গীবত কত প্রকার, গীবতের অপকারিতা এবং প্রতিকার
স্বভাবগত ভাবে দোষ চর্চা অপছন্দনীয় কাজ মানুষ নিজ কৃত দোষগুলো অন্যের মুখে আলোচনার দ্বারা ব্যথিত হয়ে থাকে । আর সেই দোষ যদি অপরাপর মানুষ বলে বেড়ায়, আলোচনা-সমালোচনা করে থাকে তবে তো ব্যক্তির যন্ত্রনার সাথে দুঃখবোধ আরো বেশি!
শরীয়ত অন্যের দোষ একে অপরের কাছে বলা কে গীবত বলে অভিহিত করেছেন।
গীবত: গীবত বলা হয় কারো অগোচরে তার এমন সমালোচনা করা, যা শুনলে সে খারাপ মনে করে। এই আলোচনা অপরের দৈহিক ত্রুটি, বংশগত ত্রুটি, চারিত্রিক ত্রুটি অথবা কথা, কর্ম, ধর্ম, পোশাক-পরিচ্ছদ, গৃহ, সওয়ারীর দোষ সম্পর্কিত হলেও তা গীবত তথা পরনিন্দার অন্তর্ভুক্ত হবে।
মানুষ কেন গীবত করে
সাধারনত এগারটি কারণে মানুষ গীবত করে। তন্মধ্যে আটটি জনসাধারনের মধ্যে ব্যাপক ভাবে বিদ্যমান।
প্রথম কারণ: ক্রোধের বশবর্তী হয়ে মনের ঝাল মিটাতে মানুষ অপরের গীবত করে।
দ্বিতীয় কারণ : একজন আরেকজনের গীবত বা পরনিন্দা করছে তা দেখে সে ও তার সমালোচনা করে এবং তার হাঁ-র সাথে হাঁ যোগ করতে গীবত করে।
উদাহরন স্বরূপ, আপন সঙ্গী কারও সম্পর্কে মন্দ আলোচনা করলে মনে করা হয় যে, তার সমর্থন না করলে নারাজ হবে কিংবা সঙ্গ ত্যাগ করবে। তাই তার কথার সমর্থন করে।
তৃতীয় কারণ : কখনো বা পূর্ব সতর্কতার কারণে গীবত করা হয়। অর্থাৎ যখন কেউ বুঝতে পারে যে, অমুক ব্যক্তি কোন বড়লোকের সামনে তার দোষ বর্ণনা করবে কিংবা তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে। তখন পূর্ব থেকেই সে তার দোষ বর্ণনা করতে শুরু করে। যাতে তার সম্পর্কে কিছু বলা হলে তা গ্রহনযোগ্য না হয়।
চতুর্থ কারণ : কোন দোষ থেকে নির্দোষ প্রমানিত হওয়ার লক্ষ্যে গীবত করা।
পঞ্চম কারণ : গর্ব ও আস্ফালনের ইচ্ছায় গীবত করা হয়। যাতে অপরকে হেয় করে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করা যায়।
৬ষ্ঠ কারণ : হিংসার বশিভূত হয়ে গীবত করা হয় । অর্থাৎ যখন কাউকে দেখে যে, মানুষ তার প্রশংসা ও সম্মান করে, তখন হিংসার আগুনে দগ্ধ হয়ে অন্য কিছু করার ক্ষমতা না থাকায় তার দোষ প্রকাশ করতে শুরু করে, যাতে মানুষ উক্ত ব্যক্তির সম্মান ও প্রশংসা থেকে বিরত থাকে।
সপ্তম কারণ : ক্রীড়া ও কৌতুক বশত: কখনো মানুষ গীবত করে।
অষ্টম কারণ : অপরকে ঘৃনার পাত্রে পরিণত করার জন্য গীবত করা। এটা সামনে এবং পশ্চাতে উভয় ভাবে হতে পারে।
গীবতের প্রকার
১. শারীরিক দোষ ত্রুটির গীবত।
২. পোষাকের ব্যাপারে গীবত।
৩. বংশ নিয়ে গীবত।
৪. বিশেষ কোন বদঅভ্যাস ও পাপাচারের গীবত।
গীবতের অপকারিতা
১. গীবতকারী মানুষের চোখে দোষচর্চাকারী সাব্যস্ত হয়।
২. গীবতকারীকে লোকে বিশ্বাস করতে চায় না। যে আমার কাছে অন্যের গীবত করে সে আমার গীবত অন্যের কাছে করবে না বিশ্বাস কি?
৩। গীবতকারীর মানসিক শান্তি থাকেনা কারন সে কারো দ্বারা অপমানিত হওয়ার আশংকায় থাকে।
উল্লেখ্য যে, উপরের বিষয়গুলো হলো দুনিয়াবী। আর আখেরাতের অপকারিতা হলো-
১. গীবতকারীর দোয়া কবুল হয় না।
২. নেক আমল মুছে যায়।
৩. তার নেক আমল কুবুল হয় না।
৪. তার হিসাব কঠিন হয়।
৫. পরকালে তাকে মৃত ব্যক্তির গোশত খাওয়ানো হবে।
আল্লাহ আমাদেরকে গীবত থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন।
গীবতের প্রতিকার
১. যখন মনে সমালোচনা বা গীবত করার খেয়াল হয়, তখন মনে মনে এরুপ ভাববে যে, তার মধ্যেও কোনো দোষ আছে কিনা? যদি নিজের কোনো দোষ দৃষ্টিগোচর হয়, তবে তা দূর করার চেষ্টায় মশগুল হয়ে যাবে । রাসূল (সা.) এর উক্তি স্মরন করবে-
সেই ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ, যার নিজের দোষ তাকে অপরের দোষ বর্ণনা থেকে বিরত রাখে।
-বায়হাকী
যখন নিজের মধ্যে দোষ থাকে, তখন নিজের দোষের সমালোচনা না করে অপরের দোষে সমালোচনা করতে তার লজ্জা করা উচিত। কারো ইচ্ছাধীন দোষের ক্ষেত্রে একথা প্রযোজ্য। নতুবা কোনো সৃষ্টিগত ত্রুটির কারনে কাউকে মন্দ বলা স্রষ্টাকে মন্দ বলারই নামান্তর। যেমন কাউকে লেংড়া,কানা, বদ ছুরত ইত্যাদি বলা।
২. আরও একটি পন্থা হচ্ছে- মনে মনে এরূপ চিন্তা করা যে, যদি কোনো ব্যক্তি আমার নিন্দা করে, তবে আমার কাছে তা কতটুকু খারাপ মনে হবে।
সুতরাং আমি যদি অন্যের নিন্দা করি, তবে তার কাছেও ব্যাপারটি তেমনি দুঃখজনক হবে। অতএব, নিজের নিন্দা অন্যে করলে যেমন তা কেউ পছন্দ করেনা তদ্রুপ অপরের নিন্দা না করাকেও পছন্দ করতে হবে।
৩. গীবত থেকে বাঁচার বিস্তারিত উপায় হলো, যে কারণে গীবত করা হয় সে কারনকেই দূর করা। কেননা কারণ দূর হয়ে গেলেই ব্যধি দূর হয়ে যায়।
মুখে কারো সমালোচনা করা যেমন হারাম, তদ্রূপ অন্তরে কারো প্রতি ইচ্ছাপূর্বক কুধারনা পোষন করাও হারাম । তবে অনিচ্ছাবশতঃ কারো সমালোচনা মনে উদয় হলে তা ক্ষমাযোগ্য।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
হে মুমীনগন! তোমরা ধারণা হতে বেঁচে থাকো । নিশ্চয়ই কতক ধারনা গোনাহ।
-সূরা হুজরাত : ১২