ইসলামে তালাকের বিধান।


মহান প্রভু সর্ব প্রথম মানব হিসেবে হযরত আদম (আ.) কে সৃজন করেছেন । জান্নাত এবং স্বপ্নিল জগতে ছিল তাঁর আবাস । সুখ সাচ্ছন্দের কমতি ছিলনা। অভিলাসের ছিলনা অন্ত। তবে শান্তি ? মানবিক প্রশান্তি বলে যা ছিল তা হযরত আদম (আ.) পাচ্ছিলেন না । সব সময় হাহাকার আর একাকীত্ব। মহান আল্লাহ তার এ অসহায় পর্যবেক্ষণে সৃজন করলেন অপর এক সৃষ্টি এক মানবী তার জোড়া, হযরত হাওয়া(আ.) এরপর প্রভু মহামহিম উভয়কে বৈবাহিক বন্ধনের সুদৃঢ়তায় আবদ্ধ করলেন।

এ ধরায় আল্লাহ আদম সন্তানের প্রত্যেকের আত্মিক সুখের জন্যে তার জোড়া হিসেবে অন্য জনকে সৃজন করেছেন। এবং শরিয়তে তাদের এ সম্পর্কের শুদ্ধতার জন্যে বিবাহের রীতি বাতলে দিয়েছেন। তা হলো ইসলামী নীতিতে ইজাব কবুলের মাধ্যমে বিবাহ বন্ধন আবদ্ধ হওয়া । আর এরই বিপরীত হলো তালাক।


তালাক

শরীয়তের পরিভাষায়, বিবাহের বন্ধনকে ছিন্ন করা অর্থাৎ নির্দিষ্ট কতগুলো শব্দ ব্যবহার করে, স্বামী-স্ত্রীর বৈবাহিক বন্ধনকে ছিন্ন করে দেওয়ার নাম হচ্ছে তালাক।


তালাক বৈধ কেন?

হাদিস শরিফে এসেছে-


عن ابن عمر (رض) قال قال النبي (ص) ابغض الحلال الى الله الطلاق . (رواه ابوداود)

রাসূলে আরাবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে ঘৃন্যতম হালাল কাজ হলো তালাক দেওয়া।


তাছাড়া দারা কুতনীতে রয়েছে-


ما خلق الله شيئا ابغض اليه من الطلاق .

আল্লাহ তাআলা তালাক অপেক্ষা ঘৃন্যতম কোন বস্তু সৃষ্টি করেননি।


আলোচ্য হাদিসদ্বয় দ্বারা বুঝা যায়, আল্লাহ সুবহানাহ ওয়া তাআলার নিকট তালাক অত্যন্ত ঘৃন্যতম কাজ হওয়া সত্ত্বেও মহান প্রভু ইসলামী শরিয়তে তা বৈধ করেছেন।

যেহেতু ইসলাম শান্তির ধর্ম। এ ধর্মে কাউকে অশান্তি দেয় না। এ কারনেই শরিয়ত তালাক তথা- বিবাহ বন্ধন সাব্যস্ত হওয়ার পর কিভাবে আবার একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে তার পন্থা বাতলে দিয়েছেন। কেননা তালাক এর বিধান প্রনীত হয়েছে মানুষ যাতে অমন:পূত দাম্পত্য জীবন-যাপনে বাধ্য না হয়ে প্রয়োজনের তাগিদে এক স্ত্রী ত্যাগ করে অন্য স্ত্রী গ্রহন পূর্বক সুখী দাম্পত্য জীবন লাভ করতে পারে । সর্বোপরি এ সত্যকে মেনে নিতে হবে যে, হাকিমের কোন কাজ হেকমত শুন্য নয়!


তালাকের অধিকার কার ও কেন?

ইসলামী শরিয়ত তালাক দেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র স্বামীকেই প্রদান করেছেন।

তালাকের অধিকার একমাত্র স্বামীর হওয়ার কারণ

১. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-


الرجال قوامون على النساء

অর্থ: পুরুষেরা নারীদেও উপর কতৃত্বশীল।

-সূরা নিসা: ৩৪


২. রাসুলে আরাবী (সা.) ইরশাদ করেছেন-

তালাক দেওয়ার অধিকার রাখেন তিনি,যিনি গর্দানের মালিক হয়েছেন। অর্থাৎ- যিনি ভরন-পোষনসহ যাবতীয় ব্যয়ভার গ্রহন করেন এবং যিম্মাদারী নেন। তিনি হলেন স্বামী। তাই তিনিই তালাকের অধিকার রাখেন।

৩. তাছাড়া নারী-পুরুষ উভয়ের মাঝে স্বাভাবিকভাবে ধৈর্য, সহনশীলতা, মেধা ও যোগ্যতার দিক দিয়ে পুরুষ অগ্রগামী হন তাই পুরুষের নিকট তালাক প্রদানের দায়িত্ব থাকাটা যুক্তি সংগত।


* স্ত্রী তালাক দেয়ার কোন যোগ্যতা রাখেনা, তবে স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক গ্রহনের অনুমতি দিলে স্ত্রী নিজের উপর তালাক প্রয়োগ করতে পারবে। (যেভাবে দিবেন সেভাবে) শরিয়তের পরিভাষায় এধরনের তালাককে تفوىض طلاق বলা হয়।


* কিন্তু বর্তমান সমাজে যেভাবে আধুনিক শিক্ষিতা নারীদের মাঝে যে বিষয়টি মহামারী রূপ ধারন করেছে তা হলো তারা স্বামীর বিরুদ্ধে অপ্রয়োজনীয়, কখনো ভিত্তিহীন অভিযোগ উত্থাপন করে স্বীয় স্বামীকে তালাক দেয়। যা সমাজে ডিভোর্স নামে পরিচিত। আর এ ডিভোর্স যদি স্বামীর পক্ষ থেকে অনুমোদন না থাকে তাহলে এটা কোনো ভাবেই জায়েয হবে না। কেননা শরিয়তে ডিভোর্স নামের কোন অস্তিত্ব নেই। তবে এর বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে। যা নারীর মর্যাদার অন্যতম বৈশিষ্ট, আর তা শরিয়তের পরিভাষায় جلع (খোলা) নামে পরিচিত।

দাম্পত্য জীবনের সম্পর্ক বজায় রাখার এবং বিচ্ছেদের জন্য যে সকল কাজের দায়িত্ব পুরুষদেরকে দিয়েছেন নারীদেরকে ও এখানে আল্লাহ তাআলা পিছিয়ে রাখেন নি । বরং বিবাহ বন্ধন বিচ্ছিন্ন করার জন্য পুরুষদের দিয়েছেন তালাকের অধিকার। আর মেয়েদের দিয়েছেন جلع (খোলার) অধিকার। তবে উভয়র মধ্যে পার্থক্য হলো— তালাক হয় বিনিময়হীন, পক্ষান্তরে جلع স্ত্রীর পক্ষ থেকে কিছু বিনিময় দিতে হয় চাই সেটা মহরের দাবী মাফ করে হোক বা নগদ অর্থ প্ৰদান পূর্বক হোক।


* স্বামী স্ত্রী পরস্পর বিবাদের আশংকা করলে এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমা তারা রক্ষা করতে পারবে না মনে করলে স্ত্রী অর্থের বিনিময়ে স্বামী থেকে প্রয়োজনে جلع (খোলা) করতে কোনো অসুবিধা নেই।

-সূরা বাকারাহ: ২২৯


আয়াতে এ কথার ইঙ্গিত রয়েছে যে, প্রয়োজন হলে খোলা করা যাবে, প্রয়োজন না হলে খোলা করা বৈধ হবে না। আর প্রয়োজনের সময় ও যথাসম্ভব একে এড়িয়ে চলা উত্তম । কেননা বিবাহ বন্ধন বিচ্ছেদের যে কোন পন্থায়ই নিন্দনীয়। যদিও আল্লাহ তাআলা বিবাহ বন্ধন বিচ্ছেদের পন্থা বাতলে দিয়েছেন। তদুপরী তালাক হচ্ছে ঘৃন্যতম মুবাহ কাজ। আর খোলা প্রার্থিনীগণ মুনাফিক মহিলা । যে মহিলা কোন অসুবিধা ছাড়া স্বামীর নিকট তালাক দাবী করবে বেহেস্তের সুঘ্রান তার জন্য হারাম । যেমন আবু দাউদ এবং তিরমীযি শরীফে বর্ণিত আছে-

যে নারী ভীষন কষ্ট বা বিশেষ কারণ ব্যতিরেকে তালাক প্রার্থনা করল তার জন্য বেহেস্তের খুশবুও হারাম।


সার কথা হলো

এত আলোচনা-পর্যালোচনা করা পর এটাই বুঝা গেল যে, তালাক মূলত নিষিদ্ধ ও ঘৃন্যতম কাজ । নিছক প্রয়োজনে তা মুবাহ করা হয়েছে। সুতরাং সামান্য ঝগড়া বিবাদ ও কথা কাটাকাটির কারনে তালাক কিংবা ডিভোর্সের মত ঘৃন্য কাজে না গিয়ে সমঝোতার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। যেমন কোরআনে আল্লাহ বলেন, যদি কোন মহিলা স্বীয় স্বামীর পক্ষ থেকে অসদাচরণ কিংবা উপেক্ষার আশংকা করে তবে পরস্পর কোন সমঝোতা ও মীমাংসা করে নিলে তাদের উভয়ের কোন গুনাহ নেই। আর মীমাংসাই উত্তম।

-সূরা নিসা ১২৮

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url