নামায আদায়ের গুরুত্ব ও নামায ত্যাগকারীর পরিণতি।

ইসলাম শুধুমাত্র একটি ধর্মের নাম নয়, একটি জীবন ব্যবস্থাও। আর এই ইসলামের প্রাণ হলো সালাত। ইমানের পরই সালাত তথা নামাজের স্থান। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, (হে নবী) তুমি পাঠ করো তোমার প্রতি যে কিতাব ওয়াহী করা হয়েছে তা থেকে এবং সালাত কায়েম করো। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করে। এবং আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ। আর তোমরা যা করো আল্লাহ তা জানেন।

-সূরা আনকাবুত, আয়াত-৪৫


রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, একজন মুসলমান আর অমুসলিমের মাঝে পার্থক্য হলো নামাজ। (সুনানে নাসায়ী) অন্যত্র বলেন, নামাজ ইসলামের খুঁটি স্বরুপ। (শুয়াবুল ইমান) অর্থাৎ ঘর যেমন খুঁটি ছাড়া তৈরি হয় না। ঠিক তেমনি ইসলাম রূপ ঘরও নামায নামক খুঁটি ছাড়া টিকতে পারেনা। যে ঠিকমত নামায় কায়েম করল সে ইসলামকে জারী রাখতে সাহায্য করল। আর যে নামায কায়েম করল না সে যেন ইসলামকে ধ্বংস করে দিল। (মেরকাত) হযরত উম্মে ফারওয়াহ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, সবচেয়ে মর্যাদাবান আমল কোনটি? তিনি বলেন, ওয়াক্তের প্রারম্ভে সালাত আদায় করা।

-সুনানে আবী দাউদ


হযরত আবূ হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, মুনাফিকদের কাছে ফজর ও ইশা অপেক্ষা অধিক ভারী কোনো সালাত নেই। আর যদি তারা জানত যে, এতদুভয়ের মধ্যে কী (ফজীলত) রয়েছে, তাহলে অবশ্যই তারা হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এর জন্য আসত।

-সহীহ বুখারী


হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের অভিমত কী, যদি তোমাদের কারো দরজায় একটি পানির নহর থাকে যাতে সে দৈনিক পাঁচ বার গোসল করে, তার শরীরে কি কোনো ময়লা অবশিষ্ট থাকতে পারে? তারা (সাহাবীরা) উত্তরে বললেন, তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারেনা। রাসূল (সা.) বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উদাহরণ এ রূপই। বিনিময়ে আল্লাহ তা'আলা তার অপরাধসমূহ মিটিয়ে দেন।

-সহীহ বুখারী


হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমার সালাত থেকে অপর জুমার সালাত এবং এক রমযান মাসের রোজা হতে অপর রমযান মাসের রোজা সেসব গুনাহের জন্যে কাফফারা হয়, যা এর মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে থাকে। যখন কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা হয়।

-সহীহ মুসলিম


হযরত আমর ইবনে শুয়াইব রহ. তিনি তার পিতা হতে, তার পিতা তার দাদা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সালাতের জন্যে আদেশ কর, যখন তারা সাত বছর বয়সে পৌঁছবে। আর যখন তারা দশ বছর বয়সে পৌঁছবে, তখন তাদেরকে সালাতের জন্যে প্রহার কর এবং তাদের শোয়ার স্থান পৃথক করে দাও।

-সুনানে আবী দাউদ


নামাজের ব্যাপারে যারা উদাসীন থাকে তাদের ব্যাপারে শাস্তির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

(স্মরণ কর) সেই চরম সংকটময় কিয়ামত দিবসের কথা যেই দিন তাদেরকে আহবান করা হবে সেজদা করার জন্য কিন্তু তারা তা করতে সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি অবনত হবে, হীনতা তাদের আচ্ছন্ন করবে, অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিল, তখন তো তাদের সেজদা করার আহ্বান করা হতো (কিন্তু তারা সেজদা করেনি)

-সূরা আল-কলম: আয়াত- ৪২-৪৩


অন্যত্র ইরশাদ করেন, দুর্ভোগ সেসব নামাজির জন্য যারা নিজেদের নামাজের ব্যাপারে থাকে গাফেল। (সূরা মাউন: আয়াত-৪-৫) অন্যত্র ইরশাদ করেন, সেদিন অপরাধিদের সম্পর্কে পরস্পরে জিজ্ঞাসা করবে যে, কিসে তোমাদের জাহান্নামে ঠেলে দিয়েছে? তারা বলবে, আমরা নামাজ আদায়কারী ছিলাম না।

-সূরা মুদ্দাসসির, আয়াত-৪২-৪৩


হযরত জাবের (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, বান্দা (আনুগত্য) ও কুফুরীর মধ্যে (পার্থক্য) হলো সালাত ত্যাগ করা।

-সহীহ মুসলিম


হযরত বুরায়দা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেন, আমাদের এবং কাফেরদের মধ্যে পার্থক্যকারী আমল হলো সালাত। যে সালাত ছেড়ে দিল সে কুফরী করলো।

-সুনানে নাসায়ী


আবূ হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি, কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম তার বান্দা থেকে নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। নামাজ যথাযথভাবে আদায় হয়ে থাকলে সে সফল হবে ও মুক্তি পাবে। নামাজ যথাযথ আদায় না হয়ে থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস হবে।

-সুনানে নাসায়ী


আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়া ও পরকালে সুখ ও শান্তিময় জীবনের জন্য যথাযথভাবে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url