দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও দেওবন্দের চিন্তা-চেতনা।

দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য

দেওবন্দ মাদরাসার মূল লক্ষ্য ছিল দুটি।

১. ইংরেজ বিরোধী আন্দোলন করতে মুজাহিদ বাহিনী গড়ে তোলা।

২. সমাজের কুসংস্কার দূর করে ধর্মীয় চিন্তা-চেতনা প্রচার করতে এক দল যোগ্য আলেম গড়ে তোলা।

তখনকার সময়ে আলেমগণ একই সাথে দুটি সমস্যার সম্মুখিন হয়েছিলেন। বস্তুতান্ত্রিক চিন্তা চেতনা, মানুষের সভ্যতা ও সংস্কৃতির উপর বাতিলের আগ্রাসনি থাবা।

অন্যদিকে ইংরেজ শাসক গোষ্ঠির মুসলমাদের উপর অমানবিক নির্যাতন। একদিকে বিধর্মীয় সংস্কৃতির সয়লাভ অন্যদিকে আলেমদের বিলুপ্তি। ইসলামি চিন্তা-চেতনা পুনরায় বিকশিত করতে এবং বাতিলের মোকাবেলা জোড়দার করার লক্ষ্যেই দারুল উলুমের প্রতিষ্ঠা। মূলত ১৮৫৭ সালে দিল্লীর মারকাযী মাদরাসার পতন হলে মুসলিম সভ্যতা ও সংস্কৃতি হুমকির মুখে পরে। সেই অভাব পূরণ করতে প্রতিষ্ঠিত হয় দারুল উলুম দেওবন্দ। হযরত কাসেম নানুতবী (রহ.) মাদরাসা পরিচালনার জন্য কিছু বুনিয়াদি নীতিমালা তৈরী করে দেন। যাকে উশুলে হাশতেগানা বলা হয়। তার মধ্যে আটটি নিয়ম ছিল। যা কওমি মাদরাসাগুলোর জন্য পালন করা আবশ্যক মনে করা হয়। আটটি নিয়ম হচ্ছে,

১. ব্যাপক ভাবে চাঁদা সংগ্রহ করা।
২. ছাত্রদের খানাপিনা অব্যাহত রাখা।
৩. শূরা গঠন করা। যারা মাদরাসার সার্বিক উন্নয়ের জন্য চেষ্টা করবেন
৪. খোদাভিরু ও অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির শিক্ষক নিয়োগ দেয়া।
৫. মাদরাসায় যে নেসাব নির্ধারণ করা হবে তা অবশ্যই শেষ করা।
৬. ধনীদের চেয়ে গরীবদের চাঁদা অধিক গুরুত্ব সহকারে নেয়া।
৭. সরকারি অনুদান বা সাহায্য পরিহার করা।
৮. মুখলিস ব্যক্তিদের থেকে চাঁদা সংগ্রহ করা।
এই আটটি নীতিমালার উপর দেওবন্দ ও ততকালীন মাদরাসা গুলো পরিচালিত হত।


দেওবন্দের চিন্তা-চেতনা:

দারুল উলুম দেওবন্দের মূল চিন্তা-চেতনা ছিল দ্বীন অর্জনের ক্ষেত্রে কোন প্রকার পক্ষপাতিত্ব না করা এবং ধর্মের কোন শাখা প্রশাখা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করা। এই দুটি গুণের কারণে দেওবন্দ আজ দ্বীনের সকল বিভাগে সুপ্রতিষ্ঠিত। দেওবন্দ তার এই দুই চেতনা নিয়ে ইলমে এহি ও উন্নত চরিত্র অর্জন করে ছিল। এ এজন্যই দেখা যায়, দারুল উলুম শুধু ইলম অর্জনকেই যতেষ্ঠ মনে করেনি। সাথে সাথে আত্মশুদ্ধির পথেও কঠোর অনুশীলন করেছে। দারুল উলুমের প্রতিটি ব্যক্তির মাঝে একদিকে যেমন ছিল ইলমি যোগ্যতা অন্যদিকে ছিল আধ্যাতিক শক্তি। হযরত শাইখুল হিন্দ বলেন, তখনকার সময়ে দারুল উলুমকে দিনের বেলায় মনে হত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর রাতের বেলায় মনে হত খানকা।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url