নারীর সম্মান, মর্যাদা ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম।
মানুষ সমাজিক জীব, অন্যদিকে প্রকৃতির অংশ। তাই মানুষকে জীবন ধারণ, বেঁচে থাকা ও অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রাকৃতিক ও সামাজিক উভয় বিধানই মেনে চলতে হবে প্রাকৃতিক বিধান লঙ্ঘন করলে ধ্বংস অনিবার্য। আর সামাজিক বিধান ভঙ্গ করলে নেমে আসে বিপর্যয় । সামাজিক নিয়মগুলো প্রকৃতি থেকে মানুষের লব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে গড়ে ওঠে। বিধান সমূহের মধ্যে ধর্মীয় বিধানই শ্রেয়।
পবিত্র কোরআনে নিসা তথা মহিলা শিরোনামে নারীর অধিকার ও কর্তব্যসংক্রান্ত একটি স্বতন্ত্র বৃহৎ সূরাও রয়েছে। এ ছাড়া কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদীসে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও তাদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। ইসলাম নারীর ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। দিয়েছে নারীর জান-মালের নিরাপত্তা ও সর্বোচ্চ সম্মান।
নারীর শিক্ষা
নারীদের তালিম তারবিয়াতের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে “তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে উত্তম আচরণ করো ও উত্তম আচরণ করার শিক্ষা দাও।
-সূরা নিসা : আয়াত ১৯
মহানবী (স) ঘোষণা করেন যার রয়েছে কন্যা সন্তান । সে যদি তাকে (শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে) অবজ্ঞা ও অবহেলা না করে এবং পুত্র সন্তানকে তার ওপর প্রাধান্য না দেয় আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তিনি আরও বলেন- তোমরা নারীদের উত্তম উপদেশ দাও (উত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত করো)।
হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, ইলম শিক্ষা করা (জ্ঞানার্জন করা) প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর প্রতি ফরজ (কর্তব্য)।
-ইবনে মাজাহ শরীফ
তাই হাদিস গ্রন্থসমূহের মধ্যে হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ২ হাজার ২১০ যা সব সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
মা হিসেবে নারীর সম্মান
ইসলাম নারীদের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন, একবার এক লোক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) এর দরবারে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকারী কে? নবীজি (স) বললেন, 'তোমার মা'।
-বুখারী শরীফ
মহানবী (স)-এর জমানার বিখ্যাত এক ঘটনার কথা আমরা জানি। মায়ের সেবা করার কারণে হযরত ওয়াইস কারনি (রহ.) প্রিয় নবীর জমানায় থেকেও সাহাবি হতে পারেননি। একবার ওয়াইস কারনি (রহ.) প্রিয় নবীর কাছে খবর পাঠালেন ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার সঙ্গে আমার দেখা করতে মন চায়, কিন্তু আমার মা অসুস্থ, এখন আমি কি করতে পারি? নবীজি (স.) উত্তর পাঠালেন, আমার কাছে আসতে হবে না। আমার সঙ্গে সাক্ষাতের চেয়ে তোমার মায়ের খেদমত করা বেশি করুরি। নবীজি (স.) তার গায়ের একটি মোবারক জুব্বা ওয়াইস কারনির জন্য রেখে যান। তিনি বলেন, মায়ের খেদমতের কারণে সে আমার কাছে আসতে পারেনি । আমার ইন্তেকালের পরে তাকে আমার এই জুব্বাটি উপহার দেবে । জুব্বাটি রেখে যান হযরত ওমর (রা)-এর কাছে এবং প্রিয় নবী (স) বলেন, হে ওমর! ওয়াইস কারনির কাছ থেকে তুমি দোয়া নিয়ো।
কন্যা হিসেবে নারীর সম্মান
মহানবী (স) বলেন, মেয়ে শিশু বরকত প্রাচুর্য ও কল্যাণের প্রতীক। হাদীস শরীফে আরও আছে, যার তিনটি, দুটি বা একটি কন্যাসন্তান থাকবে, আর সে ব্যক্তি যদি তার কন্যাসন্তানকে সুশিক্ষিত ও সুপাত্রস্থ করে তার জান্নাত নিশ্চিত হয়ে যায়।
বোন হিসেবে নারীর সম্মান
মহানবী (স) বলেছেন, কারো যদি কন্যা সন্তান ও পুত্রসন্তান থাকে, আর তিনি যদি সন্তানদের জন্য কোনো কিছু নিয়ে আসেন, তবে প্রথমে তা মেয়ের হাতে দেবে এবং মেয়ে বেছে নিয়ে তারপর তার ভাইকে দেবে । হাদীস শরীফে আছে, বোনকে সেবাযত্ন করলে আল্লাহ প্রাচুর্য দান করেন।
স্ত্রী হিসেবে নারীর সম্মান
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে রয়েছে, তারা তোমাদের আবরণ স্বরুপ আর তোমরা তাদের আবরণ। (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৭) স্ত্রীর গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী (স) বলেছেন, উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যের পরিচায়ক । (মুসলিম শরীফ) তিনি আরো বলেন সে ব্যক্তি-ই উত্তম যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।
-তিরমিযী
বিধবার অধিকার ও সম্মান
বিধবাদের অধিকার সম্পর্কে মহানবী (স) বলেছেন, যারা বিধবা নারীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেয়, তারা যেন আল্লাহর পথে জিহাদকারী এবং নিরলস নামাজী ও সদা রোজা পালনকারী।
-বুখারী ও মুসলিম