দাম্পত্য জীবনের সহজ সমাধান

 

সুখী দাম্পত্য জীবন

দাম্পত্যজীবনের পথপরিক্রমায়

বিয়ের পূর্বে প্রতিটি মেয়েই স্বপ্ন দেখে সুখী-সুন্দর দাম্পত্যজীবন গড়ার। মনে হয়, সুখ কতই না কাছের। কিন্তু বাস্তব জীবনে পদার্পণ করার পর সুখকে মনে হয় এক অচিন পাখি। যাকে সহজে পোষ মানানো যায় না। দেখা যায়, বিয়ের পর প্রথম প্রথম মনের মিল থাকলেও এক সঙ্গে থাকতে গিয়ে দু'জনের জীবনধারায় বহু পার্থক্য ধরা পড়ে তখন মানিয়ে চলা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। যাকে বলা হয় অ্যাডজাস্টমেন্ট সমস্যা।


ছোটখাটো ঝগড়া দাম্পত্যজীবনে একটা সমস্যা। ঝগড়া নেই বা হয়নি এমন দম্পতি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর সামান্য কোন বিষয়, যার সমাধান কঠিন নয়, আলোচনায়ও তার সমাধান হতে পারে, অথচ তা নিয়ে বেঁধে যায় ঝগড়া। এতে অনেক সময় স্ত্রী রাগ করে বাবার বাড়ী চলে যান, ঘটে নানান ঘটনা।


এজন্য এ বিষয়ে কিছু পরামর্শমূলক আলোচনা পেশ করবো, যাতে সুখসন্ধানী দম্পতিগণ সহজ সমাধান খুঁজে পান।


একজন বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী বলেন, যদি না কেউ ভালো তার্কিক হয়, তার পক্ষে ভবিষ্যত বিবাহিত জীবনে সুখী হওয়া সম্ভব। অর্থাৎ যখন স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়ার সূত্রপাত হয়, তখন তাদের মধ্যে একজন পরাজয় স্বীকার করে নিলে ঝগড়াটা গড়ায় না। কিন্তু জোরালো যুক্তিতর্ক দিয়ে বিতর্ক টিকিয়ে রাখলে সমস্যা আরো ঘনিভূত হয়ে ওঠে।


দাম্পত্যজীবনে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় স্বামী-স্ত্রী দু'জন দু'টি আলাদা পরিবেশে বড় হন। তাছাড়া প্রতিটি মানুষ স্বাভাবিকভাবেই বলাদা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এজন্য দৈনন্দিন জীবনে দেখা দেয় খুটিনাটি মতপার্থক্য, নানা বৈপরীত্য। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই আপনি আপনার স্বামী কিংবা স্ত্রীর সাথে চলবেন। একজন বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী এ ব্যাপারে বলেন "যখন আপনি বিয়ে করবেন, আপনি অবশ্যই আলাদা বৈশিষ্ট্যের একজনের সঙ্গী হবেন" সেক্ষেত্রে একটি কথা সর্বদা মনে রাখবেন যে, সুখী দাম্পত্য জীবন গড়তে বা নিজের বাসগৃহকে শান্তির ঠিকানা করে তুলতে চাইলে, পারস্পরিক সহনশীলতা ও সমঝোতার কোন বিকল্প নেই।


বলা বাহুল্য, অনেক সুখী ও সফল দম্পতিকেই দেখা যায় যে, তারা পরস্পর বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও সুখী দাম্পত্য জীবনযাপন করছেন। তাদের এই বৈশিষ্ট্যের কারণে দাম্পত্যজীবনের ক্ষেত্রে কোন টানাপোড়েন বা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে না। সুন্দর সমঝোতার ফলেই এটা সম্ভবপর হয়েছে।


সঙ্গীর উপর নিজের ব্যক্তিগত মতামত জোর করে চাপিয়ে টানাপোড়েন সৃষ্টি কোন অবস্থাতেই সঙ্গত হতে পারে না। আপনি নিজেকেই প্রশ্ন করুন, কী পেলেন নিজের মতামতের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত? এটা প্রত্যেকের মনে রাখা উচিত যে, এভাবে নিজের মতামত প্রতিষ্ঠা করতে যাওয়া একেবারেই অনর্থক মূল্যহীন ও গুরুত্বহীন একটা ব্যাপার। অথচ তা-ই সংসারে সংঘাত ও অশান্তির সৃষ্টি করে।


এছাড়াও প্রয়োজন আত্মবিশ্লেষণ। স্বামী-স্ত্রী নিজেকে নিয়ে বিশ্লেষণ ও চিন্তা-ভাবনা করলে দেখা যাবে নিজের মধ্যে এমন কিছু দোষ রয়েছে যা আপনার সঙ্গীর কাছে অসহনীয়। সেক্ষেত্রে সঙ্গীর কথা অনুযায়ী আপনি কি নিজেকে পুরোপুরি বদলে ফেলতে পারবেন না?


আল্লাহ তা'আলা কুরআনুল কারীমের সূরাহ নিসার ১৯নং আয়াতে ইরশাদ করেন- "নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন যাপন কর। অতঃপর যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়তো তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছো, যাতে আল্লাহ অনেক কল্যাণ রেখেছেন"।


হাদীস শরীফে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে- "কোন পুরুষ যেন কোন মহিলার সাথে বৈরী আচরণ না করে, যদি তার কোন এক স্বভাব অপছন্দ করে, তাহলে তার অন্য স্বভাব পছন্দ করবে"। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৭২]


একটি আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে মা'আরিফুল কুরআনে বলা হয়েছে যে, স্বামী যদি সংযম ও আল্লাহভীতির পরিচয় দেয়, স্ত্রীর সাথে সহানুভূতিপূর্ণ আচরণ করে, মনের মিল না হওয়া সত্ত্বেও তার সাথে সম্পর্কচ্ছে না করে, বরং তার যাবতীয় অধিকার ও প্রয়োজন পূরণ করে, তবে তার এই ত্যাগ ও উদারতা সম্পর্কে, আল্লাহ তা আলা ওয়াকিফহাল আছেন। অতএব, তিনি তার এ ধৈর্য, উদারতা, সহনশীলতা ও মহানুভবতার এমন প্রতিদান দেবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না। ” [তাফসীরে সূরাহ নিসা]


ইসলামী শরীয়তে সবচেয়ে অপছন্দনীয় জায়েজ কাজ হচ্ছে বিবাহ-বিচ্ছেদ। যদিও এর বিধান রাখা হয়েছে বিশেষ ক্ষেত্রে অপারগ অবস্থার জন্য। কুরআন ও হাদীসে সবসময় এ শিক্ষাই দেয়া হয়েছে যে, বিবাহ বিচ্ছেদ হতে যথাসাধ্য বিরত থাকা কর্তব্য। এবং উভয়ের পক্ষেরই কিছু কিছু ত্যাগ স্বীকার করে সমঝোতায় আসা বাঞ্ছনীয়। এক্ষেত্রে নিজের মতামতকে জোর করে প্রতিষ্ঠিত করতে না চেয়ে প্রত্যেকে যদি এ বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রেখে চলেন, তাহলে বেশীরভাগ সমস্যারই সমাধান হয়ে যাবে। সেই সাথে সময়-সুযোগ মতো হাস্য-রসিকতা ও অন্তরঙ্গ ভাববিনিময় পারস্পরিক সম্পর্ককে সহজ ও সাবলীল করে তুলবে।


দম্পতিদের মধ্যে কেউ আছেন যিনি সঙ্গীকে খুশী করে সুখী হন, আবার কেউ নিজের চাওয়া-পাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে সুখী হতে চান। দু'টো দু'রকম ব্যাপার। আসলে দাম্পত্যজীবনের এই মধুময় সম্পর্ককে স্থায়িত্ব দিতে চাইলে কিছু বিষয়ে উভয়কেই অভিন্ন ভূমিকা পালন করতে হবে। যেমন-বিশ্বাস, ভালোবাসা, পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ, ধৈর্য, সহনশীলতা, পারস্পরিক আস্থা, সহানুভূতি ও সহযোগিতা। এই বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে সমঝোতার মধ্য দিয়ে চললে একটি পরিবার হয়ে উঠতে পারে শান্তি ও সুখের ঠিকানা।


লেখা পাঠিয়েছেন
মিসেস কে. জামান
আমাদের কাছে লেখা পাঠানোর ঠিকানা
ইমেইল: hello@salat-namaz.com

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url