জুমার নামাজের পর দোয়া করার হুকুম কি, জুমার নামাজের পর দোয়া না করে সুন্নত পড়া যাবে?

 


সুওয়াল : আমাদের স্থানীয় মসজিদে বিশেষ করে শুক্রবার জুমু'আর নামাযে ২৫০/৩০০ জনের জামা'আত হয়। ২/৩ জন হুজুর আছেন যারা সবসময় ইমাম সাহেব সালাম ফিরানোর সঙ্গে সঙ্গে সুন্নাত নামায আরম্ভ করে দেন, সকলের সাথে দু'আয় শরীক হন না। ইমামের দু'আ শেষ হওয়ার আগেই তাদের সুন্নাত নামায সমাপ্ত হয়ে যায়। তাই তাদের ব্যাপারে অনেকে অনেক মন্তব্য করে থাকেন।

দু'আ যদিও মুস্তাহাব এবং নামাযের অংশ নয়, তবুও নামাযের ও পরিবেশের সৌন্দর্য রক্ষার্থে তাদের দু'আ করা একান্ত কর্তব্য নয় কি? এ ব্যাপারে শরয়ী হুকুম কি?


জাওয়ার : দু'আ নামাযের অংশ নয়। ইমাম সাহেবের সালাম ফিরানোর সাথে সাথে নামায সমাপ্ত হয়ে যায়। তাই সালাম ফিরানোর পর আর ইমাম সাহেবের ইকতিদার বিষয় বাকী থাকে না। তাই এরপর যার ইচ্ছা দাঁড়িয়ে সুন্নাত পড়তে পারেন বা অন্যকোন কাজে লিপ্ত হতে পারেন। আর যার ইচ্ছা একাকী দু'আও করতে পারেন। সে হিসেবে তখন ইমাম সাহেবও একাকী দু'আর নিয়তে দু'আ করতে পারেন। সেই অবস্থায় এ দু'আ ইজতিমায়ী দেখা গেলেও হুকুমের দিক দিয়ে ইনফিরাদীই থাকে। তাই কখনো ইমাম সাহেব লম্বা সময় দু'আ করলে, কেউ তাতে আপত্তি জানাতে পারবে না, বরং তখন কারো জরুরী কাজ থাকলে ইমাম সাহেবের আগে নিজের দু'আ শেষ করে চলে যেতে পারেন। অথবা সেখানে থেকেও কেউ ইমাম সাহেবের সাথে দু'আয় শরীক না হলেও কোন কোন ক্ষতি নেই। বস্তুত এ দু'আ করা বা ইমামের সাথে বা একাকী করা কিংবা না করা যার যার ব্যক্তিগত বিষয়, এতে কারো ব্যাপারে অন্যের কিছু করার বা বলার নেই।


বরং নামায শেষে এভাবে দু'আ করাকে জরুরী মনে করা এবং ইমাম সাহেবের সাথে এতে ইকতিদা করাকে আবশ্যক সাব্যস্ত করা বিদ'আত। তাই আমাদের দেশে অনেক স্থানে যে লোকজন জরুরী কাজ থাকলেও চলে যান না, বরং ইমামের মুনাজাতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন, এমনকি ইমাম সাহেবের এতে বিলম্ব হলে, বলেন হুজুর তাড়াতাড়ি মুনাজাত করে দেন। এ রীতিটা ঠিক নয়। কেননা, নামাযের সালাম ফিরানোর পর ইমাম সাহেবের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। তাই তখন দু'আ বা মুনাজাতের জন্য তাঁকে বাধ্য করা যায় না। অথচ সেই অবস্থায় মনে হয় মুসল্লীগণ মনে করছেন, নামায এখনও শেষ হয়নি, মুনাজাতের দ্বারা শেষ হবে। এটা গলদ রুসম।


সুতরাং উল্লিখিত সুরতে আপনাদের মসজিদে ইমাম সাহেবের সালাম ফিরানোর সাথে সাথে যারা সুন্নাতের জন্য দাঁড়িয়ে যান, তাদেনা এ কাজটি সঠি আছে। তাই তাদেরকে এ ব্যাপারে কিছু বলা বা তাদের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য সমালোচনা করা কিছুতেই ঠিক হবে না। বরং সকলেরই যার যার মতো করে আমল করা উচিত এবং অন আমলের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা কর্তব্য।


[হাওয়ালা : সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৯৯২/ জামি'তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪৭৬]

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url