চরিত্র কি? উত্তম চরিত্র ও উত্তম চরিত্রের প্রভাব।


খুলুকে হাসানা

মহান রাব্বুল আলামীনের সৃজিত সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বোত্তম সৃষ্টি হলো মানব! এ দিক থেকে মানব সর্বোৎকৃষ্ট! তদুপরি মানব যদি চারিত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তম হয় তবে তার উত্তমতা বলার অপেক্ষা রাখেনা ।


চরিত্র কি?

আখলাক শব্দটি আরবী, এর অর্থ চরিত্র। কোন ব্যক্তির আচরণ ও আদর্শের উৎকর্ষবাচক গুণ বুঝাতে আখলাক শব্দটি ব্যবহৃত হয়।


চরিত্রের স্বরুপ

চরিত্র বলতে আজকাল আমাদের সমাজে সাধারণত যা বুঝানো হয় আর ইসলাম যে চরিত্রের কথা বলে থাকে তা এক নয়। প্রচলিত অর্থে চরিত্র হলো- একটু মৃদু হেসে কারো সাথে প্রসন্ন মুখে সাক্ষাত করা ও নম্র কথা বলা। তাহলেই বলা হয় এ ব্যক্তি একজন চরিত্রবান মানুষ। আর ইসলাম যে চরিত্রের কথা বলছে অর্থাৎ চরিত্র বলতে যে কাঙ্খিত বস্তুকে বুঝায় তার মর্ম আরো ব্যাপক। মূলত চরিত্র হলো মানুষের আভ্যন্তরীণ বিষয় মানুষের হৃদয় ও আত্মার একটি গুণ ও বৈশিষ্ট্য। চরিত্র হলো কথাবার্তা ও কাজকর্মে পবিত্রভাব যা মানুষকে ন্যায় পথে ও সৎপথে পরিচালিত করে। মানবের সর্বোৎকৃষ্ট গুণাবলীর মধ্যে চরিত্র অন্যতম এবং চরিত্রের মাঝেই মানবের প্রকৃত পরিচয় নিহিত। চরিত্র মনুষ্যত্বের পরিচায়ক।


চরিত্রের হাকীকত ও গুরুত্ব

চরিত্র ও নৈতিকতা সংশোধন করা এবং প্রভুর বিধির অনুসরণে নিজেকে গঠন করা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যাবশ্যক বিষয় যেমনটা ইবাদতকে সঠিক ও শুদ্ধ করা জরুরী বরং একটু গভীর ভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ইবাদত, আর্থিক বা সামাজিক লেনদেন ও অন্য যে সব বিধি-বিধান রয়েছে তার কোনটাই সঠিক ও যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত চরিত্র ও নৈতিকতা সংশোধিত এবং পরিশুদ্ধ না হবে। চরিত্র শুদ্ধ না হলে কখনো নামাজ, রোযাও অর্থহীন হয়ে পড়ে। এজন্যই চরিত্র ও নৈতিকতার সংশোধন এবং আল্লাহ ও রাসূলের দিক নির্দেশনা অনুসরণ করে নিজেকে গঠন করাই জীবনের মূল মাকসাদ। এই ছাড়া জীবনে পূর্ণতা অর্জন অসম্ভব।


উত্তম চরিত্র

উত্তম চরিত্রের আহ্বান ও শিক্ষা কুরআনের বিশেষ আলোচ্য বিষয় সমূহের একটি। কেবল বিশ্বাস ও দাবী নয় বরং চরম বাস্তব ও দিবালোকের ন্যায় জুলমান যে, আখলাক তথা চরিত্রের ব্যাপারে কুরআনে কারীমের শিক্ষা এতো পরিপূর্ণ,স্পষ্ট, ন্যায় সঙ্গত ও এতো বেশি মানুষের স্বভাব সম্মত যে, যদি মানব তা কার্যে পরিনত করে এবং তার চারিত্রিক কাঠামোকে কুরআনের চারিত্রিক শিক্ষা ও হেদায়াত মুতাবিক গড়তে পারে তাহলে সেই হবে এই ধরায় মানবাকৃতির একজন রহমতবাহী ফেরেশতা । তার পূর্ণ নমুনা ছিলেন রাসূল (স) -এর পবিত্র সত্তা। হযরত আয়েশা

সিদ্দীকা (রা)-এর প্রসিদ্ধ ফরমান- كان خلقه القرآن রাসূল (স) এর পবিত্র চরিত্র মাধুরী ছিল হুবহু কুরআন ।


উত্তম চরিত্রের প্রভাব

উত্তম চরিত্রের মাধ্যমেই ঘোষিত হয় জীবনের গৌরব, এর মাধ্যমে জীবনের যে বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় তা আর কিছুতেই সম্ভব নয় । সবার উপরে চরিত্রের সুমহান মর্যাদা স্বীকৃত । যার পরশে জীবন ঐশ্বর্যমন্ডিত হয় এবং যার বদৌলতে মানব জনসমাজে শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র হিসেবে সমাজে আদৃত হয় । যিনি সৎ চরিত্রের অধিকারী তিনি সমাজের শ্রেষ্ট অলংকার ও প্রজ্জলিত দীপশিখা। চরিত্রের কাছে পার্থিব সম্পদ ও বিত্ত অতি নগন্য।

পাঠক : ইসলাম তরবারীর জোরে মানুষের মন জয় করেনি । ইসলাম তার অনুপম, অনন্য ও অসাধারণ চরিত্র শোভা দিয়ে মানুষের মন জয় করে নিয়েছে। এর প্রমান হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ঐতিহাসিক তথ্য মতে, বদর যুদ্ধে মুসলমান সৈনিকদের সংখ্যা ছিল ৩১৩, উহুদ যুদ্ধে ১০০০, আহযাব যুদ্ধে ৩০০০, হুদাইবিয়ার ওমরার সফরে ছিল ১৪০০/১৫০০/১৩০০। আর মক্কা বিজয়ের সময় রাসুল (স.) এর সফর সঙ্গী ছিলেন ১০,০০০ জন।

হুদাইবিয়া সংঘঠিত হয়েছে ৬ষ্ঠ হিজরীতে আর মক্কা বিজয় সংঘঠিত হয়েছিল ৮ম হিজরীতে। অর্থাৎ ইসলামের শুরু থেকে হুদাইবিয়া পর্যন্ত এই ১৮ বছরে যত মানুষ মুসলমান হয়েছিল তার চেয়েও অনেক বেশি মানুষ মুসলমান হয়েছিল হুদাইবিয়া থেকে মক্কা বিজয় পর্যন্ত এই দু-বছরে। এর কারণ হিসেবে ঐতিহাসিকগণ লিখেছেন-

* ইসলাম তো উন্নত নৈতিক চরিত্র ও উত্তম আমলের উৎস এবং সমস্ত সৌন্দর্য্যের সমষ্টি ছিলই। কিন্তু সাহাবায়ে কিরাম যে ফাযায়িল, মর্যাদা, সৌন্দর্য ও নৈতিক চরিত্রের জীবন্ত চিত্র ছিলেন এ পর্যন্ত শত্রুতা, ঘৃনা এবং হিংসা বিদ্বেষের চোখগুলো এসব অনুধাবনে প্রতিবন্ধক ছিল।

এবার ৬ষ্ঠ হিজরীতে হওয়া হুদাইবিয়ার সন্ধির ফলে শত্রুতা ও ঘৃনার পর্দা চোখের সামনে থেকে সরে যায়। ফলে ইসলামের মনোমুগ্ধকর চিত্রগুলো কাফেরদেরকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করতে শুরু করে।

হুদাইবিয়ার আগ পর্যন্ত সার্বক্ষণিক যুদ্ধ ও লড়াইয়ের কারণে তারা ইসলাম সম্পর্কে যথার্থ রায় নিতে পারছিলনা। তবে সন্ধির পর তারা প্রশান্তির সাথে একে অপরের সাথে মিলামিশা করতে থাকে । এর প্রেক্ষিতে যখন তারা দেখলো যে, আমাদেরই এক দল আভিজাত্য ও উঁচু মর্তবার উচ্চ শৃঙ্গে এখন তারা এ নিয়ে গবেষণায় তৎপর হলো। এর তৎক্ষণাৎ ফল এই দাড়ালো যে, কুরাইশ ও সমস্ত গোত্রগুলো ইসলামী নৈতিক চরিত্র ও কাজকর্ম দেখে প্রভাবিত হয়ে পড়লো । এবং শুধু ২ বছরে এতো অধিক লোক মুসলমান হলো যা নবুওয়াত থেকে নিয়ে ৬ষ্ঠ হিজরী পর্যন্ত ১৮ বছরের মাঝে হয়নি । এর মূলে ছিল পরিপূর্ণ নৈতিকতা, উত্তম চরিত্র ও ব্যবহারিক মাধুর্যতা।

পরিশেষ : উন্নত চরিত্র যাবতীয় সফলতার সহায়ক ও আদর্শ মানব হওয়ার মাধ্যম। সুতরাং আমাদের প্রত্যেককে চরিত্রবান হতে হবে। আল্লাহ তাওফিক দান করুন! আল্লাহুম্মা আমীন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url