রোযা রাখা অবস্থায় ইঞ্জেকশন, স্যালাইন, ইনহেলার ব্যবহার প্রসঙ্গে মাসআলা।

মানুষ আশরাফুল মাখলুক সৃষ্টির সেরা । শ্রেষ্ঠত্ব তার মনুষত্বের কারণে। যদি মানবের থেকে তার মনুষ্যত্বকে বাদ দেয়া হয় তাহলে সে নিরেট একটি প্রাণী বা পশু। ক্ষেত্র বিশেষ সে পশুর চেয়েও অধম। কেননা মানুষ ও প্রাণীকুলের মাঝে একমাত্র বিভাজনকারী হলো তার মনুষ্যত্ব মানবতা। তাই স্রষ্টা তার আশরাফুল মাখলুকের তথা শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে সে সকল বিধান দিয়েছেন তার অন্যতম বিধান হলো সাওম বা রোযা। সাওম অর্থ বিরত রাখা যেহেতু রোযা মানুষকে তার কাম, ক্রোধ, লোভ-লালসা ইত্যকার প্রাণী সুলভ আচরণ থেকে বিরত রাখে তাই মনুষ্যত্ব আনয়নে মানবজীবনে রোযার গুরুত্ব অপরিসীম। রোযা মানুষকে মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে শিখায়, সাহায্যের হাত প্রসারিত করতে উদ্বুদ্ধ করে। মানুষের মাঝে গড়ে তোলে এক চারিত্রিক অবকাঠামো যার সুফল ভোগ করে মানুষ। এই সিয়াম বা রোযা সকল সময় সকল জাতি এবং সকল মানুষের জন্য অতিশয় জরুরী ছিল, আছে এবং থাকবে।


আল্লাহ তায়ালা বলেন:

তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পারো। (সূরা বাকারা) ইসলাম ধর্মের ভিত্তি সমূহের অন্যতম একটি হলো সিয়াম বা রোযা। সিয়াম বা রোযা বলা হয় সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রীসহবাস থেকে বিরত থাকা। ইসলামের অন্যান্য যেমন বিনষ্টকারী আমলের কারণে বিনষ্ট হয়, তেমনি সিয়াম বা রোযারও ইবাদত বিন্দু বিনষ্টকারী আমলের কারণে বিনষ্ট হয়ে যায়। বর্তমান যুগে আলোচিত একটি মাসআলা হলো “রোযা রাখা অবস্থায় ইঞ্জেকশন, স্যালাইন এবং ইনহেলার ইত্যাদি ব্যবহার করার কারণে রোযা বা সিয়াম নষ্ট হবে কিনা? উক্ত মাসআলার ব্যপারে ফুকাহায়ে কিরামগণের মাঝেও মতানৈক্য রয়েছে নিম্নে তাদের আলোচনা করা হলো।

প্রথমত: ইঞ্জেকশন এবং স্যালাইন প্রসঙ্গে : হযরত মুফতী শফী সাহেব বলেন, আমি নিজেই ডঃ এর সাথে পর্যালোচনা করে স্পষ্টভাবে এ কথা অবগত হয়েছি যে, ইঞ্জেকশন এবং স্যালাইন দ্বারা যে ঔষধ রক্ত নালীতে পৌঁছানো হয়, তা রক্তের সাথে মিশ্রিত হয়ে যাত তা মস্তিষ্কে বা পেটে পৌঁছেনা। আর রোযা নষ্টের জন্য মস্তিষ্ক বা পেটে পৌছা জরুরী। সাধারণত শরীরের কোন অংশে বা রগে কোন কিছু পৌঁছোনো দ্বারা রোযা ভঙ্গ হয় না। সুতরাং ইঞ্জেকশন বা স্যালাইন এর মাধ্যমে যে ঔষধ শরীরে পৌঁছানো হয় তা দ্বারা রোযা ভঙ্গ হবে না। বরং ক্ষুধা নিবারণ বা তৃষ্ণা নিবারণের জন্য হলে রোযা ভঙ্গ হবে।

দ্বিতীয়ত: ফুকাহায়ে কিরামগণের বহু মাসায়েল রয়েছে, যার মধ্যে এমন একটি রয়েছে যথা ঔষধ সাধারণত শরীরে তো পৌঁছে যায় কিন্তু যেহেতু মস্তিষ্কে বা পেটে পৌঁছেনা সেহেতু তাকে রোযা ভঙ্গ হওয়ার কারণ বলা যাবে না। যথা : পুরুষের লিঙ্গে ঔষধ বা তেল ইত্যাদি লাগানোর কারণে সর্বজন স্বীকৃত রোযা ভঙ্গ হবে না। ইমাম আবুবকর বলখী (রহ.) বলেন যদি ঔষধ বা মূত্রথলি পর্যন্ত পৌঁছে যায় তাহলে ও ইমামে আজম আবু হানিফা এবং ইমাম মুহাম্মাদ (রহ.) এর মাজহাব মতে রোযা ভঙ্গ হবে না। ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) এর মাজহাব মতে মুত্রথলিতে পৌঁছার কারণে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এর এ কারণ ও তিনি বলে দিয়েছেন, এই ভিত্তিতে যে, মুত্রথলি এবং পাকস্থলি এর পারস্পরিক ছিদ্র থাকে, যার কারণে ঔষধ পাকস্থলিতে পৌঁছে যায়।

অন্যথায় শুধুমাত্র বা মুত্রথলিতে পৌঁছার কারণে রোযা ভঙ্গ হবে না। মুদ্দা কথা এই এই ব্যপারে তাহকীকী হলো যে, রোযা অবস্থায় ইঞ্জেকশন বা স্যালাইন নেওয়ার কারণে রোযা ভঙ্গ হবে না। তবে যদি কোন সুস্থ ব্যাক্তি শারীরিক শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে গ্লুকোজ স্যালাইন বা ইঞ্জেকশন, এ জাতীয় অন্যকোন উপকরণ গ্রহণ করে তাহলে তা মাকরুহ হবে। কেননা ইহা সম্পূর্ণ রোযার উদ্দেশ্যের বিপরীত, তাই এমন কাজ থেকে বিরত থাকা আমাদের প্রত্যেকটি মুমিনের জন্য জরুরী।

তৃতীয়ত: ইনহেলার (INHALAR) ব্যবহার প্রসঙ্গ: 'INHALAR ইনহেলারের মাসআলা বর্তমান যুগে তার সার্বিক সমাধান জানা অতিব প্রয়োজন, নিম্নে সমাধান বর্ণনা করা হলো যে সকল 'INHALAR' এর মধ্যে মেডিসিনের অংশ অনুভব হয় সে সকল 'INHALAR' গ্রহণের কারণে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

আর যে সকল 'INHALAR এর মধ্যে মেডিসিন বাতাসের সাথে মিশ্রিত থাকে এবং তাতে শুধুমাত্র বাতাস বাকি থাকে। তাই এরূপ 'INHALAR ব্যবহারের কারণে রোযা ভঙ্গ হবে না।

তথ্যসুত্র : বদাইউস সানাই ২-২৪৩ হিন্দিয়া - খন্ড-১-২০৪ জাওআহিরুল ফি কাহ-৫-১৫৭ ইমদাদুল ফতোয়া-২-১৪৪ ফতোয়ায়ে দারুল উলুম-৬-৪০৮

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url