তিন তালাকের পর তাওবা করে সংসার করা যাবে?

 


সুওয়াল : এক ব্যক্তি রাগের মাথায় তার স্ত্রীকে এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক, বাইন তালাক বলেছে। রাগ থামার পর দু'জনেই খুব অনুতপ্ত হয়। এরপর স্বামী বিভিন্ন আলেমের নিকট যায়। কয়েকজন আলেম বললেন যে, তিন তালাক হয়ে গেছে। এখন ওই স্বামী-স্ত্রীর জন্য একসাথে থাকা বৈধ নয়। আরেক মসজিদের ইমাম বললেন, এভাবে রাগের মাথায় তালাক হয়নি। অতঃপর ওই মসজিদের ইমাম আর একজন হুজুরকে সাথে করে স্বামীর বাড়ীতে এসে স্বামী ও স্ত্রী দু'জনের হাত ধরিয়ে স্বামীর বাম হাত হুজুরের চাদরের কোথায় ধরিয়ে তাওবায়ে নাসুহা পাঠ করান এবং পাঁচ হাজার টাকা কাফফারা দেয়ার কথা বলে ওই ব্যক্তির নিকট থেকে নিয়ে যান। যে টাকা কাউকে তিন মাসের খরচ হিসেবে দিবেন বলে জানান। উক্ত মহিলাটি গর্ভবর্তী। প্রশ্ন হলো, ওই তালাক পতিত হয়েছে কি না এবং এ সম্পর্কে হুকুম কী?


জাওয়াব : ইসলামী শরীয়তের বিধান মতে, স্ত্রীকে রাগের মাথায় বা গর্ভবতী অবস্থায় তালাক দিলেও সে তালাক পতিত হয়ে যায়। সুতরাং প্রশ্নে বর্ণিত সূরতে ওই স্ত্রীর উপর তিন তালাক পতিত হয়ে সে তার স্বামীর জন্য সম্পূর্ণ হারাম হয়ে গিয়েছে। তালাকের পর থেকে তাদের আর পারস্পরিক কথাবার্তা বলা, দেখা-সাক্ষাৎ করা, ঘর-সংসার করা কিছুতেই জায়িয হবে না। তা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম হবে। মেলামেশা হলে তা যিনা-ব্যভিচার হবে।


এ অবস্থায় তারা হাজার বার তাওবায়ে নাসুহা করলে বা শতবার পাঁচ হাজার টাকা দিলেও তাদের একত্রে থাকা হালাল হবে না। সুতরাং যে ইমাম বলেছেন, রাগের মাথায় স্ত্রী তালাক হয়নি এবং তিনি তাদেরকে পাঁচ হাজার টাকা কাফফারা নিয়ে মিলিয়ে দিয়েছেন, তা কোনক্রমেই সঠিক হয়নি। তার কাজ দ্বারা বুঝা যাচ্ছে-তিনি কোন মুফতী নন। মাসআলাতো একমাত্র বিজ্ঞ মুফতী সাহেবের নিকট জিজ্ঞাসা করতে হয়। তাছাড়া তিনি কোন বিজ্ঞ আলেমও নন বলে বুঝা যাচ্ছে। অন্যথায় এমন শরীয়ত পরিপন্থী তুল মাসআলা দিতে পারতেন না। তাই তার কথা কোনভাবেই গ্রহণ করা যাবে না।


প্রকৃতপক্ষে সেই স্ত্রী তিন তালাক দ্বারা স্বামী থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন। এমতাবস্থায় তার সাথে স্বামীর একমাত্র হালালার সূরত ছাড়া ঘর-সংসার করার কোন পথ নেই। এমনকি বিবাহ দোহরালেও তারা স্বামী-স্ত্রীরূপে ঘর-সংসার করতে পারবেন না।


[হাওয়ালা সূরাহ বাকারা, ২৩০/ ফাতাওয়া আলমগীরী, ১ : ২৮২/ ফাতাওয়া শামী, ৩: ৪০৯]

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url