ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের বিধান কি? ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস

 

মিলাদুন্নবী পালনের বিধান

“আজ কে এলোগো আঁধার চিকে ধরার মাঝে নবীন রাঙা ভোরের সাজে।

আজ কে এলোগো তপ্ত মরুর তৃষ্ণার্ত বুকে ফুটলো কলি আপন সুখে"


ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য

জাহিলিয়াতের নিকষ আঁধার চিরে ঝলমলে আলোয় উদয় হয়েছে সত্যের সূর্য। প্রাণ ফিরে পেয়েছে হারিয়ে যাওয়া এই নিখিল ধরা। মুক্তির পয়গাম ছড়িয়ে দিলেন তিনি ইথারে ইথারে। সৃষ্টিকূল ব্যস্ত হয়ে পড়ে এই সত্যকে বরণ করে নেয়ার জন্য। বাস্ততো হবারই কথা। তিনি কি যেই সেই মানব। তিনি যে আর কেউ নন। তিনি সৃষ্টির সেরা সাইয়্যিদুল মুরসালিন, হাবীবে ইলাহী, প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)।

৬৩ বছরের মহান জীবনের সবটুকু সময় ব্যয় করেছেন তিনি সকল অনাচার আর পাপাচারের বিষবৃক্ষের মূল নির্মূলে। কায়িম করেছেন সভ্যের পৃথিবী। যার আগমনে বদলে গেল জাহিলিয়াতের বর্বর যুগ, মানুষ পেল মুক্তির বার্তা, সেই প্রিয়নবীর প্রতি শুকরিয়া আদায় করা কি প্রতিটি উম্মতের কর্তব্য নয়?

প্রিয় নবীজীর প্রতি শুকরিয়া আদায় নবীপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ এবং অতি সাওয়াবের কাজ। এবার দেখতে হবে-এই শুকরিয়া আদায় কোন পন্থার হওয়া উচিত।

ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে হাদিস

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর বাণী-অর্থ : "তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মাঝে রয়েছে উত্তম আদর্শ।"

ঈদে মিলাদুন্নবীর দলিল

এ আয়াতের প্রেক্ষিতে বুঝা গেল-নবী কারীম (সা.)-এর প্রতি শুকরিয়া আদায়ের পন্থাটি হতে হবে স্বয়ং রাসূল (সা.)-এর আদর্শে। তার উসওয়া নিজের জীবনে প্রতিফলিত করার মাধ্যমেই তাঁর হক আদায় হবে।

মহানবী (সা.) প্রতি শুকরিয়া আদায়ের অংশ হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্মের কারণে মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। সহীহ মুসলিম শরীফের হাদীসে উল্লেখ আছে, হযরত রাসূলে কারীম (সা.) প্রতি সপ্তাহের সোমবারে নফল রোযা রাখতেন। সাহাবায়ে কিরাম (রা.) জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি প্রতি সপ্তাহের সোমবারে নফল রোযা রাখেন কেন? জবাবে রাসুলে কারীম (সা.) বলেন- তিন কারণে আমি প্রতি সপ্তাহের সোমবারে নফল রোযা রাখি।

ঈদে মিলাদুন্নবী কি করনীয়

প্রথম কারণ : আমার কাছে যেদিন সর্বপ্রথম ওহী নাযিল হয়, সে দিনটি ছিল সোমবার।

দ্বিতীয় কারণ : প্রতি সপ্তাহের সোমবারে। নফল রোযা রাখার মাধ্যমে আমি আমার জন্মের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।

তৃতীয় কারণ : আল্লাহ আমাকে যে মা-বাবার ঘরে। জন্ম দিয়ে পাঠালেন, আমি তাঁর শুকরিয়া আদায় করি।

তাহলে স্পষ্ট হলো, নবী কারীম (সা.)-এর শুভ জন্মের শুকরিয়া আদায়ের পন্থা হলো নফল রোযা রাখা। এটাই স্বয়ং নবীজীর আদর্শ। এখন যদি কেউ প্রশ্ন করেন, এটাতো নবীর জন্য। এর জবাবে বলবো, গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর কাছে তাওবা করতে হয়। কিন্তু প্রিয়নবী (সা.) তো ছিলেন বেগুনাহ মাসুম। অথচ তিনিই অধিক তাওবা করতেন। যদি প্রশ্ন করি, কেন এই তাওবা? জবাবে বলা হবে উম্মতকে শিক্ষা দেয়ার জন্য।

এ প্রসঙ্গে নবী কারীম (সা.) বলেন- আমি শিক্ষকরূপে প্রেরিত হয়েছি। যদি এ হাদীসের দিকে লক্ষ্য করি, তাহলে তো এটাই দলিল যে নবী কারীম (সা.) নিজে নিজ জন্মের শুকরিয়া আদায়ে রোযা রেখেছিলেন উম্মতকে শিক্ষা দেয়ার জন্য।

কিন্তু এক শ্রেণীর লোক ১২ রবিউল আউয়াল। এলে খৃষ্টানদের তরীকায় তাঁর জন্মদিন পালন করে। এটা শরীয়ত গর্হিত ও নবীজীর আদর্শের বিপরীত কাজ। এক্ষেত্রে ভাবার বিষয় যে, নবীজীর সঠিক জন্ম তারিখ কোনটি? এ ব্যাপারে অনেক মতভেদ আছে। কারো মতে ১ রবিউল আউয়াল। কারো মতে ৮ রবিউল আউয়াল। কারো মতে ১২ রবিউল আউয়াল। তন্মধ্যে ৮ রবিউল আউয়ালই অধিক নির্ভরযোগ্য মত। তাহলে পরিষ্কার হলো, ১২ রবিউল আউয়াল নবী কারীম (সা.)-এর নিশ্চিত জন্মদিন নয়। আর যদি ধরাও হয় ১২ রবিউল আউয়াল নবীজীর জন্ম তারিখ, কিন্তু সেই দিনতো পৃথিবীতে একটিই ছিলো—যেদিন তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন। এই দিন প্রতি বছর আসে না। বরং প্রতি বছর নতুন নতুন ১২ রবিউল আউয়াল আসে। সুতরাং এদিন তাঁর জন্মদিন হয় কী করে? এটা নিছক বানানো সংস্কৃতি পালন মাত্র- যার সাথে বাস্তবতা নেই।

আর যদি প্রতি বছর ১২ রবিউল আউয়াল এলে নবীজীর জন্মের ১২ রবিউল আউয়ালের কথা স্মরণ হয় বলা হয়, তাহলে বলবো-নবী কারীম (সা.) ইহজগৎ ত্যাগ করেন ১২ রবিউল আউয়ালে এতে কারো দ্বিমত নেই। সুতরাং এদিন স্মরণ করলে তো নবীজীর ওফাতকেও স্মরণ করতে হবে। সুতরাং এদিন ঈদ বা ঈদে মীলাদুন্নবী পালন করা হবে কোন যুক্তিতে?

একটি দৃষ্টান্ত দেয়া যেতে পারে ধরুন, এক ব্যক্তি একই তারিখে জন্ম ও মৃত্যুবরণ করেছেন। এই ব্যক্তির সন্তানরা এখন কী করবেন? পিতার জন্ম উপলক্ষে আনন্দ করবেন, না তার মৃত্যুর কথা স্মরণ করে বাধিত হবেন? সামান্য বিবেকবান লোকও একথা স্বীকার করবেন যে, পিতার মৃত্যুর দিনে তারা আনন্দ করতে পারেন না। অথচ ওই শ্রেণীর লোকেরা আশিকে রাসূল দাবী করে রাসূলের মৃত্যুতে আনন্দ মিছিল ও জসনে জুলুস বের করে কী অদ্ভুত আশিকে রাসূলের কার্যকলাপ।

এছাড়াও ঈদ শব্দের অর্থ আনন্দ, আর রোযা মানে বিরত থাকা বা কৃচ্ছতা গ্রহণ করা। রাসূলুল্লাহ (সা.) স্বীয় জন্মের বারে রোযা রেখেছেন। তাহলে কী করে নবীজীর জন্মের শুকরিয়া আদায়ে এদিন ঈদ পালন করে তাঁর আদর্শের বিরোধিতা করা যেতে পারে?

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url