ইসলামের দৃষ্টিতে দাড়ির গুরুত্ব।

দাড়ি রাখা হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ, বা আর সমস্ত উম্মত এ ব্যাপারে এক মত যে দাড়ি মুন্ডানো ও এক মুষ্ঠির কমে কাটা উভয়টি হারাম। চার ইমাম এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। এবং যেমনভাবে দাড়ি মুন্ডানো হারাম হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় ঐরকম ভাবে এক মুষ্ঠির কমে কাটাও হারাম হওয়া প্রমাণিত। সহিহ হাদিস এবং সাহাবা কেরাম (রা.) এর আমল দ্বারাও এটি সাবেত।


যার কয়েকটি উদাহরণ নিম্নে তুলে ধরা হলো

১। আমর ইবনে শুয়াইব থেকে বর্ণিত যে হুজুর পাক (সা.) দাড়িকে চারদিক থেকে একমুষ্টি ধরে বাকীগুলো কেটে ফেলতেন।

২। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) এর আমল ছিল তিনি দাড়িকে এক মুষ্ঠি ধরে বাকি গুলো কেটে ফেলতেন।

৩। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, "হুজুর পাক (সা.) দাড়িকে এক মুষ্ঠি ধরে বাকী দাড়ি গুলোকে কেটে ফেলতেন।

এ সকল হাদিস থেকে সাবেত হয় যে, দাড়ি এক মুষ্ঠির চেয়ে খাট করা হারাম। এই সমস্ত হুকুম ওলামা এবং ফুকাহায়ে কেরাম এর এস্তেমবাত করা নয়, বরং হাদিস এবং আছার থেকে প্রমাণিত। এই জন্য যারা বলে দাড়ির এই হদ হাদিস থেকে সাবেত নেই বরং ওলামাগণের এস্তেমবাত, তারা ভুল করে অথবা তারা হাদিস বুঝার যোগ্যতা রাখে না। আর দাড়ি রাখার হুকুমটি হলো আম। সাধারণ মুসলমান থেকে শুরু করে প্রত্যেকের জন্য দাড়ি রাখা ওয়াজিব।

-খানে পিনে : পৃষ্ঠা নং-৭৪

দাড়ি রাখার সীমারেখা

একথা বলা বাঞ্ছনীয় যে দাড়ি একমুষ্টির কমে কাটা হারাম। এখন কথা হলো। যদি কোন ব্যক্তি দাড়ি এক মুষ্ঠির চেয়ে বড় রাখে তাহলে তার কি হুকুম ? এব্যাপারে ওলামা কেরামের মধ্যে এখতেলাফ রয়েছে। এখতেলাফটি শুধু উত্তম এবং অনোত্তম। বিষয়ে। তবে তার মধ্যে একটি মত রয়েছে যেটি মুবাহ। অর্থাৎ এক মুষ্ঠির থেকে অতিরিক্ত রাখা এবং না রাখা হুকুমের এতেবারে সমান সমান। কাটাও জায়েয়, না কাটাও জায়েয। আল্লামা শামী (রহ.) এর তাহকীক অনুযায়ী এই মতের প্রাধান্য বুঝেআসে।

-মরদু কি লিবাস : পৃষ্ঠা নং-৭


দাড়ি কাটা ব্যক্তির পিছনে নামাজ

যে ব্যক্তি দাড়ি মুন্ডায় বা এক মুষ্ঠির কমে দাড়ি কাটে সে হারামে মুরতাকের হওয়ার কারণে ফাসেক। যদিও সে অন্যান্য কাজে খুব ভালো হয়। তার পিছনে নামাজ পড়া মাকরুহে তাহরীমী।


চোয়াল এর হাড্ডির উপর দাড়ি

চোয়ালের হাড্ডির উপর যে দাড়ি হয় সে দাড়ি কাটা জায়েয আছে কিন্তু জরুরী না। এরকম ভাবে চোয়ালের হাড্ডির নিচে যে দাড়ি হয় সে দাড়ি কাটার ব্যাপারে এখতেলাফ রয়েছে। ঈমাম আবু ইউসুফ (রহ.) এর নিকট কাটার মধ্যে কোন ক্ষতি নেই।

-মরদু কি লিবাস : পৃষ্ঠা নং-৭৬


নিম দাড়ি

নিম দাড়ি কাটা বা মুন্ডানো মাকরুহ এবং বিদআত। তবে যদি নিম দাড়ি বড় হয়ে এদিক সেদিক সেরায়েত করে যা দেখতে অসুন্দর দেখা যায় তাহলে তার অসুন্দর অংশ কেটে পরিপাটি করে রাখার সুযোগ রয়েছে।


দাড়ি এবং চুলে খেজাব লাগানো

পুরুষের জন্য তার মাথার চুল এবং দাড়িকে সুন্দর করা জন্য খেজাব বা তার মতো অন্য কিছু যেমন কালো কলব, মেহেদি ইত্যাদি লাগানোর ব্যাপারে শরীয়তের হুকুমের মধ্যে কিছু তাফসিল রয়েছে। তাহলো, খালেস কালো রং বাদে অন্য কোন রঙ্গে খেজাব লাগানো পুরুষদের জন্য নিঃশন্দেহে জায়েয। কিন্তু কালো খেজাব লাগানো যাবে কিনা এ বিষয়ে কিছুটা ব্যাখ্যা রয়েছে। আর তা হলো যদি কোন ব্যক্তি কালো খেজাব ব্যবহার করে নিজেকে কম বয়সী জাহের করা অথবা কোন মানুষকে ধোকা দেয়ার উদ্দেশ্যে হয় তাহলে তার জন্য কালো খেজাব ব্যবহার করা হারাম এবং না জায়েয। আর যদি তার দ্বারা কাউকে ধোকা দেয়া উদ্দেশ্য না হয় বরং সৌন্দর্যের জন্য কালো খেজাব লাগায় যাতে করে তার স্ত্রী খুশি থাকে তবে সে বিষয়ে ইমামদের মাঝেও এখতেলাফ রয়েছে। জমহুর ফুকাহে কেরাম (রহ.) তাকে মাকরুহ বলেছেন। কিন্তু আবু ইউসুফ (রহ.) এবং অন্যান্য মাশায়েখরা তাকে জায়েয বলেছেন মোটকথা খুব বেশি প্রয়োজন হলে ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) মতের এর উপর আমল করার সুযোগ আছে।

-মরদু কি লিবাস : পৃষ্ঠা নং- ৭৭

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url