গুনাহকে গুনাহ মনে না করা বা গুনাহকে ছোট মনে করার পরিণতি

 

গুনাহকে ছোট মনে করার পরিণতি

বর্তমান সমাজে হারাম কাজ নির্দ্বিধায় করা হচ্ছে পাপ কাজকে তুচ্ছ মনে করা হচ্ছে এর পরিণাম সম্পর্কে কারো কোন ভয় নেই । আর এর জন্যই গুনাহকে ত্যাগ করা হচ্ছে না। বরং দিন দিন বেড়েই চলছে । গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য সব থেকে বেশী প্রয়োজন হলো দৃঢ় সংকল্পের, এরপর প্রয়োজন হলো চেষ্টার গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার এ দুটি কাজ মানুষের মাঝে নেই বললেই চলে । প্রত্যেকেই গুনাহ থেকে নিজেকে বাঁচাতে সক্ষম। কেননা, আল্লাহ তা'য়ালা বলেছেন,


“আল্লাহ তায়ালা কারো উপর তার সাধ্যের বাহিরে কোন কিছু চাপিয়ে দেননি ।”

-সূরা বাকারা : আয়াত ২৮৬


সুতরাং সাধ্যের ভিতরে বলেই আল্লাহ তা'য়ালা পাপকে হারাম ও ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছেন।

মানুষ যে গুনাহকে বড় মনে করে, কোন বাহানাতেই তা করতে সাহস পায় না কিন্তু তুচ্ছ মনে করা হলে তাকে কেউ রুখতে পারে না। একজন জ্ঞানী বলেছেন,

“ছোট পাপকে অল্প মনে করো না। কেননা বড় পাপ ছোট পাপ থেকেই সৃষ্টি"


আজ মানুষ আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রেখে কোন কোন গুনাহের কারণে কেমন শাস্তি হবে তা মানে, কিন্তু তদানুযায়ী আমল করে না। বরং মনে করে, এটা তো ছগীরা গুনাহ।


ভেবে দেখুন, ক্ষুদ্র একটি অগ্নিকণা কি সর্বনাশ ডেকে আনে। যারা ছগীরা গুনাহকে তুচ্ছ মনে করেন তারা ক্ষুদ্র একটি অগ্নিকণা নিজের ঘরের চালে রেখে দেখুন। অল্পক্ষণের মধ্যে তা সমস্ত ঘরকে জ্বালিয়ে ছাই করে দিবে। তদ্রুপ ছগীরা গুনাহও সমস্ত নেক কাজকে ধ্বংস করে দেয়।


একজন জ্ঞানী বলেছেন, আরশের তুলনায় আসমান নিম্মে হলেও জমিনের তুলনায় অনেক উর্ধ্বে।


অর্থাৎ আরশ অপেক্ষা আসমান ছোট হলেও জমিন অপেক্ষা অনেক বড়। ঠিক তেমনি কুফুরী নয় এমন গুনাহ কুফুরী থেকে নিম্নে হলেও তা নিজে অনেক বড়।


গুনাহের কাজ আমরা খুব অনায়াসেই করে যাই। যখন বলা হয়, গুনাহের কারণে জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে যায় তখন সহজ উত্তর আসে, আমি তো গুনাহগার আমি জাহান্নামে যাব অর্থাৎ জাহান্নাম ও শাস্তির কোন পরোয়াই তার নেই যেন মামার বাড়ি বেড়াতে যাবে । যাদের নিকট জাহান্নাম খুব সহজসাধ্য বিষয় তারা তাদের ১টি হাত আগুনে ৫ সেকেন্ড রেখে পরীক্ষা করে দেখুন কতটা সহজসাধ্য! অথচ জাহান্নামের আগুনের প্রচন্ডতা কয়েক গুন কমিয়ে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছে । দুনিয়ার আগুনই যদি সহ্যের বাহিরে হয় তবে জাহান্নামের কথা তো কল্পনাই করা যায় না।


হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূল বলেছেন-

জাহান্নাম তার রবের নিকট প্রার্থনা করে বলে, আমার এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে ফেলছে। তখন আল্লাহ তা'য়ালা তাকে দুইটি শ্বাস ফেলার নির্দেশ দেন। একটি গরমকালে অপরটি শীতকালে । গরম ও শীতকালে শীত ও গরমের যে তীব্রতা অনুভব করা হয় তা জাহান্নামের শ্বাসের কারণেই।

-তিরমিযী


গুনাহ গুনাহই। চাই তা ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হোক না কেন । কানে ইয়ারফোন দিয়ে গান শোনা, ছবি দেখা, সুদ-ঘুষ, মিথ্যা, গীবত, অত্যাচার, কষ্ট দেয়া, কুদৃষ্টি ইত্যাদি এগুলোর কোনটাই সাধারণ কোন গুনাহ নয় । কিন্তু আমাদের নিকট যেন মামুলি বিষয় । যখন সুদ-ঘুষ ছেড়ে হালাল পন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়, তখন বলা হয় তা ব্যতীত আয় কমে যাবে। অথচ বলা উচিৎ তা ব্যতীত বিলাসিতা করা যায় না। আর ভোগবিলাসের পরিচর্যাও শরীয়ত কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। তাদের এই ওযর কিছুক্ষণের জন্য মেনে নিয়ে যদি বলা হয়, পর্দা, গীবত, কু-দৃষ্টি ইত্যাদি পরিত্যাগে তো কোন আয় কমে যায় না। তবে এগুলো কেন বর্জন করা হয় না? অথচ রাসূল বলেছেন, “পাপের কারণে রিযিক কমে যায়।"


আবার কেউ ধার আদায়ে বিলম্ব ও টালবাহানা করে। অথচ হাদীসে এসেছে, “ঋণ বান্দার জান্নাতে যাওয়া থেকে আটকে রাখে।” কেননা বান্দাহর হক্ব বান্দাহর ক্ষমা ব্যতীত আল্লাহ তা'য়ালা ক্ষমা করেন না। এসবই দুনিয়াকে আখেরাতের উপর প্রাধান্যদান জনিত পাপের শাখা।


আমরা “আল্লাহ গাফুরুর রাহীম” এর অর্থ সম্পূর্ণ ভুল বুঝি আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু হওয়ার অর্থ এই নয় যে, পাপের পরিণামে যে ক্ষতি হয় তাও হবে না। যদি এরূপই হয় তবে কেউ বিষপান করে দেখুক। কেননা এর অর্থ এটাই হয় যে, আল্লাহ গাফুরুর রাহীম বলে অনিষ্টকারী পদার্থের অনিষ্টকারী গুণ লোপ পায়! তবে তো বিষপানেও তার কোন ক্ষতি না হওয়াই উচিৎ। আশ্চর্যের বিষয়, আমরা কেমন করে ধারনা করি যে উক্ত ভরসা মনে স্থান দিলে গুনাহ তার কোন ক্ষতি করবে না?


অনেকে ধারণা করে, আখেরাতকে দুনিয়া থেকে অগ্রগন্য করা অসম্ভব। এগুলো বুযুর্গদের কাজ। এই শ্রেণীর লোকেরা গুনাহ করে নিজেকে পাপীও মনে করেন না।

আবার অনেকে মনে করে পরে তত্তবা করে নিব। এটা চরম ভুল। অস্বীকার করি না যে, তওবা গুনাহের জন্য বিষ-নাষক ঔষধ বিশেষ । কিন্তু বিষ-নাষক ঔষধের ভরসায় বিষ পান করা কত বড় বোকামি! তদ্রূপ তওবার ভরসায় পাপ কাজ করাও আস্ত বোকামি। কি নিশ্চয়তা আছে যে, এর পরে তার আয়ু বাকী থাকবে! অনেকে গুনাহ করতে করতেই মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। পাপ কাজ থেকে অবসরের অবকাশও পায় নি।


দ্বিতীয়ত : তওবার ভরসায় একবার গুনাহ করলে তার প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয়ে যায়। পরে তওবার সুযোগ ঘটে না। কেননা গুনাহ না করার দৃঢ় সংকল্প করাও তওবার জন্য অপরিহার্য কর্তব্য।


হে আল্লাহ! আমার তওবা কবুল করুন” এমন মৌখিক তওবা গ্রহনীয় নয়। বিশেষত যখন পাপের প্রতি মোহ ও আকর্ষণ তৈরী হয়ে যায় তখন তওবা করতে উদ্যত হলেও নফস বাধা দেয় বলে এটা তো পুনরায় করবেই! কাজেই তওবার সুযোগও হয় না নফস ওয়াদা করে, এই গুনাহের সাধ পূর্ণ হলে সমস্ত গুনাহের তওবা একসঙ্গে করে নিব। কিন্তু পরিশেষে এই ওয়াদাও পূর্ণ হয় না। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, 'পাপ কাজের দরুন অন্তরে মরিচা পড়ে যায় এবং পুন: পাপ কাজ করতে থাকলে উক্ত মরিচা বৃদ্ধি পেতে থাকে।


এই সম্বন্ধে জ্ঞানী বলেন,
প্রত্যেক গুনাহ হৃদয় দর্পনের জন্য মরিচা। এই মরিচা যতই বাড়তে থাকে হৃদয় ততই তা অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে থাকে। এই অন্ধকার যতই বাড়তে থাকে নফসের অবাধ্যতাও ততই বৃদ্ধি পেতে থাকে। অবশেষে আর তওবারই তওফিক হয় না।


অতএব যখন বলা হয়, সমস্ত গুনাহ থেকে তওবা করে নাও তখন সে বলে, এত অসংখ্য পাপকে একটি মাত্র তওবা কী করে। মোচন করবে! মোটকথা শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়ে।


সাবধান! ইহা নফসের অনেক বড় ধোকা। সে তওবার ভরসায় পাপ কাজের প্রতি উৎসাহিত করে থাকে।

আল্লাহকে ভয় করুন। নফসের এমন ধোকায় পড়বেন না। হাদীসে আছে, “হে আয়শা! পাপকে কখনও ক্ষুদ্র মনে করো না।”


বাস্তবিকই তওবার ভরসায় যারা গুনাহের প্রতি অগ্রসর হয় তারা তাকে ছোটই মনে করে থাকে । আল্লাহ পাক বলেন, হে মানুষ! কে তোমাকে তোমার মহান পালনকর্তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত করল।

-সূরা ইনফিতার : আয়াত


কেন তুমি তোমার পালনকর্তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছ? আল্লাহকে ফেলে মানুষের গোলামী করছ?

তাই আসুন, আমরা সবাই গুনাহের কাজ ছেড়ে নেক কাজের প্রতি উৎসাহিত হই আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে নেক কাজ করার এবং শুধু আল্লাহকেই ভালোবেসে সব কিছুতে দ্বীনকে অগ্রগামী রাখার তওফিক দান করুন। (আমীন)

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url