকতা থেকে দূরে থাকায় তার আত্মিক বিশুদ্ধি অর্জন হয়।
সব শেষে বলব, এ নীতিগুলোর বাস্তবায়নে নারী ফিরে পেতে পারে তার অধিকার সম্মান ও তার হারানো ঐতিহ্য। অধঃপতন থেকে মুক্তিকামী নারীদের উচিত অধঃপতনের কারণগুলো নিয়ে চিন্তা করা। এর ক্ষতিগুলো খতিয়ে দেখা এবং এর থেকে উত্তরণের মনোভাব রাখা এবং উত্তরণের নীতির বাস্তবায়ন করা। তবে নারী নির্যাতন রোধ হবে। নারীর ইজ্জত ভূলুণ্ঠিত হবেনা। নারী পাবে তার পাপ্য মর্যাদা। আল্লাহ কুবল করুন। আমীন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url