অপার করুনাধার মহান এক সত্তা আল্লাহ তা'য়ালা। যার সৃষ্টি রাজিতে ঘেরা এই জগৎ। যার সৃষ্টির রহস্যময়তায় ঘেরা গোটা পৃথিবী। সেই মহামহিম আল্লাহর অপার করুনার অপার সৃষ্টি মানবজাতি। যেই জাতি সৃষ্টির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো স্রষ্টার ইবাদাত।
যেমন : আল্লাহ পাক বলেন
وما خلقت الجن والإنس إلا ليعبدون
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আমি জীন ও মানবজাতিকে আমার ইবাদতের জন্যে সৃষ্টি করেছি।
-সূরা যারিয়াত : আয়াত ৫৬
আর এ ইবাদতের বিভিন্ন দিক রয়েছে। যে দিক জানার জন্য প্রয়োজন এ সম্পর্কিত জ্ঞান। যে জ্ঞান দ্বীনি জ্ঞান নামে অভিহিত। এ জ্ঞান শিক্ষার সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম ও স্থান মাদ্রাসা।
মানব যখন শিক্ষা অর্জনের উৎকৃষ্ট মাধ্যম মাদ্রাসার দ্বারস্থ হবে, তখন থেকে তার একটি নতুন পরিচয় সে তালিবুল ইলম বাংলায় ছাত্র বা ছাত্রী। আর শিক্ষার এই জীবন কে আদর্শ করে তুলতে তার জন্য কিছু সঠিক নীতি অনুসরন পূর্বক তা জীবনে বাস্তবায়ন করা জরুরী। ছাত্র জীবন ইলম কেন্দ্রিক। এই ইলম হচ্ছে নূর।
ইলম অর্জনকারীর তো অভাব নেই। তবে ইলমের নূর অর্জনে সক্ষম কয় জন?
ইলম ও ইলমের নূর অর্জনে প্রয়োজনীয় কয়েকটি গুণাবলী।
১. পরিপূর্ণ আগ্রহ।
২. পূর্ণ বুঝশক্তি।
৩. সর্বদা একাগ্রতা বা মনোযোগ থাকা।
৪. উস্তাদের খেদমত করা।
৫. সর্বদা দরসে উপস্থিত থাকা।
৬. তাহকীক সহ প্রতিটি শব্দ পড়া।
পরিপূর্ণ আগ্রহ
প্রথমত আদর্শ ছাত্র ও ছাত্রীর মধ্যে যেসব গুণাবলী থাকা অপরিহার্য, তার মধ্যে একটি হল পরিপূর্ণ আগ্রহ।
অর্থাৎ লেখা-পড়ার প্রতি, ইলম অর্জনের প্রতি এর ফজিলত কে সামনে রেখে তালেবে ইলমের অন্তরে পরিপূর্ণ আগ্রহ থাকতে হবে।
পূর্ণ বুঝশক্তি
দ্বিতীয়ত ইলমী নূর অর্জনের অন্যতম শর্ত হলো, পূর্ণ বুঝশক্তি। আর তা হল কোন বিষয় শ্রবন বা দেখার সাথে সাথে তার স্বরুপ অন্তরে প্রতিভাত করে নেয়া ও তার সূচনা ও পরিক্রমায় ধ্যান দেয়া। এবং উৎপত্তি ও তৎপরতা ভাবা। যাতে এই বুঝ কোন বিষয় মুখস্ত করার সহায়ক হয়। কারণ, না বুঝে মুখস্ত করা প্রতিভাকে ধ্বংস করে দেয়।
লেখাপড়ায় একাগ্রতা বা মনোযোগ থাকা
একাগ্রচিত্তে পড়া-লেখা করা ছাড়া উন্নতি লাভ করা সম্ভব নয়। এর সহজ ব্যাখ্যা হল, যে সকল বস্তু বা কাজ একমনে পড়া-লেখা করতে অন্তরায় হয়ে দাড়ায়, এ ধরণের যাবতীয় সব কিছুকে এড়িয়ে মনোযোগ সহকারে পড়াশুনা করা।
ইমাম মালেক (র) বলেন-
العلم لا يعطيك بعضه حتى ذعطيه كلك
অর্থাৎ ইলম তোমাকে তার একাংশ ও দেবে না, যতক্ষণ না তুমি ইলমের জন্য তোমার সর্বস্ব বিলীন করবে।
উস্তাদের খেদমত করা
একজন তালিবে ইলম যদি ইলম অর্জনে সফলকাম হতে চায়, তাহলে তার জন্য উস্তাদের খেদমত করা আবশ্যক। উস্তাদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও খেদমত করে তাদের নেক দোয়া ও সুনজর অর্জনের মাধ্যমেই সফলতার দ্বার উম্মোচন করা সম্ভব । একজন ছাত্র বা ছাত্রী প্রখর স্মরণশক্তি ও তীক্ষ্ণ মেধার আধকারী হওয়া সত্ত্বেও উস্তাদের অসন্তুষ্টি ও বদ দোয়ার ফলে তার শ্রম বিফলে যায়। যা একজন আদর্শ ছাত্র বা ছাত্রী হওয়ার প্রতিবন্ধক।
সর্বদা দরসে উপস্থিত থাকা
প্রতিটি দরসে উপস্থিত থাকা আবশ্যক। অর্থাৎ দরসের পাবন্ধী করা, এবং ভালোভাবে সবক শিখা একজন ছাত্র বা ছাত্রীর পড়া লেখার উন্নতি অগ্রগতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে প্রকৃত মেহনতের দাবিদার হওয়ার প্রধান শর্ত, প্রতিদিনের প্রতিটি সবকের প্রতি যত্নবান হওয়া । এর ২টি দিক,
১. প্রতিদিনের প্রতিটি দরসে উপস্থিত থাকা ।
২. প্রতিটি সবক শিখা। অলসতা বশত: বা কোন ব্যস্ততার কারণে যেন দরসে অনুপস্থিত থাকতে না হয় ।
তাহকীকসহ প্রতিটি শব্দ পড়া
কিতাবের প্রতিটি পড়া বুঝে শুনে, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে পড়তে হবে। তাহকীক এর মর্ম হল একটি শব্দ বিশেষ্য না বিশেষণ, নামবাচক না ক্রিয়াবাচক, শব্দটির মূলরুপ কী, তা কোথা থেকে নির্গত হলো ইত্যাদির অনুসন্ধান এই প্রকারের অন্তর্ভূক্ত। তাহকীকহীন পড়ালেখা হলে তা ইলম অর্জনের জন্য নয় বরং পরীক্ষা পাশের জন্য হলো। তাই তাহকীকের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক।
একজন আদর্শ ছাত্র বা ছাত্রীর এই গুণাবলী তখনই পরিপূর্ণ হবে যখন সে এ গুনাবলী সমূহ অর্জন করত: গুনাহ বর্জন করবে ।
গুনাহ বর্জনই তার এই গুণাবলী সমূহ অর্জনের পরিপূরক হবে কারণ, মানুষ যখন গুনাহ বর্জন করে তখন তার অন্তর শুদ্ধতায় পূর্ণ থাকে । আর শুদ্ধতাই আদর্শ জীবন অর্জনের সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম
যেমন- ইমান শাফী (র) এর কালজয়ী শে'র বা কবিতা:
فأوصاني إلى ذرك المعاصي
ونور الله لا يعطى لعاصي
আমরা ইলমে দ্বীন শিক্ষার্থী। আল্লাহর পথের পথিক। আমরা মুসলমান ও প্রকৃত শিক্ষার শিক্ষার্থী। ক্ষনস্থায়ী এ জীবনে পার্থিব শিক্ষায় পারদর্শী না হলেও আমাদের হীনমন্যতার কিছুই নেই। আমাদের উদ্দেশ্য হলো প্রকৃত মালিক ও খালিক আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। বেদ্বীন কাফেরদের সন্তুষ্টি আমাদের মূল উদ্দেশ্য নয়।
আমরা উম্মতে মুহাম্মদী। নবীগণের উত্তরসূরী। যারা বাতিল কে ভয় করেন নি। যারা মিথ্যার সামনে মাথা নত করে নি। আমরা সেই সে জাতী
আদর্শ ছাত্র ছাত্রীর অপরিহার্য গুণ সম্পর্কে যা আলোচনা করা হলো তা পরিপূর্ণ লক্ষ্য রেখে একজন ছাত্র - ছাত্রী যখন ছয়টি গুণে গুণান্বিত হবে তখন সেই হতে পারবে পূর্ণ মানব।
‘প্রকৃত পক্ষে দ্বীনী শিক্ষাই মানুষ হওয়ার শিক্ষা। দ্বীনী শিক্ষা ছাড়া, কুরআনী শিক্ষা ছাড়া মানুষ হওয়া যায় না।
করুনার আধার প্রভু, তব দ্বারে মিনতি জানাই। প্রত্যেকেই যেন মোরা এ গুণ অর্জনের তাওফীক পাই!