স্বামী থাকা অবস্থায় স্ত্রী দ্বিতীয় বিবাহ করলে তা বৈধ হবে কি?
প্রশ্ন: আমার পরিচিত এক মহিলা, যার স্বামী-সংসার ও ছেলেমেয়ে সবই আছে, তারা সবাই একসাথে বসবাস করে, এ অবস্থায় যদি ওই মহিলা সেই স্বামী থেকে তালাক গ্রহণ ছাড়া এমনিতেই বা ঝগড়ার কারণে হঠাৎ উধাও হয়ে গিয়ে অন্যকোন পুরুষকে বিবাহ করে, তাহলে তার এ দ্বিতীয় বিবাহ বৈধ হবে কি?
যদি তার প্রথম স্বামীর সাথে বিবাহের কাবিন রেজিষ্ট্রি করা না হয় এবং দ্বিতীয় বিবাহের কাবিন রেজিষ্ট্রি করা হয়, এমতাবস্থায় তা হুকুম কী হবে?
উত্তর: বর্ণিত সূরতে তার দ্বিতীয় বিবাহ বৈধ হবে না এবং তাকে বিবাহই বলা যাবে না, এমনকি সেই বিবাহ ইজাব-কবুল ও সাক্ষীসমেত, রেজিষ্ট্রি করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সম্পন্ন করা হলেও তার সেই বিবাহ কোন বিবাহ বলেই গণ্য হবে না এবং এমতাবস্থায় উক্ত পুরুষের সাথে তার মেলামেশা, চলাফেরা, দেখা-সাক্ষাত এবং সবরকম দাম্পত্যিক সম্পর্ক ও কথাবার্তা সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও যিনা-ব্যভিচার বলে গণ্য হবে।
এক্ষেত্রে তার প্রথম স্বামীর সাথে বিবাহ শরীয়ত মতে ইজাব-কবুল ও সাক্ষীসমেত সম্পন্ন করা হলে, তা রেজিস্ট্রি করা না হলেও কোন অসুবিধা নেই। এমতাবস্থায়ও তার সেই বিবাহই সহীহ ও প্রকৃত বিবাহ বলে গণ্য হবে, এবং দ্বিতীয় বিবাহ রেজিষ্ট্রি করা হলেও তা বাতিল বলে গণ্য হবে। কেননা ইসলামের দৃষ্টিতে, রেজিষ্ট্রি করা না হলেও শুধু ইজাব-কবুলের দ্বারাই বিবাহ সম্পন্ন হয়ে যায়, এক্ষেত্রে বিবাহের রেজিস্ট্রি করা উত্তম কাজ, তবে তা বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য অপরিহার্য বা জরুরী কোন বিষয় নয়, তাই তা করা না হলেও বিবাহ সহীহভাবেই সম্পন্ন হয়।
সুতরাং এ অবস্থায় উক্ত মহিলার পরবর্তী বিবাহ সহীহ হয়নি এবং সেই বিবাহের স্বামী প্রকৃতপক্ষে তার স্বামী নন, বরং তিনি তার জন্য বেগানা পুরুষের হুকুমে, বরং এখনও তার প্রথম বিবাহ বহাল রয়েছে এবং তিনি সেই প্রথম স্বামীর স্ত্রী হিসেবে আছেন। সুতরাং তার কর্তব্য হলো অবিলম্বে তাওবা করে হারাম থেকে ফিরে আসা এবং ক্ষমা চেয়ে শুধরে নিয়ে প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়া, তবে যদি প্রথম স্বামী তাকে তালাক দেন, তখন সেই তালাকের ইদ্দত শেষ হলে সেই পুরুষের সাথে বা অন্য যেকোন পুরুষের সাথে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবেন।
উল্লেখ্য, যদি প্রথম স্বামীর সংসার থেকে চলে গিয়ে সেই মহিলা সেই স্বামীকে ডিভোর্স বা তালাক দেন, তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে সেই ডিভোর্স বা তালাক ধর্তব্য হবে না যদিও অফিসিয়ালভাবে কাগজপত্রের মাধ্যমে ডিভোর্স বা তালাক দেয়া হয়। কেননা, ইসলামের বিধান মতে, স্ত্রী কখনো স্বামীকে ডিভোর্স বা তালাক দিতে পারেন না। তবে তাকে স্বামীর পক্ষ থেকে বিবাহের সময় বা পরে তাবীজে তালাক (তালাক গ্রহণের ক্ষমতা) দেয়া হয়ে থাকলে, যদি কোন শর্তের সাথে তা দেয়া হয়, তখন সেই শর্ত পাওয়া গেলে, আর যদি শর্ত ছাড়া দেয়া হয়, তখন স্ত্রী যেকোন সময় ইচ্ছা করলে নিজের ওপর নিজে তালাক গ্রহণ করতে পারেন। এতে অবশ্যই সেই তালাক ধর্তব্য ও কার্যকর হবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে স্ত্রীকে বলতে হবে বা ডিভোর্স নামায় লিখতে হবে-“স্বামীর দেয়া তাফবীজে তালাকের ক্ষমতা বলে আমি নিজের ওপর তালাক বা ডিভোর্স গ্রহণ করলাম"। কিন্তু তা না বলে তিনি এ কথা বলতে পারবেন না বা লিখতে পারবেন না যে, “আমি স্বামীকে ডিভোর্স বা তালাক দিলাম"। অন্যথায় তা গ্রহণযোগ্য হবে না। অর্থাৎ তিনি সেই অবস্থায় নিজের ওপর তালাক গ্রহণ করতে পারবেন, স্বামীকে তালাক দিতে পারবেন না। কেননা, ইসলামী শরীয়তে সেই অবস্থায় তাকে তার নিজের ওপর নিজে তালাক গ্রহণের অধিকার দেয়া হয়েছে, স্বামীকে তালাক দেয়ার অধিকার দেয়া হয়নি। কিন্তু আমাদের দেশের অনেক উকীল বিষয়টি পার্থক্য না করে ঢালাওভাবে “ডিভোর্স দিলাম" লেখার ব্যবস্থা করেন, অথচ এভাবে লিখলে তালাক হবে না।
তেমনিভাবে যদি স্বামী সেই স্ত্রীকে তাফবীজে তালাক (তালাক গ্রহণের ক্ষমতা) না দিয়ে থাকেন, তাহলে স্ত্রী তখন নিজের ওপর তালাক গ্রহণের ক্ষমতাও পাবেন না, তাই সেই অবস্থায় স্ত্রীর জন্য স্বামীর নিকট ডিভোর্স লেটার পাঠানোর কোন সূরত নেই।
[হাওয়ালা: ফাতাওয়া আলমগীরী, ১:২৮০/ বাদায়েউস সানায়ে ২:৫৪৮]