স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য কি?

মহান আল্লাহর হুকুমে আপনি বিবাহের আক্বদের মাধ্যমে একজন পুরুষ আপনার পৃথিবীর সবচেয়ে আপনজন স্বামীরূপে পেয়েছেন। আর আত্মীয় স্বজন সবাইকে ছেড়ে তাকে আপন করে নিয়ে তার নিকট চলে এসেছেন। এমতাবস্থায় আপনার স্বপ্নের পৃথিবী তাকে নিয়েই রচিত হবে। গঠিত হবে পরিবার, হবে সন্তান-সন্ততি ও আত্মীয় স্বজন নিয়ে এক সুন্দর সমাজ। এ জন্য তার সাথে আপনার গড়া এ পৃথিবী যেন। কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নকে পূরণ করতে পারে, তাই এ নতুন জীবনে আপনার অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। তার গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিয়ে উল্লেখ করা হলো-

০১। আল্লাহ তা'আলা আপনাকে জীবনসঙ্গীরূপে একজন স্বামী দান করেছেন, সেজন্য মহান আল্লাহর শোকর আদায় করুন।

০২। স্বামীকে বুঝুন, তার মন মানসিকতা, স্বভাব-প্রকৃতি, যোগ্যতা, গুণাবলী, সামাজিক মর্যাদা প্রভৃতি উপলব্ধি করুন এবং সেভাবে তার সাথে আচরণ করুন।

০৩। তাকে হৃদয়ের গভীরে স্থান দিন। তাকে প্রাণ খুলে ভালোবাসুন। হৃদয় উজাড় করে ভালোবাসুন। সেই সাথে তাকে অভিভাবক হিসেবে অন্তর দিয়ে শ্রদ্ধা করুন।

০৪। তার সাথে সর্বদা হাসি-খুশীভাবে কথাবার্তা বলুন।

০৫। তার কাছে মনের কথা খুলে বলুন। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, সমস্যা সংকট প্রভৃতির কথা তার সাথে শেয়ার করুন।

০৬। তার বিশ্বস্ত হোন। কখনো তার অবিশ্বাসের কোন কাজ করবেন না।

০৭। তার সব ধরনের আমানত রক্ষা করুন।

০৮। তার গুণাবলীর প্রশংসা করুন।

০৯। তার সব ধরনের গোপন বিষয়াদি গোপন রাখুন।

১০। কখনো কারো কাছে তার বদনাম করবেন না।

১১। তিনি চাইলে তার সাথে বেড়াতে যান।

১২। তিনি যেভাবে চান, সেভাবে নিজেকে সাজান।

১৩। তার সুখে সুখী এবং তার দুঃখে দুঃখী হোন।

১৪। সময়-সুযোগ ও সামর্থমত তার সেবা করুন।

১৫। তার সমস্যা ও সংকটে তাকে সাহায্য করুন, তাকে সান্ত্বনা দিন, পরামর্শ দিন, প্রয়োজনমতো তাকে সহযোগিতা করুন।

১৬। তার প্রতি প্রেম-ভালোবাসা প্রকাশ করুন। তাকে বলুন- আমি আপনার চিরদিনের জীবনসঙ্গিণী।

১৭। তার আদেশ পালন করুন। কিছুতেই তার অবাধ্য হবেন না। তবে যদি তিনি আল্লাহর ইচ্ছা ও সন্তুষ্টির বিপরীত কোন আদেশ করেন, তখন সে ব্যাপারে ভালভাবে বুঝিয়ে উজর পেশ করুন।

১৮। স্বামীর কোন বদ অভ্যাস থাকলে ভালোবাসা দিয়ে বিজ্ঞ চিকিৎসকের মত তা শুধরানোর চেষ্টা চালিয়ে যান।

১৯। স্বামীর কল্যাণ ও উন্নতির জন্য আল্লাহর কাছে দু'আ করুন। স্বামীর মধ্যে যা কিছু মন্দ আছে সেগুলো যেন দূর হয় সে জন্য প্রচেষ্টার সাথে আল্লাহর কাছে দু'আ করুন।

২০। তাকে একান্ত বন্ধু বানিয়ে নিন। আর তাকে আপনার অভিভাবক মনে করুন।

২১। তার কাছে নিজেকে প্রকাশ করুন। তার কাছে কোন কিছু লুকিয়ে রাখবেন না।

২২। তার সাথে পরামর্শ করে কাজ করুন।

২৩। তার মর্জিমত চলুন, কাজ করুন এবং রান্না করুন।

২৪। তার পিতা-মাতাকে নিজের পিতা- মাতার মতো শ্রদ্ধা করুন, সম্মান করুন, সম্ভবমত সেবা করুন।

২৫। তার কৃতিত্ব ও অবদানের মূল্যায়ন করুন। এ ব্যাপারে তাকে উৎসাহিত করুন।

২৬। তিনি বাইরে থেকে এলে হাসিমুখে তাকে বরণ করে নিন এবং অভ্যর্থনা জানান। তার আসার সাথে সাথে অভিযোগের ঝুড়ি খুলে দিবেন না।

২৭। কোন ভুল বা অন্যায় করে ফেললে তা নিঃসঙ্কোচে স্বীকার করুন। সেজন্য অনুতপ্ত হোন, প্রয়োজনে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।

২৮। তার সকল আত্মীয়-স্বজনকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করুন।

২৯। সন্তানদের সামনে তার সাথে ঝগড়া-বিবাদ বা কথা কাটাকাটি করবেন না। তেমনি অন্য কারো সামনেও না। আর সবর্দা এ ধরনের পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।

৩০।  কারো সামনে তার অপছন্দনীয় আচরণ প্রকাশ করবেন না।

৩১। তার সামর্থ্যের অধিক টাকা-পয়সা, অলংকার, পোশাক-পরিচ্ছদ বা অন্য কিছু আবদার করবেন না।

৩২। সুপরিকল্পিতভাবে সুন্দর ও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে সন্তানদের প্রতিপালন ও শিক্ষা-দীক্ষায় যত্নবান হোন।

৩৩। নিজের হাত খরচ থেকে মাঝে মাঝে স্বামীকে উপহার দিন।

এভাবে আরো যে সকল দায়িত্ব সময় অনুযায়ী অর্পিত হয়, সেগুলোও স্বামী স্ত্রীকে মেনে চলতে হবে। আর নিজেরা পূর্ণভাবে দ্বীন পালন করবেন এবং সন্তানদেরকে দ্বীনদাররূপে গড়ে তুলবেন।

এ সকল নিয়মনীতি মেনে চলে দাম্পত্য জীবনকে সাফল্যময় করে তুলতে তাদের উভয়েরই আন্তরিক হতে হবে। তাহলে এর দ্বারা তারা ইহকালীন পরকালীন জীবনে সাফল্য ও কল্যাণ লাভ করতে পারবে। আর তাদের মাধ্যমে গড়ে উঠবে দ্বীনদার আদর্শ প্রজন্ম।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url