শরিয়তের দৃষ্টিতে কিস্তিতে ক্রয়-বিক্রয়।

বর্তমান সমাজে কিস্তির মাধ্যমে বেচা-কেনার প্রচলন সমস্ত মুসলিম দেশ গুলোতে ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এবং অনেক মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় জিনিষ পত্র সহ বাড়িঘর তৈরীর সরঞ্জামাদী কিস্তির মাধ্যমে বেচা-কেনা করছে। এটা এই জন্য করা হয়েছে যে, অনেক সময় ক্রেতার পণ্যের খুব বেশী প্রয়োজন পরে, কিন্তু তার আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে সে ততক্ষনাৎ মূল্য পরিশোধ করে, পন্য ক্রয় করতে পারেনা। এখন কথা হলো যদি কোন ব্যক্তি এইভাবে কিস্তির মাধ্যমে পন্য সামগ্রি বেচা-কেনা করে তাহলে তার এই বেচা-কেনা শরীয়ত সম্মত হবে কিনা। এ বিষয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো যাতে করে মানুষ সঠিক বুঝ ধারণ করে সে অনুযায়ী নিজের জীবনকে পরিচালিত করতে পারে।

-انوار الهداية ۱۸١:١


কিস্তির মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় করা

বর্তমান সমাজে বাজার গুলোতে অনেক পণ্য সামগ্রির বেচা-কেনা কিস্তির মাধ্যমে হয়ে থাকে, যেখানে বিক্রেতা তার পন্য সামগ্রিকে ক্রেতার কাছে বিক্রি করে, কিন্তু ক্রেতা সেই পন্য সামগ্রির মূল্য ততক্ষনাৎ আদায় না করে বরং নির্ধারিত কিস্তির মাধ্যমে আদায় করে থাকে এবং এই কিস্তির মাধ্যমে বেচা-কেনা করার দ্বারা যে, মূল্য ধার্য করা হয় তা সাধারণত বাজারী মূল্যের চেয়ে বেশী ধার্য করা হয় কিন্তু যদি ক্রেতা সেই পণ্য সামগ্রিকে নগদ মূল্যে ক্রয় করতে চায়, তাহলে সে ঐ পন্যের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কমেও ক্রয় করতে পারে। অন্যথায় যদি ক্রেতা সেই পন্যসামগ্রিকে কিস্তির মাধ্যমে ক্রয় করতে চায়, সেক্ষেত্রে বিক্রেতা, তার পন্যসামগ্রিকে বেচতে ঐ সময় রাজী হয় যখন সেই পন্য সামগ্রির মূল্য বাজারী মূল্যের চেয়ে বেশী ধার্য করা হয়।

এইজন্য ব্যাপকহারে যেভাবে, আমাদের সমাজে কিস্তির মাধ্যমে বেচা-কেনা চলছে, সে ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম হলো, এই ধরণের ক্রয়-বিক্রয় জায়েয আছে। কিন্তু কিস্তিতে ক্রয়-বিক্রয়ের সময় অবশ্যই নিম্ন বর্ণিত শর্তগুলির উপর খেয়াল রাখা অতিব জরুরী।

(১) কিস্তিতে ক্রয়-বিক্রয়ের সময় পণ্যের মূল্য ঐ স্থানেই নির্ধারণ করতে হবে, যে স্থানে عقد হয়েছে।

(২) কতগুলি কিস্তির মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করতে হবে, সেইসব কিস্তির সংখ্যা সহ প্রতিটি কিস্তির মূল্যও নির্ধারণ করতে হবে।

(৩) যদি ক্রেতা নির্ধারিত সময়ে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারে তাহলে বিলম্ব করার কারণে তার কিস্তির মূল্যের উপর অতিরিক্ত মূল্য ধার্য করতে পারেনা। কেননা বিলম্ব করার কারণে যে অতিরিক্ত মূল্য ধার্য করা হবে তা সুদ বলে গন্য হবে। যা নাজায়েয এবং হারাম।

-انوار الهداية ١٨٢:١


দুইটি মূল্যের মধ্য থেকে কোন একটিকে নির্ধারণ করা অপরিহার্য

এজ ইতিপূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি যে, পন্য ক্রয় বিক্রয়ের সময় বিক্রেতার জন্য এ অনুমতি রয়েছে সে দামাদামির সময় পন্যের ভিন্ন ভিন্ন মূল্য উল্লেখ করতে পারে যেমন বিক্রেতা ক্রেতাকে বলতে পারে যদি নগদ মূল্য হয় তাহলে ৮ টাকায় বিক্রি করব আর যদি বাকিতে হয় তাহলে ১মাস বিলম্ব করার কারণে ১০টাকায় ২মাস ১২টাকায় ৩মাস হলে ১৪ টাকায় বিক্রি করব। এখন প্রশ্ন হলো বিক্রেতার জন্য এভাবে আলাদা আলাদা করে মূল্য নির্ধারণ করা জয়েয হবে কিনা? এব্যাপারে যদিও ফুকাহায়ে কেরামদের স্পষ্ট কোন এবারত পাওয়া যায়না, কিন্তু ফুকাহায়ে কেরামদের পূর্ববর্তি বক্তব্যের উপর কেয়াস করে একথা প্রতীয়মান হয় যে, তার এই সুরতে ও বিক্রি করা জায়েয আছে। কারণ যে ভাবে নগদ এবং বাকিতে বেচা-কেনার উপর ভিত্তি করে মূল্য নির্ধারণ করা জায়েয আছে। সেভাবে সময়ের উপর লক্ষ রেখেও মূল্যের মধ্যে কম বেশী করা জায়েয আছে। উভয় সুরতে কোন ধরণের পার্থক্য নেই। তবে শর্ত হলো মূল্যের মধ্যে এই ভিন্নতা কেবল তখনই জায়েয হবে যখন عقد بيع হওয়ার সময় ক্রেতা এবং বিক্রেতা বাকির সময় নির্ধারণ করার পর কোন একটি মূল্যের উপর এক মত পোষণ করবে। কিন্তু যদি عقد بيع এর সময় বাকির সময় এবং মূল্য কোন একটিকে (Decide) ধার্য না করে তাহলে তার এই বেচা-কেনা জায়েয হবেনা।

-انوار الهداية ١٨٥:١ جدید معاشی مسائل ۹۳:۳


মূল্যের মধ্যে অতিরিক্ত করা জায়েয আছে কিন্তু লাভ চেয়ে নেওয়া জায়েয নেই। এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার, আর তা হলো, উপরে উল্লেখিত কিস্তির মাধ্যমে, মূল্য ধার্য করে বেচা কেনা করার যে সুরতটাকে আমরা জায়েয বলে বর্ণনা করে এসেছি। সেটা স্বয়ং মূল্যের মধ্যে অতিরিক্ত করার ব্যপারে বলা হয়েছে। কিন্তু যদি বেচা-কেনা, উপরে উল্লেখিত সুরত অনুযায়ী না হয়ে অন্য সুরতে হয়। যা আমাদের সমাজে কিছু কিছু ব্যক্তি সচরাচর করে থাকে। তা হলো কিস্তিতে জয় বিক্রয়ের কালে ১টা সময় এবং মূল্য ধার্য করা হয়। পরে যখন ক্রেতা সেই সময়ে সেই মূল্য আদায় করতে না পারে, তখন বিক্রেতা তার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অ তরিক্ত মূল্য ধার্য করে। যেমন বিক্রেতা ক্রেতাকে বলে অমুক পন্যটি তোমার কাছে ৮টাকায় বিক্রি করলাম। কিন্তু যদি তুমি ১মাস বা ২ মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে না পারো তাহলে ২টাকা বা ৩ টাকা বেশী দিতে হবে। এখন সেটাকে লাভ বা আরো অন্য কোন নাম দিয়ে থাকুক না কেন। সেটা যে সুদ তাতে কোন সন্দেহ নেই। অতএব এই সমস্ত ক্রয় বিক্রয় থেকে বিরত থাকা আমাদের জন্য একান্ত অপরিহার্য।

-انوار الهداية ۱۸٦:١


শরীয়তে লাভ আদায়ের কোন সীমারেখা নেই

সাধারণ ভাবে বাকিতে ক্রয়-বিক্রয় করার কারণে পণ্যের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্য ধার্য করা হয়, এই ভাবে নগদ ক্রয়-বিক্রয়ের দ্বারাও পণ্যের মধ্যে অি তরিক্ত মূল্য ধার্য করা হয় এই ভাবে যদি কোন ব্যক্তি তার পণ্যসামগ্রিকে বিক্রি করে তাহলে তার এই ক্রয় বিক্রয় জায়েয আছে তাতে কোন সমস্যা নেই। কেননা ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ে যদি কোন মূল্যের উপর ঐক্যমত পোষণ করে বেচা-কেনা করে। তা নিঃসন্দেহে জায়েয আছে। কেননা শরীয়তে লাভের কোন সীমারেখা নেই, কারণ স্বাধীন দুনিয়ায় এখানে সবাই স্বাধীন তারা কোন পণ্য কত দামে বিক্রি করবে। সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যপার তাতে হস্তক্ষেপ করার অধিকার কারো নেই। তবে মানবতার দিকে খেয়াল রাখা অবশ্যই জরুরী।

-انوار الهداية ۱۸۷:١

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url