শরীয়তের দৃষ্টিতে গান-বাজনার হুকুম


মহিয়ান গরিয়ান আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি নস্বর পৃথিবী সবুজ শ্যামল তরুলতার ঘেরা । পৃথিবীর শুরু লগ্ন থেকেই কিছু কাজ ভাল ও কিছু কাজ মন্দ হিসেবে বিবেচিত। বর্তমান ফেতনা-ফাসাদের যুগে আমরা অনেকেই বিভিন্ন পাপকার্যে লিপ্ত হয়ে থাকি । তার মধ্যে অন্যতম একটি খারাপ কাজ হলো গান-বাজনা শুনা ও গানের অনুষ্ঠান দেখা । কিন্তু এই গান বাজনা যে আমাদের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর ও পাপের কাজ তা আমরা বুঝতে পারছি না। গান বাজানার ব্যাপারে বিভিন্ন আয়াত ও হাদিস বর্ণিত হয়েছে ।

এক হাদিসে গান সম্পর্কে বলা হয়েছে যে-


عن جابر (رض) قال قال رسول الله (ص) الغناء ينبذ النفاق في القلب كما ينبذ الماء الزرع .

হযরত জাবের (রা) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, গান মানুষের অন্তরে এমন ভাবে নেফাক কপটতা সৃষ্টি করে যেমন পানি শস্য উৎপাদন করে থাকে। -বায়হাকী শরীফ


হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন আখেরী যমানায় কিছু কিছু লোক বানর ও শুকরের আকৃতিতে পরিণত হবে । তখন সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) তারা কি সাক্ষ্য দিবে না যে, আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কোন মাবুদ নাই এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল? তখন রাসূল (সা.) বললেন, হ্যাঁ, তারা রোযা রাখবে, হজ্জ আদায় করবে এবং নামাজ পড়বে। বলা হল তারপরও তাদের এ অবস্থা কেন হবে? রাসূল (সা.) বললেন তারা বাদ্য যন্ত্র বাজিয়ে গান গাইবে এবং গায়িকাদের চিত্ত বিনোদনের বস্তু বানাবে।


গান বাজনার হুকুম

আল্লামা নববী বলেন, গান মানুষকে দুশ্চরিত্র বানায় বাদ্যযন্ত্র ব্যতিরেকে গান গাওয়া মাকরুহ, এবং শুনা ও মাকরুহ বাদ্যযন্ত্রের বাজনা হারাম । বেগানা মহিলার কন্ঠে গান শুনা হারাম । বাদ্যযন্ত্র সম্বলিত গান গাওয়া হারাম শ্রবন করাও হারাম

গান-বাজনা হারাম হওয়া পবিত্র কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত নবী কারীম (সা.)-এর যুগ থেকে অদ্যাবধি সর্বযুগের ফুকাহা, মুজতাহিদগন এটাকে হারাম হিসেবে ফতোয়া দিয়েছেন ।

গান শুনা ও গানের মজলিসে বসা কবিরা গুনাহ গান শুনে স্বাদ অনুভব করাও কুফুরির অন্তর্ভুক্ত অনিচ্ছাকৃতভাবে গানের আওয়াজ কানে আসলে কোন গুনাহ নেই । তবে যাতে করে গানের আওয়াজ কানে না আসে সে ব্যাপারে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে এবং সাধ্যমত সেই পরিবেশ এড়িয়ে চলতে হবে। গান বাজনাকে চিত্ত বিনোদনের নামে গ্রহন করার কোনো সুযোগ নেই ।

হযরত আবু উমামা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা গায়িকা নারীদের ক্রয়-বিক্রয় করো না, তাদেরকে গান বাজনা শিক্ষা দিওনা । তাদের ব্যবসার মধ্যে কোন মঙ্গল নেই এবং তাদের মূল্যও হারাম।

-তিরমিযী শরীফ।


এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা নিম্মোক্ত আয়াত অবর্তীন করেছেন । এক শ্রেনীর লোক আছে, যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশে অবান্তর কথা-বার্তা সংগ্রহ, করে অন্ধভাবে, এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননা কর শাস্তি।

-সূরা লোকমান : আয়াত ৬


গান-বাজনার সম্প্রসারন ও নতুন নতুন বাদ্যযন্ত্রের আবিস্কারকে হাদিসে কেয়ামতের আলামত হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন রাসূল (সা.) বলেছেন যখন গনিমতের মালকে ব্যক্তিগত সম্পদরূপে ব্যবহার করা হবে, আমানতকে গনিমতের মাল মনে করা হবে, যাকাতকে জরিমানা ধারনা করা হবে, দ্বীন ব্যতিত অন্য উদ্দ্যেশে ইলম হাসিল করা হবে, পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে এবং মায়ের নাফরমানী করবে, বন্ধুকে খুব নিকটে স্থান দেবে এবং আপন পিতাকে দূরে সরিয়ে রাখবে, মসজিদসমূহে শোরগোল করা হবে, ফাসেক ব্যক্তি গোত্রের সরদার হবে, জাতির নিকৃষ্টতম ব্যক্তি তাদের নেতা হবে, ক্ষতির ভয়ে মানুষের সম্মান করা হবে, গায়িকা এবং বাদ্যযন্ত্রাদি ব্যাপকভাবে প্রকাশ লাভ করবে মধ্যপান বেড়ে যাবে, এবং উম্মতের পরবর্তীকালের লোকেরা পূর্ববর্তী লোকদের প্রতি অভিসম্পাত করতে থাকবে, সেই সময় তোমরা অপেক্ষা কর, রক্তিম বর্ণের ঝড়ের, ভূকম্পনের, ভূমি ধ্বসের, রূপ বিকৃতির, পাথর বৃষ্টি এবং সুতা ছিড়া দানার ন্যায় একটির পর একটি নিদর্শণ সমূহের।

-তিরমিয়ী শরীফ


গান-বাজনা শুনা ও দেখা আমাদের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর তা আমরা উপরোক্ত আয়াত ও হাদিস দ্বারা উপলদ্ধি করতে পারলাম।

পরিশেষে এই, কথাই বলি যে, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে গান-বাজনা শুনা ও দেখা থেকে সম্পূর্ণ হেফাযত করে পুরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়ার ও সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ মানুষ হওয়ার তৌফিক দান করুন । “আমীন”

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url