আইনের প্রতি হযরত আলীর শ্রদ্ধা।


আশারাহ্ মুবাশশারাহ্


আইনের প্রতি হযরত আলীর শ্রদ্ধা

হযরত আলী (রা)-এর একটি মজবুত লৌহবর্ম ছিল। সিফফিনের যুদ্ধে বর্মটি হারিয়ে যায়। কিছুকাল পরে তিনি সেই লৌহ বর্মটি কুফায় এক ইহুদির পরিধানে লক্ষ্য করেন। তিনি তাকে বলেন, এ বর্মটি আমার। এটি আমি বিক্রি করিনি বা কাউকে দেইনি। আপনি এ বর্ম কোথায় পেলেন? ইহুদি খলীফার দাবি অস্বীকার করেন এবং বর্মটি নিজের বলে উল্লেখ করেন।

অগ্যতা খলীফা কুফার কাজী শুরাইহের আদালতে মামলা দায়ের করেন। আইনের শাসক খলীফা বলপূর্বক ইহুদির কাছ থেকে বর্মটি ছিনিয়ে নেননি বা তাঁকে তিরস্কারও করেননি।

কাজী শুরাইহ ইহুদিকে অভিযোগের জবাব দিতে বলেন। ইহুদি বললেন, বর্মটি আমার। আর এ বর্মটি এখন আমার অধিকারে আছে, এটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।

কাজী শুরাইই্ খলীফাকে সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থিত করতে নির্দেশ দেন। খলীফা তদীয় পুত্র হাসান এবং ভূতা কাম্বারকে কাজীর দরবারে হাযির করেন। দুজনই বর্মটি ভালোভাবে চিনতেন। কিন্তু কাজী দুজনের সাক্ষ্যই অগ্রাহ্য করেন। কারণ, একজন ফরিয়াদির পুত্র এবং অপরজন ফরিয়াদির ভৃত্য। শরীয়তে পিতার পক্ষে পুত্রের সাক্ষ্য এবং মনিবের পক্ষে ভৃত্যের সাক্ষ্য গ্রহণীয় নয়। বিচারে পরাভূত হয়ে খলীফা বিনা বাক্য বায়ে গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন

আইন-আদালতের প্রতি মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের এই আনুগত্য এবং কাজীর এই নিরপেক্ষ বিচার দেখে ইহুদি অভিভূত হয়ে যান। খলীফার নিকট অপরাধ স্বীকার করে বর্মটি ফিরিয়ে দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাপূর্বক ইসলামী জীবন-দর্শনের দীক্ষা গ্রহণ করেন।

খলীফার ন্যায়বিচারের প্রতি যাতে জনগণের পূর্ণ আস্থা থাকে সে বিষয়ে হযরত আলী (রা) অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। একবার এক মেহমান খলীফার গৃহে আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন। সে সময় কোন এক বিচার-দরবারে উক্ত মেহমান এক বিশেষ পক্ষ সমর্থন করেন। দরবার থেকে প্রত্যাবর্তনের পর সেদিনই খলীফা মেহমানকে অন্যত্র গমন করার জন্যে বিনীত আবেদন জানান। কারণ তাঁর ভয় ছিল, হয়ত জনগণ খলীফার বিচারের নিরপেক্ষতা সম্বন্ধে সন্দিহান হতে পারে।

খলীফা হযরত আলী (রা)-এর কনিষ্ঠ সহোদর ভ্রাতা হযরত আকিল (রা)। সহজ, সরল সাদাসিধে ভালো মানুষ। হঠাৎ আর্থিক অনটনের কালো মেঘে তাঁর সংসার অন্ধকার হয়ে ওঠে। দারিদ্র্যের জমাট ঘনীভূত আঁধারে কোন আলোর সন্ধান না পেয়ে তিনি অগ্রজের কাছে সব দুঃখের কথা বর্ণনা করেন এবং সাহায্য প্রার্থনা করেন, কিন্তু তখন সহানুভূতি ছাড়া দেওয়ার মত কিছুই আলী (রা)-এর ছিল না। নিত্য অভাবের সংসার ছিল খলীফার বায়তুল মাল থেকে অর্থ না পাওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করতে তিনি অনুজকে পরামর্শ দিলেন।

হযরত আকিল বললেন, আমার প্রয়োজন এখনই। অপেক্ষা করা সম্ভব নয়। আমার ন্যায্য প্রাপ্য অংশ আমার অগ্রিম দিয়ে দিন।

ভাইয়ের অন্যায় আবদারে খলীফা অস্বস্তি বোধ করলেন, বিরক্ত হলেন। এক ব্যক্তিকে ভাইকে দেখিয়ে বললেন, একে বাজারে নিয়ে যাও, আর বল, যেন ও দোকানের দরজা ভেঙে প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী, টাকা-পয়সা সেখান থেকে নিয়ে। নেয়।

হযরত আকিল বললেন, আপনি আমায় চুরি করতে পরামর্শ দিচ্ছেন?

হযরত আলী (রা) বললেন: তুমিও কি আমাকে চোর বানাতে চাও না ? অন্যকে দেওয়ার আগে শুধু সহোদর ভাইয়ের জন্যে বায়তুল মালের সম্পদে হাত দেওয়া চুরি নয় কি ভাই!

হযরত আকিল বললেন, এই যদি আপনার নীতি হয়, তবে সিরিয়ায় মুয়াবিয়ার কাছে চলে যাওয়াই আমার ঠিক হবে।

হযরত আলী (রা) বললেন, তাতে তোমার পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে।

হযরত আকিল (রা) অতঃপর সত্য সভাই মুয়াবিয়ার কাছে গিয়েছিলেন। বিচক্ষণ রাজনীতিক মুয়াবিয়া হযরত আকিলকে বিমুখ করেননি।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url