সম্পদের সুষম বণ্টনে হযরত আলী (রা.)


আশারাহ্ মুবাশশারাহ্


সম্পদের সুষম বণ্টনে হযরত আলী রাঃ

বায়তুল মালের সম্পদ বিতরণ করা হচ্ছে। খলীফা হযরত আলী (রা) দাঁড়িয়ে তদারক করছেন । দূরে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করছে বালক সুবি। পরবর্তীকালে এই বালক নামজাদা ইমামের সম্মান অর্জন করেছিলেন। আরবের শরীফ ও নিগ্রো ক্রীতদাস একই কাতারে দণ্ডায়মান। বায়তুল মালের সম্পদ বণ্টনে কোন বৈষম্যের নীতি নেই। সকলকে সমপরিমাণ অর্থই দেওয়া হচ্ছে। অল্পক্ষণের মধ্যেই সব সম্পদ। বিতরণ করা হলে বায়তুল মাল খালি হয়ে গেল ।

এক বৃদ্ধা অভিযোগ করলেন, প্রয়োজনের তুলনায় প্রাপ্ত সম্পদ তাঁর জন্য পর্যাপ্ত নয়। খলীফা নিজের অংশ বৃদ্ধাকে দিয়ে দিলেন। সেদিন নামায সম্পন্ন করে খলীফা রিক্তহস্তে গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন।

-কিতাবুল খারাজ।

ইসলামী সাম্যের মূর্ত প্রতীক মহান খলীফা হযরত আলী (রা)-কে লক্ষ্য করে ওসমান ইবনে হুনাইফ বলেন, "আপনি বিত্ত সম্পদের সমবণ্টন নীতি অনুসরণ করছেন । এ নীতির মাধ্যমে আপনি সমাজে মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সাধরণ মানুষের পর্যায়ে নামিয়েছেন, নিগ্রো এবং পারসিয়ানদের আরবদের সমান মর্যাদা দিয়েছেন। আপনি দাস এবং মালিককে বায়তুল মাল থেকে সমপরিমাণ অংশ দিচ্ছেন, ধনীদের তাদের জায়গির থেকে বঞ্চিত করছেন, তাদের বিশেষ মর্যাদা লোপ করছেন। এ নীতির দ্বারা আপনি খিলাফত এবং নিজের কল্যাণের চেয়ে সর্বনাশই ডেকে আনছেন। আর এ কারণেই প্রভাবশালী এবং ধনাঢ্য আরবগণ আপনাকে পরিত্যাগ করে মুয়াবিয়ার দলে যোগ দিচ্ছে। দরিদ্র অক্ষম লোকজন আপনার কোন উপকারই করতে পারবে না। অসহায় বিধবা এবং দাসেরা আপনাকে কোন সাহায্যই করতে পারবে না।”

খলীফা উত্তর দেন, “অসম ধন বণ্টনের মাধ্যমে আমি এক বিত্তশালী সম্প্রদায় সৃষ্টি করে তাদের দ্বারা সমাজ শোষণের পথ প্রশস্ত করতে পারি না। সমাজের এক শ্রেণী কর্তৃক অপর শ্রেণীর শোষণের কোন পন্থা আমি মুহূর্তের জন্যও অনুমোদন বা বরদাশত করতে পারি না।

হযরত আলী (রা) আরো বলেন, “বায়তুল মালের সম্পদ জনগণের। এ সম্পদ জনগণের কাছ থেকে আসে। সুতরাং এগুলো জনগণের মধ্যেই বিতরিত হওয়া উচিত। প্রভাবশালী এবং বিত্তশালীরা সম্পদ সৃষ্টি করেননি। জনগণের কাছ থেকে সম্পদ নিয়ে তারা তাদের সম্পদ বাড়ায়। খাজনা পরিশোধের পরও তাদের কাছে যা থাকে, তা তাদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। তারা যদি আমাকে পরিত্যাগ করে চলে যায়, তাতে আমার কোন দুঃখ নেই।”

হযরত আলী (রা)-এর পর ওসমান ইবনে হুনাইফকে লক্ষ্য করে আরো বলেন, "অসহায়, সর্বহারারা আমার কি উপকার করতে পারে, এ প্রশ্ন তুলেছেন। আমি জানি, তারা আমার কোন উপকারই করতে পারবে না। প্রতিদানের আশায় আমি তাদের প্রতি আমার কর্তব্য পালন করছি না। আমি এ সহায়হীনদের সাহায্য করি, কারণ তারা নিজেদের সাহায্য করতে অসমর্থ। আপনার আমার মত তারাও মানব সন্তান। আল্লাহ্ আমাকে তাঁরই প্রদর্শিত পথে এদের সাহায্য করতে সহায়তা করুন।"

-কিতাবুল খারাজ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url