জান্নাতী নারীর গুণাবলী ও জীবন।

প্রতিটি মানুষের কোন না কোন একটি বিশেষত্ব থাকে। চাই সেটা ভালো হোক অথবা মন্দ। ঠিক তেমনি রমণীদেরও কিছু ভালো-মন্দ বিশেষত্ব রয়েছে। যে যেমন বিশেষত্বের অধিকারী হবে আল্লাহ তায়ালা তাকে তার যথার্থ প্রতিদান দিবেন। আল্লাহ পাক পরকালে নারীদের জন্য তৈরি করেছেন সুমহান জান্নাত; যা পেতে প্রতিটি নারীই আগ্রহী। কিন্তু সে জান্নাতের অধিবাসী হওয়ার জন্য কিছু গুণাগুণ থাকা প্রয়োজন। যার বিনিময় স্বরূপ আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে জান্নাত দান করবেন। পবিত্র কুরআন মাজীদে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জান্নাতী নারীদের ১০টি গুণাগুণ বর্ণনা করেছেন। যে নারী উক্ত ১০টি গুণ অর্জন করবে, আল্লাহ ওয়াদা দিয়েছেন; তাকে জান্নাত দান করবেন।

যেমন কুরআনে পাকে ইরশাদ হয়েছে-

إن المسلمين والمسلماذ والمؤمنين والمؤمناذ والقائدين والقانـذاذ والصادقين والصادقاذ والصابرين والصابر اذ والخاشعين والخاشعاذ والمصدقين والمنصة قاذ والقائمين والضـائـتاذ والحافظين فروجهم والحافظـاذ والذاكرين الله كثيرا والذاكراد أعد الله لهم مغفرة وأجرا عظيمًا

নিঃসন্দেহে মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যপরায়ণ পুরুষ ও সত্যপরায়ণ নারী, সবরকারী পুরুষ ও সবরকারী নারী, বিনয়ী পুরুষ ও বিনয়ী নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীলা নারী, রোযাদার পুরুষ ও রোযাদার নারী, লজ্জাস্থানের হেফাযতকারী নারী, অধিক পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণকারী পুরুষ ও নারী; আল্লাহ এদের জন্য বড় নিয়ামত ও মাগফিরাত প্রস্তুত করে রেখেছেন।

-সূরা আহযাব : ৩৫


উল্লেখিত আয়াতে নারী ও পুরুষের দশটি গুণের কথা বলা হয়েছে।

প্রথম গুণঃ মুসলিম হওয়া। অর্থাৎ, শরীয়তের বিধানসমূহ তথা নামায, রোযা, হজ্জ, যকাত ইত্যাদির ব্যাপারে পূর্ণ যত্নবান হওয়া।

দ্বিতীয় গুণঃ মুমিন হওয়া। ঈমানের উদ্দেশ্য হলো, বিশ্বাস বা আকীদাগত বিষয়াদি। যথা- আল্লাহ তায়ালার প্রতি বিশ্বাস, কিয়ামতের দিনে বিশ্বাস, তাক্বদীরে বিশ্বাস ইত্যাদি। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম শরীফের একটি প্রসিদ্ধ হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈমান। ও ইসলামের এই অর্থই জানিয়েছেন।

তৃতীয় গুণঃ আন্তরিক আনুগত্য। আল্লাহ তায়ালাকে সর্বান্তকরণে প্রভু ও মালিক স্বীকার করে একমাত্র তাঁর নৈকট্য ও সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে বন্দেগী করা।

চতুর্থ গুণঃ সত্যবাদী ও সত্যপরায়ণ হওয়া। অর্থাৎ কথায় সত্যবাদী হওয়া, কাজে সাহসী ও নিরলস হওয়া এবং রিয়া ও মুনাফেকী তথা কপটতা থেকে মুক্ত হওয়া।

পঞ্চম গুণঃ সবরকারী হওয়া। বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করা, চাহিদা থাকা সত্ত্বেও গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা এবং কষ্ট হলেও আল্লাহ তায়ালার ইবাদতে অটল ও অবিচল থাকা; এসব কিছুই সবরের অন্তর্ভুক্ত।

ষষ্ঠ গুণঃ খুশু অর্জন করা। অর্থাৎ নামাযের বাইরে মানুষের সাথে বিনয়ী হওয়া ও নামাযের ভেতরে আল্লাহ তায়ালার প্রতি একনিষ্ঠ থাকা। নামাযে অন্তরের মনোযোগিতার পাশাপাশি বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্থিরতাকে খুশু বলে।

সপ্তম গুণঃ দান করা। ফরয যাকাতের পাশাপাশি নফল দান-দক্ষিণতার প্রতিও যত্নবান হওয়া।

অষ্টম গুণঃ রোযা রাখা।

নবম গুণঃ লজ্জাস্থানকে পাপাচার থেকে হেফাযত করা।

দশম গুণঃ অধিক পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ করা। কেননা, আল্লাহ পাকের স্মরণই হলো সকল ইবাদতের প্রাণ। আল্লাহ তায়ালার স্মরণের মধ্যে থাকলে সকল পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা সম্ভব। যিকির-আযকার, বিভিন্ন সময়ের মাসনূন দু'আ, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত ও হাদীস শরীফ পাঠ ইত্যাদি সবকিছুই এর অন্তর্ভুক্ত।

রাজাধিরাজ বিশ্বস্রষ্টা মহান রাব্বুল আলামীন এ ধরাপৃষ্ঠে জিন ও মানবজাতি সকলকে সৃষ্টি করেছেন। এই পৃথিবীতে এবং আখেরাতে কিভাবে তারা শান্তি, সুখ-সফলতা ও জীবনে সমৃদ্ধি আনতে পারে তার জন্য আল্লাহ পাক কিছু সুনির্ধারিত নীতিমালা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যথা- নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত আদায় ও মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার করা এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান বাস্তবায়িত করে আল্লাহ তায়াঅর সন্তুষ্টি অর্জন করা।

যে ব্যক্তি এ নশ্বর পৃথিবীতে আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী স্বীয় জীবন পরিচালিত করবে, তার জন্যে রয়েছে মহান আল্লাহর দরবারে অমূল্য পুরস্কারের ব্যবস্থা। সে যে কি পুরস্কার আল্লাহ পাক তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন, পৃথিবীর কোন ব্যক্তি আজো পর্যন্ত তার সুস্পষ্ট বর্ণনা দিতে সক্ষম হয়নি। কিয়ামত পর্যন্ত কেউ দিতে পারবে না। তাহলে আমাদের জেনে নেয়া দরকার, কী সেই নিয়ামত; যা আল্লাহ পাক তাঁর বিশ্বাসী বান্দাদের জন্য সদা প্রস্তুত করে রেখেছেন। মনোমুগ্ধকর উদ্যান, ফুল-ফল আর সু-সৌরভে ভরপুর কানন, রঙ বেরঙের পাখ-পাখালীর পরমানন্দে উল্লাসিত মনে খোদার প্রেমে আত্মহারা হয়ে মনের সুখে গান করে দিবা-নিশি তাদের কলতানে মুখরিত বাগান, সবুজ বৃক্ষরাজির একে অপরের সঙ্গে পরমানন্দে আলিঙ্গন আর সারি সারি বৃক্ষের ছায়ায় পথ চলতে কতই না চমৎকার লাগে।

হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ পাক বলেছেন-

حدثنا الحميدي حدثنا سفيان حدثنا أبو الزناد عن الأعرج عن أبي هريرة قـال قـال رسـول الله صلى الله عليـه و سـلـم يـقـول الله أعـددذ لعبـادي الصالحين مالا عين رأذ ولا أذن سمعذ ولا خطر على قلب بشـر واقرءوا إن شئذم { فلا ذعلم نفس ما أخفي لهـم مـن قـرة أعين جزاء بما كانوا يعملون}

“আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন সমস্ত নিয়ামত তৈরি করে রেখেছি, যা কোন চক্ষু দেখেনি, কোন কর্ণ তা শোনেনি, কোন মানুষ তা কল্পনা করেনি।”

-বুখারী : ৩২৪৪


জান্নাতের দালানগুলো একটি স্বর্ণের ইটের সাথে মেশক দ্বারা আরেকটি রূপার ইট জোড়া দেয়া হয়েছে। যার কংকর মোতি ও ইয়াকুতের হবে। জান্নাতের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় জান্নাতের নাম হলো “জান্নাতুল ফিরদাউস”। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-

তোমরা যদি আল্লাহর নিকট জান্নাত চাও, তবে জান্নাতুল ফিরদাউস চাও। জান্নাতুল ফেরদাউস এর উপরেই আল্লাহর আরশ থাকবে। জান্নাতের হুরগণ সবাই ষোল বছরের পূর্ণ যুবতী হবে। আল্লাহ পাক হুরদেরকে এত সৌন্দর্য দান করেছেন যে, তা বর্ণনা করার ভাষা মানুষের নেই। যদি কোন হুর রাতের দিকে নজর করত তবে রাত দিন হয়ে যেত। তাদের মুখের থুথু এত সুগন্ধিপূর্ণ যে, তার এক ফোটা দুনিয়াতে পড়লে সমস্ত দুনিয়া সুগন্ধিতে ভরে যেত। আর পানিতে এক ফোটা পড়লে সমস্ত পানি দুধের মত সাদা ও আতরের মত সুগন্ধিময় হয়ে যেত।

একবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হল, হুযুর! আমরা জান্নাতে নিজেদের দুনিয়ার স্ত্রীগণকে পাব কি? তিনি জবাবে বললেন- হ্যাঁ, অবশ্যই পাবে। পুরুষ বা নারী যে কেউ জান্নাতের আলোচনা শুনলে তা পেতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এটা অবশ্যই ভাল। তবে মনে রাখা দরকার, তা যেন অলিক আশা ও মিথ্যা কামনায় পরিণত না হয়। জান্নাতের আশা তখনই যুক্তিযুক্ত হবে যখন তার সাথে নেক আমল থাকবে।

কুরআন পাকে ইরশাদ হয়েছে-

وذلك الجنة الذي أورثن موها بما كنده ذغملون

“তোমরা পৃথিবীতে যেসব নেক আমল করেছ তার বিনিময়য়ে তোমরা এই জান্নাতের অধিকারী হয়েছো।”

-সূরা যুখরুফ : ৭২


জান্নাতের নিয়ামতসমূহ নারীদের বাদ দিয়ে পুরুষের জন্য বরাদ্দ থাকবে না।

আল্লাহ পাক বলেন-

وسارعوا إلى مغفرة من ربكم وجنة عرضها السماوات والأرض أعد ذللمنقين

উক্ত আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে-

“জান্নাত তৈরি করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্যে”

-সূরা আল ইমরান : ১৩৩


এ আয়াতে "পরহেযগার” শব্দে নারী-পুরুষ উভয়ই শামিল। অন্য আয়াতে আরো স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে।

ومن يعمل من الضالحاد من ذكر أو أنثى وهو مؤمن فأوليـك يـن خلوت الجنة ولا يظلمون نقيرا

“মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে”

-সূরা নিসা : ১২৪


অনেক নারীর মনে জান্নাতের ব্যাপারে অপ্রয়োজনীয় ও অহেতুক প্রশ্ন জন্ম নিয়ে থাকে, যা মোটেই ঠিক নয়। কারণ প্রত্যেক ঈমানদার নারীর এ বিশ্বাস থাকা চাই যে, তার মঞ্জিল কোন বিপদ সংকুল মরুভূমি নয়। বরং চিরকাঙ্খিত জান্নাত। আর জান্নাতে প্রবেশ করা মাত্রই যাবতীয় কষ্ট-ক্লেশ ও দুর্ভাবনার অবসান ঘটবে। জান্নাত হবে অনাবিল সুখের চিরস্থায়ী বাসস্থান। 

কুরআনের ভাষায়-

لا يمسهم فيها نصب وماهم منها بمخرجين

“জান্নাতে তাদের কোন কষ্টই হবে না এবং তারা সেখানে থেকে বহিষ্কৃত হবে না”

-সূরা হাজর : ৪৮


যখন জান্নাতীদের যাবতীয় আলোচনা করা হয় তখন একটি কথা থেকে যায় যে, আল্লাহ তায়ালা জান্নাতী পুরুষদের জন্য সবকিছুই দিয়েছেন। সুন্দরী স্ত্রী ও হুর দেয়ার ঘোষণা করেছেন। কিন্তু জান্নাতী নারীদের জন্য এ জাতীয় কোন বর্ণনা নেই কেন? নারীদের মনে এ ব্যাপারে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক।

সেসব প্রশ্নের উত্তর নিম্নরূপ-

১. “আল্লাহ যা করেন সে বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা যায় না কিন্তু মানুষকে তার কৃতকর্মের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হবে। [সূরা আল আম্বিয়া-২৩]

لا يسأل عما يفعل وهم يسألون


২. লজ্জাশীলতা নারীর প্রধান বৈশিষ্ট। তার জন্য আল্লাহ পাক জান্নাতী নারীর জন্য নির্ধারিত সঙ্গীর বর্ণনা সুস্পষ্টভাবে দেননি। কারণ এতে তারা লজ্জিত হতে পারে।

৩. সৌদি আরবের বিশিষ্ট আলেমেদীন আল্লামা সালেহ আল উসাইমিন রহ. এ প্রসঙ্গে বলেন, আল্লাহ পাক জান্নাতী পুরুষের স্ত্রীর কথা সুস্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেন। কারণ, পুরুষের মধ্যে নারী আসক্তি ও নারী সঙ্গ কামনার পরিমাণ বেশি এবং এ ব্যাপারে সাধারণত পুরুষেরই অগ্রণী ভূমিকা থাকে। তাই তাদের স্ত্রীদের বর্ণনা স্পষ্টভাবে দেয়া হয়েছে। অপরদিকে জান্নাতী নারীদের স্বামীগণের বিবরণ স্পষ্টভাবে আসেনি। কিন্তু তার অর্থ এ নয় যে, তারা স্বামী সুখ থকে বঞ্চিত হবে। বরং মানবজাতির মধ্য থেকেই তাদের জন্য স্বামী নির্বাচন করা হবে। নারীদের দুনিয়াবী অবস্থার ভিত্তিতে তাদের জান্নাতী স্বামী নির্ধারিত হবে।

এ ব্যাপারে অনুসৃত নীতিমালা হবে নিম্নরূপ-

📝 বিয়ের পূর্বেই যদি কোন নারীর মৃত্যু ঘটে থাকে, তাহলে আল্লাহ পাক জান্নাতী কোন সুযোগ্য পুরুষের সাথে তার বিয়ের ব্যবস্থা করবেন। কারণ, হাদীস শরীফে উল্লিখিত হয়েছে জান্নাতে কেউ অবিবাহিত থাকবেনা। এ সম্পর্কে আল্লামা মুহাম্মদ সালেহ আল উসাইমিন রহ. বলেন, কোন নারী যদি অবিবাহিত অবস্থায় মারা যায়, তবে আল্লাহ তার জন্য এমন স্বামী নির্বাচন করবেন, যাতে তার চক্ষু শীতল হয়ে যায়। কারণ, জান্নাতের যাবতীয় নিয়ামত শুধু পুরুষের জন্য নির্দিষ্ট নয়। বরং নারী, পুরুষ উভয়েই সে নিয়ামতের অধিকারী হবে। আর বিয়ে হচ্ছে অন্যতম জান্নাতী নিয়ামত।

📝 যে নারী তালাক প্রাপ্তা হয়ে দ্বিতীয়বার বিয়ের পূর্বেই মৃত্যুবরণ করবে তার জন্যেও জান্নাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুযোগ্য স্বামীর ব্যবস্থা করা হবে।

📝 কোন বিবাহিত নারী জান্নাতের অধিকারী হল, কিন্তু তার স্বামী (কাফির বা মুরতাদ হবার কারনে) জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ পেল না এমন নারীরাও জান্নাতে আল্লাহর মেহেরবানিতে উত্তম স্বামী লাভ করবে । উপরোক্ত নারীদের স্বামী কারা হবে, এ ব্যাপারে আল্লামা মুহাম্মদ সালেহ আল উসাইমিন রহ. বলেন, – তাদের স্বামী হবে সে সকল পুরুষ যারা অবিবাহিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে বা যাদের স্ত্রীগণ (কাফির বা মুরতাদ হওয়ার কারণে) জান্নাতে প্রবেশের অধিকার হারাবে।

📝 যে নারী বিয়ের পর তার স্বামীর পূর্বে মৃত্যুবরণ করবে জান্নাতে সে তাকেই স্বামী হিসেবে পাবে।

📝 যে নারীর স্বামী মারা যায় এবং সে বিধবা নারী পরবর্তীতে অন্য কাউকে বিয়ে না করে তাহলে তার জান্নাতী সংসারেও সে স্বামীর সাথেই থাকবে।

📝 যে নারী একবার বা একাধিকবার বিধবা হওয়ার কারণে একাধিক স্বামী গ্রহণ করেছেন, সে নারী তার সর্বশেষ স্বামীর স্ত্রী হিসেবেই জান্নাতে বসবাস করবে। রাসূল সা. বলেন, “নারী জান্নাতে তার সর্বশেষ স্বামীর জন্য নির্ধারিত থাকবে।”

দুনিয়ার যেসব নারী জান্নাতে যাবে, আল্লাহ তাদেরকে কুমারিত্ব ও যৌবন দান করবেন। রাসূল সা. বলেন, জান্নাতে কোন বৃদ্ধা প্রবেশ করবে না। আল্লাহ মহিলাদের যখন জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ দান করবেন, তখন তাদেরকে কুমারী ও যুবতী রূপেই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন । বর্ণিত আছে যে, দুনিয়ার নারীরা জান্নাতের মধ্যে হুরদের তুলনায় কয়েকগুণ বেশী সুন্দরী ও লাবণ্যময়ী হবে।

আল্লামা ইমাম ইবনুল কাইয়ুম রহ. বলেন, জান্নাতের মধ্যে কারও জন্য নিজের স্ত্রী ছেড়ে পরস্ত্রীর নিকট যাওয়ার অবকাশ থাকবে না। হে মুসলিম রমণীকুল! জান্নাত যেভাবে পুরুষদের জন্য তৈরী করা হয়েছে তেমনিভাবে তা আপনাদের জন্যও তৈরী করা হয়েছে।

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-

إن المذقين في جناذ ونهر في مقعد صدق عند مليك مقديره

নিশ্চয়ই পরহেযগার নর ও নারীগণ থাকবে উদ্যান (জান্নাত) ও নহরে। যোগ্য আসনে, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহর সান্নিধ্যে।

-সূরা কুমার : ৫৫


অতএব, আল্লাহকে ভয় করুন। আখেরাত গঠনের সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করবেন না। ক্ষণস্থায়ী এ জীবনের পরেই আসছে চিরস্থায়ী জীবন। জান্নাত হোক আপনার শেষ ঠিকানা ও স্থায়ী আবাসভূমি। তবে মনে রাখবেন, শুধু মিথ্যা কামনা আর পাপাচার দ্বারা জান্নাত পাওয়া মোটেই সম্ভব নয়। জান্নাতে যেতে হলে প্রয়োজন ঈমান ও নেক আমল। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী সবসময় স্মরণ করুন-

যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামায নিয়মিত আদায় করবে, রমযানের রোযা পালন করবে, নিজের সতীত্ব রক্ষা করবে ও স্বামীর আনুগত্য করবে কিয়ামতের দিন তাকে বলা হবে, তোমার ইচ্ছামত যে কোন দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।

-মিশকাত শরীফ

আমরা অনেকেই আমাদের সৌন্দর্য ও রূপ নিয়ে বড়াই করি। আল্লাহর কাছে শোকর আদায় করি রূপ সৌন্দর্যের কারণে। কিন্তু নামায, রোযা আদায় করি না। এটা সম্পূর্ণ ভুল।

-প্রবাদ আছে-

দেখতে শিমুল ফুল বড়ই সুন্দর সুবাস বিহনে কেউ তাকে না করে কদর। 

রূপে কেউ বড় নয়, বড় হয় গুণে কুরূপ কোকিলের গান সকলেই শুনে।


সাবধান! সেসব দুরাচারী থেকে নিরাপদ দূরুত্ব বজায় রাখুন, যারা আপনাদের চরিত্র নষ্ট করে পদার্থহীন বানিয়ে ও পাপের সাগরে ভাসিয়ে আপনাদেরকে জান্নাতের সীমাহীন সুখ থেকে বঞ্চিত করতে চায়। নীতিহীন বক্তা, লেখক-লেখিকার চটকদার বুলি ও আকর্ষণীয় প্রচারণায় প্ররোচিত হবে না। এ যুগের অধিকাংশ টিভি চ্যানেল মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদা ও নৈতিকতা ধ্বংসের কাজে নিয়োজিত।

আল্লাহ তায়ালা যথার্থ বলেছেন-

ودوالوذكفرون كما كفروا فذكونون سواء ...

তারা চায় যে, তারা যেমন কাফের তোমরাও তেমনি কাফের হয়ে যাও।

-সূরা নিসা : ৮৯


হে আল্লাহ! আমাদের মুসলিম নারীকূলকে জান্নাতের অধিকারী হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমাদেরকে সৎ পথে থাকার ও সত্যের দিশারী হওয়ার শক্তি দিন। আর আমাদেরকে পাশ্চাত্য নারী স্বাধীনতার ধজ্জাধারী মানবরূপী শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে হেফাজত করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url