শিশু খেতে না চাওয়ার কারণ ও সমাধান

 

শিশু খেতে না চাইলে করণীয়

শিশু খেতে চায় না, এটি অনেক বাবা-মাদের অভিযোগ। তাদের সুবিধার্থে আমি এখানে শিশুদের থেকে না চাওয়ার কারণ ও তার সমাধান তুলে ধরছি। যেগুলো স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত।


প্রথম কারণ : ছয় মাস (পূর্ণ) হওয়ার পর থেকে প্রথম শিশুকে খাবার দিলে সে মুখ থেকে খাবার বের করে দেয়। কিন্তু মা বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা মনে করে, শিশু খেতে চাচ্ছে না।
সমাধান : শুরুতেই খাওয়া শেখানোয় শিশু এমন করতে পারে, এটা স্বাভাবিক। সেজন্য প্রথম কয়েক দিন/মাস শিশুকে বেশ সময় নিয়ে খাওয়াতে হবে।


দ্বিতীয় কারণ : মা শিশুকে জোর করে তাড়াতাড়ি খাওয়াতে চায়, সময় নিয়ে খাওয়াতে চায় না। তাই শিশু বিরক্ত হয়ে খাবার ফিরিয়ে দেয়।
সমাধান : তাড়াতাড়ি করার জন্য শিশুকে জোর করা যাবে না, তার মুখে যতটুকু খাবার আছে সেটা গিলে ফেলা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে মায়ের কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে।


তৃতীয় কারণ : মা শিশুকে খাওয়ানোর সময় উৎসাহ দেন না। তাই শিশু একঘেয়েমিতে ভুগে।
সমাধান : খাওয়ার সময় শিশুকে উৎসাহ দিতে হবে। খাবারের প্রশংসা করতে হবে যে, তাকে যেটা খেতে দেয়া হয়েছে, সেটা খেতে খুব ভালো ও মজা। এছাড়াও তাকে নানাভাবে উৎসাহ দিতে হবে। যেমন- এই তো ভালো ছেলে, কি সুন্দর খাচ্ছে। দেখ, এই সবজিটা কি সবুজ, এই ফলটা কত রঙিন ইত্যাদি।


চতুর্থ কারণ : শিশুর খাবার শক্ত হলে সে তা চিবাতে বা গিলতে পারে না। এ জন্য খাওয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলে।
সমাধান : সেজন্য শুরুতে শিশুকে চটকানো খাবার দিতে হবে।


পঞ্চম কারণ : শিশুর যদি খাবারের স্বাদ পছন্দ না হয়, খাবার যদি বেশী মশলাযুক্ত বা বেশী ঝাল কিংবা বেশী লবনাক্ত হয়।
সমাধান : খাবারে মশলা মেশানোর আগে শিশুর জন্য এক টুকরো মাছ/গোশত তুলে রাখতে হবে। ঝাল অথবা লবণ বেশী হলে ডাল বা পানিতে ধুয়ে নিতে হবে।


ষষ্ঠ কারণ : শিশু অসুস্থ হলে খেতে চায় না।
সমাধান : শিশু যেটা খেতে পছন্দ করবে, তার জন্য সেটা রান্না করতে হবে। সেটা যেন নরম হয় এবং বারে বারে তাকে খেতে দিতে হবে।


সপ্তম কারণ : শিশু যখন ক্লান্ত থাকে বা যখন শিশুর ঘুম ঘুম ভাব থাকে, তখন সে খেতে চায় না।
সমাধান : এ সময়ে শিশুকে খাওয়ানো যাবে না। তার জেগে ওঠার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।


অষ্টম কারণ : শিশুর খাবার বেশ পাতলা করে তৈরী করা হলে তাতে শিশুর পেট ভরে যায়। কিন্তু এতে পুষ্টির পরিমাণ কম থাকে।
সমাধান : সে জন্য শিশুর খাবার পাতলা করে তৈরী করা উচিত নয়। তাকে চটকানো খাবার তার বয়স অনুযায়ী ঘনত্বের মাপে দিতে হবে।


নবম কারণ : শিশুর পাকস্থলী বেশ ছোট, তাই শিশু যদি খাবার খাওয়ার আগে চিপস, জুস, পানি বা অন্যকোন তরল খাবার দিয়ে পাকস্থলী ভরে ফেলে, তাহলে সে খেতে চাবে না।
সমাধান : খাওয়ার প্রাক্কালে শিশুকে চিপস, জুস ইত্যাদি দেয়া যাবে না। আবার অনেক খাবার এক সাথে মেশানো যাবে না। বিভিন্ন ধরনের খাবার আলাদাভাবে দিতে হবে। তেমনি। মিষ্টি জাতীয় খাবার লবণাক্ত খাবারের সাথে মেশানো যাবে না। আবার সবুজ শাক-সবজী মাছ বা ডিমের সাথে মেশানো যাবে না। আবার সব খাবার পর্যায়ক্রমে দিতে হবে, একসাথে নয়।


দশম কারণ : শিশু যখন নিজে খেতে চায়, তখন যদি তাকে নিজে খেতে দেয়া না হয়, তখন সে খাবারের প্রতি ঝোঁক হারিয়ে ফেলে।
সমাধান : শিশু যখন খেতে চায়, তখন তাকে খাবার দিতে হবে। আবার যদি নিজে খেতে চায়, তাকে সেভাবেই দিতে হবে। আর সেক্ষেত্রে শিশু তার হাত দিয়ে ধরতে পারে। এমন খাবার দিতে হবে। তবে খাবারের আগে সাবান দিয়ে শিশুর হাত ধুয়ে দিতে হবে।


একাদশ কারণ : শিশু যখন খেলাধুলা বা বন্ধুদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তখন সে খেতে চায় না।
সমাধান : খাবার সময় শিশুকে খেলনা বা খেলাধুলা দিয়ে ব্যস্ত রাখা যাবে না। খেলার সময় তাকে খাওয়ানো উচিত নয়। শিশু খাওয়া থেকে অমনোযোগী হয়-এমন সব কিছু সরিয়ে ফেলতে হবে।


দ্বাদশ কারণ : শিশুর খাবার মজাদার না হলে সে খেতে চায় না।
সমাধান : সেজন্য খাওয়ানোর আগে মাকে তার খাবার চেখে দেখতে হবে।


ত্রয়োদশ কারণ : একই খাবার প্রতিদিন প্রতিবার খাবার সময় দেয়া হয়। যেমন-সুজি ও খিচুড়ি।
সমাধান : বড়দের মতো শিশুরাও বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন স্বাদের বিভিন্ন রঙের ও বিভিন্ন ঘনত্বের খাবার পছন্দ করে। তাই তাদের রুচির গুরুত্ব দিতে হবে।


চতুর্দশ কারণ : শিশুর খাবারের পরিমাণ, কতবার, কী ধরনের খাবার খাবে এগুলো তার বয়স অনুযায়ী না হলেও সে খেতে চায় না।
সমাধান : শিশুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার খাবারের অভ্যাসও পরিবর্তন করতে হবে। যেমন- খাবারের পরিমাণ, কতবার খাবে, কী ধরনের খাবে ইত্যাদি। এ ব্যাপারে তার পছন্দ অপছন্দকে গুরুত্ব দিতে হবে।

এভাবে শিশুর মেজাজ ও অবস্থা-প্রকৃতি বুঝে তাকে খাবার দিতে হবে। তাহলেই সে আগ্রহ নিয়ে খাবার খাবে। এ জন্য শিশুর রুচিবোধের প্রতি লক্ষ্য রাখা অবশ্যই কর্তব্য।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url