মহানবীর (সা.) অলৌকিক ঘটনা

 


হারানো উটনীর সন্ধান
একবার রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উটনী হারিয়ে গেল। কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এক মুনাফিক বিদ্রূপ করে বলতে লাগল, নবী তো গায়েবী ওহী জানার কথা দাবী করেন। কিন্তু এখন কেন বলতে পারেন না যে, উটনী কোথায় গেল? তাঁর কাছে যে ফেরেশতা ওহী নিয়ে আসেন, তিনি কেন তাঁকে উটনী সম্পর্কে সংবাদ দেন না?

ইতোমধ্যে হযরত জিবরাঈল (আ.) উপস্থিত হলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)কে উটনীর অবস্থান সম্পর্কে জানিয়ে দিলেন।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি গায়েব জানি না। তবে আল্লাহ তা'আলা আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন মুনাফিকের ভর্ৎসনা সম্পর্কে এবং উটনীর অবস্থান সম্পর্কে যে, উটনীটি অমুক জায়গায় আছে, তার লাগাম একটি গাছের সাথে আটকে গেছে।

একথা শুনে সাহাবায়ে কিরাম (রা.) ওই স্থানে গেলেন। তারা সেখানে নবীজী (সা.) যেরকম বলেছেন সেরকম দেখতে পেলেন। (সুবহানাল্লাহ)

-সূত্র : সুনানে বাইহাকী


ফিরে পেলেন চক্ষু
উহুদ যুদ্ধে কাতাদা বিন নুমানের চোখে তাঁর বিদ্ধ হলো। ফলে তাঁর চোখ খুলে গালে এসে পড়েছিলো।
তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, তুমি যদি চাও তোমার চোখ ভালো হোক, তাহলে তা যথাস্থানে রেখে দিবো এবং তা ভালো হয়ে যাবে। আর যদি জান্নাতের নিয়ামত চাও, তাহলে ধৈর্য ধরো।

তা শুনে কাতাদা (রা.) বললেন, জান্নাতের নিয়ামত তো সবচেয়ে বড়। আর কানা হয়ে থাকাটা আমার কাছে খারাপ মনে হয়। আপনি আমার চোখ ভালো করে দিন এবং আমার জন্য জান্নাতের দু'আ করুন।

তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর চোখ যথাস্থানে রেখে দিলেন। তৎক্ষণাৎ তা সম্পূর্ণভাবে ভালো হয়ে গেল এবং সেটা এত দীপ্যমান হলো যে, সেই চোখের দৃষ্টিশক্তি অন্য চোখের দৃষ্টিশক্তি থেকেও বেড়ে গেল। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) তার জন্য জান্নাতের দু'আ করলেন।

-সূত্র : সুনানে বাইহাকী


গোপন পত্রের তল্লাশি
হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে, মিকদাদ ও যুবাইর (রা.)কে আদেশ করলেন, তোমরা মাকামে থাক পর্যন্ত যাও। সেখানে একজন মহিলাকে দেখতে পাবে। তার কাছে চিঠি আছে। চিঠিটি ছিনিয়ে নিয়ে আসবে।

তারা গিয়ে সেই মহিলাকে দেখতে পেলেন। তখন বললেন, তোমার কাছে যে চিঠিটি আছে, সেটা আমাদেরকে দিয়ে দাও। মহিলা বলল, আমার কাছে কোন চিঠি নেই। তারা বললেন, ভালোভাবে দিয়ে দিলে তো ভালো, আর না হলে আমরা তোমাকে বিবস্ত্র করে তোমার দেহে তল্লাশি চালাতে বাধ্য হবো। তখন মহিলাটি ভয় পেয়ে খোঁপার ভিতর থেকে চিঠিটি বের করে তাদের হাতে দিলো। তারা চিঠিটি নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে উপস্থিত হলেন।

এই চিঠিটি হাতেব বিন আবী বালতায়া (রা.) মক্কার কুরাইশদের নিকট এই মহিলাটির মাধ্যমে পাঠাচ্ছিলেন। নবী কারীম (সা.) কুরাইশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ইচ্ছা করেছিলেন। হাতের (রা.) এই বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন। তখন আল্লাহ পাক নবীজীকে বিষয়টি জানিয়ে দেন।

এর কারণ সম্পর্কে নবীজী (সা.) হাতেবকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমার বাচ্চারা মক্কায় আছে। সাথে আর কেউ নেই। ভাবলাম, যুদ্ধ সম্পর্কে জানিয়ে দিলে তারা আমার বাচ্চাদের উপর একটু অনুগ্রহ করবে।

তখন উমর (রা.) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি ইচ্ছা করলে এই মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দিই। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, না। আল্লাহ পাক বদরী সাহাবীদেরকে ভালোবাসেন। আল্লাহ তা'আলা তাদের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। [হাতের (রা.) বদরী সাহাবী ছিলেন।

চিঠির লেখা ছিল এই, রাসূল (সা.) তোমাদের সাথে যুদ্ধ করার ইচ্ছা করেছেন। আল্লাহর কসম! যদি রাসূল একাও হোন, তারপরও তিনি তোমাদের উপর বিজয় লাভ করবেন। সুতরাং তোমরা নিজেদের বাঁচাতে সতর্ক হও। হাতেব বিন আবী বালতায়া (রা.) বলেন, এই চিঠি লেখার কারণ ছিল বাচ্চাদের মুহাব্বত। কাফিরদের মুহাব্বত অবশ্যই ছিলো না।

এই হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মু'জিযা এবং বদরী সাহাবীগণের ফজীলত ও তাঁদের মহত্ত্বের কথা বর্ণনা করা হয়েছে।

-সূত্র : বুখারী ও মুসলিম

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url