আদর্শ সন্তান গঠনে মায়ের ভূমিকা।


“মা” শব্দটির মাঝে সুপ্তভাবে লুকিয়ে আছে এক পরিচয়, এক সৃষ্টির অস্তিত্ব,সন্তানের অস্তিত্ব ।

সন্তানের মাধ্যমেই রমনী মা নামে পরিচিত । মায়ের জন্য তার এই নামের স্বার্থকতা তখন, যখন সে তার নামের উৎস সন্তান কে আদর্শ ভাবে গড়ে তুলতে পারে। যাতে সন্তান সঠিক কিছু নীতির অনুকরণে আদর্শিকতা লাভ করতে পারে। এই সার্থকতা সিদ্ধির জন্য মায়ের প্রয়োজন কিছু নিয়মাবলীর প্রতি দৃষ্টি দেয়া, কিছু বিধান পালনে মনোনিবেশ করা।

একজন মায়ের সন্তান গর্ভে থাকাকালীন করণীয়, সন্তান জম্মের পর করণীয় ও সন্তানের উপলব্দি জ্ঞান হওয়ার সময়কালীন করণীয় সম্পর্কে আমরা ইমলামের কিছু দিক নির্দেশনা জানব।


সন্তান গর্ভে থাকাকালীন সময়ে মায়ের করণীয়

১. নিয়তের আবশ্যকতা:

গর্ভের লক্ষনাদি প্রকাশ পাওয়া মাত্রই গর্ভবতী মহিলার নিম্নরূপ নিয়্যাত করা উচিৎ। হে আল্লাহ! আমি আগত সন্তানকে দ্বীনের খাদেম বানাবো, যাতে সে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিতে পারে।

* আমি আমার সন্তানকে হাফেযে কোরআন বানাবো।

* তাকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করবো যেমন হযরত আনাস (রা) এর হাদীস- যে ব্যক্তি তার সন্তানকে দ্বীনী শিক্ষা দিবে তার পূর্বাপরের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে

-ইবনে মাজাহ


২. উত্তম রূপে নেক আমল করা:

যেমন, সে নামাজকে ধীর স্থিরতার সাথে আদায় করবে, নিয়মিত কুরআনে পাক তিলাওয়াত করবে। অধিক পরিমানে দুআ'য় মশগুল থাকবে ইত্যাদি।


৩. গুনাহ বর্জন করা:

অশালীন, অসমাজিক কাজ থেকে বিরত থাকবে । পর্দায় আবৃত থাকেব। ছোট, বড়, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য, যাবতীয় গুনাহ বর্জনের চেষ্টা করবে ।


সন্তান জন্মের পর করণীয়

সন্তান জম্মের পর তার পিতা-মাতা, পরিবার বর্গ ও আত্মীয় স্বজনের জন্য যে সকল দায়িত্ব ও হক্ক রয়েছে:


১. নবজাতকের দু কানে আযান ও ইকামত দেয়া:

ইবনে আব্বাসের হাদীস- যার সন্তান জন্ম গ্রহন করেছে, এবং সন্তানের জন্য ডান কানে আযান ও বাম কানে ইকামত দেয়া হয়েছে সেই নবজাতককে জ্বীন-ভূতের প্রভাব কোন ক্ষতি করতে পারবেনা।


২. তাহনীক করা:

অর্থাৎ কোন বুযুর্গের লালামিশ্রিত চিবানো খেজুর বা মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য আহারের মাধ্যমে তাহনীক করা হয় এর দ্বারা সন্তান নেককার ও আমানতদার হওয়ার আশা করা যায়।


৩. আকীকা দেয়া:

সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে সন্তানের মাথা মূন্ডন করে তদানুপাতিক ওজনের স্বর্ণ বা রুপা বা তার সমপরিমান মূল্য সদকা করা এবং ছেলে হলে ২টি ও মেয়ে হলে ১টি বকরী অথবা গরু বা উটের মেয়ের পক্ষ থেকে এক অংশ ও ছেলের পক্ষ থেকে দু অংশ কুরবানী করা । যদি ৭ দিনের মাথায় করে দিতে না পারে তবে ১৪ দিন বা ২১ দিনের মাথায় করবে । তাতেও ব্যর্থ হলে পরবর্তীতে যে কোনো সময় করে নেওয়াতে যথেষ্ট হবে। তবে সামর্থ থাকলে সপ্তম দিনের ফযীলতকে অবহেলা করা ঠিক নয় রাসূল (সা.) বলেছেন


عن سمرة قال رسول الله (ص) الغلام مرذهن بعقيقذه ذذبح عنه يوم السابع ويسمى ويحلق رأسه (ذرمذی)

কেউ কেউ হাদীসের এ মর্ম বর্ণনা করেন যে, শিশুর সুস্থতা এবং নিরাপত্তা মাতা-পিতার আকীকা করার উপর আবদ্ধ থাকে।


৪. সুন্দর নাম রাখা, যা উত্তম।

যেমন- রাসূল (সা.) বলেছেন- শিশুর সুন্দর নাম রাখাও পিতা-মাতার দায়িত্ব।

কারণ, উত্তম নামের প্রভাব সন্তানের উপর পড়ে থাকে।


সন্তানের উপলব্দি হওয়ার সময়ে করণীয়

সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা ধর্মীয় বিধানাবলীর জ্ঞানে শিক্ষিত করা । কারণ সন্তান যখন ধর্মীয় রীতি-নীতি সম্পর্কিত জ্ঞানের অজ্ঞতার কারনে শরীয়ত অমান্য করার শাস্তি হিসেবে জাহান্নামের উপযুক্ত হবে, তখন সে তার এই পরিনতির জন্য পিতা-মাতাকেই দায়ী করবে । যখন করুনাময়ের অপার কুদরতের প্রভাবে সন্তানের মাঝে অনুভূতির জ্ঞান সৃষ্টি হয়, তখন সে অজানা বিষয় জানতে ব্যাকূল হয়ে পড়ে । এই ব্যাকূলতা তার মনে হাজার প্রশ্ন সৃষ্টি করে।

মায়ের উচিৎ, সন্তানের এই খোদা প্রদত্ত প্রেরনাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সন্তানের বোধ-শক্তি অনুযায়ী দেয়া।

মায়ের সুশিক্ষাই সন্তানের মানসিক উন্নতিকে ত্বরান্বিত করে। সন্তানের জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত করে তাকে দ্বীনী শিক্ষা দিয়ে ভালো ও মন্দের পার্থক্য নিরুপনের দক্ষতা তৈরী করে দিতে হবে।

আর মায়ের পক্ষ থেকে সুশিক্ষা না পেলে সন্তানের যে অধঃপতন হয় তা তো আমরা প্রতিনিয়তই দেখতে পাচ্ছি।

প্রতিটি সন্তানের আদর্শবান হয়ে গড়ে উঠার পিছনে একজন মায়ের অগ্রনী ভূমিকা অনস্বীকার্য।

তাই সন্তানকে কে আদর্শ করে গড়ে তুলতে আলোচ্য করণীয় বিধি পালন করা সন্তান সচেতন মায়ের জন্য অত্যাবশ্যকীয়।

করুনাময় আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মা কে তার করণীয় সমূহ পালনের তাওফীক দান করুন... -আমীন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url